কয়েক মাস আগেও যিনি ছিলেন একজন আন্দোলনকারী, আজ তিনি একজন নীতিনির্ধারক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সমন্বয়ক থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এই যাত্রা শুধু একটি পদের পরিবর্তন নয়, এটি একটি নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনার ঘোষণা।
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এমন কিছু মুহূর্ত আছে, যেগুলো গতানুগতিক ধারার সবকিছুকে ওলট-পালট করে দেয়। গত বছর ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং তার ফলস্বরূপ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন ছিল এমনই এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। আর এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা যে কয়েকটি মুখ আজ পুরো দেশের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আসিফ মাহমুদ।
যিনি কয়েকমাস আগেও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, আজ তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজপথের উত্তাল আন্দোলন থেকে রাষ্ট্রপরিচালনার গুরুদায়িত্ব পাওয়া আসিফ মাহমুদর এই অবিশ্বাস্য রূপান্তর শুধু একজন ব্যক্তির উত্থানের গল্প নয়, এটি একটি প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম এবং বিজয়ের প্রতীক।
আসিফ মাহমুদ এর পরিচয়
আসিফ মাহমুদ, ১৪ জুলাই, ১৯৯৮ সালে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ এবং নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন তিনি। ক্যাম্পাসের আর দশজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতোই তার জীবনযাত্রা ছিল, কিন্তু তার মধ্যে ছিল সামাজিক অবিচার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক তীব্র সংবেদনশীলতা। আসিফ মাহমুদ বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা। তিনি মূলত একজন ছাত্রনেতা যিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।
ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে তার ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার শুরুটা হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। তিনি দেখিয়েছেন, নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বংশপরিচয় বা বিশাল অর্থবিত্তের প্রয়োজন হয় না; প্রয়োজন হয় সঠিক উদ্দেশ্য, সাহস এবং সাধারণ মানুষের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করার ক্ষমতা। তার সাধারণ পরিচয়ই আজ তাকে অসাধারণ করে তুলেছে।
রাজপথের নেতা: কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভূমিকা
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল একটি স্ফুলিঙ্গ, যা পরবর্তীতে দাবানলে রূপ নেয়। সরকারি চাকরিতে কোটার ব্যাপক অসামঞ্জস্যের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলন এক পর্যায়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের কোনো একক নেতা ছিল না; এটি ছিল সমন্বিত নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। আর সেই সমন্বয়কদের মধ্যে আসিফ মাহমুদ ছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও পরিচিত মুখগুলোর একজন।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এক যোদ্ধা, যিনি দেশপ্রেম ও গভীর দায়িত্ববোধ থেকে এই সংগ্রামের পথে নেমেছিলেন। রাষ্ট্রের কোটা ব্যবস্থায় বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে সকলের জন্য সমান সুযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন পরিবারের অগোচরেই।
আন্দোলনের শুরুর দিকে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ হলে তার পরিবার তার সম্পৃক্ততার কথা জানতে পারে। পরিবার থেকে যখন তাকে নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়, তখন তার প্রত্যয় আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে।
তিনি পরিবারকে জানিয়ে দেন, “আমার চোখের সামনে ভাই-বোনেরা জীবন দিয়েছে। এই অবস্থায় আমি পিছু হটতে পারি না। হয় তাদের মতো আমিও মরব, অথবা আন্দোলনকে সফল করে তবেই ঘরে ফিরব।”
এই একটি কথাই তার ইস্পাতকঠিন মনোবল এবং সহযোদ্ধাদের প্রতি তার দায়বদ্ধতার প্রমাণ দেয়।
আসিফের এই অটল অঙ্গীকার এবং নেতৃত্ব আরও স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে ২০২৪ সালের ৪ জুলাই। সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যা তরুণ সমাজকে দারুণভাবে আলোড়িত করে।
তিনি তার ভাষণে সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা। তিনি যুক্তি দেখান, শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে রাষ্ট্র এই সমতার ক্ষেত্রে সামান্য ব্যতিক্রম করতে পারে, কিন্তু সেই সুযোগ কোনোভাবেই ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়।
আসিফ আরও জোরালোভাবে বলেন, “সংবিধানে কোথাও লেখা নেই যে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি বা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও কোটার সুবিধা দিতে হবে। একইভাবে, পোষ্য কোটার নামে কর্মকর্তার সন্তান কর্মকর্তাই হবে আর কৃষকের সন্তান কৃষকই থাকবে এই উত্তরাধিকারভিত্তিক বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। তিনি ঘোষণা করেন, এই অন্যায্য কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
তার নেতৃত্ব ছিল অনুপ্রেরণাদায়ী। তিনি তরুণদের উদ্বুদ্ধ করে বলতেন, “যতক্ষণ দাবি আদায় না হবে, ততক্ষণ রাজপথ আমাদের ঠিকানা। হোক সে ঝড়-বৃষ্টি বা রক্তের বন্যা।”
এই ধরনের দৃপ্ত আহ্বানই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অটুট মনোবল তৈরি করেছিল।
ক্ষমতার চূড়ায়: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা
ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পালিয়ে যাবার পর যখন দেশে একটি রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়, তখন প্রয়োজন ছিল এমন কিছু মুখের, যাদের ওপর দেশের মানুষের আস্থা রয়েছে। গতানুগতিক রাজনীতিবিদদের ওপর জনগণের অনাস্থার কারণে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ডাক পড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের। এভাবেই রাজপথের নেতা আসিফ মাহমুদ প্রবেশ করেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে।
তাকে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে: যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (LGRD)।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা: একজন তরুণ নেতা হিসেবে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া ছিল বেশ প্রত্যাশিত। দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা এবং ক্রীড়াঙ্গনকে দুর্নীতিমুক্ত করে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়া তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
LGRD উপদেষ্টা: এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া ছিল সবচেয়ে বড় চমক এবং তার উপর গভীর আস্থার পরিচায়ক। এলজিআরডি মন্ত্রণালয় দেশের সবচেয়ে বড় এবং তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত একটি মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে দেশের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা এবং পৌরসভা পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এই মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং তৃণমূলের মানুষের কাছে সরাসরি সেবা পৌঁছে দেওয়ার এক বিশাল চ্যালেঞ্জ এখন আসিফ মাহমুদর কাঁধে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন ছাত্রনেতার সরাসরি মন্ত্রিত্বের পর্যায়ে চলে আসা এক বিরল এবং যুগান্তকারী ঘটনা। এটি প্রমাণ করে, দেশের মানুষ প্রচলিত ধারার রাজনীতির বাইরে নতুন এবং সৎ নেতৃত্ব দেখতে চায়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন
উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আসিফ মাহমুদ তার মন্ত্রণালয় দুটির জন্য একটি পরিষ্কার রূপরেখা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনি ‘ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ ফান্ড’ গঠন এবং ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। অন্যদিকে, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে তিনি ‘সরাসরি ডিজিটাল টেন্ডারিং’ ব্যবস্থা চালু করে ঠিকাদারি কাজে দুর্নীতি বন্ধ করার উপর জোর দিচ্ছেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সফরেও যেতে দেখা গেছে। এই সফরগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্পর্কে বিশ্বকে জানানো, নতুন সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। তিনি বিশ্বের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চান যে, বাংলাদেশ এক নতুন গণতান্ত্রিক এবং স্থিতিশীল যুগে প্রবেশ করেছে।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আসিফ মাহমুদ: উত্থানের পাশাপাশি সমালোচনা
সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা তাকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে, যা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং ভাবমূর্তির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিতর্কটি তৈরি হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে তার পদত্যাগ এবং সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্র করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল ম্যান্ডেট হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এই সরকারের উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষ থাকার কথা। কিন্তু নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই উপদেষ্টা নাহিদের পদত্যাগ এবং নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিতকে অনেকেই স্বার্থের সংঘাত (Conflict of Interest) হিসেবে দেখছেন।
সমালোচকদের মতে, তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকার সুবিধাকে ব্যবহার করে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ভিত্তি তৈরি করেছেন, যা এই সরকারের নিরপেক্ষতার চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাদের অভিযোগ, আসিফ মাহমুদও শেষ পর্যন্ত গতানুগতিক রাজনীতিবিদদের পথেই হাঁটছেন, যার মূল লক্ষ্য ক্ষমতা।
অন্যদিকে, আসিফের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের ব্যবস্থাগত পরিবর্তন আনার জন্য একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের বিকল্প নেই। তিনি এবং তার সহযোদ্ধারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের কাজ করতে চান এবং তার পদত্যাগই প্রমাণ করে যে, তিনি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চান না।
দ্বিতীয় যে ঘটনাটি তার “পরিচ্ছন্ন” ভাবমূর্তিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে, তা হলো তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ)-এর বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ লোপাটের এক গুরুতর অভিযোগ। তার এক সহকারী, সরকারি প্রকল্পের তহবিল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। এই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। যদিও আসিফ মাহমুদ নিজে এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না, কিন্তু তার কাছের মানুষের এই দুর্নীতি তার নেতৃত্ব এবং বিচক্ষণতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এই বিতর্কের জবাবে আসিফ মাহমুদ অভিযুক্ত সহকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করেন এবং পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানান।
তিনি বলেন, “দুর্নীতির ক্ষেত্রে আমার অবস্থান শূন্য সহনশীলতার। সে যেই হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।”
তার এই দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসিত হলেও, এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, নতুন হলেও ক্ষমতার চারপাশের বলয়কে দুর্নীতিমুক্ত রাখা কতটা কঠিন।
সবশেষে, যে ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, তা হলো সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সফরের সময় এয়ারপোর্টে তার ব্যাগে একটি বন্দুকের ম্যাগাজিন পাওয়া যাওয়ার ঘটনা। এটি ছিল একটি মারাত্মক নিরাপত্তা ত্রুটি এবং এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। যে নেতা একটি অহিংস ছাত্র আন্দোলনের প্রতীক, তার ব্যাগে কীভাবে অস্ত্রের অংশবিশেষ পাওয়া গেল এই প্রশ্ন ওঠে সব মহলে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বও ডালপালা মেলে। এর জবাবে আসিফ মাহমুদর দপ্তর থেকে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, যেখানে বলা হয় এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল। তার লাইসেন্সকৃত ব্যক্তিগত অস্ত্রের ম্যাগাজিনটি ভুলবশত সেই ব্যাগে থেকে গিয়েছিল এবং এর জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তিনি নিরাপত্তা এজেন্সির সাথে পূর্ণ সহযোগিতার কথাও জানান। যদিও অনেকেই এই ব্যাখ্যাকে একটি সাধারণ ভুল হিসেবে মেনে নিয়েছেন, কিন্তু তার বিরোধীরা এটিকে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছে।
আসিফ মাহমুদর কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন সাধারণ সমন্বয়ক থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা হয়ে ওঠার যাত্রাটি বাংলাদেশের জন্য এক নতুন আশার আলো। তার এই উত্থান প্রমাণ করে যে, দেশের তরুণ প্রজন্ম শুধু পরিবর্তনের স্বপ্নই দেখে না, সেই পরিবর্তনকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে।
অবশ্যই, তার পথচলা মসৃণ নয়। আন্দোলন এবং প্রশাসন এক জিনিস নয়। জনপ্রিয়তা ধরে রেখে বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর পরিবর্তন আনা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবে আসিফ মাহমুদর সততা, মেধা এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা যদি অক্ষুণ্ণ থাকে, তবে তার হাত ধরে বাংলাদেশ হয়তো এক নতুন, আরও গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে। তার সাফল্য বা ব্যর্থতার ওপরই নির্ভর করছে দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণের স্বপ্ন এবং বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ।
তথ্যসূত্র –
- https://www.tbsnews.net/bangla/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE/news-details-241806
- https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-604006
- https://www.dw.com/bn/%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%AB-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%98%E0%A6%9F%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF/g-73093086
- https://www.prothomalo.com/bangladesh/r5dgu04ssr
- https://www.bbc.com/bengali/articles/cwy0d9zdeeeo
- https://moysports.gov.bd/site/photogallery/b55d2e06-6e4a-4cf7-8766-2dac379dff6f/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A7%9F-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AC-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%AB-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A6-%E0%A6%B8%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC-%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%81%E0%A6%87%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%AC-%E0%A6%93-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A7%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A5%A4-
- https://www.bbc.com/bengali/articles/cy8ggnglv10o
- https://www.banglanews24.com/football/news/bd/1548305.details
- https://www.shomoyeralo.com/news/318763