Image default
পথে প্রান্তরে

সবুজের আহ্বানে: শ্রীমঙ্গলের পথে

সবুজের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার নামই যদি হয় মুক্তি, তবে শ্রীমঙ্গলই হলো সেই ঠিকানা।”

শহরের কোলাহল পেরিয়ে মোহনা নদীর মতো শান্ত এক অঞ্চল। যেখানে রয়েছে চা বাগানের লুকানো সৌন্দর্য থেকে শুরু করে পাহাড়ি ঝর্ণাসহ সব এক্সক্লুসিভ মেমোরির ভান্ডার। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে লুকিয়ে থাকা এই সবুজের স্বর্গ যেন প্রকৃতির হাতে আঁকা জলরঙের এক নিখুঁত চিত্র। বাংলাদেশের যে কয়েকটি স্থান প্রকৃতির প্রেমে পড়তে বাধ্য করে তার মধ্যে শ্রীমঙ্গল যেন সবার শীর্ষে

চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল 

বাংলাদেশের মানচিত্রে যদি প্রকৃতির একান্ত নিজস্ব একটা কোণ থাকে তবে শ্রীমঙ্গল হবে তার নিঃসন্দেহে দাবিদার। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত এই শহরটি যেন একপ্রকার সবুজ স্বর্গ। 

“চায়ের রাজধানী” খ্যাত শ্রীমঙ্গলকে স্থানীয় ভাষায়  “চা কন্যার শহরও বলা হয়ে থাকে।দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং বৃহত্তম চা-বাগানগুলো এখানেই অবস্থিত। শতাব্দী পুরনো এই বাগানগুলো যেন সময়ের নিরব সাক্ষী। চা শ্রমিকদের মুখে গান, চায়ের পাতায় শিশিরের ছোঁয়া সবকিছুই যেন এক অপার্থিব আবেশ তৈরি করে। চলুন এই “চা কন্যার শহর” সম্পর্কে আরো কিছু মজার মজার তথ্য জেনে আসি।

শ্রীমঙ্গলের নামকরণের ইতিহাস

সবুজ স্বর্গ খ্যাত শ্রীমঙ্গলের নামকরণের পিছনে রয়েছে ইতিহাস ও লোককাহিনির এক আকর্ষণীয় যুগলবন্দী। চা কন্যার শহর সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হলে শুধু প্রকৃতি নয়, আপনাকে অবশ্যই এর নামকরণের ইতিহাসের পেছনের গল্পগুলোও জানতে হবে।

শ্রীমঙ্গল নামটি নিয়ে একটি জনপ্রিয় একটি লোককথা প্রচলিত আছে। এক সময় এই অঞ্চলটিতে বাস করতেন শ্রী ও মঙ্গল নামের দুই ভাই। তারা ছিলেন খুব দয়ালু,গুণী এবং পরোপকারী। এই দুই ভাইয়ের অবদানে এই শহরটিতে শান্তি ও সমৃদ্ধি ছড়িয়ে পরেছিল। মানুষের মুখে মুখে দুই ভাইয়ের নাম ছড়িয়ে পড়ে এবং  পরবর্তীতে এলাকাটি পরিচিতি পায় “শ্রীমঙ্গল” নামে। যেখানে শ্রী’ মানে সৌন্দর্য, গৌরব বা ঐশ্বর্য এবং ‘মঙ্গল’ মানে কল্যাণ বা শুভ।

তবে আরেকটি ধারণা মতে , এ অঞ্চলে একসময় প্রচুর পরিমাণে “শ্রী” জাতীয় নামের (শ্রীরাম, শ্রীকান্ত, ইত্যাদি) মানুষের বসবাস ছিল। যাদের নেতৃত্বে এই জনপদের উন্নতি হয়। আবার মঙ্গলাচরণ বা পূজার শুভ সূচনা হিসেবে ‘মঙ্গল’ শব্দটিও স্থানীয় সংস্কৃতিতে  বেশ প্রচলিত ছিল। এইসব

ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক প্রভাব মিলেই সম্ভবত নামটি গঠিত হয়েছে। তবে আজ শ্রীমঙ্গল পরিচিত বাংলাদেশের “চা-কন্যা” হিসেবে। 

শ্রীমঙ্গলের অবস্থান ও পরিচিতি

রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২শ’ কি.মি. দূরত্বে এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রকৃতির আদুরেকন্যা শ্রীমঙ্গল অবস্থিত। ৪২৫.১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরটিতে প্রায় ৪৩ শতাংশ এলাকায় চা বাগান দ্বারা আচ্ছাদিত।

শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান 

চা-বাগানের বাঁকে হাঁটতে হাঁটতে, সাত রঙের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কিংবা লাউয়াছড়ার গহীন অরণ্যে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আপনি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন অ্যাডভেঞ্চারের আসল সংজ্ঞা। 

এবার চলুন ঘুরে দেখা যাক শ্রীমঙ্গলের সেরা আকর্ষণীয় স্থান সমূহ থেকে।

চা-বাগান

এই জাদুকরী শহরের সবচেয়ে মোহময় স্থান চা বাগান। এখানেই আছে “বাংলাদেশের চা রাজধানী” নামের সার্থকতা।“শ্রীমঙ্গল মানেই চা, আর চা মানেই প্রেম।”

লাল মাটির আঁকাবাঁকা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ এক টিলা চারপাশে যতদূর চোখ যায়‌ দেখা যায় সারি সারি চা গাছ, কুয়াশায় মোড়া সকালে চা-শ্রমিকদের পাতা তোলার দৃশ্য, আর আকাশের গায়ে ঝুলে থাকা সূর্যরশ্মি। 

শহরটিতে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫টিরও বেশি চা বাগান রয়েছে। বাগান গুলোর বেশিরভাগই আয়তন, উৎপাদন ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে  বরাবরই দর্শনার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। 

চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মালনীছড়া, রাজঘাট, এবং লাউয়াছড়া বাগানগুলো যেতে হবে। 

শ্রীমঙ্গলের চা বাগান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম প্রাণবন্ত ও সবুজ প্যারাডাইজ। ১,২৫০ হেক্টরের  সেমি-এভারগ্রিন এই  বনভূমিটিকে  ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই  সরকারি ভাবে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরে অবস্থিত অব লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান যেন এক টুকরো জাদুময় জঙ্গল।পাহাড়ি টিলা, ঘন সবুজ গাছপালা আর পাখির ডাক সব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর রেইনফরেস্ট। 

বাংলাদেশের অ্যামাজন খ্যাত এই উদ্যানে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান,বনবিড়াল, মায়া হরিণ এবং ২০০’র বেশি পাখির বসবাস। প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

চা বাগানের বুক চিরে গর্জে ওঠা এক বিস্ময়কর সৌন্দর্যের নাম  মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত আর সবচেয়ে রোমান্টিকও বটে। 

শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। ১৬২ ফুট উচ্চতা থেকে নিচে নেমে আসা সাদা জলের ধারা  দেখে মনে হবে এ যেন কোনো স্বর্গীয় ঝরনা।

চারপাশে গা ছমছমে পাহাড়, পাথরে পাথরে ধাক্কা খেয়ে গড়িয়ে পড়া পানির ছলছল ধ্বনি, আর মাথার ওপরে ঘন ছায়ার বন সবকিছু মিলিয়ে জলপ্রপাতটি অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

বাইক্কা বিল 

শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাইক্কা বিল যেন এক প্রশান্তিপূর্ণ জলাভূমি।  প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই বিলটিকে  ২০০৩ সালে সরকারিভাবে সংরক্ষিত জলাভূমি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

শীতকালে বিলটি অসংখ্য পরিযায়ী পাখি দ্বারা মুখরিত হয়। পানকৌড়ি, পাতি সরালি, বেগুনি কালেম, রাজহাঁসসহ নানা প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এখানে। সকালে বা বিকেলে পাখিদের  ডাকে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এই জলাভূমিটি।

বিলের চারপাশে বিস্তৃত জলজ উদ্ভিদ, শাপলা-শালুক, ছোট মাছ ও নানা জলচর প্রাণীর বাস। এ জায়গাটি শুধু প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে নয় বরং গবেষকদের কাছেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দর্শনার্থীদের সুবিধা জন্য বিলে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। যেখান থেকে দর্শনার্থীরা খুব সহজেই দূরবীন দিয়ে পাখি ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পারেন।

হামহাম জলপ্রপাত

রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টে ঘন জঙ্গলের বুক চিরে নেমে আসা এই জলধারা যেন পাহাড়ি রূপকথার এক জীবন্ত চিত্র। 

হাম হাম জলপ্রপাতে পৌঁছাতে হলে আপনাকে পার করতে হবে চা-বাগান, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, বাঁশের সাঁকো, কাদা-মাটি আর ঘন বন। প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ট্রেকিং করে পৌঁছাতে হবে  হামহাম  জলপ্রপাতটি তে। এ যেন এক চরম অ্যাডভেঞ্চার। অজানার দিকে এক রোমাঞ্চকর যাত্রা।

ঘন বনের মধ্য প্রায় ১৫০ ফুট উচ্চতা থেকে গড়িয়ে পড়া সাদা জলরাশির। হাম হাম শুধু একটি জলরাশি নয় এটি একটি জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য। জলপ্রপাতটিতে ট্রেকিং করার সময় আপনি দেখতে পাবেন নানা প্রজাতির গাছ, বন্যপ্রাণী, পাখির কলরব । এমনকি  আপনার ভাগ্য  ভালো হলে বানর বা হরিণের দেখাও পেয়ে যেতে পারেন। এই পুরো পথটাই যেন এক জ্যান্ত অরণ্যচিত্র।

হামহাম জলপ্রপাত

নিলকণ্ঠ টি কেবিন 

চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে যদি চায়ের স্বাদে ডুব দিতে চান তবে “নীলকণ্ঠ টি কেবিন” আপনার জন্য এক স্বর্গীয় গন্তব্য। এটা শুধু একটা চায়ের দোকান নয় এটা এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। একে বলা যায় ‘চায়ের থিয়েটার’।

সাত রঙের চা এর জন্য এই কেবিনটি  বিখ্যাত। এক কাপ চায়ে সাতটি স্তরে সাত রঙের চা! প্রতিটি রঙের স্বাদ আলাদা, অভিজ্ঞতাও আলাদা। প্রতিটি স্তরে আলাদা চা পাতার মিশ্রণ ও মশলার ব্যবধান। এক কাপে সাত রকম চা দেখলেই মনে হবে যেন ইন্দ্রধনু এক কাপের মধ্যে বাসা বেঁধেছে!

নীলকণ্ঠ টি কেবিনটি ছোট্ট হলেও ভিতরে প্রবেশ করলেই আপনি পাবেন স্নিগ্ধ এক আতিথেয়তা। চারপাশে গ্রামীণ পরিবেশ, বনের পাশের গাঢ় সবুজ ছায়া, আর সাথে কাপে কাপে বিস্ময় সব মিলিয়ে একদম আলাদা রকমের অভিজ্ঞতা।

সাত রঙের চা

মনিপুরী ও খাসিয়া গ্রাম

শ্রীমঙ্গল শুধু চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত নয় এটি এমন একটি জায়গা যেখানে বাংলাদেশ ধরা দেয় একেবারে নতুন রূপে। এর প্রমাণ মেলে যখন আপনি পা রাখবেন মনিপুরী ও খাসিয়া গ্রামে। দুটি গ্রাম, দুটি জীবনধারা, দুটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি একসূত্রে গাঁথা।

একদিকে আপনি দেখতে পারবেন মনিপুরীদের  কোমল সুর আর রঙিন তাঁত। অন্যদিকে খাসিয়াদের পাহাড়ি সৌন্দর্য আর পানপাতার মায়া। এই দুই গ্রাম একসঙ্গে যেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক লুকানো রত্ন।

এখানে গিয়ে ঘুরে দেখতে পারবেন মনিপুরী ও খাসিয়া আদিবাসী গ্রাম। তাদের জীবনযাত্রা, পোশাক, খাবার, ঘরবাড়ি সবকিছুতেই আছে এক অনন্য সংস্কৃতি।এটি শুধু একটি পর্যটন নয় বরং এক সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা।

শ্রীমঙ্গলে গিয়ে কী কী খাবার খাবেন 

শ্রীমঙ্গল শুধু প্রকৃতির রূপে নয়, স্বাদে-গন্ধেও অনন্য। পাহাড়-চা-বনের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি এখানে এমন কিছু খাবার আছে  যা আপনার ভ্রমণকে আরও স্মরণীয় করে তুলবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, শ্রীমঙ্গলে ভ্রমণে গেলে কী কী খাবার একদমই মিস করা চলবে না।

পাহাড়ি খিচুড়ি ও বুনো সবজি

শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি অঞ্চলে জনপ্রিয় এক বিশেষ খাবার হলো পাহাড়ি খিচুড়ি ও বুনো সবজি। দেশি চাল, ডাল, বাঁশকোর মাংস বা শুকনা মাছ মিশিয়ে তৈরি হয় এই হালকা মসলাযুক্ত খিচুড়ি‌। যার প্রতিটি চামচে আপনি পাবেন বনজ ঘ্রাণ । খিচুড়ির  সঙ্গে থাকে জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা টাটকা বুনো শাক সবজি। খাবারটি একেবারে প্রাকৃতিক স্বাদে ভরপুর। এটি শুধু খাবার নয় বরং শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ের গন্ধমাখা এক সাদামাটা অথচ হৃদয়জয়ী অভিজ্ঞতা।

বাঁশের খোলায় রান্না করা ভাত ও মাংস

শ্রীমঙ্গলের খাবারের তালিকায় একদম আলাদা জায়গা করে নিয়েছে বাঁশের খোলায় রান্না করা ভাত ও মাংস। এই রান্নার পদ্ধতিটিই যেমন অভিনব ঠিক তেমনি এর স্বাদও চিরন্তন। এটি মূলত আদিবাসী খাসিয়া ও মনিপুরী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী রান্নার ধরন। ঘন জঙ্গলের বাঁশ ব্যবহার করে রান্না করা হয় এই বিশেষ খাবারটি। পদ্ধতিটি সহজ কিন্তু এতে লাগে নিখুঁত সময়জ্ঞান ও ধৈর্য।

এই রান্নায় কোনো আধুনিক পাত্র বা প্লাস্টিকের ছোঁয়া নেই। প্রকৃতির উপাদানেই গড়ে ওঠে এর স্বাদ। ফলে যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন বা ট্র্যাডিশনাল খাবারের স্বাদ নিতে চান তাদের জন্য এই বাঁশের খাবার এক আবশ্যিক অভিজ্ঞতা।

শ্রীমঙ্গলের কিছু পাহাড়ি গ্রামে বা নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টে (বিশেষ করে যেখানে আদিবাসী খাবার পরিবেশন করা হয়) আপনি আগে থেকেই বলে রাখলে এই বিশেষ খাবার উপভোগ করতে পারবেন।

ব্যাম্বো চিকেন

জংলি মুরগির ভুনা/ঝাল

শ্রীমঙ্গলে গেলে যারা রোমাঞ্চ ও রুচির খোঁজে থাকেন তাদের একবারের জন্য হলেও জংলি মুরগির ভুনা বা ঝালের স্বাদ নেওয়া উচিত। বন থেকে ধরা প্রকৃত জংলি মুরগি আর ঝাঁঝালো মসলা দিয়ে তৈরি করা হয় এই জংলি মুরগির ভুনা।এই খাবারে মিশে থাকে পাহাড়ি স্বাদ আর আদিবাসী রান্নার জাদু।

শুকনা মরিচ, দেশি পেঁয়াজ-রসুন, আদা আর খাসিয়া-মনিপুরী মশলার মিশ্রণে রান্না হয় এই ভুনা। কখনও কলাপাতায় কিংবা কখনও বাশের পাত্রে পরিবেশনকৃত এই খাবারটি আপনাকে শহরের সব খাবারের স্বাদ ভুলিয়ে দেবে।

স্থানীয় হোটেলের দেশি খাবার

শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় হোটেলগুলোতে যে দেশি খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় তা শুধু পেট নয় মনও ভরে যায়। পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা এই শহরের হোটেলগুলোতে আপনি পাবেন বাঙালিয়ানার গন্ধমাখা ঐতিহ্যবাহী রান্না। যার স্বাদ অনেকটা মায়ের হাতের খাবারের মতোই আপন।

শ্রীমঙ্গলের অনেক হোটেলেই দেশি মাছ যেমন পাবদা, টেংরা, শিং, কৈ মাছের দারুণ ঝোল বা ভুনা পাওয়া যায়। চিংড়ি মালাইকারি তো এখানে একেবারে রাজকীয় পদ।

কিভাবে যাবেন শ্রীমঙ্গল

এই সবুজের স্বর্গে পা রাখতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে কিভাবে সবচেয়ে আরামদায়ক ও উপভোগ্যভাবে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছানো যায়। সহজেই কিভাবে শ্রীমঙ্গলে যাবেন চলুন বিস্তারিত জেনে নিন।

ট্রেনে চেপে শ্রীমঙ্গলের পথে

শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং মনোরম উপায় হলো ট্রেন ভ্রমণ। জানালার বাইরে দিয়ে ছুটে চলা সবুজ মাঠ, ধানক্ষেত আর নদীজলের পাশে বসে আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন প্রকৃতির মাঝে।

কি ভাবছেন কোন ট্রেনে যাবেন? চলুন জেনে নিই।

কমলাপুর রেলস্টেশন বা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে পারাবত এক্সপ্রেস (সকাল),জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস (দুপুর),উপবন এক্সপ্রেস (রাত) কিংবা 

কালনী এক্সপ্রেস (শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন) যেকোনো একটি ট্রেনে চেপে আপনি ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে খুব সহজেই পাড়ি জমাতে পারবেন আপনার স্বপ্নের গন্তব্যে।

বাসে করে শ্রীমঙ্গলের পথে

আর আপনি  যদি সড়কপথে ভ্রমণ পছন্দ করেন তাহলে খুব সহজেই বাসে করে ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে শ্রীমঙ্গল পৌঁছাতে পারবেন। সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল কিংবা গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে Ena Transport, Hanif, Shyamoli, Royal Coach আপনার পছন্দ মতো যেকোনো একটি পরিবহনে করে  ৫–৬ ঘণ্টার মধ্যে আপনি শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে যেতে পারবেন।

আপনি চাইলে মৌলভীবাজার পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে লোকাল বাস বা সিএনজিতে  করেও শ্রীমঙ্গলে যেতে পারেন। রাস্তা ঘেঁষে ছোট দোকান, পাহাড়ি ঝরনা আর গ্রামের শ্যামল প্রকৃতি আপনার যাত্রাকে করে তুলবে একদম সিনেমাটিক।

শ্রীমঙ্গলে গিয়ে কোথায় থাকবেন

আপনার বাজেট অনুযায়ী শ্রীমঙ্গলে গিয়ে আপনার স্বপ্নের মতো থাকার জায়গা খুব সহজেই  খুঁজে নিতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য সেরা কিছু অপশন এবং আনুমানিক খরচ।

যদি অল্প টাকার মধ্যে শ্রীমঙ্গলে গিয়ে থাকতে চান, তাহলে আপনি দেখতে পারেন সাধারণ গেস্টহাউস গুলোতে (  Hotel Green Valley, Hotel Skypark)। যেখানে আপনি ৫০০–১,৫০০ টাকার মধ্যেই থাকতে পারবেন ।

এমনকি টি রিসোর্ট / মাঝারি মানের হোটেল গুলোতে (Hotel Green Valley, Hotel Skypark) ৩,০০০–৬,০০০ টাকার মধ্যেই আপনি থাকতে পারবেন।

আর আপনার বাজেট যদি বেশি হয় অর্থাৎ আপনি যদি রাজাদের মতো ঘুমাতে চান? তাহলে আপনি ৫ তারকা হোটেলগুলোতে ১০,০০০–২০,০০০ টাকার মধ্যেই থাকতে পারবেন।

শ্রীমঙ্গলে ভ্রমণের সেরা সময়

শ্রীমঙ্গলে ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল ( নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) ও বর্ষাকাল (জুন-আগস্ট)। শীতকালের  ঠান্ডা আবহাওয়ায় চা-বাগান, লাউয়াছড়া বন আর হাম হাম

জলপ্রপাত যেন ঘুরে দেখার মজাই আলাদা। চা বাগানের সবুজ রূপ, ঠান্ডা বাতাস, পাহাড়ি ঝর্ণা আর পাখির কলতান মিলিয়ে এক স্বপ্নময় পরিবেশ তৈরি হয়।

এমনকি বর্ষাকালে হাম হাম জলপ্রপাত বা লাউয়াছড়া বনের সবুজ সৌন্দর্য আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তবে আপনি যেদিনই যান না কেন, শ্রীমঙ্গল সবসময়ই  আপনার মনকে ভালো করে দিবে।

ভ্রমণ টিপস

  • জঙ্গল বা বিল ঘোরার সময় অবশ্যই গাইড নিয়ে যাবেন।
  • হাইকিং শু, পানির বোতল, পাওয়ার ব্যাংক  নিজের সাথেই রাখবেন।
  • ট্রেকিং বা বাইক রাইডে গেলে হেলমেট, পানির বোতল ও প্রাথমিক ফার্স্টএইড কিট রাখতে ভুলবেন না।
  • হালকা ও আরামদায়ক পোশাক নিন। বনে বা  পাহাড়ে গেলে ফুলহাতা জামা ও স্যান্ডশু পড়লে ভালো হয়।
  • হাঁটার উপযোগী আরামদায়ক জুতা, বিশেষ করে বর্ষাকালে গ্রিপযুক্ত জুতা নিতে ভুলবেন না।
  • লাউয়াছড়া ও পাহাড়ি এলাকায় মশার উপদ্রব থাকতে পারে। মশার ক্রিম বা স্প্রে সঙ্গে রাখুন।
  • বাঁশের খোলায় ভাত, পাহাড়ি খিচুড়ি, আদিবাসী মাংস ও ৭ রঙের চা এসব  একদমই মিস করবেন না।
  • অনেক দোকান বা স্থানীয় হোটেলে বিকাশ/কার্ডে পেমেন্ট চলে না, তাই নগদ টাকা সঙ্গে রাখুন।
  • শ্রীমঙ্গল যেন শুধু একটা গন্তব্য না হয়  বরং এটি হয়ে ওঠেছে মুগ্ধতা‌ ।  প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর স্বাদের এক দুর্দান্ত মেলবন্ধন।
  • স্মৃতিময় হোক আপনার পরবর্তী শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ! 

রেফারেন্স:

Related posts

হিমালয়কন্যা নেপালে ৫ দিন ৪ রাতের ভ্রমণের খুঁটিনাটি

মিরিঞ্জা ভ্যালি: মেঘের রাজ্যে স্বপ্নিল ভ্রমণ

বাংলার অ্যামাজন – রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ভ্রমণ

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More