Image default
জীবনযাপন

অল্প বয়সে প্রেম: আবেগ, চ্যালেঞ্জ এবং জীবনের নতুন অধ্যায়

কিশোর বয়সের প্রেম; স্বপ্ন, এক্সাইটমেন্ট আর বাস্তবতার মধ্যে এক অদ্ভুত টানাপোড়ন 

হঠাৎ একদিন খেয়াল করে দেখলেন আপনার সন্তান কারও সঙ্গে মেসেজিংয়ে ব্যস্ত। তার হাসির মধ্যে নতুন একটা উজ্জ্বলতা, চোখেমুখে রহস্যময় এক উচ্ছ্বাস! সন্দেহ হলো? একটু খোঁজ নিয়ে জানলেন সে প্রেমে পড়েছে!

এবার মাথায় হাজারটা প্রশ্ন এটা কি আসল প্রেম, নাকি সাময়িক মোহ? পড়াশোনা নষ্ট হয়ে যাবে না তো? ও যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়?

শুধু আপনিই নন, প্রায় সব বাবা-মাই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। কিন্তু মনে রাখবেন সন্তান যখন প্রেমে পড়ে তখন তার সবচেয়ে বেশি দরকার বাবা-মায়ের সমর্থন ও সঠিক দিকনির্দেশনা। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে সে হয়তো আরও বিপদে জড়িয়ে যাবে। তাই কঠোরতা নয়, বরং, কৌশলী বুদ্ধিমত্তাই হতে পারে আপনার হাতিয়ার!

অল্প বয়সে প্রেম: অনুভূতির প্রথম ঝলক 

প্রেমের অনুভূতি সবসময়ই বিশেষ। কিন্তু যখন এটি খুব অল্প বয়সে আসে তখন সেটি হয়ে ওঠে রোমাঞ্চকর, রহস্যময় এবং অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং। এই বয়সে প্রেম মানে নতুন অনুভূতির জগতে প্রবেশ। তবে প্রশ্ন হলো অল্প বয়সের প্রেম কি সত্যিকারের ভালোবাসা নাকি কেবল এক ধরণের বিভ্রম?

অল্প বয়সে প্রেম অনেকটা প্রথমবার বৃষ্টি দেখার মতো। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে কথা বলা, সারাদিন তার কথা ভাবা, কিংবা সামান্য মন খারাপ হলেই কষ্ট পাওয়া সবকিছুই যেন সিনেমার মতো রোমান্টিক মনে হয়।

অল্প বয়সে প্রেম: আবেগ নাকি বিভ্রান্তি?

প্রেম এই শব্দটি শুনলেই হৃদয়ে একধরনের আলোড়ন তৈরি হয়; বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মনে। অল্প বয়সে প্রেম করা মানে যেন জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করা। যেখানে আবেগের ঢেউ গর্জন তোলে, ভালো লাগার অনুভূতি তীব্র হয়, আর চারপাশের পৃথিবী যেন আরও রঙিন মনে হয়। 

কিন্তু এই প্রেম কি সত্যিকারের ভালোবাসা নাকি শুধুই আবেগের বন্যা? অল্প বয়সের প্রেম নিয়ে আমাদের কৌতূহল যেমন বেশি তেমনি সংশয়ও কম নয়।

অল্প বয়সে প্রেম কেন এত আকর্ষণীয়?

অল্প বয়সে প্রেম আকর্ষণীয় হওয়ার পেছনে বেশ কিছু মনস্তাত্ত্বিক, শারীরবৃত্তীয় এবং সামাজিক কারণ রয়েছে। এই সময় হৃদয় থাকে কাঁচা, অনুভূতি থাকে তীব্র। আর পৃথিবীকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি থাকে একদম নতুন। হরমোনের পরিবর্তনের ফলে আবেগের উত্থান-পতন বাড়ে। আর সামান্য ভালো লাগাই তখন বিশাল কোনো অনুভূতি মনে হয়।

অল্প বয়সে প্রেম

এ বয়সে প্রেম শুধু আকর্ষণ নয়, বরং, কৌতূহল, নতুন অভিজ্ঞতা নেওয়ার ইচ্ছা আর কারও বিশেষ হওয়ার তীব্র চাওয়ার সঙ্গে মিশে যায়। সিনেমা, গান, গল্প, আর চারপাশের প্রেমের গল্পগুলো এই অনুভূতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। তখন মনে হয় কাউকে ভালোবাসার মানে জীবন আরও সুন্দর হয়ে যাওয়া। একটুখানি হাসি, একটা মেসেজ সবই মনে হয় হৃদয়ের সবচেয়ে বড় ঘটনা।

কেন অল্প বয়সে প্রেম হয়?

বয়ঃসন্ধিকালে শরীরে টেস্টোস্টেরন ও এস্ট্রোজেনের মতো হরমোনের বৃদ্ধি ঘটে। যা প্রেমের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়। ডোপামিন এবং অক্সিটোসিনের মতো “ফিল-গুড” হরমোনও তখন তীব্রভাবে কাজ করে। যা প্রেমকে রোমাঞ্চকর করে তোলে।

এছাড়াও রোমান্টিক গল্প-উপন্যাস, সিনেমা, এবং বন্ধুদের প্রভাব একসঙ্গে মিলে প্রেমের অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। নতুনত্বের আকর্ষণ, একাকিত্বের অনুভূতি কিংবা বিশেষ কারও প্রতি অনুরাগ থেকেই অনেক তরুণ-তরুণীরা অল্প বয়সে প্রেমে পড়ে।

অল্প বয়সের প্রেমের সমস্যা

অল্প বয়সের প্রেমের গল্পের পথ মসৃণ নাও হতে পারে! প্রেমের রঙিন দুনিয়ার বাইরে কিশোর-কিশোরীদের জন্য কিছু ট্র্যাপ অপেক্ষা করে থাকে। চলুন দেখি প্রেমের এই রোলার কোস্টারে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে‌।

ভুল মানুষের প্রতি আসক্ত হয়ে প্রতারণার শিকার

এই সময় তরুণ তরুণীরা প্রেমে এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে যে, পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দিতে ভুলে যায়। প্রেমিক-প্রেমিকার ফোন কল, চ্যাট, দেখা করার পরিকল্পনা এসব করতে করতেই গুরুত্বপূর্ণ সময় চলে যায়। ফলাফল? পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়া, আর ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের ওপর ধাক্কা।

এমনকি অনেক সময় তারা ভুল মানুষের প্রতি আসক্ত হয়ে প্রতারণার শিকারও হয়। ভবিষ্যতে এই ভুলগুলো জীবনকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করতে পারে। কিশোর বয়সে সম্পর্কগুলো বেশি আবেগঘন হয়। মানসিক চাপ ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়। যা কাজ বা ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

অল্প বয়সের প্রেম! বাবা-মা কী করবেন?

ধরুন আপনার সন্তান অল্প বয়সে প্রেম করছে। তখন কি করবেন? করণীয় কি?

সঠিক সময়ে কিছু স্মার্ট স্টেপ নেওয়ার মাধ্যমে আপনি বিষয়টিকে সামলিয়ে নিতে পারেন। আসুন জেনে নিই ।

অল্প বয়সে মেয়েটি প্রেমে পড়েছে আর বাবা-মা তাকে তিরস্কার করছে

আতঙ্কিত নয় কৌশলী হন

বেশিরভাগ বাবা-মা এই খবর শুনে ভয় পান, রাগ করেন বা কঠোর শাসন শুরু করেন। কিন্তু এতে লাভ হয় না। বরং সন্তান আরও গোপনে চলতে শুরু করে। 

তাই ধৈর্য ধরুন, মাথা ঠাণ্ডা রাখুন, তাকে সরাসরি দোষারোপ না করে বলুন তোমার এই সম্পর্কটা নিয়ে আমি জানতে চাই। বলবে? এতে সন্তানের মধ্যে বিশ্বাস জন্মাবে। সে লুকিয়ে কিছু করার বদলে নিজেই সব খুলে বলবে।

না বলবেন না বরং বুঝতে শেখান

অনেক বাবা-মা প্রথমেই হিন্দি সিনেমার ভিলেনদের মতো আচরণ শুরু করে দেন। কঠোরভাবে বলেন এই বয়সে প্রেম? অসম্ভব! এখনই বন্ধ করো! কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অনেক সময় উল্টো আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। 

বরং বলুন আমি তোমার অনুভূতিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, কিন্তু তুমি কি নিশ্চিত যে, এই সম্পর্ক তোমার জন্য সত্যিই ভালো? এতে সে নিজেই ভাবতে শুরু করবে। তার সিদ্ধান্ত ভালো না খারাপ তা বিশ্লেষণ করবে।

বন্ধু হন বিচারক নয় 

সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কটা এমন হোক যেন সে নির্দ্বিধায় আপনাকে সব বলতে পারে। সে যদি মনে করে যে আপনি তাকে বোঝেন তাহলে সে লুকিয়ে কিছু করবে না।

বাস্তবতা শিখিয়ে দিন

অল্প বয়সে প্রেম মানেই চিরস্থায়ী সম্পর্ক হবে এই ধারণা অনেক কিশোর-কিশোরীর মনে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তাই তাকে বোঝান প্রেম মানে কেবল অনুভূতি নয়, বরং, রয়েছে দায়িত্ববোধও। তুমি কি প্রস্তুত দায়িত্ব নিতে?

এতে সে নিজেই বুঝবে, জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া কতটা জরুরি।

ভবিষ্যৎ ভাবতে শেখান

এই বয়সে আবেগের কারণে অনেকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। তাই তাকে ভাবতে শেখান, এই সম্পর্ক যদি সত্যিই গভীর হয় তাহলে ১০ বছর পরে ও থাকবে। যদি এটা সত্যিকারের ভালোবাসা হয় তাহলে সময়ের সঙ্গে আরও সুন্দর হবে, চাপ তৈরি করবে না।

এতে সে বুঝবে আসল প্রেম কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, বরং জীবনকে সমৃদ্ধ করে।

সন্তানকে বিশ্বাস করুন

সন্তানের ওপর বিশ্বাস রাখুন। তাকে বোঝান যে সে যদি কোনো ভুলও করে, তবুও, আপনি তার পাশে আছেন। বলুন তুমি তোমার জীবনের জন্য যা ঠিক মনে করো সেটাই করো। তবে আগে ভেবে দেখো এটা তোমার ভবিষ্যতের জন্য ভালো কি না।

এতে সে আত্মবিশ্বাসী হবে এবং কোনো ভুল করলে নিজেই তা স্বীকার করবে ও ঠিক করার চেষ্টা করবে।

সন্তান প্রেম করছে জানতে পারলে যেসব কাজ করবেন না 

সন্তান প্রেম করছে জানতে পারলে বাবা-মায়ের কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত, যাতে সম্পর্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে এবং পারিবারে সুস্থ পরিবেশ বজায় থাকে। 

১। চিৎকার-চেঁচামেচি ও পরিবারের সম্মান গেল টাইপের ডায়লগ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

২। সম্পর্ক ভেঙে ফেলতে হবে এই ধরনের- কঠোর নিষেধাজ্ঞা কখনই দিতে যাবেন না।

৩। তোর থেকে আমি বড় আমি সব জানি ভাব দেখাতে যাবেন না। 

৪। গোয়েন্দাগিরি ও ফোন চেকিং মিশন এই ধরনের কাজ করতে যাবেন না।

সন্তানকে তিরস্কার নয় সাপোর্ট করুন

গোপনে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি, সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি এসব করলে সন্তানের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে, বরং, সে আরো লুকিয়ে চলবে। এমনকি আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের সামনে এই বিষয় নিয়ে কথা বললে সন্তান লজ্জা পাবে এবং আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। এভাবে বুঝিয়ে বললে সন্তানও আত্মবিশ্বাসী থাকবে। সে ভুল করলেও নিজেই তা উপলব্ধি করতে পারবে।

অল্প বয়সে সন্তান পথভ্রষ্ট হবে এইটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, কীভাবে সামলাবেন এইটাই আসল বিষয়।জোর করে কিছু করলে সম্পর্ক আরো জটিল হতে পারে।তাই ধৈর্য ধরুন।বন্ধুত্বপূর্ন থাকুন আর বুঝিয়ে বলুন।

রেফারেন্স:

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More