Image default
দেশ পরিচিতি

সলোমন দ্বীপপুঞ্জ: সাগরের বুকে এক অজানা পৃথিবী

যেখানে জমির চেয়ে জল বেশি, শহরের চেয়ে দ্বীপ বেশি, আর বাস্তবের চেয়ে রূপকথা বেশি!!!

চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন, আপনি একটা ছোট্ট কাঠের নৌকোয়  বসে আছেন। পায়ের নিচে স্বচ্ছ নীল পানি। এতটাই স্বচ্ছ যে নিচের রঙিন মাছগুলোর খেলাও স্পষ্ট দেখা যায়। এরপর হঠাৎ করে বাতাসে ভেসে আসে নারকেল গাছের মিষ্টি সুবাস। সামনে দেখা যায় এক রহস্যময় দ্বীপ। ঘন সবুজ গাছপালা, সোনালি বালির সৈকত, আর পানির ঠিক ওপরে কুয়াশার মতো ঝুলে রয়েছে রামধনু! কি রূপকথার রাজ্য মনে হচ্ছে?

বাস্তবেই এমন এক রূপকথার রাজ্য আছে, যার নাম “সলোমন দ্বীপপুঞ্জ”। 

দেশ সলোমন দীপপুঞ্জ 
রাজধানী  হনিয়ারা(Honiara)
ভাষা  ইংরেজি ( তবে পিজিন ও বিভিন্ন স্থানীয় ভাষা প্রচলিত)
আয়তন ২৮,৪০০ বর্গকিলোমিটার 
জনসংখ্যা  প্রায় ৭ লাখ 
মুদ্রা  সলোমন দীপপুঞ্জ ডলার(SBD)

ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু  

প্রশান্ত মহাসাগরের সোনালি জলরাশির মাঝে এক  রহস্যময় দ্বীপরাজ্য, ‘সলোমন দ্বীপপুঞ্জ’। একদিকে প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জল অন্যদিকে গভীর জঙ্গল এবং পাহাড়ের চূড়া। ৯০০টিরও বেশি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই দ্বীপপুঞ্জটি অস্ট্রেলিয়া এবং ফিজির মাঝে অবস্থিত। যা “রিং অব ফায়ার” নামে পরিচিত। এর মানে দ্বীপপুঞ্জটির বুকে আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প আর প্রাকৃতিক শক্তির অদ্ভুত খেলা চলতেই থাকে। 

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু পুরোপুরি উষ্ণ এবং আর্দ্র। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়। তবে শীতকাল এখানে অনেকটাই শান্ত। স্বাভাবিকভাবেই একটা বিশেষ স্বস্তি দেয়। 

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের আসল চমক তার বৃষ্টি। এই অঞ্চলটি বছরের বেশিরভাগ সময়ই আর্দ্র থাকলেও নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস দ্বীপপুঞ্জটি যেন আলাদা রূপ ধারণ করে। এই সময়ে বৃষ্টির বেগ দেখে আপনার মনে হতে পারে আকাশের সবটুকু জল মনে হয় এই দ্বীপগুলোর জন্যই বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

ম্যাপ

আয়তন ও জনসংখ্যা 

এই যাদুকরী সাম্রাজ্যের আয়তন প্রায় ২৮,৪০০ বর্গকিলোমিটার; আয়তনে যা আমাদের পাঁচটি ঢাকা শহরের সমান।  

৭ লাখ জনসংখ্যার এই দ্বীপপুঞ্জে ৭০টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো দেশটির এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে গেলেই ভাষা বদলে যায়, জীবনযাত্রা বদলে যায় এমনকি বিশ্বাস আর রীতিনীতিও বদলে যায়।যেন প্রতিটি দ্বীপই একটা আলাদা ছোট্ট পৃথিবী।এই দ্বীপরাজ্যটি একটি  জলময় গোলকধাঁধা, যার বেশিরভাগই এখনও সকলের অজানা।

উৎপত্তি ও ইতিহাস

সলোমন দ্বীপপুঞ্জ একটি বিচিত্র দ্বীপমালা, যার প্রতিটি দ্বীপের পেছনে রয়েছে এক মজাদার ইতিহাস। 

উৎপত্তি

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের জন্ম এক প্রাকৃতিক বিস্ময়ের মাধ্যমে হয়। হাজার হাজার বছর আগে বিশাল আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ আর শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে তৈরি হয় দ্বীপগুলো। এগুলো কোনো সাধারণ দ্বীপ নয় বরং মাটির গহ্বর থেকে লাভা বেরিয়ে সৃষ্টি হওয়া ‘জীবন্ত দ্বীপ’। প্রতিটি দ্বীপ যেন নিজস্ব একটা জীবন্ত ইতিহাস।

নামকরণের রহস্য

১৫৬৮ সালে স্প্যানিশ নাবিক আলভারে ডি মেন্ডানা প্রথম এ দ্বীপপুঞ্জে পা রাখেন এবং এই দ্বীপ সাম্রাজ্যটির নামকরণ করেন বাইবেলের কিং সলোমনের নামে। আর এভাবেই সলোমন দ্বীপপুঞ্জের নাম ইতিহাসে চিরকালীন হয়ে যায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সলোমন দ্বীপপুঞ্জ হয়ে ওঠে এক অগ্নিক্ষেত্রে। প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ গুয়ার্ডালকানাল যুদ্ধ এই দ্বীপপুঞ্জটিতেই ঘটে। তবে এই দ্বীপপুঞ্জের অস্তিত্বের মধ্যে যুদ্ধের পাশাপাশি এক ধরনের প্রতিরোধের গল্পও লুকিয়ে থাকে। যেমন গুয়ার্ডালকানালের যুদ্ধ যা সময়ের পরিক্রমায় বদলে দিয়েছিল এখানকার ভূগোল ও সমাজব্যবস্থা। 

শাসনব্যবস্থা ও রাজনীতি

রাজতন্ত্রের ছায়ায় গণতন্ত্রের খেলা, জাতিগত দ্বন্দ্বের আগুন, আর আন্তর্জাতিক শক্তির চোখ রাঙানি সবমিলিয়ে এই দ্বীপপুঞ্জ যেন বাস্তবের Game of Thrones!

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের মাথার মুকুটটি এখনও ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস এর হাতে। তবে দেশের দৈনন্দিন শাসনকার্য চলে সংসদীয় গণতন্ত্রে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীই মূল চালিকাশক্তি। রাজা এখানে শুধু আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান, যার প্রতিনিধি হিসেবে গভর্নর-জেনারেল কাজ করেন।

একদিকে রাজা, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী দ্বৈত শাসনের ধাঁধা!

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের রাজনীতি একদম চলচ্চিত্রের চেয়েও নাটকীয়। এখানে কোনো বড় শক্তিশালী রাজনৈতিক দল নেই। তাই ছোট ছোট দল আর স্বতন্ত্র এমপিরা মিলে জোট গঠন করে সরকার গঠন করে। ফলাফল? একেকবার একেক সরকার গঠিত হয়, জোট পাল্টায়, মন্ত্রীরা লুকোচুরি খেলেন, প্রধানমন্ত্রী বদল হয়!

এই দ্বীপের রাজনীতি যেন সত্যিই একটি লাইভ “Survivor” রিয়েলিটি শো! কে টিকে থাকবে? কে যাবে বিদায়? অপেক্ষা করুন, নাটকের আরও অনেক পর্ব বাকি!

অর্থনীতি 

দেশটির একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অন্যদিকে আবার অর্থনৈতিকভাবে নাজুক। সলোমন দ্বীপপুঞ্জ যেন প্রকৃতির এক আশীর্বাদ।চমৎকার বনভূমি, মাছের বিশাল ভাণ্ডার,স্বর্ণ ও নিকেলের মতো খনিজ সম্পদ! 

প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার, কিন্তু তারপরও…?

সমস্যা হলো এগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি বেশ জটিল। বন উজাড় হওয়ার আশঙ্কা, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং খনিজ খননের সীমাবদ্ধতা দ্বীপপুঞ্জের অর্থনীতিকে অস্থির করে তোলে। সম্ভাবনার আলো কি জ্বলবে দ্বীপরাজ্যটিতে?

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের অর্থনীতির মূল সমস্যা হলো অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং দুর্বল অবকাঠামো। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তারা তাদের সমুদ্রসম্পদ, পর্যটন এবং কৃষিভিত্তিক পণ্যকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।

পর্যটন আকর্ষণ

এই স্বপ্নীল দ্বীপপুঞ্জ শুধু ভ্রমণের জন্য নয়। বরং হারিয়ে যাওয়ার মতো এক গন্তব্য। চলুন ভূস্বর্গ খ্যাত দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলোতে একসঙ্গে হারিয়ে যায়।

এমবোনেগে বিচ

যদি নিখাদ সমুদ্রসৈকত আর শান্তির খোঁজ করেন তাহলে এম্বুয়ানারানা বিচ আপনাকে মুগ্ধ করবেই। নীলচে-সবুজ স্বচ্ছ জলরাশি আর নির্জন সৈকত এক অদ্ভুত শান্তি এনে দিবে আপনার মনে। সূর্যাস্তের সময় আকাশের রং বদলের খেলা দেখতে দেখতে মনে হবে যেন সময় এখানে থমকে গেছে।

এমবোনেগে বিচ

টেনারু জলপ্রপাত 

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের গুয়াদালকানাল দ্বীপে অবস্থিত টেনারু জলপ্রপাত এক স্বপ্নের মতো জায়গা। জঙ্গলের ঘন সবুজ চাদর পেরিয়ে হঠাৎ সামনে ফুটে উঠবে এক অপূর্ব দৃশ্য “টেনারু জলপ্রপাত”! পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা শুভ্র জলরাশি আর তার পাশে পাখির কিচিরমিচির। এ যেন এক স্বপ্নিল বাস্তবতা। 

টেনারু জলপ্রপাত

তুভালু দ্বীপ 

আপনি যদি স্কুবা ডাইভিং বা স্নরকেলিং পছন্দ করেন তাহলে তুভালু দ্বীপ আপনার জন্য হবে আদর্শ গন্তব্য। সমুদ্রের নিচে বিচিত্র রঙের মাছ আর প্রবালরাজির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সত্যিই অবিস্মরণীয়।

হোনিয়ারা ওয়ার মেমোরিয়াল 

সলোমন দ্বীপপুঞ্জ শুধু প্রকৃতির নয় বরং ইতিহাসেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিখ্যাত গুয়াদালকানাল যুদ্ধ এখানে হয়েছিল। গুয়াদালকানাল যুদ্ধের স্মৃতিতে তৈরি হোনিয়ারা ওয়ার মেমোরিয়াল সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিহাস প্রেমীদের জন্য পারফেক্ট জায়গা হোনিয়ারা ওয়ার মেমোরিয়াল । 

হোনিয়ারা ওয়ার মেমোরিয়াল

রানগো দ্বীপের গুহা

গুয়াদালকানাল দ্বীপের কাছেই আছে রহস্যময় রানগো দ্বীপ। এখানকার অজানা গুহাগুলো একসময় যোদ্ধাদের লুকানোর জায়গা ছিল। এখন সেসব গুহা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এক রোমাঞ্চকর গন্তব্য।

যদি খাঁটি প্রকৃতি আর ইতিহাসের গল্পে মোড়ানো এক অফবিট গন্তব্যে যেতে চান, তাহলে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে!

সংস্কৃতি ও জীবন ধারা

এখানে এখনো আদিম আর আধুনিক ঐতিহ্যের সহাবস্থান চোখে পড়ে। চলুন দেশটির বিস্ময়কর সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যাক।

সংগীত ও নৃত্য

Panpipes বা বাঁশের বাঁশি

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সংগীত এমন একটি শক্তি যা কখনো শান্ত, কখনো বা এক শক্তিশালী ঝড়ের মতো। এখনকার সংগীতে প্রধানত স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র যেমন কাঁটাচামচ, ড্রাম, এবং বাঁশের ব্যালিপূর ব্যবহার করে। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত বাদ্যযন্ত্র হলো “panpipes” বা বাঁশের বাঁশি, যা ঐতিহ্যগতভাবে দলীয় পরিবেশনায় ব্যবহার করা হয়। 

তাছাড়া, “ukelele” নামক ছোট এক ধরনের গিটারও বেশ জনপ্রিয়। যখন panpipes বাজে তখন মনে হয় সমুদ্রের ঢেউ ছন্দের মধ্যে নাচছে আর বাতাস তার সুরে কথা বলছে। প্রতিটি সুর যেন কোনো এক প্রাচীন রহস্যের ইঙ্গিত। 

সংগীতের  সঙ্গে যোগ হয় উচ্ছ্বাসভরা নৃত্য, যেখানে পুরুষ ও নারীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে তালে তালে নাচে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের নৃত্য এক ধরনের স্বীকৃত ভাষা। নৃত্য একদিকে আনন্দ উদযাপন করে অন্যদিকে এটি সামাজিক সংহতি এবং গোষ্ঠীগত ঐক্যের প্রতীক। প্রথাগত নৃত্যগুলির মধ্যে কিছু বিখ্যাত হল “Hakorapa” এবং “Tufaga”। এই নৃত্যগুলি সাধারণত দ্রুত গতির এবং শরীরের অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে গল্প বা ঐতিহাসিক ঘটনার পুনঃরাবৃত্তি করে।

খাদ্য

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের খাদ্যসংস্কৃতি তাদের পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ঐতিহ্যবাহী রান্নার পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এখানকার মানুষ মূলত স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য উপাদান ব্যবহার করে খাবার প্রস্তুত করে থাকে। 

পয় (Poi)

পয় (Poi) হল এক ধরনের চমৎকার, আঠালো এবং হালকা টক স্বাদের খাবার, যা স্থানীয়দের জন্য এক প্রকার ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি তৈরি হয় পেপারুম (Taro) গাছের কন্দ থেকে। কন্দটিকে সিদ্ধ করে পিষে এক মিহি পেস্ট করা হয়। তারপর সেগুলি পানি মিশিয়ে আরও নরম এবং সুতীব্র স্বাদযুক্ত করা হয়।পয় সাধারণত মাছ, মাংস, কিংবা নানা ধরনের স্থানীয় সবজির সাথে পরিবেশন করা হয়।

এই খাবারটি শুধু পেট ভরানোর উপকরণ নয়  বরং সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গভীর অংশ।

পয়

পালুসামি (Palusami)

পালুসামি (Palusami) হল সলোমন দ্বীপপুঞ্জের একটি অদ্ভুত এবং সুস্বাদু খাবার। এই খাবারটি তৈরি হয় স্যাম্বু বা পালুসামি পাতার মধ্যে। যেখানে নারকেল দুধ, মাংস বা মাছের টুকরো এবং বিভিন্ন মসলার মিশ্রণ একত্রিত হয়ে অদ্ভুত এক স্বাদে রূপ নেয়। 

কোকো মাছ

কোকো মাছ শুধু একটি খাবার নয় বরং এটি একটি অতিপ্রাকৃত স্বাদের যাত্রা, যা আপনার পেটের পাশাপাশি আপনার আত্মাকে তৃপ্তি দেয়।  

মাছের তাজা টুকরোগুলোকে নারকেল দুধে ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। নারকেল দুধের ক্রিমি ও মিষ্টি স্বাদ মাছের রসালো মাংসের সঙ্গে মিশে যায়। টমেটো, আদা, রসুন, লেবুর রস ও একগুচ্ছ স্থানীয় মশলা এই স্বাদকে আরও গভীরতা ও উত্তেজনা যোগ করে। যেখানে মসলার তেজ, নারকেলের মিষ্টিতা, এবং মাছের মৃদু রুচি একে অপরকে পরিপূরক করে।

কোকো মাছ

পোশাক 

এই দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা পোশাককে শুধু শরীর ঢাকার উপায় হিসেবে দেখে না, বরং এটি তাদের সংস্কৃতি, পরিচয় ও নান্দনিকতার এক অনন্য বহি:প্রকাশ। 

পুরুষরা ঐতিহ্যগতভাবে “লালাভা” পরে, যা কোমরবন্ধনী বা স্কার্টের মতো দেখতে। এটি তৈরি হয় গাছের ছাল বা নারকেল তন্তু দিয়ে। অপরদিকে নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক এক কথায় অনন্য। তাঁরা ঘাস বা পাতা দিয়ে তৈরি করা স্কার্ট পরে। আর তাদের মাথায় থাকে সুগন্ধি ফুলের মালা। এ যেন প্রকৃতির মাঝেই এক অনবদ্য ফ্যাশন শো। দ্বীপের নারীরা ঝিনুকের মুক্তা, কাঠের গয়না আর হাতের তৈরি রঙিন অলংকার পরে নিজেদের সাজিয়ে তোলেন।

যদিও দেশটির শহরাঞ্চলে পাশ্চাত্য পোশাকের প্রভাব বেড়েছে। শার্ট, টি-শার্ট আর জিন্সের চল দেখা যায়। তবুও বিশেষ অনুষ্ঠান, উৎসব কিংবা ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে এখনো পুরনো সাজের জৌলুস অমলিন।

লালাভা পোশাক

সলোমন দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী আদিবাসী এবং তাদের জীবন ও জীবিকা

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীরা প্রধানত মেলানেশীয় জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের জীবনযাত্রা গভীরভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে জড়িত। এখানকার আদিবাসীরা মূলত কৃষিকাজ, মৎস্য শিকার এবং বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। আদিবাসীদের সমাজ কাঠামো গোষ্ঠীগত। 

দ্বীপবাসীরা সমুদ্রের কাছাকাছি থাকায় মাছ ধরা তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের অনেক আদিবাসী আজও আনুষ্ঠানিক ধর্মবিশ্বাস মেনে চলে, যেখানে প্রাকৃতিক উপাদান ও পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। কিছু সম্প্রদায় এখনও টোটেমিক প্রথা ও আত্মার উপাসনা করে। তবে খ্রিস্টধর্মও এখানে ব্যাপকভাবে প্রচলিত।

দ্বীপ রাজ্যের অজানা রহস্য

সলোমন দ্বীপপুঞ্জ শুধু একটা সাধারণ দ্বীপ নয়। এটি এক রহস্যের রাজ্য। অরণ্যের গভীরে অদৃশ্য দৈত্যদের পায়ের ছাপ, সমুদ্রের নিচে হারিয়ে যাওয়া শহর, ভিনগ্রহীদের আনাগোনা সবকিছু মিলিয়ে এই দ্বীপপুঞ্জ যেন এক জাদুকরী রহস্যলোক। এখানে এমন সব ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান এখনো করতে পারেনি। “সলোমন দ্বীপ”যেখানে রহস্য আজও বেঁচে আছে! 

সলোমন দ্বীপপুঞ্জ সম্পর্কে কিছু মজার ও বিস্ময়কর তথ্য

  • বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রাজধানীগুলোর একটি সলোমন দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী হনিয়ারা (Honiara)। খুব ছোট এবং এখানে স্থায়ী জনসংখ্যা খুব কম।

 

  • ডলফিনের দাঁত এখানে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিছু ঐতিহ্যবাহী সম্প্রদায় এখনো ডলফিনের দাঁতকে মুদ্রার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে।এটি বিয়ের পণ ও অন্যান্য লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

 

  • বিশ্বের একমাত্র “ব্লু আইল্যান্ড”  সলোমন দ্বীপপুঞ্জে রয়েছে ।রেন্ডোভা আইল্যান্ড যেখানে কিছু নদীর পানি এবং বিশেষ কিছু অংশে পানির রঙ একেবারে গাঢ় নীল। 

 

  • বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণীদের কিছু এখানে পাওয়া যায় ‌।এখানে স্টোনফিশ (Stonefish) নামক একটি মাছ পাওয়া যায়। যা বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত মাছগুলোর মধ্যে একটি। যদি কেউ এর উপর পা দেয় তাহলে মারাত্মক ব্যথা ও এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

 

  • এখানে একধরনের “পানির নিচে আগ্নেয়গিরি” রয়েছে‌।সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি সাবমেরিন আগ্নেয়গিরি (submarine volcano) রয়েছে।যা মাঝে মাঝে অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়ে নতুন ছোট দ্বীপ তৈরি করে।আবার কিছুদিন পর তা ডুবে যায়।

 

  • এই দ্বীপে গাড়ি নিষিদ্ধ।সলোমন দ্বীপপুঞ্জের টাইওয়ো আইল্যান্ড (Tavio Island)-এ কোনো গাড়ি নেই।এখানকার মানুষ নৌকা, পায়ে হাঁটা বা সাইকেল ব্যবহার করে চলাফেরা করে।

 

  • এখানে মানুষের পরিবর্তে শূকর গণনা করা হয়।কিছু সম্প্রদায়ের সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় তার কাছে থাকা শূকরের সংখ্যা দিয়ে।টাকার মাধ্যমে নয়!

 

  • এখানকার কিছু পাখি আগুন লাগাতে পারে।”ফিরি হক (Firehawk)” নামে পরিচিত কিছু পাখি ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দেয়। যাতে ধোঁয়ার কারণে ছোট প্রাণীরা বেরিয়ে আসে এবং সহজে শিকার করা যায়।

তথ্যসূত্র

Related posts

সূর্যোদয়ের দেশ জাপান

ইসলামের আদি ঐতিহ্যের সিরিয়া

শেখ আহাদ আহসান

আটলান্টিকের মুক্তো: বাহামা দ্বীপপুঞ্জ

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More