Image default
প্রযুক্তি

যুদ্ধ মানেই উদ্ভাবন! ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে যেসব প্রযুক্তি নজর কাড়ছে

যুদ্ধ মানেই উদ্ভাবন। ইরানের ‘ফাত্তাহ’ হাইপারসনিক মিসাইলের জবাবে ইসরায়েল মাঠে নামিয়েছে লেজার চালিত ‘আয়রন বিম’। এই হাই-টেক লড়াই শুধু মধ্যপ্রাচ্যের আকাশকেই উত্তপ্ত করছে না, বদলে দিচ্ছে আগামীর যুদ্ধ প্রযুক্তির পুরো চিত্র।

যুদ্ধ মানবসভ্যতার এক অন্ধকার এবং ধ্বংসাত্মক অধ্যায় হলেও, এর একটি অদ্ভুত চালিকাশক্তি রয়েছে যা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে তীব্র গতিতে এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রতিটি সংঘাতই যেন নতুন সামরিক কৌশল এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এক অবশ্যম্ভাবী পরীক্ষাগার। টিকে থাকার তাগিদ এবং প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দেশগুলোকে তাদের সর্বোচ্চ মেধা ও সম্পদ বিনিয়োগ করতে বাধ্য করে, যার ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয় এমন সব প্রযুক্তি যা হয়তো শান্তিকালীন পরিস্থিতিতে আলোর মুখ দেখতে কয়েক দশক লেগে যেত।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে উত্তপ্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান ছায়া যুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক সরাসরি সংঘাত এই ঐতিহাসিক সত্যকে আরও একবার প্রকটভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। এই লড়াই নিছক কোনো প্রথাগত স্থলযুদ্ধ নয়, বরং এটি প্রযুক্তি এবং বুদ্ধিমত্তার এক অসম অথচ ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা। 

দুই পক্ষই এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার ও প্রদর্শন করছে যা কেবল যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিই নির্ধারণ করছে না, বরং একবিংশ শতাব্দীর এবং তার পরবর্তী সময়ের সমরনীতির সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও দিচ্ছে। হাইপারসনিক মিসাইল থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ন্ত্রিত স্বায়ত্তশাসিত ড্রোন, অদৃশ্য লেজার ডিফেন্স সিস্টেম এবং রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোকে পঙ্গু করে দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সাইবার হামলা; এই লড়াই যেন হয়ে উঠেছে ভবিষ্যতের প্রযুক্তির এক জীবন্ত প্রদর্শনী।

ইরানের হাইপারসনিক, ড্রোন ঝাঁক এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের দাপট

ঐতিহ্যগতভাবে সামরিক প্রযুক্তিতে ইসরায়েলকে এগিয়ে রাখা হলেও, সাম্প্রতিক সংঘাতে ইরান তার উদ্ভাবনী সক্ষমতা, বিশেষ করে অপ্রতিসম যুদ্ধের (asymmetric warfare) কৌশলে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। ইরানের সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস হলো এর বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় মিসাইল এবং ড্রোন প্রযুক্তি, যা কেবল সংখ্যায় বিপুল নয়, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও ক্রমশ উন্নত হচ্ছে।

  • হাইপারসনিক মিসাইলের আবির্ভাব: ইরানের “ফাত্তাহ-১” এবং “ফাত্তাহ-২” হাইপারসনিক মিসাইল এই সংঘাতের অন্যতম প্রধান আলোচিত বিষয়। শব্দের চেয়ে পাঁচ থেকে পনেরো গুণেরও বেশি গতিতে চলতে সক্ষম এই মিসাইলগুলো বায়ুমণ্ডলের ভেতরে এবং বাইরে নিজেদের গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতাসম্পন্ন (Maneuverable Re-entry Vehicle – MaRV)। এর ফলে ইসরায়েলের বিশ্বখ্যাত এবং বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যেমন আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং এবং অ্যারো-৩, এদেরকে নির্ভুলভাবে ট্র্যাক এবং ধ্বংস করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। প্রচলিত ব্যালিস্টিক মিসাইলের অনুমানযোগ্য গতিপথের বিপরীতে হাইপারসনিক অস্ত্রের অননুমেয় চলন একে প্রায় অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। এই প্রযুক্তি ইরানের হাতে এমন এক কৌশলগত সক্ষমতা তুলে দিয়েছে যা দ্বারা তারা ইসরায়েলের সবচেয়ে সুরক্ষিত সামরিক ঘাঁটি বা পারমাণবিক স্থাপনায় অতর্কিত হামলা চালানোর হুমকি তৈরি করতে পারে।
ফাত্তাহ ১ মিসাইল
  • স্যাচুরেশন অ্যাটাক ও ড্রোনের ঝাঁক: ইরান কেবল একক কোনো অস্ত্রের উপর নির্ভর করছে না। তাদের মূল কৌশল হলো ‘স্যাচুরেশন অ্যাটাক’ অর্থাৎ, একই সাথে বিভিন্ন পাল্লার এবং বিভিন্ন ধরনের শত শত ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে হামলা চালানো। এর মধ্যে ‘শাহেদ-১৩৬’ এর মতো ‘লইটারিং মিউনিশন’ বা কামিকাজে ড্রোনগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা দীর্ঘক্ষণ আকাশে চক্কর দিয়ে সুযোগ বুঝে লক্ষ্যবস্তুতে আত্মঘাতী হামলা চালায়। এই ড্রোনগুলো আকারে ছোট এবং কম খরচে তৈরি হওয়ায় এগুলোকে বিপুল সংখ্যায় ব্যবহার করা সম্ভব। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ক্ষমতাকে অতিক্রম করে একে ওভারলোড ও বিভ্রান্ত করে ফেলা, যাতে কিছুসংখ্যক হলেও শক্তিশালী মিসাইল তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
  • ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (EW): ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ইরান অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং কার্যকরভাবে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বা বৈদ্যুতিন যুদ্ধের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের রাডার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে জ্যাম (jamming) বা বিভ্রান্ত (spoofing) করে দিচ্ছে। এর ফলে, ইসরায়েলি ইন্টারসেপ্টর মিসাইলগুলো সঠিক লক্ষ্য খুঁজে পেতে ব্যর্থ হচ্ছে বা ভুল লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটি প্রচলিত যুদ্ধের পাশাপাশি একটি অদৃশ্য প্রযুক্তিগত লড়াইয়ের চিত্র তুলে ধরে, যেখানে তড়িৎ-চুম্বকীয় স্পেকট্রাম নিজেই একটি যুদ্ধক্ষেত্র।

ইসরায়েলের লেজার থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ইসরায়েল কয়েক দশক ধরেই বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সামরিক প্রযুক্তি উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত। দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান এবং পারিপার্শ্বিক হুমকি একে ক্রমাগত আত্মরক্ষার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে চালিত করেছে। ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে দেশটি তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও ভবিষ্যৎমুখী করে তুলেছে।

  • আয়রন বিম (Iron Beam) লেজার অস্ত্র: ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সবচেয়ে নতুন এবং যুগান্তকারী সংযোজন হলো ‘আয়রন বিম’ লেজার ডিফেন্স সিস্টেম। এটি একটি উচ্চ-শক্তিসম্পন্ন লেজার রশ্মি ব্যবহার করে ড্রোন, রকেট এবং মর্টারের মতো স্বল্প-পাল্লার হুমকিগুলোকে সেকেন্ডের মধ্যে আকাশে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। প্রচলিত ইন্টারসেপ্টর মিসাইলের (যেমন আয়রন ডোমের প্রতিটি টামির মিসাইলের খরচ প্রায় ৫০,০০০ ডলার) তুলনায় এর প্রতিটি শটের খরচ অনেক কম (মাত্র কয়েক ডলার) এবং যতক্ষণ বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে, ততক্ষণ এটি প্রায় অসীম সংখ্যক হামলা প্রতিহত করতে পারে। যদিও এটি এখনও তার বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, সাম্প্রতিক সংঘাতে বেশ কিছু ড্রোন ধ্বংস করে এটি তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। ২০২৬ সাল নাগাদ এই প্রযুক্তি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে এবং সস্তা অস্ত্রের হুমকি মোকাবেলার অর্থনৈতিক সমীকরণ বদলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আয়রন বিম
  • বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা: ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি একক প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল নয়, বরং এটি একটি সমন্বিত ও বহুস্তরীয় কাঠামো যা ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতা ও পাল্লার হুমকি মোকাবেলা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
    • আয়রন ডোম (Iron Dome): স্বল্প-পাল্লার (৪-৭০ কিমি) রকেট ও মর্টার প্রতিহত করার জন্য।
    • ডেভিড’স স্লিং (David’s Sling): মাঝারি পাল্লার (৪০-৩০০ কিমি) মিসাইল, বিশেষ করে ক্রুজ মিসাইল ধ্বংস করার জন্য।
    • অ্যারো-২ এবং অ্যারো-৩ (Arrow-2 & Arrow-3): বায়ুমণ্ডলের ভেতরে এবং বাইরে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (এমনকি সম্ভাব্য পারমাণবিক হামলা) ধ্বংস করার জন্য। এই সমন্বিত ব্যবস্থাটিই ইরানের বেশিরভাগ হামলা কার্যকরভাবে প্রতিহত করে আসছে, যদিও হাইপারসনিক প্রযুক্তির উত্থান এই দুর্ভেদ্য দেয়ালে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
  • AI ড্রোন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার: যুদ্ধক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার এই সংঘাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেখানে ইসরায়েল উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে। ‘হ্যাবিসোরা’ (The Gospel) এর মতো AI-ভিত্তিক সিস্টেমগুলো স্যাটেলাইট ইমেজ, সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ ডেটা মুহূর্তের মধ্যে বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য শত্রু অবস্থান, অস্ত্র ভাণ্ডার বা লঞ্চিং প্যাড চিহ্নিত করতে পারে। এই প্রযুক্তি কেবল লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতেই সাহায্য করে না, বরং আক্রমণের সেরা সময় এবং কৌশল নির্ধারণেও সহায়তা করে। AI-চালিত ড্রোনগুলো স্বায়ত্তশাসিতভাবে শত্রু অঞ্চলের গভীরে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করতে বা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি মানুষের জীবনের ঝুঁকি কমায় এবং আক্রমণের নির্ভূলতা (precision) বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

আমেরিকার ভূমিকা এবং হাই-টেক যুদ্ধাস্ত্রের সরবরাহ

এই সংঘাতে আমেরিকার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াশিংটন কেবল ইসরায়েলকে অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সমর্থনই দিচ্ছে না, বরং এমন সব সর্বাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ করছে যা এই অঞ্চলের শক্তির ভারসাম্যে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

  • অত্যাধুনিক সামরিক সহায়তা: আমেরিকা ইসরায়েলকে F-35 ফাইটার জেটের মতো পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সরবরাহ করেছে, যা তার স্টেলথ ক্ষমতা, উন্নত সেন্সর এবং নেটওয়ার্কিং সিস্টেমের জন্য পরিচিত। এই বিমানগুলো শত্রু রাডারকে ফাঁকি দিয়ে গভীরে প্রবেশ করে হামলা চালাতে এবং অন্যান্য সামরিক ইউনিটকে রিয়েল-টাইম তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এছাড়াও, THAAD (Terminal High Altitude Area Defense) এর মতো উন্নত ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলে মোতায়েন করা হয়েছে, যা অ্যারো সিস্টেমের পাশাপাশি একটি অতিরিক্ত সুরক্ষাবলয় তৈরি করেছে।
F-35 ফাইটার জেট
  • প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব: আমেরিকার ডিফেন্স কোম্পানিগুলো এবং ইসরায়েলি সংস্থাগুলোর মধ্যে নিবিড় সহযোগিতা রয়েছে। ‘আয়রন ডোম’ এবং ‘অ্যারো’ সিস্টেমের মতো অনেক প্রকল্পই মার্কিন অর্থায়নে এবং যৌথ প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় বিকশিত হয়েছে। ২০২৫ সালের যুদ্ধ প্রযুক্তির উদ্ভাবনে এই অংশীদারিত্ব একটি বড় ভূমিকা পালন করছে, যার মূল লক্ষ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলা করা এবং ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব (Qualitative Military Edge) বজায় রাখা।

সাইবার যুদ্ধ: এক অদৃশ্য ফ্রন্টলাইন

ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের দৃশ্যমান লড়াইয়ের আড়ালে ইরান ও ইসরায়েল এক তীব্র এবং নিরবচ্ছিন্ন সাইবার যুদ্ধে লিপ্ত। এই ডিজিটাল যুদ্ধক্ষেত্রে একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো (Critical Infrastructure), যেমন বিদ্যুৎ গ্রিড, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, পারমাণবিক স্থাপনা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি ওয়েবসাইট এবং সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে।

  • ইরানের সাইবার হামলা: ইরানের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হ্যাকার গ্রুপগুলো ইসরায়েলের বিভিন্ন বেসরকারি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত র‍্যানসমওয়্যার এবং তথ্য চুরির হামলা চালাচ্ছে। এমনকি সাধারণ সিসিটিভি ক্যামেরা বা সেচ ব্যবস্থা হ্যাক করে সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলা তৈরি এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মতো ঘটনাও ঘটছে।
ইরানিয়ান হ্যাকার দল
  • ইসরায়েলের পাল্টা জবাব: সাইবার সক্ষমতায় ইসরায়েল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ। দেশটির বিখ্যাত ‘ইউনিট ৮২০০’ এর মতো সাইবার ইন্টেলিজেন্স শাখা রয়েছে। তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সামরিক স্থাপনায় একাধিকবার সফল সাইবার হামলা চালিয়েছে বলে মনে করা হয়। স্টাক্সনেট ভাইরাসের মতো ঘটনা এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এই অদৃশ্য যুদ্ধ প্রচলিত সংঘাতের মতোই মারাত্মক এবং এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।

ভবিষ্যতের যুদ্ধের ইঙ্গিত

ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষকে ভবিষ্যতের যুদ্ধের একটি জীবন্ত পরীক্ষাগার হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই সংঘাত থেকে কয়েকটি বিষয় ক্রিস্টাল ক্লিয়ার:

হাই-টেক অস্ত্রের বিস্তার: হাইপারসনিক মিসাইল এবং লেজার অস্ত্রের মতো প্রযুক্তিগুলো এখন আর শুধুমাত্র রাশিয়া, চীন বা আমেরিকার মতো পরাশক্তিগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মধ্যম সারির দেশগুলোও এই প্রযুক্তি অর্জন ও ব্যবহার করছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপরিহার্যতা: আগামী দিনের যুদ্ধক্ষেত্রে AI হবে প্রধান চালিকাশক্তি। স্বায়ত্তশাসিত অস্ত্র এবং AI-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া যুদ্ধের গতি, কৌশল এবং নৈতিকতাকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দেবে।

প্রতিরক্ষার চেয়ে আক্রমণ সহজ: উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, স্যাচুরেশন অ্যাটাক এবং হাইপারসনিক অস্ত্রের মতো আক্রমণাত্মক প্রযুক্তি সেগুলোকে ভেদ করার ক্ষমতা রাখে। এর ফলে দেশগুলোকে ক্রমাগত তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল উদ্ভাবন করতে হচ্ছে।

সাইবার এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধক্ষেত্রের গুরুত্ব: ভবিষ্যতের যেকোনো সংঘাতের একটি বড় অংশ হবে ডিজিটাল ডোমেইনে, যা প্রচলিত যুদ্ধক্ষেত্রের মতোই গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলবে।

এ আই চালিত ড্রোন

“প্রয়োজনই উদ্ভাবনের জনক” এই ক্লাসিক প্রবাদটি যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রতিটি পর্বেই আমরা দেখছি কিভাবে এক পক্ষের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অন্য পক্ষকে আরও উন্নত এবং প্রায়শই অপ্রতিসম প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বাধ্য করছে। এই ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা একদিকে যেমন ধ্বংস এবং মানবিক সংকট ডেকে আনছে, তেমনই জন্ম দিচ্ছে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির। এর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো এই সব প্রযুক্তির বিস্তার। যখন হাই-টেক ড্রোন বা সাইবার অস্ত্র নন-স্টেট অ্যাক্টর বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছায়, তখন তা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য এক অশনি সংকেত নিয়ে আসে।

এই লড়াই শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার সমীকরণই নির্ধারণ করছে না, বরং সমগ্র বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে আগামী দিনের যুদ্ধ কেমন হবে যেখানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে কেবল সৈন্যের সংখ্যা বা অস্ত্রের জোরে নয়, বরং প্রযুক্তির বুদ্ধিমত্তা, গতি, নির্ভুলতা এবং অদৃশ্য কৌশলের মাধ্যমে। যুদ্ধ মানেই যে উদ্ভাবন, ইরান-ইসরায়েলের এই রক্তাক্ত অধ্যায় যেন তারই এক নির্মম এবং জীবন্ত প্রমাণ।

তথ্যসূত্র –

Related posts

কিভাবে ফেসবুক থেকে আয় করতে পারেন?

Google Pay এখন বাংলাদেশে! জানুন কীভাবে এটি বদলে দেবে আপনার পেমেন্ট পদ্ধতি

ওয়েবসাইট কুকিজ: সুবিধা নাকি ষড়যন্ত্র?

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More