এটি কিয়েভ! এটি এক কিংবদন্তি শহর! এখানে সমুদ্রের পানি নীল নয় বরং উজ্জ্বল কমলা!!
কিয়েভ কোনো সাধারণ নগরী নয়, এটি এক মহাকাব্যের মঞ্চ। যেখানে জন্মেছেন রাজারা, লড়েছেন বিপ্লবীরা, আর শিল্পীরা সৃষ্টি করেছেন অমর কীর্তি।
আধুনিক ইউক্রেনের প্রাণকেন্দ্র কিয়েভ। এটি একটি সংগ্রামী নগরী হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিতি। বিপ্লব, যুদ্ধ, সংকট সবকিছু মোকাবেলা করে এই শহরটি আজও টিকে আছে এক অদম্য আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে। যেখানে ইতিহাস কথা বলে, আর, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখায়।
এ শহর শুধু দেখার জন্য নয়, অনুভব করার জন্য। আপনি কি প্রস্তুত? কারণ কিয়েভ আপনাকে ডাকছে এক কিংবদন্তির অংশ হতে!
দেশ | ইউক্রেন |
রাজধানী | কিয়েভ |
আয়তন | ৮৩৯ বর্গ কিলোমিটার |
জনসংখ্যা | ৩ মিলিয়ন |
ভাষা | ইউক্রেনীয় |
মুদ্রা | ইউক্রেনিয়ান হ্রিভনিয়া |
ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু
কিয়েভ ইউক্রেনের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর। শহরটি ইউক্রেনের উত্তর-মধ্য অংশে দিনিপ্রো নদীর তীরে অবস্থিত।
আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ুর (Humid Continental Climate) কারণে কিয়েভের আবহাওয়া বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য উপহার দেয়। চারটি ঋতু একেক সময় একেক রঙে শহরটিকে সাজিয়ে তোলে। শীতে বরফে মোড়া শহর যেমন সুন্দর, তেমনি গ্রীষ্মে সবুজ ও প্রাণবন্ত।
গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ২০°C থেকে ৩০°C এর মধ্যে থাকে। শীতকালে তাপমাত্রা -১°C থেকে -৬°C এর মধ্যে থাকলেও হিমেল বাতাসের কারণে এটি আরও শীতল অনুভূত হয়। তবে সত্যিকারের ঠান্ডা তখনই আসে যখন পারদ নেমে যায় -২০°C-এর নিচে।
ম্যাপ
কিয়েভের আয়তন ও জনসংখ্যা
৮৩৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই শহরটিতে প্রায় ৩০ লক্ষ লোক বসবাস করে। জনসংখ্যার বিবেচনায় শহরটি ইউরোপের সপ্তম বৃহত্তম শহর হিসেবে পরিচিত।
কিয়েভ একটি বহুজাতিক শহর যেখানে ইউক্রেনীয় (প্রধান জনগোষ্ঠী), রাশিয়ান (উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু) বেলারুশিয়ান, পোলিশ, ইহুদি ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোকজন একত্রে বাস করে।
শহরটিতে সরকারিভাবে ইউক্রেনীয় ভাষা প্রচলিত থাকলেও, অনেক বাসিন্দা দৈনন্দিন জীবনে রাশিয়ান ভাষাও ব্যবহার করে থাকে।
কিয়েভের গল্প
ইউক্রেনের প্রাচীন শহর কিয়েভ বিভিন্ন ধরনের মিথ, কিংবদন্তি এবং পৌরাণিক কাহিনির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। শহরটি নানা রকমের অতিপ্রাকৃত এবং রহস্যময় গল্পের আঁধারে আবদ্ধ। কিয়েভের প্রতিষ্ঠা নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় মিথের গল্পটি হলো কিই এবং তার দুই ভাই শেক ও খোরিভ এবং তাদের বোন লিবিড এর কাহিনি।
একদিন দিনিপ্রো নদীর তীরে তিন ভাই এবং এক বোন এসে দাঁড়ালেন। তারা এই এই নদীর তীরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানেই গড়ে তুললেন এক নতুন বসতি। বড় ভাই কিই-এর নামানুসারে এর নাম রাখা হলো কিয়েভ। ধারণা করা হয় এভাবেই ইউক্রেনের প্রাণকেন্দ্র খ্যাত কিয়েভ শহরটির নামকরণ করা হয়েছিল।
কিয়েভে রাস শাসন
৯ম শতাব্দীতে রাজপুত্র ওলেগ কিয়েভ দখল করে এটিকে পূর্ব ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যের রাজধানী বানিয়ে নাম রাখলেন কিয়েভান রাস।
সে সময়টা ছিল কিয়েভের জন্য স্বর্ণযুগ। ৯৮৮ সালে কিয়েভান রাসের শাসক ভ্লাদিমির দ্য গ্রেট খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। যার ফলে শহরটি পরিণত হলো পূর্ব ইউরোপের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক রাজধানীতে। রাজা ভ্লাদিমির দ্য গ্রেটের পুত্র ইয়ারোস্লাভ দ্য ওয়াইজ শহরকে ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধ নগরীতে রুপান্তরিত করেন।
কিন্তু ইতিহাস বলছে যত বড় সাম্রাজ্য, তত বড় বিপদও আসে একদিন।
১২৪০: মঙ্গোল ঝড় ও কিয়েভের পতন
একদিন পূর্ব দিগন্তে ধুলো উড়তে লাগল। শহরের প্রাচীর কাঁপতে লাগল এবং তারপর বাটু খান ও তার ভয়ংকর মঙ্গোল বাহিনী কিয়েভ আক্রমণ করে বসলো।
১২৪০ সালের সেই দিনটি কিয়েভের ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায়। পুরো শহর ধ্বংস হলো এবং হাজার হাজার মানুষ নিহত হলো। কিয়েভ হারালো তার গৌরব, আর ইউরোপে নতুন শক্তি হিসেবে উঠে এল মস্কো।
কিয়েভের নতুন দখলদার: লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড এবং রাশিয়া
মঙ্গোলদের ধ্বংসযজ্ঞের পর কিয়েভ ধীরে ধীরে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে লাগল, কিন্তু শান্তি এল না। ১৪শ শতাব্দীতে লিথুয়ানিয়ানরা শহরটি দখল করল। এরপর ১৬৫৪ সালে রাশিয়ার জার সাম্রাজ্য কিয়েভকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিলেন।
বিশ শতকের ঝড়: বিপ্লব, যুদ্ধ, এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন
১৯১৭ সালে রাশিয়ান বিপ্লব কিয়েভকেও কাঁপিয়ে দিল। রুশ বিপ্লবের পর কিয়েভ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য স্বাধীন ইউক্রেনিয়ান পিপলস রিপাবলিকের রাজধানী হয়। তবে, ১৯২২ সালে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হয়ে যায় এবং ইউক্রেনীয় এসএসআরের (Ukrainian SSR) রাজধানী হিসেবে কাজ করে।
এরপর এল আরেকটি কালো সময়—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ! ১৯৪১ সালে নাৎসি বাহিনী কিয়েভ দখল করে। বাবি ইয়ার গণহত্যার মাধ্যমে শহরের ইহুদি জনগণকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারপর ১৯৪৩ সালে সোভিয়েত বাহিনী কিয়েভ পুনরুদ্ধার করে।
১৯৯১: অবশেষে স্বাধীনতা!
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ল এবং কিয়েভ হলো স্বাধীন ইউক্রেনের রাজধানী! কিয়েভ দ্রুত আধুনিক শহরে পরিণত হলো। ইউরোপের অন্যতম সুন্দর ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ নগরী হয়ে উঠল।
কিন্তু ইতিহাস কি কিয়েভকে কখনোই শান্তিতে থাকতে দেবে?
অরেঞ্জ রেভ্যুলেশন: কিয়েভের রঙিন গণঅভ্যুত্থান
২০০৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বি দল ভিক্টর ইউশচেঙ্কো (গণতন্ত্রপন্থী, পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থক), ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ (সরকার-সমর্থিত, রাশিয়াপন্থী নেতা) মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বতা হয় ।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা গেল ইয়ানুকোভিচ বিজয়ী। কিন্তু জনগণ পরবর্তীতে জানতে পারলেন এই জয় ছিল ইয়ানুকোভিচদের কারসাজির ফল।
এরপর ২০০৪ সালের এক শীতের সকালে কিয়েভের স্বাধীনতা স্কয়ার পরিণত হয়ে এক বিশাল সমুদ্রে। কিন্তু এই সমুদ্রের পানি নীল নয় বরং উজ্জ্বল কমলা! কারণ এটি ছিল ইউশচেঙ্কোর দলের প্রতীক। হাজার হাজার মানুষ অরেঞ্জ স্কার্ফ, ব্যানার, পতাকা এবং পোশাক পরে একত্রিত হয়েছে; একটাই দাবি —গণতন্ত্র চাই, ভোট চুরি চলবে না!
এই শান্তিপূর্ণ বিপ্লব দেখে পুরো বিশ্ব অবাক হয়ে গেল। কেউ ভাবেনি একটি দেশ এতটা সংগঠিতভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। এই আন্দোলনে পশ্চিমা বিশ্ব বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিলেও, রাশিয়া ইয়ানুকোভিচের পক্ষে ছিল। তবে জনগণের এই ঐক্য শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের সুপ্রিম কোর্টকে বাধ্য করল নির্বাচন বাতিল করতে। নতুন নির্বাচনে ইউশচেঙ্কো জয়ী হলেন এবং “কমলার বিপ্লব” সফল হলো!
এদিকে ২০২২ সালে রাশিয়া – ইউক্রেন আক্রমণ করে এবং কিয়েভ আবারও ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।
কিয়েভের দর্শনীয় ও পর্যটন স্থান
দিনিপ্রো নদীর তীরে অবস্থিত কিয়েভে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য, রহস্যময় গুহা, বর্ণিল রাস্তা, আর আধুনিক জীবন। চলুন, কিয়েভের চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানগুলো থেকে ঘুরে আসি!
কিয়েভ পেচেরস্ক লাভরা
কিয়েভ পেচেরস্ক লাভরা ইউক্রেনের খ্রিস্টান ধর্মের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। এটি কিয়েভ শহরের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি আশ্চর্য মঠ। লাভরার সবচেয়ে মজার দিক হলো এর গুহাগুলো। যেখানে শত শত বছর ধরে সন্ন্যাসীরা বসবাস করতেন এবং প্রার্থনায় লিপ্ত থাকতেন।
এখানেই সংরক্ষিত আছে অনেক সাধুর দেহাবশেষ। যেগুলো অলৌকিকভাবে অক্ষত রয়েছে বলে কথিত আছে! বর্তমানেএই স্থানটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত। শত শত বছর ধরে এটি জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দু।
সেন্ট সোফিয়া ক্যাথেড্রাল
সেন্ট সোফিয়া ক্যাথেড্রাল হলো প্রিন্স ইয়ারের শাসনকালে নির্মিত একটি ধর্মীয় উপাসনালয়। মজার বিষয় হলো, ক্যাথেড্রালটি দেখে মনে হয় যেন কোন রাজকন্যার রাজপ্রাসাদ। এই ক্যাথেড্রালটির দেয়ালে শোভিত প্রাচীন ফ্রেস্কো এবং মূর্তিগুলি শুধু ধর্মীয় গুরুত্বই নয়, ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল। ইতালিয় শব্দ ফ্রেস্কো এর অর্থ কলিচুনের প্লাস্টারের উপর অঙ্কিত দেওয়ালচিত্র।
ক্যাথেড্রালটির বাইজেন্টাইন মোজাইক ও ফ্রেস্কোগুলো আপনাকে এক নিমেষেই মধ্যযুগীয় ইউরোপের জগতে নিয়ে যাবে। মূর্তি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো সেন্ট সোফিয়ার বিশাল মূর্তি, যা ক্যাথেড্রালের সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করে।
আন্দ্রিভস্কি উজভিজ
আন্দ্রিভস্কি উজভিজ কিয়েভ শহরের একটি বিখ্যাত এবং ঐতিহাসিক রাস্তা। এটি শুধু রাস্তা নয় এটি কিয়েভের, যেন একটি জীবন্ত গ্যালারি। এর আঁকাবাঁকা এই পথ ধরে হাঁটলে চোখে পড়বে পুরনো স্থাপত্য, শিল্পীদের চিত্রকর্ম, ক্যাফে আর স্যুভেনির দোকান।
এই রাস্তার শেষে দাঁড়িয়ে আছে সেন্ট অ্যান্ড্রু’স চার্চ। দেখ মনে হবে এটি যেন আকাশের নীলের সঙ্গে মিশে গেছে।
গোল্ডেন গেট
কিয়েভের গোল্ডেন গেট এক রহস্যময় ঐতিহাসিক রত্ন। ১১শ শতকে নির্মিত এই গেটটি এক সময় কিয়েভের প্রধান প্রবেশপথ ছিল। গেটটি ছিল বাইজেন্টাইন স্থাপত্যের এক অসাধারণ উদাহরণ। প্রাচীন কিয়েভের প্রতিরক্ষার প্রতীক। বর্তমানে এটি একটি মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
মাতৃভূমির মূর্তি
কিয়েভের মাতৃভূমির মূর্তি বা Motherland Monument একটি ঐতিহাসিক শৈল্পিক সৃষ্টি। ৫২ মিটার উচ্চতার এই মহামূল্যবান মূর্তিটি যেন কিয়েভের আকাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে তার শক্তি ও সাহসের বার্তা দিয়ে যাচ্ছে।
১৯৮১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ৩০ বছর পূর্তিতে নির্মাণ করা হয় মূর্তিটি। এই মূর্তির হাতে এক বিশাল ঢাল ও তলোয়ার রয়েছে, যা কেবল যুদ্ধের নয় বরং মানুষের অনন্ত সংগ্রাম ও জয়কে প্রতীকীভাবে তুলে ধরে।
দিনিপ্রো নদীর তীর
কিয়েভের দনিপ্রো নদীর তীর প্রকৃতি, ইতিহাস ও বিনোদনের এক দুর্দান্ত স্থান। এখানে গ্রীষ্মকালে নদীর ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখার মুগ্ধতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে কিয়েভের সৌন্দর্যকে অন্যরকমভাবে অনুভব করা যায়।
ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে রাতের শহরের আলোয় নিজেকে হারিয়ে ফেলা এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এসব কারণেই দনিপ্রো নদীর তীর কিয়েভে ভ্রমণকারীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য।
পিরোগোভো ওপেন-এয়ার মিউজিয়াম
আপনি যদি সময়ের স্রোতে ভেসে যেতে চান এবং ইউক্রেনের গ্রামীণ ঐতিহ্যের মাঝে হারিয়ে যেতে চান তবে পিরোগোভো ওপেন-এয়ার মিউজিয়াম আপনার জন্যই। কিয়েভের দক্ষিণে বিস্তৃত এই অনন্য জাদুঘরটি যেন একটি জীবন্ত ইতিহাসের বই। এখানকার প্রতিটি কাঠের ঘর, গির্জা ও পাথুরে পথ আপনাকে কয়েক শতাব্দী পিছিয়ে নিয়ে যাবে।
মজার বিষয় হলো, এখানে আপনি চাইলে কৃষকের মতো হাতে কলসি নিয়ে কুয়ো থেকে পানি তুলতে পারবেন বা কাঠের ঘরের বারান্দায় বসে উপভোগ করতে পারবেন ইউক্রেনের গ্রামীণ সৌন্দর্য।
কিয়েভের খাদ্য
কিয়েভ তার রঙিন সংস্কৃতি ও রুচিশীল খাদ্য জন্যও সারাবিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
কিয়েভের খাবার যেন ট্যুরের মতো এটা শুধু মুখের স্বাদ বাড়ায় না, বরং, একটি অতুলনীয় যাত্রার অনুভূতি দেয়। এই শহরের খাবারে রয়েছে স্থানীয় ঐতিহ্য।
বোরশ্চ
লাল রঙের এই বিখ্যাত স্যুপটির মূল উপাদান মাংস এবং বিট রুট। এটি কিয়েভের ঐতিহ্যের প্রতীক। লাল বিট, মাংস এবং বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরি তৈরি করা হয় স্যুপটি। পরবর্তীতে টক দই বা স্মেটানা দিয়ে পরিবেশন করা হয়, যা এই খাবারের মজা দ্বিগুণ করে তোলে।
কিয়েভ চিকেন
কিয়েভের সবচেয়ে বিখ্যাত রেসিপি হলো “কিয়েভ চিকেন”। খাবারটি মূলত মুরগিতে মাখন মেখে, বাইরে সোনালী খাস্তা দিয়ে তৈরি করা হয়।
ভারেনিকি
এটি ইউক্রেনের ঐতিহ্যবাহী ডাম্পলিং, যা বিভিন্ন ধরনের পুর দিয়ে তৈরি করা হয়। এই পুরগুলোর মধ্যে থাকে পনির, আলু, মাংস কিংবা বেরি। আপনি যদি সুস্বাদু পেস্ট্রি পছন্দ করেন, তাহলে ভারেনিকি খেতে অবশ্যই আপনার ভালো লাগবে।
কিয়েভের অর্থনীতি
কিয়েভ শিল্প, প্রযুক্তি, বাণিজ্য, এবং পর্যটনে একটি শক্তিশালী হাব।মেশিন নির্মাণ থেকে শুরু করে ডিজিটাল স্টার্টআপ কিয়েভের শিল্প খাতের অংশ। প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার উন্নয়নে শহরটি এক নতুন দিগন্ত খুলছে।
আন্তর্জাতিক ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে কিয়েভের পরিবহন ব্যবস্থা ইউক্রেনের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। শহরটি ঐতিহাসিক সৌন্দর্য, পুরানো গলি এবং গির্জাগুলির মধ্যে লুকানো রহস্য, কিয়েভকে এক অপ্রতিরোধ্য পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করেছে। যা ইউক্রেনের অর্থনীতিকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
কিয়েভের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে শহরটিতে জটিল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে শহরটি এক অদ্ভুত চাপের মধ্য পরেছে। রোজ রোজ বোমা হামলা, আকাশে শকুনের মতো হেলিকপ্টার আর যুদ্ধের আওয়াজ যেন কিয়েভ বাসীদের কাছে খুবই পরিচিত।
অনেক মানুষ এখন কিয়েভ ছেড়ে আশপাশের শহর বা দেশে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে যারা রয়ে গেছে তারা নিজের জীবন রক্ষা করার পাশাপাশি শহরটি রক্ষায় লড়ে যাচ্ছে। একদিকে যুদ্ধের তীব্রতা অন্যদিকে প্রতিরোধের এক অপ্রতিরোধ্য জোয়ার। এই শহর, এই শহরের মানুষগুলো সারা বিশ্বের জন্য প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিয়েভ সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য
কিয়েভ শহরটি ইউক্রেনের হৃদয়ে অবস্থিত, এবং এটি এক আশ্চর্যজনক শহর যা ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পূর্ণ। এখানে কিয়েভ সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কর তথ্য:
বিশ্বের সবচেয়ে গভীর মেট্রো স্টেশন
কিয়েভের ‘আর্লোভস্কা’ মেট্রো স্টেশন পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর স্টেশনগুলির মধ্যে একটি, যা প্রায় ১০৪ মিটার গভীরে অবস্থিত। এটি কিয়েভের মেট্রো সিস্টেমের অন্যতম জনপ্রিয় স্টেশন।
বিশ্বের প্রথম স্নো স্কাল্পচার উৎসব
কিয়েভ শহরে প্রতি বছর শীতকালীন সময়ে ‘স্নো স্কাল্পচার ফেস্টিভ্যাল’ অনুষ্ঠিত হয়।যেখানে শিল্পীরা বরফ দিয়ে বিশাল শিল্পকর্ম তৈরি করেন। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রথম এবং বৃহত্তম স্নো স্কাল্পচার উৎসব।
কিয়েভের রহস্যময় ‘কালো বাড়ি’
কিয়েভ শহরে একটি পুরোনো বাড়ি রয়েছে, যার নাম ‘কালো বাড়ি’। এটি অত্যন্ত রহস্যময় এবং শহরের বহু মানুষ বিশ্বাস করেন যে, এটি ভূতুরে, কারণ এখানে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে।
পানি এবং ভূগর্ভস্থ গুহার শহর
কিয়েভ শহরের নীচে একটি বিশাল গুহা নেটওয়ার্ক রয়েছে। যা একসময় প্রাচীন সন্ন্যাসীদের আশ্রয়স্থল ছিল। শহরের কিছু পুরোনো অংশে এসব গুহা এখন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কিয়েভ কেক
কিয়েভ শহরে প্রতিবার জাতীয় দিবসে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কিয়েভ কেক প্রস্তুত করা হয়। এটি শহরের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে একটি এবং পুরো শহর একসাথে কেকটি উপভোগ করে।