Image default
যাপন

এই গরমে শরীর সুস্থ রাখতে কী খাবার খাবেন?

একসময় বলা হতো গরমে সুস্থ থাকতে পানসে সবজি, টক, খাট্টা, শুক্তো, তেঁতো—এগুলো বেশি খেতে হবে। আসলেই কি এগুলো গরমে প্রশান্তিদায়ক?

বর্তমানে তীব্র গরমে জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত। এই মৌসুমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে পানি আর লবণের পরিমাণ কমে যায়, যার ফলে দেখা দেয় দুর্বলতা, মাথা ঘোরা আর পানিশূন্যতার মতো সমস্যা। তবে একটু বুদ্ধি করে খাবার নির্বাচন করলে এই গরমটাকেও আরামদায়ক করে তোলা সম্ভব! 

চলুন, দেখে নেওয়া যাক—গরমে কী কী খেলে শরীর সুস্থ থাকবে!

গরমে পানীয়

গরমে শরীরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পানি। একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর দিনে অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার এবং একজন পুরুষের ৩ থেকে ৩.৫ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। পাশাপাশি গরমকালে লেবুর তৈরি শরবত, ইসবগুল বা বেলের শরবত, ফলের রস (যেমন আমের রস বা তরমুজের রস), ফ্রেশ জুস, আখের রস, পুদিনার শরবত, জিরা পানি এবং ডাবের পানি খাওয়া বেশ উপকারী।

এই ধরনের পানীয় শরীরের পানির চাহিদা যেমন পূরণ করে, তেমনি খনিজ লবণের ঘাটতিও মেটায়। ফলে শরীর থাকে হাইড্রেটেড ও সতেজ। আর গরমের ক্লান্তিও অনেকটাই দূরে থাকে।

বেলের শরবত

মৌসুমি ফল

আপনি কি জানেন, কাঁচা আম পানিশূন্যতা দূর করতে ভীষণ কার্যকর! কাঁচা আমে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, পাশাপাশি থাকে ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেশিয়াম, যা শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং গরমের ক্লান্তি কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে।

এছাড়া, গ্রীষ্মকাল মানেই নানা রসাল ও পুষ্টিকর ফলের সমাহার। তাই এই সময়ের ফল খাওয়া হতে পারে আপনার খাবারের তালিকায় শীর্ষে। তরমুজ, বাঙ্গি, আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, আনারস, পেঁপে—এই সব ফল শুধুমাত্র শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে না। বরং শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সরবরাহ করে, যা গরমে সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি। 

কাঁচা আম ও তরমুজ

হালকা ও সাদামাটা খাবার

গরমকালে ভারী খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। এই সময়ে হালকা ও সহজে হজমযোগ্য খাবার খাওয়া উচিত। যেমন- খিচুড়ি বা ভাত-ডাল, ছোট-বড় মাছের হালকা রান্না, ডালসহ গোশত, ডিম ইত্যাদি পরিমাণমত খেতে পারেন। 

এছাড়াও, এমন সবজি ভাজি বা তরকারি খাওয়া উচিত যাতে প্রচুর ফাইবার ও মিনারেল থাকে। এই খাবারগুলো গরমের মৌসুমে হজমে সাহায্য করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে। চিড়া বা মুড়ি একটি হালকা খাবার, যা গরমকালে জন্য বেশ উপযোগী। এটি পেট ভরিয়ে তোলে, কিন্তু শরীরে ভারী লাগে না। চিড়া বা মুড়ি খেলে হজমে সহায়ক হয় এবং সহজে পেট পরিষ্কারও রাখে।

গরমে চিড়া মুড়ি

দুগ্ধজাত খাবার

এই গরমে টকদই বা মিষ্টি লাচ্ছি একটি আরামদায়ক খাবার। ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা করে এক গ্লাস খেলেই মনে হয় যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে এল।

আর একটা জিনিস অনেকে ভুলেই যান, সেটা হলো ঘোল। একটু নুন আর সামান্য জিরে গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে নিলেই তৈরি একদম পারফেক্ট একটা শরবত! এটি যেমন গরমে তৃষ্ণাও মেটে তেমনি শরীরও ঠাণ্ডা রাখে ।

ঠান্ডা লাচ্ছি

তোকমা দানা

তোকমা প্রাকৃতিকভাবেই শরীরের গরম দূর করে। এটা মূলত দেহের তাপমাত্রা সঠিক পর্যায়ে ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে তীব্র গরমেও তাপমাত্রা অতটা অসহনীয় লাগে না। আপনি দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তোকমা দানা খেতে পারেন। এটি খেতে বেশ মজাদার আর ঠান্ডা ঠান্ডা লাগবে। আবার চাইলে লেবুর রসের সঙ্গে একটু পিংক সল্ট মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন।

তোকমা দানা

শাক-সবজি 

শাক-সবজিতে এখন বাজার ভরপুর! ঝিঙ্গা, চালকুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, সজনেডাঁটা, শাকের ডাঁটা—সবই সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো যদি পাতলা ঝোল করে হালকা রান্না করে খাওয়া হয়, তাহলে শরীরে ভারী ভাব আসে না। বরং পুষ্টির চাহিদা মেটে পাশাপাশি শরীরও ঠাণ্ডা থাকে।

গরমে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন-

অতিরিক্ত মসলা

মসলা বা মসলাজাতীয় উপকরণ শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই গরমের সময় রান্নায় অতিরিক্ত মসলা ব্যবহার না করাই ভালো। একটু গরমে কম মসলার হালকা খাবার শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

আমিষ

মাছ, মুরগি, গরু বা খাসির মাংস, তন্দুরি এসব ভারী আমিষ খাবার । তাই গ্রীষ্মকালে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো শরীরের তাপ বাড়িয়ে দেয়, ঘাম বাড়ে, আর হজমেও সমস্যা হতে পারে। এমনকি ডায়রিয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

তৈলাক্ত ফাস্ট ফুড

বার্গার, কাবাব, ফ্রাই জাতীয় তেল-মশলা ভরা ফাস্ট ফুড গরমকালে না খাওয়াই ভালো। এতে শরীর আরও ভারী লাগে আর হজমের সমস্যা হয়।

অতিরিক্ত চা-কফি

চা-কফি বেশি খেলেও শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে। বিশেষ করে চিনিযুক্ত কফি শরীর পানিশূন্য করে দেয়, মুখ লালচে করে তোলে। তাই গরমে যতটা সম্ভব কম চা-কফি খাওয়া উচিত।

সস

বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতে সস মজার হলেও, গরমের সময় বিশেষ করে পনিরজাতীয় বা ভারী সস এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে থাকে বেশি ক্যালোরি আর লবণ, যা শরীরের জন্য এই সময়ে মোটেও ভালো নয়।

গ্রীষ্মকালে শরীর সুস্থ রাখতে এবং গরমের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের খাবারের ব্যাপারে বিশেষ সচেতন হতে হবে। প্রচুর পানি ও স্বাস্থ্যকর পানীয় গ্রহণ, মৌসুমি ফল ও সবজি খাওয়া, হালকা ও সহজপাচ্য খাবার বেছে নিলে , তা আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে সতেজ ও হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। 

তথ্যসূত্র-

Related posts

সময় কম? দেখে নিন আপনার জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম

ইনডোর প্ল্যান্ট নাকি জাদুর কাঠি?

admin

ত্বকের ধরণ অনুযায়ী কোন রঙের পোশাক সবচেয়ে ভালো ?

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More