মজার বিষয় হলো, আপনি এক কাপ চা খেয়ে শেষ করার আগেই তারা আপনাকে দ্বিতীয় কাপ অফার করবে। আপনি যদি না বলেন, তবুও হয়তো মজার কোনো গল্পের ছলে আরেক কাপ চা আপনার সামনে হাজির করা হবে।
হাশেমাইট কিংডম অব জর্ডান…মধ্যপ্রাচ্যের আরব উপদ্বীপের ছোট্ট একটি দেশ।
এই দেশেই রয়েছে পৃথিবীর নতুন সপ্তাশ্চর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি স্থান পেত্রা নগরী; আরও রয়েছে ইসলাম ধর্মের নবী, লুত আ. এর স্মৃতিবিজড়িত মৃত সাগর। অতীতে প্রবল প্রতাপশালী ব্যবিলনীয়, পার্সিয়ান ও অ্যাসিরীয় সভ্যতার কেন্দ্রও ছিল এই জর্ডান। জেনে অবাক হবেন, দেশটির দক্ষিণ অংশ দিয়ে বয়ে গেছে মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদী- এই তিনটি ধর্মের পবিত্র তীর্থ স্থান, জর্ডান নদী। নগরায়ন ও আধুনিকায়নের চাপে বিধ্বস্ত হলেও মধ্যপ্রাচ্যের বিশুদ্ধ ঐতিহ্যের অনেকটাই এখনো এই দেশে দেখতে পাওয়া যায়।
আজকের আমরা এই জর্ডান নিয়েই জানবো নানান জানা-অজানা তথ্য।
জর্ডানের অবস্থান আয়তন ও জনসংখ্যা
জর্ডানের আয়তন মাত্র ৮৯,৩৪২ বর্গকিলোমিটার, যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ। তবে ছোট্ট এই দেশের অবস্থান পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জর্ডানের দক্ষিণে রয়েছে সৌদি আরব, উত্তরে সিরিয়া, উত্তর-পূর্বে ইরাক এবং পশ্চিম দিকে অবস্থিত ফিলিস্তিন ও ইসরাইল।
অবাক করা বিষয় হলো, ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিনের মতো এতগুলো ভয়াবহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইলের সাথে দেশটির সীমান্ত থাকা সত্ত্বেও; জর্ডানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও তুলনামূলক শান্ত। আরও অবাক করা বিষয় হলো, এই জর্ডানেই রয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা সবচেয়ে বেশি শরণার্থী।
জর্ডানের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ। জেনে অবাক হবেন, এদের ভেতর প্রায় ১৩ লাখ জনগণই হলো শরনার্থী। সিরিয়ার শরণার্থীরা বেশিরক্ষেত্রেই জর্ডানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সিরিয়া ছাড়াও দেশটিতে প্রচুর ফিলিস্তিনি শরনার্থীও বসবাস করছে। জর্ডানের রাজধানী আম্মান হচ্ছে দেশের সবচেয়ে জনবহুল শহর। এই শহরেই দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বসবাস করে।
ম্যাপ
জর্ডানের সংস্কৃতি
জর্ডানের মানুষজন খুব অতিথিপরায়ণ। অতিথি এলে চা, কফি আর খেজুর দিয়ে বরণ করে নেওয়া দেশটির ঐতিহ্য। জর্ডানের চা এর একটি মজার বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর তা হলো এই চা হতে হবে যথেষ্ট মিষ্টি। আরও মজার বিষয় হলো, আপনি এক কাপ চা খেয়ে শেষ করার আগেই তারা আপনাকে দ্বিতীয় কাপ অফার করবে। আপনি যদি না বলেন, তবুও হয়তো মজার কোনো গল্পের ছলে আরেক কাপ চা আপনার সামনে হাজির করা হবে। জর্ডানের মানুষ বিশ্বাস করে, অতিথি মানেই ঘরে আসবে সুখ আর সমৃদ্ধি।
জর্ডানিয়ানদের খাবারের তালিকায় একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে মাকলুবা। এটি দেশটির একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই খাবারের সবচেয়ে মজার দিক হলো, খাবারটি রান্নার পর, পুরো পাত্রটি সবার সামনে একবারে উল্টে দিয়ে পরিবেশন করা হয়। এই সময় পাত্র থেকে বেরিয়ে আসে মাংস, সবজি আর মশলার এক জাদুকরী মিশ্রণ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই হাড়ি উলটে দিয়ে খাবার পরিবেশন করার ফলে মাকলুবা হয়ে ওঠে আরও বেশি সুস্বাদু।
জর্ডানের রাস্তায় চলতে গেলে একটি বিষয় আপনি নিশ্চিত খেয়াল করবেন, তা হলো হর্নের ব্যবহার। অবাক করা বিষয় হলো, জর্ডানের মানুষ হর্ন বাজিয়ে কথা বলে। কোনো প্রয়োজন ছাড়াই তারা হর্ন বাজিয়ে আপনাকে ‘হ্যালো’ বলবে। মজার বিষয় হলো জর্ডানিয়ানদের মধ্যে, শুধু হর্ন বাজিয়ে পুরো কথোপকথন চালিয়ে যাওয়ার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে।
জর্ডানের মানুষের পোশাক
জর্ডানের মানুষের পোশাকেও তাদের সংস্কৃতির প্রতিফলন দেখা যায়। এদেশের পুরুষদের পোশাককে বলা হয় ‘থোব’ ও ‘কেফিয়েহ’। থোব হলো লম্বা সাদা পোশাক আর কেফিয়েহ হলো লাল-সাদা বা কালো-সাদা রঙের চেকযুক্ত কাপড়, যা মাথায় পেঁচিয়ে পরা হয়। এই পোশাক তাদের একদিকে যেমন মরুভূমির তাপ থেকে রক্ষা করে, অন্যদিকে এটি আরব সংস্কৃতির গর্ব ও জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক। আর দেশটিতে নারীদের পোশাকে থাকে রঙিন কড়ি, সূক্ষ্ম সেলাই আর জটিল নকশার কাজ। মজার বিষয় হলো, দেশটিতে নারীদের এই পোশাক কেবল সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং পোশাকের নকশার ফলে জানা যায়, উক্ত ব্যক্তি কোন অঞ্চলের কিংবা কোন গোত্রের অন্তর্গত!
জর্ডানের উৎসব-ঐতিহ্যও
জর্ডানের পোশাকের মতোই দেশটির উৎসব-ঐতিহ্যও বেশ রঙীন। এখানকার মানুষ ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক উভয় উৎসবেই প্রাণভরে অংশ নেয়। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মতো ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশই দেশটির সবচেয়ে বড় উৎসব হল “জেরাশ ফেস্টিভ্যাল”। এই উৎসবটি জর্ডানিয়ানরা নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, এবং ওপেন এয়ার থিয়েটার দেখার মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই উৎসবে শুধু স্থানীয়রাই নয়, পর্যটকরাও মেতে ওঠে।
জর্ডানের পর্যটনস্থান
ইতিহাসপ্রেমী এবং রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকের জন্য জর্ডান এক দারুণ দেশ। কারণ এ দেশের পথে পথে মিশে আছে ইতিহাস, সভ্যতা এবং আধুনিকতা। তবে জর্ডানে ঘুরতে যাওয়ার সবথেকে ভালো সময় হলো বসন্ত ও শরৎকাল। কারণ, জর্ডানের জলবায়ু মরুভূমি প্রকৃতির। দেশটিতে গ্রীষ্মকালে গরম ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর শীতকালে পড়ে প্রচুর ঠান্ডা, এমনকি কিছু কিছু পাহাড়ি এলাকায় তুষারপাতও দেখা যায়! আবহাওয়ার এমন বৈচিত্র্যই জর্ডানের প্রকৃতিকে দিয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
মৃত সাগর
জর্ডানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে মৃত সাগরের নাম। অনেকে আছেন জর্ডান দেশটিকে শুধু মাত্র ৪০০ মিটার উচ্চতার এই মৃত সাগরের জন্যই চেনেন।
জেনে অবাক হবেন, মৃত সাগরের পানিতে সাঁতার না কেটেও ভেসে থাকা যায়। আর তাই এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মৃত সাগরের পানিতে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। এঁদের কেউ কেউ আবার সমুদ্রে ভেসে ভেসে পত্রিকাও পড়েন। পর্যটকদের এমন করার কারণ হলো, এই সাগরের পানিতে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ থাকায় এখানে একদমই ডুবে যাওয়ার ভয় নেই! অন্যদিকে এই লবণাক্ততার কারণে এখানে কোনো প্রাণীও বাঁচতে পারে না। আর তাই এর নাম হয়েছে ডেড সী বা মৃত সাগর।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই সাগরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, নবী লূতের (আ.) আহবানে সাড়া না দেওয়ার ফলে যে জাতি ধ্বংস হয়েছিলো, তারা এই সমুদ্রস্থলেই বসবাস করতো।
পেত্রা নগরী
জর্ডানের প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম সেরা নিদর্শন হলো পেত্রা নগরী। পাথরে খোদায় করা এই গোলাপি শহরটি অদ্ভুত এক রহস্যময়তায় ঘেরা। রাজধানী আম্মান থেকে ২৩৬ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত প্রাচীন এই নগরীটি একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং পৃথিবীর নতুন সপ্তাশ্চর্যের একটি। প্রায় দুই হাজার বছর আগে নাবাতাইন জাতি পেত্রা নগরী প্রতিষ্ঠা করেছিল। তবে, ৫৫৫ খ্রিস্টাব্দের এক ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়, নাবাতাইনদের গৌরবময় এই নগরি পেত্রা।
কিন্তু, এখানকার বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থাপনা এখনো সুরক্ষিত আছে। প্রায় ১ কি.মি. লম্বা সরু প্রবেশপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতেই এখানে চোখের সামনে দেখা যাবে, নগরীর সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতিস্তম্ভ ‘দ্য ট্রেজারি। রোদে ঝলসানো এই প্রাসাদের সূক্ষ্ম কারুকাজ পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে। আর কিছুদূর হাঁটলেই বামপাশে চোখে পড়বে কিছু সিঁড়ি যা গিয়ে শেষ হয় পাহাড়ের বেদীতে। এই জায়গাকে বলে “হাই প্লেস অব স্যাক্রিফাইস”। এখানে একসময় পশু বলি দেওয়া হতো।
আল কাসর প্রাসাদ
এদিকে আম্মান শহরেও বেশ কিছু মহামূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। এগুলোর মধ্য সবচেয়ে বিখ্যাত দ্য সিটাডেল এর আল কাসর প্রাসাদ। আল কাসার প্রাসাদকে অনেকেই মরুভূমির প্রাসাদ নামে চেনেন। দ্য সিটাডেলের আল-কাসর প্রাসাদে রয়েছে প্রচুর প্রাচীনামলের ধ্বংসাবশেষ।
এই প্রাচীন প্রাসাদটি একসময় ছিল জর্ডানের প্রশাসনিক কেন্দ্র, কখনো ভ্রমণপথের বিশ্রামাগার, আবার কখনো ছিল উমাইয়া খলিফাদের শিকারাভিযানের আস্তানা! প্রাসাদের ভেতরের দেয়ালে এখনও দেখা যায় চোখধাঁধানো সব প্রাচীন আমলের চিত্রকর্ম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আল কাসারের অনেক জায়গা আজও রহস্যে ঘেরা। কারণ, এই প্রাসাদের অনেক ঘর কী কাজে ব্যবহার করা হতো, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে আজও চলছে তর্ক।
গ্রেট টেম্পল অব আম্মান
এই প্রাসাদের কাছেই রয়েছে গ্রেট টেম্পল অব আম্মান। প্রায় দুই হাজার বছর আগে রোমান সম্রাটদের আমলে এই স্থাপনাটি গড়ে তোলা হয়। প্রচলিত রয়েছে যে এটি একসম হারকিউলিসের মন্দির ছিল। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো হারকিউলিসের একটি ভাঙা হাত ও কনুই এর মূর্তি। ধারণা করা হয়, এই মূর্তিটি প্রায় ৪৩ ফুট লম্বা ছিল! কেউ কেউ বলে, হারকিউলিসের সেই বিশাল মূর্তিটি হয়তো কোনো ভূমিকম্পের কারণে ধ্বংস হয়ে যায়, আবার কেউ বলেন, স্থানীয়রা নিজেদের ঘর বানানোর জন্য এখান থেকে পাথর খুলে নিয়ে যেতো।
জর্ডান আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম
এছাড়াও, অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে দেশটিতে রয়েছে জর্ডান আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম। এই জাদুঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সংগ্রহ হলো বিশ্বের প্রাচীনতম মানব মূর্তি “আন-ঘাজালিন”, যা প্রায় ৮০০০ বছরের পুরোনো! এছাড়াও এখানে রয়েছে মৃত সাগর থেকে উদ্ধার করা মহামূল্যবান ডেড সি স্ক্রলস, প্রাচীন মুদ্রা, অস্ত্র, মৃৎপাত্র এবং খ্রিষ্টপূর্ব আমলের শিল্পকর্ম, যা দেখে মনে হবে যেন ইতিহাস নিজেই এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। এই ছোট্ট জাদুঘর ঘুরে আপনি জর্ডানের প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে ইসলামিক যুগ পর্যন্ত একটানা পুরো ইতিহাস এক নজরে দেখে ফেলতে পারবেন।
রয়্যাল অটোমোবাইল মিউজিয়াম
আপনি গাড়িপ্রেমী হয়ে থাকলে রয়্যাল অটোমোবাইল মিউজিয়ামে আপনার জন্য চমক অপেক্ষা করছে। এখানে দেখতে পাবেন জর্ডানের রাজাদের, বিশেষ করে বাদশাহ হোসাইনের, বিলাসবহুল রাজকীয় গাড়ির সংগ্রহ। আম্মান শহরে অবস্থিত এই জাদুঘরটি তৈরি করা হয়েছে জর্ডানের প্রয়াত বাদশাহ হোসাইনের স্মৃতিকে ঘিরে, যিনি ছিলেন দারুণ এক গাড়িপাগল রাজা।
এখানে রাজপরিবারের ব্যবহার করা রোলস রয়েস, বেন্টলি, ক্যাডিলাক থেকে শুরু করে এমনকি মার্শাল আর্ট কিংবদন্তি ব্রুস লির মোটরবাইক দেখতে পাওয়া যাবে! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, গাড়িগুলোর পাশে থাকা ডিজিটাল ডিসপ্লেতে আপনি জানতে পারবেন সেই গাড়ির ঐতিহাসিক মুহূর্ত বা ঘটনাও—যেমন কোন রাজকীয় সফরে ব্যবহার হয়েছে, কিংবা কোন রাষ্ট্রপ্রধান এসেছিলেন সেই গাড়িতে চড়ে।
ওয়াদি রুম মরুভুমি
মরুভূমির দেশ জর্ডানে এসেছেন, অথচ, মরুভূমি দেখবেন না তা কী হয়! মরুভূমি দেখতে হলে দেশটিতে সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ গন্তব্য হলো ওয়াদি রুম মরুভুমি। এটি জর্ডানের দক্ষিণ অংশে সুউচ্চ মালভূমির উপরে অবস্থিত। জেনে অবাক হবেন, জীবনধারণের জন্য প্রতিকূল এই এলাকায় জনমানুষ বলতে আছে শুধু কিছু বেদুইন জনগোষ্ঠী। আর তাই, ওয়াদি রুম মরুভুমিতে রাতের স্বচ্ছ আকাশে তারা দেখার পাশাপাশি বেদুইনদের জীবনযাত্রাও কাছ থেকে দেখা যাবে। এছাড়াও, উটের ক্যারাভেন বা ফোর হুইল ড্রাইভে চড়ে ওয়াদি রুম ঘুরে দেখার আনন্দও নেহাতই কম নয়। জেনে অবাক হবেন, হলিউডের ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ সিনেমার কল্যাণে ওয়াদি রুমের সৌন্দর্য পৃথিবীবাসীর কাছে নতুন করে উন্মোচিত হয়েছিলো।
আকাবা
মরুভূমির পাশাপাশি দেশটিতে রয়েছে সমুদ্র সৈকত। জর্ডানের একমাত্র সমুদ্রবন্দর হলো আকাবা। লোহিত সাগরের তীরে অবস্থান হওয়ায় আকাবায় পর্যটকদের সমাগম লেগেই থাকে। লোহিত সাগরের পানি ডাইভিং ও স্নোরকেলিংয়ের জন্য দারুণ উপযোগী। এছাড়াও, আকাবা মেরিন পার্কের ৭ কি.মি. দীর্ঘ উপকূল,প্রবালপ্রাচীর ও সামুদ্রিক জীবন সকল পর্যটককে বেশ মুগ্ধ করে তোলে। এই আকাবা থেকে আবার ১০ মিনিট দুরত্বের আবার রয়েছে পাম বিচ। এই বিচে চা খেতে খেতে চমৎকার সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ পর্যটকেরা কখনই হাত ছাড়া করতে চান না।
ডানা নেচার রিজার্ভ
জর্ডানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জীব বৈচিত্র্য একসাথে উপভোগ করার জন্য রয়েছে দক্ষিণে কাদিসিয়া মালভূমির উপরে ১,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ডানা নেচার রিজার্ভ। এই পার্ক জর্ডানের ডানা গ্রাম ও ডানা মরুভূমিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। পুরো জর্ডানের সব প্রজাতির উদ্ভিদের এক-তৃতীয়াংশই এই রিজার্ভটিতে দেখতে পাওয়া যায়। এখানে একইসাথে মরুভূমি, ভূমধ্যসাগরীয় রেইনফরেস্ট এবং আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপের নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে। এছাড়াও, ডানা গ্রামে রয়েছে প্যালিওলিথিক, নাবাতাইন ও রোমান সভ্যতার নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। অত্যধিক উচ্চতার কারণে এই এলাকায় শীতকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ে এবং কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে। এই এলাকাটি হাইকিংয়ের জন্য বেশ বিখ্যাত।
জর্ডানকে ঘিরে বিতর্ক
এত চমকপ্রদ পর্যটন আকর্ষণ থাকার পরেও জর্ডানকে ঘিরে বিতর্কের শেষ নেই। ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলে দেশটিকে প্রায়ই সমালোচনার শীর্ষে থাকে। এই সব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে গাজা-ইসরায়েলের যুদ্ধকে ঘিরে দেশটির ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান। তবে, অত্যন্ত বিতর্কিত এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিকভাবে জর্ডান বেশ দুর্বল একটি দেশ।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের মতো অশান্ত অঞ্চলে জর্ডান অপেক্ষাকৃত দরিদ্র। এমনকি আর্থিকভাবে সাহায্যের জন্যও জর্ডানকে অন্য দেশের দারস্থ হতে হয়। এছাড়া, ইসরায়েলের সাথেও দেশটির সীমান্ত রয়েছে। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে যে কোনো বৈরী সম্পর্ক অর্থনৈতিকভাবে জর্ডানকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অতিরিক্ত বিপদ হিসেবে জর্ডানে রয়েছে শরনার্থী সমস্যা। দেশটির মোট জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশই ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার শরনার্থী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বক্তব্য জর্ডানের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে। গাজার জনগণকে, জর্ডান ও মিশরে পুনর্বাসিত করে পুরো উপত্যকা খালি করার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই প্রস্তাবে সরাসরি না করে দিয়েছে মিশর ও জর্ডান।
একদিকে ইতিহাস-ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ প্রাচীন সভ্যতা, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির জটিল ঘূর্ণিপাকে আটকে আছে দেশটিকে ঘিরে। এখানে আপনি মরুভূমির রুক্ষতা আর মানুষের মমতা একসাথে দেখতে পাবেন। এটি মধ্যপ্রাচ্যের এমন এক দেশ, যা কিনা সবার নজরে না পড়লেও, যারা একবার ঘুরে আসে—তারা এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে পারে না।