সাকিব এর মতো একজন অলরাউন্ডারকে বিশ্বের যেকোনো দেশ তাদের দলে পেতে চাইবে
২০০৬ সালের এক গ্রীষ্মের বিকেলে, হারারের ধুলোমাখা মাঠে প্রবেশ করলেন এক তরুণ ক্রিকেটার। বয়স মাত্র ১৯ বছর। বাংলাদেশের জার্সিতে প্রথমবারের মতো মাঠে নামলেন। তিনি কে? কেউ জানত না। তাঁর নাম ছিল সাকিব আল হাসান। কিন্তু সেই দিন থেকে তিনি যে একটি জাতির ক্রিকেটের ভাগ্য বদলে দেবেন, তা কি কেউ কল্পনা করেছিল?
আজ, প্রায় দুই দশক পরে, সাকিব শুধু একজন ক্রিকেটার নন; তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণভ্রমরা, বিশ্ব ক্রিকেটের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তবে তাঁর এই যাত্রা কি শুধুই সাফল্যের গল্প? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে বিতর্ক, সংগ্রাম, আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির এক রহস্যময় কাহিনি?
আসুন, সাকিবের জীবনের পর্দা উন্মোচন করি, যেখানে প্রতিটি উইকেট, প্রতিটি রান, আর প্রতিটি বিতর্ক একটি নতুন গল্প বলে।
শৈশবের ফয়সাল ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান
১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ, মাগুরা জেলার এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেন খন্দকার সাকিব আল হাসান ফয়সাল। বাবা মাশরুর রেজা ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা, আর মা শিরিন শারমিন ছিলেন গৃহিণী। কিন্তু সাকিবের রক্তে খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা ছিল উত্তরাধিকারসূত্রে। তাঁর বাবা খুলনা বিভাগের হয়ে ফুটবল খেলেছেন, এমনকি পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন জাতীয় দলের ফুটবলার। তবে সাকিব বেছে নিলেন ক্রিকেট। বাংলাদেশ তখনও বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের সেভাবে তুলে ধরতে পারেনি।
সাকিব মাগুরা ক্রিকেট লিগের ইসলামপুরপাড়া ক্লাবে অনুশীলন শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে যোগদানের সুযোগ পান। ২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে খুলনার হয়ে জাতীয় লীগে খেলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু এই তরুণ ক্রিকেটারের মধ্যে কী ছিল এমন, যা তাঁকে আলাদা করে দিয়েছিল? সাকিবের বামহাতি স্পিন এবং মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের সমন্বয় তাঁকে একটি বিরল রত্নে পরিণত করেছিল। শুরু থেকেই প্রতিটি ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করতে চেষ্টা করে গেছেন সাকিব আল হাসান।
সাকিব আল হাসান বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন তারকা
২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। কিন্তু সত্যিকারের টার্নিং পয়েন্ট আসে ২০০৮ সালে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। সাকিব ৩৬ রানে ৭ উইকেট তুলে নেন। হয়ে ওঠেন একটি বোলিং ফিগার, যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল। এই পারফরম্যান্স তাঁকে বিশ্বের নজরে আনে। কিন্তু এটা কি শুধুই একটি স্পার্ক ছিল, নাকি একটি আগুনের শুরু? পরের বছর থেকেই সাকিব নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন। সাকিব দেখিয়ে দেন, এটি ছিল একটি আগুন, যা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আলোকিত করবে।
২০০৯ সালে সাকিব প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার হন। একই বছরে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দেন। সাকিবের নেতৃত্ব বিশ্বকে চমকে দেয়, সাকিবের নেতৃত্বেই শুরু হয় দেশেরে ক্রিকেটের চমক।
অলরাউন্ডারের অলরাউন্ড কৃতিত্ব
সাকিব শুধু একজন ক্রিকেটার নন; তিনি একটি ফেনোমেনন। তাঁর রেকর্ডগুলো যেন ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। ২০১৫ সালে তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম এবং একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট, ওয়ানডে, এবং টি-টোয়েন্টি, তিন ফরম্যাটেই একই সময়ে আইসিসি অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠেন। এই কৃতিত্ব তিনি একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করেছেন, যা অন্য কোনো ক্রিকেটার পারেননি।
ওয়ানডেতে তিনি দ্রুততম ক্রিকেটার হিসেবে ৪,০০০ রান এবং ২০০ উইকেট অর্জন করেন, সেটাও মাত্র ১৫৬ ম্যাচে। ২০১৮ সালে তিনি সনাথ জয়াসুরিয়া ও শহীদ আফ্রিদির পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৭,০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি, শেরে-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে একক মাঠে ১০০টির বেশি ওয়ানডে উইকেট সবই সাকিবের ঝুলিতে। সাকিবের রেকর্ডের তালিকা যেন শেষ হতে চায় না।
বড় বড় স্পিনারদের পেছনে ফেলে সাকিব গড়েছেন নিজের রেকর্ড। জ্যাক ক্যালিস, দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি অলরাউন্ডার সাকিবকে নিয়ে বলেছেন, ‘ও (সাকিব)দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে আমাদের বিপক্ষে পর পর দুই টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিল। এটা বিরাট একটা ব্যাপার। বড় বড় স্পিনারও দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে এত সাফল্য পায় না; এখানকার উইকেট স্পিনারদের জন্য নয়।’
টেস্ট ক্রিকেটে তিনি একমাত্র তিন অলরাউন্ডারের একজন, যিনি একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটও তার সংগ্রহে। তার বামহাতি স্পিনে মুগ্ধ হয়েছে বিশ্ব, আর মিডল অর্ডারে তার আগ্রাসী ব্যাটিং বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপকে শক্তি দিয়েছে বারবার। সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, সাবেক ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ একবার বলেছিলেন, ‘ওর বোলিং অ্যাকশনটাকে আমি একটু ভুতুড়েই বলি। তার পরও দেখেন, সেটা দিয়েই দারুণ কার্যকর কিন্তু সে!’ তার বোলিং অ্যাকশনের যে রেকর্ড তাতে ভূতুরেই বলা চলে।
বিপিএল-এ সাকিব
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সাকিব ছিলেন যেন বজ্রপাত। খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, রংপুর রাইডার্স, আর ঢাকা ডায়নামাইটস, প্রতিটি দলে তিনি ছিলেন পাওয়ারহাউস। ২০১২, ২০১৩, আর ২০১৬ সালে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে শিরোপা জেতেন।
২০১৯ সালে তিনি বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন, মাত্র ৬৯ ম্যাচে, গড় ১৬.৮৫ আর ইকোনমি ৬.৬৪। একই সিজনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ফাইনালে তিনি ২৩ উইকেট নিয়ে এক সিজনের সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড গড়েন।
২০২১-২২ সিজনে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক হিসেবে তিনি দলকে ফাইনালে নিয়ে যান, যদিও ১ রানে হেরে যান। ২০২২ সালে মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে তিনি টি-টোয়েন্টিতে ৪০০তম উইকেট নেন। বিপিএলে ১৪৯ উইকেট তাঁকে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি করে। সাকিব ছিলে ন যেন এক বাঘ, মাঠে ঢুকলেই প্রতিপক্ষ শঙ্কায় কাঁপত।
আইপিএল ও সাকিব
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সাকিব ছিলেন যেন ধ্রুবতারা। ২০১১ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) তাঁকে ৪২৫,০০০ ডলারে কিনে নেয়। ২০১২ আর ২০১৪ সালে তিনি কেকেআরের হয়ে শিরোপা জেতেন। ২০১২ ফাইনালে তাঁর শান্ত ব্যাটিং শেষ ওভারে জয় এনে দেয়। ২০১৪ সালে তিনি ২২৭ রান আর ১১ উইকেট নেন, স্ট্রাইক রেট ১৪৯.৩৪ আর ইকোনমি ৭-এর নিচে। পরে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদে (২০১৮-১৯) তিনি তাঁর জাদু দেখান।
২০২১ সালে কেকেআর তাকে ৩.২ কোটি রুপিতে ফিরিয়ে আনে, কিন্তু বিসিবি থেকে এনওসি না পাওয়ায় পুরো সিজন খেলতে পারেননি। ২০২৩ সালে ১.৫ কোটি রুপিতে আবার কেকেআরে যোগ দেন, কিন্তু জাতীয় দলের ব্যস্ততা আর ব্যক্তিগত কারণে সিজন থেকে সরে আসেন। আইপিএলে ৭১ ম্যাচে ৭৯৩ রান আর ৬৩ উইকেট। সংখ্যা হয়তো বিশাল নয়, কিন্তু ম্যাচের মোড় ঘোরানোর ক্ষমতা তাকে আলাদা করে তোলে। জ্যাক ক্যালিস, দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি অলরাউন্ডার সাকিবকে নিয়ে বলেছিলেন ,‘আমি সাকিবের বিপক্ষে যেমন খেলেছি, কেকেআরে পক্ষে তার চেয়েও বেশি খেলেছি। আমি তাকে খুব কাছ থেকে চিনি বলতে পারি। সাকিবের বিপক্ষে আপনি যখনই খেলবেন, আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে, সে যেকোনো ভূমিকায় ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। ব্যাটে ও বলে একই রকম কার্যকর ও অসাধারণ এক ক্রিকেটার!
সাফল্যের সঙ্গে হাত ধরে চলেছে বিতর্ক
কিন্তু সাকিবের জীবন কি শুধুই সাফল্যের গল্প? না। যার যতো সাফল্য, তার জন্য ততো পরিক্ষা। প্রতিটা সাফল্যের জন্য সাকিবকে দিতে হয়েছে একের পর এক পরিক্ষা। তার ক্যারিয়ারে ছায়ার মতো লেগে আছে বিতর্ক। ২০১৯ সালে আইসিসি তাকে ‘জুয়াড়ির প্রস্তাব না জানানোর’ অভিযোগে এক বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে। এই সময়টা সাকিবের জন্য ছিল অন্ধকার গুহায় কাটানোর মতো অবস্থা। ক্রিকেটের বাইরে থাকার ব্যাপারটা তার মনোবল ভেঙ্গে দিতে পারতো। দর্শকরা হয়তো ভেবেছিলো সাকিব আর নিজের চেনা মুখ নিয়ে ফিরতে পারবে না। ফিরে ছিলেন সাকিব, তবে সেই পুরনো সাকিবের থেকে একটু ভোঁতা হয়ে।
ফিরে আসার পর আর পুরনো সাকিবকে পাওয়া যায়নি। ব্যাট হাতে কোন ফরম্যাটেই আর একটি সেঞ্চুরীও করতে পারেননি। বল হাতে ঘরের মাঠে টেস্টে খারাপ না করলেও প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতে বিবর্ণ হয়ে গেলেন। এমনকি আইপিএলে ঠিকঠাক ফিরতে পারলেন না। অন্যন্য লীগেও যেন বুড়ো নেতিয়ে পড়া ঘোড়া। কারন তিনি তখন টগবগ করছেন মাঠের বাইরে। শেয়ারবাজার কারসাজির সাথে যুক্ত হয়েছেন। নিজের চিংড়ি ব্যাবসায় পাওনাদারদের বঞ্চিত করছেন। শ্রমিকদের ঠকাচ্ছেন। খুনী আসামীর জুয়েলারীর দোকান উদ্বোধন করছেন। আর জাতীয় দলের আরেক কিংবদন্তি খেলোয়ার, মাশরাফির দেখানো পথে সরকারী দলের এমপি হয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এরপরেই যতো বিতর্ক সব ঘিরেই রেখেছে সাকিবকে।
২০২৪ সালে আরেকটি বিতর্ক তাকে ঘিরে ধরে। তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, এবং তিনি আবার নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হন। ওঠারই কথা। যে সব জায়গায় নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলছেন তাকে তো পরিক্ষা দিতেই হবে। কিন্তু সাকিব হাল ছাড়েননি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড তার বোলিং অ্যাকশন বৈধ ঘোষণা করে। পাকিস্তান সুপার লিগে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে তিনি প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরে আসেন। এই ফিরে আসা যেন সাকিবের জীবনের একটি ধ্রুবক হয়ে ওঠে। প্রতিবন্ধকতা আসবে, কিন্তু সাকিব থামবেন না।
রাজনৈতিক জীবনেও সাকিব বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছেন। মাগুরা-১ আসনের সাবেক সাংসদ হিসেবে তার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তিনি নীরব থাকায় কেউ কেউ তাকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এমনকি দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এখনও চলছে সাকিবের সেই সমালোচনা। সাকিব জাতিয় আর খেলতে পারবে কিনা তা নিয়ে চলছে হাজারো তর্ক বিতর্ক । তবু সাকিব তো সেই অলরাউন্ডার সাকিবই থেকে যাবেন দর্শকের হৃদয়ে।
ব্যক্তিগত জীবনেও রঙিন সাকিব
২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর, সাকিব উম্মে আহমেদ শিশিরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ঢাকার রূপসী বাংলা হোটেলে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সতীর্থরাও উপস্থিত ছিলেন। সাকিব ও শিশিরের তিন সন্তান, দুই কন্যা, আলাইনা হাসান অব্রি ও ইররাম, এবং এক পুত্র, ইজাহ আল হাসান। সাকিবের ব্যক্তিগত জীবন তার ক্যারিয়ারের মতোই রঙিন। তিনি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ থেকে বিবিএ পাস করেছেন এবং ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা সে তো সবার জানাই আছে।
ক্রিকেটের বাইরে সাকিব
সাকিব শুধু ক্রিকেট মাঠেই নয়, সমাজসেবাতেও তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনিসেফের ন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছেন। মিনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস, শিশু অধিকার সনদের ২৫ বছর পূর্তি, এভরি চাইল্ড এলাইভ, অনলাইন নিরাপত্তা, এবং বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহে তিনি অংশ নিয়েছেন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য তাঁর সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তার সমাজ সেবক রুপের বহিঃপ্রকাশ।
অবসরের ঘোষণা সাকিবের
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, সাকিব ঘোষণা দেন যে তিনি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে তাঁর শেষ টেস্ট হবে, এবং ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দিয়ে তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন। কিন্তু সাকিব কি সত্যিই থামবেন? বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমানের মতে, সাকিবের জন্য বাংলাদেশের দরজা সবসময় খোলা। তিনি যে বিশ্বমানের ক্রিকেটার, তা কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
কিংবদন্তির শেষটা? সে তো কালো চাদরে ঢাঁকা
সাকিবে ক্রিকেট ক্যারিয়ার হয়তো ২৪ এর গণআন্দোলনের মধ্য দিয়েই একেবারে নীরবেই শেষ। এতো বছরের এতো ভালোবাসা যারা দিলো, যারা এশিয়া কাপের ফাইনাল হারার পর সাকিবের সাথে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলো, সেই বাংলাদেশী সমর্থকরা তার আচরণে ক্রদ্ধ হলেন। ২৪ এর আন্দোলনে তার নীরব থাকাটা মেনে নিতে পারেনি কেউ। সাকিবের পাগল ভক্তরাও তাকে ঘৃণা করতে শুরু করলেন।
সাকিব তো আর ব্রাজিলীয় কিংবদন্তী সক্রেটিস নন, যিনি বলেছিলেন দেশে গণতন্ত্র না ফিরলে, ঠিকঠাক নির্বাচন না দিলে তিনি দেশের হয়ে খেলবেন না। ক্রিকেটে মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়ালেও দেশের মানুষের বিপদে তিনি দেশের মানুষকে সঙ্গ দিতে পারেননি।
সাকিব বরং তার ঠিক বিপরীত। নিরাবেগী, হিসেবী। সারা জীবন খেয়াল রেখেছেন কেবল নিজেরটাই। তবে তিনিও হিসেবে মস্ত ভুল করেছিলেন। আবেগী জনতার রাগ কতো ভয়ঙ্কর হতে পারে তা তিনি বুঝতে পারেননি। যখন বুঝেছেন তখন দেরী হয়ে গেছে। বিদেশের মাটিতে “আপনি দেশের জন্য কি করেছেন?” বলতে অভ্যস্ত সেই উদ্ধত সাকিব এখন দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু, সাকিবকে লোকে আর বিশ্বাস করে না।
বিশ্বাস দুরের কথা, তাকে জন্মভূমিতেও ফিরতে দেখতে চায় না মানুষের বড় একটি অংশ। ইতিমধ্যেই খুনের মামলার আসামী হওয়া সাকিব আওয়ামী লীগ পতনের পর পাকিস্তান ও ভারতে চারটি টেস্ট ম্যাচ খেললেও দেশে আর খেলতে পারবেন কিনা সন্দেহ।
কেউ কেউ সন্দেহ করছেন সাকিব দেশে ফিরতে চান আসলে নিজের সম্পদ বাঁচাতে। কেউ ভাবছেন সাকিব আসলে পতিত আওয়ামী লীগের এসিড টেস্ট। সাকিব যদি খেলার অজুহাতে ফিরতে পারেন, তবে একে একে আওয়ামী লীগের বাকিরাও পূণর্বাসিত হওয়া শুরু করবে। হাসিনা পতনের পর ক্ষমতা নেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে জণগণের সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি না থাকলেও, স্বৈরাচার ও তার দল ফিরে আসুক তা জনগণ চাইছে না বলেই প্রতীয়মান হয়। ফলে, সাকিব আর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের গল্পটা সম্ভবত এখানেই শেষ। তবে গল্পটা শেষ হলেও আফসোসটা থাকবেই।
তথ্যসূত্র
- https://www.kishoralo.com/sports/%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%9A%E0%A7%8B%E0%A6%96%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE#:~:text=%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AC%20%E0%A6%86%E0%A6%B2%20%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%95%E0%A7%87%20%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87%20%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%20%E0%A6%93%20%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%A3%E0%A7%80%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0,%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%20%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%93%20%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%9F%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%20%C2%B7%20%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%9C
- https://netra.news/2024/rise-and-fall-sakib-al-hasan-bn/
- https://www.prothomalo.com/sports/cricket/8nekqnfxta
- https://www.jugantor.com/sports/866268
- https://archive.roar.media/bangla/main/sports/shakib-al-hasan-controversy-and-some-facts
- https://www.google.com/url?sa=t&source=web&rct=j&opi=89978449&url=https://www.jagonews24.com/feature/article/536309&ved=2ahUKEwim2MLfo5KOAxWv3jgGHTOBIsoQFnoECCAQAQ&usg=AOvVaw3UtEMAsevKrWyLWLkcx0ha