এখানে স্বর্ণ, হীরার খনির সাথে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর আকাশ।
একটি শহর, যেখানে নীল সমুদ্রের গর্জন, পাহাড়ের শিখরে দাঁড়িয়ে বিশাল এক যিশু খ্রিস্টের মূর্তি, আর প্রতিটি কোণায় সাম্বার ছন্দে দুলছে মানুষ! হ্যাঁ, এটি রিও দে জেনেরো—একটি শহর যা শুধু পর্যটকদের নয়, গোটা বিশ্বের মন কেড়ে নেয় তার রঙিন উৎসব, অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সংস্কৃতির মাধ্যমে।
চলুন তাহলে, এই লেখায় আমরা আমরা ডুব দেই রিও দে জেনেরোর রঙীন সংস্কৃতিতে, আর জেনে নেই শহর সম্পর্কে মজার মজার গল্প।
দেশ | ব্রাজিল |
অঞ্চল | রিও ডি জেনিরো |
আয়তন | ৪,৫৩৯.৮ বর্গ কি.মি. |
জনসংখ্যা | ৬.৭ মিলিয়ন |
সরকারি ভাষা | পর্তুগীজ |
প্রধান মূদ্রা | ব্রাজিলিয়ান রিয়াল |
সময় অঞ্চল | ৪ টি (উত্তর, পশ্চিম, কেন্দ্রিয় ও দক্ষিণ)। |
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর | ব্রাসিলিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট,লাগো সুল। |
রিও ডি জেনিরো’র আয়তন ও জনসংখ্যা
রিও ডি জেনিরো রাজ্যের রাজধানী হলো এই রিও ডি জেনিরো শহর। অর্থাৎ, এখানে শহরটির নাম তার রাজ্যের নামেই। শহরটির আয়তন প্রায় ৪৫৩৯.৮ বর্গ কিলোমিটার যেখানে বসবাস করে প্রায় ৬.৭ মিলিয়ন মানুষ। ব্রাজিলের দ্বিতীয় জনবহুল শহর এটি।
এখানকার জলবায়ু ‘ক্রান্তীয় গ্রীষ্মমণ্ডলীয়’ যার মধ্যে আছে গরম, শুষ্ক গরম, মৃদু শীত ও শুষ্ক শীত। এই শহরের আবহাওয়ার বড় নিয়ামক হলো এর উপকূলীয় অবস্থান, পার্শ্ববর্তী পর্বত এবং ক্রান্তীয় বাতাস। এসব নিয়ামকের কারণে আবার শহরটির বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রার কিছুটা পার্থক্যও দেখা যায়।
রিও ডি জেনিরো’র নামকরণ বিতর্ক
শহরের নাম
রিও ডি জেনিরো’র অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘জানুয়ারীর নদী’। ১৫০২ সালের জানুয়ারী মাসে পর্তুগিজ নাবিকরা এই স্থানটির একটি নদীমুখে অবতরণ করেন এবং তারপর এই নদী ও এ এলাকার নাম তারা রিও ডি জেনিরো রাখেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, তারা যেটাকে নদীমুখ ভেবেছিলো সেটা আসলে ছিলো ‘গুয়ানাবারা উপসাগর’। অর্থাৎ, জানুয়ারীর নদী আসলে কোন নদীই ছিলো না!
স্থানীয় অধিবাসীদের নাম
রিওতে স্থানীয় অধিবাসীদের ‘ক্যারিওকা’ বলা হয়। এখন এর অর্থ নিয়েও আছে অনেক বিতর্ক! রিওতে ক্যারিওকা নামে নদী আছে কিন্তু এই নদীর নাম আগে দেয়া হয়েছে নাকি জাতির নাম আগে দেয়া হয়েছে কেউ জানেনা।
কেউ বলেন এটি টুপি ভাষায় ‘কারিওলা’ বা ‘সাদা মানুষের বাড়ি’ থেকে এসেছে, তো কেউ বলেন এই নামটি পর্তুগীজ ব্যবসায়ীদের থেকে এসেছে।
আবার এখানে ‘কড়ি’ ও ‘মাকাড়ি’ নামে দুই প্রজাতির মাছ রয়েছে। এদের নাম থেকেও ক্যারিওকা শব্দটি আসতে পারে বলে কতকের ধারণা। এর মধ্যে যে কোনটা সঠিক তা আজ অবধি জানা যায় নি।
রিও ডি জেনিরোর ইতিহাস
ইউরোপ থেকে রিওতে প্রথম পর্তুগিজরাই পা ফেলেছিল। কিন্তু এখানটায় প্রথম নিজেদের আস্তানা গেড়েছিলো ফরাসীরা। ১৯৫৫ সালে ডুরান্ড ডি ভিলেগগনন (French aristocrat) এখানে আসেন এবং গুয়ানাবারা উপসাগরের একটি দ্বীপে দুর্গ স্থাপন করেন। এটি ছিলো ‘ফ্রান্স এন্টার্কটিক’ নামে ফরাসীদের উপনিবেশের সূচনা। তবে এই উপনিবেশটি ক্ষণিকের ছিলো। ১৫৬৭ সালে পর্তুগিজরা এখানে ফিরে আসে এবং ফরাসী উপনিবেশ ধ্বংস করে এবার নিজেদের শক্তপোক্ত অবস্থান তৈরি করেন।
এরপর ১৬৯০ সালে ব্রাজিলে স্বর্ণ ও হীরার খনি আবিষ্কার হয়। এই সময়টাতে ব্রাজিলের একদম নিকটতম বন্দর হিসাবে রিও’র উত্থান হয়েছিল। দীর্ঘ ১৭৬৩ (উপনিবেশিক) থেকে ১৯৬০ (স্বাধীন ব্রাজিল) অবধি রিও ব্রাজিলের রাজধানী হিসাবেই ছিলো। ব্রাজিলে রিও’র অস্তিত্ব তখন থেকে এখন অবধি জাতীয় পতাকায় সংরক্ষিত আছে।
রিও ডি জেনিরোর পর্যটন স্থান
ক্রাইস্ট দ্যা রিডিমার (Christ The Redeemer)
এটা যীশু খ্রিষ্টের মূর্তি যা করকোভাডো পাহাড়ের উপর অবস্থিত। বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি এই মূর্তিটি। দেখে মনে হবে যেন, যীশু খ্রিষ্ট সকলের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা ও স্নেহ বিলিয়ে দিচ্ছেন। বাস্তবেও এই মূর্তিটি প্রতীকীভাবে মানবজাতির উপরে তাঁর দয়া বর্ষণকেই প্রতিফলিত করে।
তাই এটাকে একটি নিছক মূর্তি না ভেবে, বরং, এটাকে রিওর উপর ‘ঐশ্বরিক সুরক্ষা’ হিসাবে ভাবা উচিত। এই পাহাড় ও মূর্তির একত্রিত সৌন্দর্য সম্পর্কে যাইই বলি না কেন তা কম হয়ে যাবে। একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই স্থানটি অত্যন্ত বজ্রপাতপ্রবণ।
শুগারলফ মাউন্টেন
এই পর্বতটি ক্রাইস্ট দ্যা রিডিমার এর পাশে অবস্থিত। ১,৩০০ ফুট উচু এই পর্বত পুরোটাই গ্রানাইটের। রিওর উপকূল, সৈকত, সাথে এই পর্বত, সবমিলিয়ে এই স্থানটি দৃষ্টিনন্দিত।
এখানে ক্যাবল কারে চড়ে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এতে আপনি রিও শহরের দৃশ্য এবং বোটাফোগো বে ও দেখতে পাবেন সুন্দরভাবে।
কোপাকাবানা সৈকত
পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতের একটি হলো এই কোপাকাবানা সৈকত। ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের ছবি অনেক পোস্টকার্ডেই দেখতে পাবেন। এই জায়গাটা বিখ্যাত হবার একটা বড় কারণ হলো এর ফুটপাত।
কালো এবং সাদা মার্বেল দিয়ে তরঙ্গায়িত ডিজাইনের এই ফুটপাতটি দেখতে এবং হাঁটতে রোজ হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভিড় করেন। সোনালী বালির সাথে এই ফুটপাত, সবমিলে একটি বেশ উপভোগ্য পরিবেশ রয়েছে এখানে।
এখানে একটা মজার তথ্য আছে, আর তা হলো, ২০১৩ সালে এই শহরটির পর্যটকদের প্রয়োজনীয় তথ্য দেবার লক্ষ্যে কয়েক ডজন QR Code ইনস্টল করা শুরু করে। এতে পর্যটকরা স্ক্যান করে অনায়াসে তথ্য পেতে পারে
তিজুকা ন্যাশনাল পার্ক
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘শহুরে রেইনফরেস্ট’ এর মধ্যে অন্যতম এই তিজুকা ন্যাশনাল পার্ক। রিও ডি জেনিরো শহরটি এই পার্কের খাতিরে আরও সবার নজরে এসেছে।
শহুরে রেইনফরেস্ট হলেও এর সৌন্দর্য অবিকল বনভূমির রেইনফরেস্টের মতোই। সাথে রয়েছে জলপ্রপাত, সবুজের সমারোহ।
নীল আকাশ
এটা শুনে আপনার মনে হতে পারে যে, আকাশ তো আকাশই, রিওর আকাশে স্পেশাল কি আছে? কিন্তু সত্যিই স্পেশাল কিছু আছে। ২০০৬ সালে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আকাশ’ হিসাবে রিওকে তো আর এমনি এমনি নির্বাচিত করা হয়নি।
এই ঝকঝকে শহরের আকাশ ঠিক কতোটা সুন্দর তা ছবি দেখলেও পুরোপুরিভাবে বোঝা সম্ভব নয়। ঠিক যেন শিল্পীর হাতে আঁকা আকাশের নিখুঁত ছবি, এ যেন কল্পনার মতোই সুন্দর।
রিওতে ভ্রমণ করার সবচেয়ে সুন্দর সময় হলো এপ্রিল থেকে অক্টোবর অবধি। এই সময়টায় মৃদু শীত থাকে, তাই এ সময়টায় ভ্রমণ বেশী উপভোগ্য হবে।
রিও’র সংস্কৃতি
রিও’র সংস্কৃতি বড্ড উদার, ঐতিহ্যপূর্ণ এবং সৃজনশীল ধাঁচের। এর সবটাই প্রায় ব্রাজিলিয়ান সংস্কৃতি ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ বলা যায়।
ভাষা
ব্রাজিলের প্রধান ভাষা হলো পর্তুগীজ। এই দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর মতো রিওর জনগোষ্ঠীও পর্তুগীজ ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে পর্যটন স্থান, হোটেল ও শপিং মলে এখন ইংরেজি ভাষার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
ধর্ম
ব্রাজিলের প্রধান ধর্ম হলো খ্রিস্টধর্ম (বিশেষ করে, ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্ম)। রিওতেও এটি প্রধান ধর্ম। তবে প্রোটেস্টেন্ট খ্রিস্টধর্ম, ক্যান্ডম্বলে (ব্রাজিলিয়ান ধর্ম) ইত্যাদি এখানকার জনপ্রিয় ধর্ম বিশ্বাস। আধুনিকতার ছোঁয়া গায়ে মাখলেও রিওর জনগোষ্ঠীর কাছে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উপাসনার স্থান কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
শিল্প ও স্থাপত্য
রিওর শিল্প ও স্থাপত্যে আধুনিকতার আধিক্যই বেশি। আধুনিক শিল্প,পেইন্টিং এবং ভাস্কর্যের নিদর্শন এই শহরের প্রতিটা কোণায় কোণায়।
এসবের মধ্যে মিউজিয়াম অফ টুমোরো, ক্রাইস্টো রেদেন্তর, অলিম্পিক স্টেডিয়াম, ওস্কার নিয়েমেয়ার ইত্যাদির নাম উল্লেখ না করলেই না।
ঐতিহাসিক স্থাপত্য বলতে এখানে পর্তুগিজ উপনিবেশবাদের ছাপই রয়েছে প্রধানত। আর এখানকার নানা স্মৃতিস্তম্ভ ও গীর্জা আবার ব্রাজিলিয়ান ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতীক।
রিও’র সঙ্গীত
রিও একটি ‘সাংস্কৃতিক হাব’ নামে পরিচিত। ‘সাম্বা’ সঙ্গীতটি রিওর নিজস্ব। এই সঙ্গীতের তাল, সুরের মূর্ছনা দেখে এটাকে ‘রিওর প্রাণশক্তি’ বলাও ভুল হবে না। এছাড়াও সঙ্গীতের বিভিন্ন স্টাইল, যেমন- বোসানোভা, মপো, ফাঙ্ক, ব্রাজিলিয়ান পপও এখানে বেশ জনপ্রিয়।
রিও’র পোশাক ও বিকিনি নিষিদ্ধ আইন
রিও ডি জেনিরো তার ফ্যাশন সচেতন জনগোষ্ঠীর জন্যও বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এখানে বিশেষ কোন জাতীয় পোশাক নেই। তবে কিছু ঐতিহ্যবাহী পোশাক যেমন; কার্নিভাল, ফেইজোয়াদা, কাউচো ইত্যাদি পোশাক উল্লেখযোগ্য।
দৈনন্দিন জীবনে রিওর অধিবাসীদের মূলত আরামদায়ক, হালকা, রঙিন পোশাকে দেখা যায়। যেমন, সমুদ্র তীরে আপনি নারীদের সাধারণভাবে বিকিনি পরিহিত দেখবেন। ‘রিও ফ্যাশন সপ্তাহ’ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।
একটা মজার ব্যাপার হলো, ১৯৬১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জনিও দা সিলভা কোয়াড্রোস আইন করে বিকিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন। আইন করার পর তিনি মাত্র সাত মাস ক্ষমতায় ছিলেন। ইতিহাস এটাকে ঐ আইনের বিপরীতে প্রতিবাদ হিসাবে মস্করা করে।
রিও’র খাবার- জাতীয় খাবার ‘ফেইজোয়াদা’
রিওর খাবারে ব্রাজিলের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের প্রভাব লক্ষনীয়। ব্রাজিলের জাতীয় খাবার ‘ফেইজোয়াদা’ এখানে খুবই জনপ্রিয়। এই খাবার মটরশুটি, গরুর এবং শুয়োরের মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়।
ফেইজোয়াদা নিয়ে রিওতে একটি রীতি মানা হয়। তা হলো, প্রতি বছরের শুরুর শনিবারে এটি পরিবারের সকলের সাথে মিলে খেতে হয়। এটা তাদের একটা ঐতিহ্য।
এছাড়াও, চুরাস্কো,প্যাস্টেল,কোকোয়া এখানকার জনপ্রিয় খাবার।
পানীয়ের ক্ষেত্রে কফি এখানে শীর্ষ স্থানে আছে। মজার ব্যাপার হলো, রিওতে অধিকাংশ রান্নায় ব্যবহার করা হয় ‘কমলার রস’। অদ্ভুত না?
রিও কার্নিভাল
রিও ডি জেনিরোর ‘রিও কার্নিভাল’ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও বিখ্যাত উৎসবগুলোর মধ্যে একটি। সচরাচর ফ্রেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে (খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী) এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
এখন প্রশ্ন হলো এখানে কি এমন হয় যার কারণে রিও কার্নিভাল এত বিখ্যাত?
সাম্বা
রিও কার্নিভালের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সাম্বা (ব্রাজিলিয়ান সঙ্গীত)। সাম্বার সুর, রঙিন পোশাক এবং প্রাণবন্ত নৃত্য একটি আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করে। সাম্বা সঙ্গীত ও এর সাথে তাল মিলিয়ে নৃত্য, সৃজনশীলতা নিয়ে এখানটায় অনেক বড় প্রতিযোগিতার আসর বসে। এখানে জেতার জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে প্রতিটি সাম্বা স্কুল। সাম্বার প্রতিটি দলকে এক একটি ‘সাম্বা স্কুল’ বলা হয়।
রাস্তার পার্টি
রিওর ইট-পাথরের রাস্তাগুলো ‘ব্লোকো’ বা ‘রাস্তার পার্টি’র মাধ্যমে যেন জীবন্ত হয়ে উঠে! এই পার্টিগুলো বিশাল আকারের হয়ে থাকে। পুরো শহরের মানুষজন এতে যুক্ত হয়। সকলে মিলে নাচ, গান করে একত্রে পায়ে হেঁটে পুরো শহর টহল দেয়। প্রতিবছর এ পার্টিতে অংশ নিতে পর্যটকদেরও ঢল নামে রিওতে।
রিও’র নিজস্বতা ও সাহসী পোশাক
নিজেদের গান গাওয়া, নাচার পাশাপাশি এই কার্নিভাল আন্তর্জাতিকাবে পরিচিত হওয়ার এক বিশেষ কারণ হলো—এর সাহসী পোশাকের ব্যবহার! খোলামেলা পোশাকের সাথে অজস্র অলঙ্কারের এমন কম্বো শুধু রিও কার্নিভালেই দেখা যায়।
রিও’র কার্নিভালে যা হয়
কার্নিভালে ব্রাজিলীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস প্রদর্শনের এক বৃহৎ প্লার্টফর্ম। পর্যটকরা এজন্যই এত আকর্ষণ অনুভব করেন এই কার্নিভালের প্রতি।
কয়েক দিন ব্যাপী চলে এই কার্নিভাল অনুষ্ঠান। তবে, এর শীর্ষ সময় হলো ‘কার্নিভাল মঙ্গলবার’। কেননা এই দিনে সাম্বা স্কুলগুলো তাদের চূড়ান্ত পারফরম্যান্স প্রদান করে।
কার্নিভাল এমন একটি উৎসব যেখানে আপনি নাচ, গান না জানলেও আপনি নাচবেন, গাইবেন। আর রিওতে একবার গেলে বারবার যেতে চাইবেন।
রিও খুবই গোছানো, সুন্দর আর পরিস্কার শহর। বিভিন্ন সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু এই শহরটিতর বৈচিত্র্য বা চমকেরও নেই শেষ।
রিও ডি জেনিরো সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য
শহরের নামের অর্থ ভুল!
১৫০২ সালে পর্তুগিজ নাবিকরা এখানে পৌঁছে ভুল করে ভেবেছিল এটি একটি নদী। তাই তারা এর নাম রাখে ” রিও ডি জেনিরো”, যার অর্থ “জানুয়ারির নদী”, যদিও এটি আদতে কোনো নদী নয়, বরং একটি উপসাগর!
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্নিভালের শহর
প্রতি বছর রিওতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অংশ নেয়, রঙিন পোশাক পরে নাচগান করে, আর চারদিক সেজে ওঠে ঝলমলে সাজে!
ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার—এক বিস্ময়
রিওর বিখ্যাত “ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার” বিশ্বের নতুন সপ্তাশ্চর্যের একটি। এটি ৩০ মিটার উঁচু, আর হাত দুটো ছড়ানো থাকায় মনে হয় শহরটিকে আশীর্বাদ দিচ্ছে!
বিচভিত্তিক জীবনযাত্রা
রিওর লোকজনের জীবন সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। সকালে জগিং, বিকেলে ফুটভলি (ফুটবল+ভলিবল), আর সারাদিন রোদ পোহানো—এটাই রিওবাসীর জীবনধারা!
কপাকাবানা: বিশ্বের বিখ্যাত সৈকত
রিওর কপাকাবানা বিচ পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর সৈকত, যেখানে প্রতি বছর নিউ ইয়ার উদযাপনে লাখ লাখ মানুষ সাদা পোশাকে আসে আর আতশবাজি দেখে!
রিওর মানুষ ফুটবলের পাগল
ব্রাজিল মানেই ফুটবল, আর রিওর লোকজন তো ফুটবল নিয়েই বাঁচে! ১৯৫০ সালে এখানে অবস্থিত মারাকানা স্টেডিয়ামে রেকর্ডসংখ্যক ২ লক্ষ দর্শক একসঙ্গে খেলা দেখেছিল!
ফাভেলা: পাহাড়ের বুকে শহর
রিওর পাহাড়ি ঢালে গড়ে ওঠা বস্তি “ফাভেলা” গুলো শহরের অন্যতম আকর্ষণ। যদিও এগুলো অপরাধপ্রবণ এলাকা, তবুও এখানে কিছু দারুণ সংস্কৃতি ও সংগীতের বিকাশ ঘটেছে।
এখানকার আতশবাজি প্রদর্শনী বিশ্বখ্যাত
নিউ ইয়ার্স ইভে কপাকাবানা বিচে এমন এক আতশবাজির উৎসব হয়, যা দেখার জন্য সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকরা ছুটে আসে!
সুগারলোফ পর্বত: এক ব্যতিক্রমী আকৃতি
শহরের আইকনিক পর্বত সুগারলোফ দেখতে অনেকটা চিনির টিলা বা পিরামিডের মতো, যা প্রায় ৪০০ মিটার উঁচু!
সাম্বার শহর
রিও কার্নিভাল মানেই সাম্বা নাচ, যা ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। এখানে আলাদা “সাম্বা স্কুল” পর্যন্ত আছে, যারা সারা বছর কার্নিভালের প্রস্তুতি নেয়!
এখানে রয়েছে একমাত্র “জঙ্গলের মাঝে শহর”
তিজুকা ন্যাশনাল ফরেস্ট বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহুরে বনভূমি। এটি রিওর মাঝেই অবস্থিত, যা শহরের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত!
ব্রাজিলিয়ান ওয়াকিং স্টাইল
রিওর মানুষদের হাঁটার আলাদা একটা ভঙ্গি আছে, যা “গিঞ্জা” নামে পরিচিত। এটি ফুটবল ও সাম্বার প্রভাবেই এসেছে!
বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত কার্নিভাল স্ট্রিট
লাপা আর্চেস এলাকায় প্রতি রাতে বিশাল পার্টি হয়, যা রিওর সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্থানগুলোর একটি!
কফি শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু ছিল একসময়
একসময় রিও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কফি উৎপাদনকারী শহর ছিল, যা ব্রাজিলকে কফির সুপার পাওয়ার বানিয়েছিল!
শহরটির আবহাওয়া একেবারে গরম ও আর্দ্র
রিও ডি জেনিরোর তাপমাত্রা প্রায় সারা বছরই ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে, আর আর্দ্রতা থাকে ৭০-৮০%।
অলিম্পিকের প্রথম দক্ষিণ আমেরিকান শহর
২০১৬ সালে রিও প্রথম দক্ষিণ আমেরিকান শহর হিসেবে অলিম্পিক আয়োজন করে, যা ছিল একটি বিশাল ঘটনা!
দানবাকার বেলুনের মতো গরম বাতাসের বেলুন উড়ানোর উৎসব
রিওতে “ফেস্তা জুনিনা” নামে এক উৎসব হয়, যেখানে বিশাল বিশাল গরম বাতাসের বেলুন আকাশে ওড়ে!
হেলিকপ্টার ট্যুরের জন্য জনপ্রিয় স্থান
রিওর সৌন্দর্য আকাশ থেকে দেখার জন্য পর্যটকরা হেলিকপ্টার ভাড়া নেয়, যা শহরের অন্যতম জনপ্রিয় অ্যাডভেঞ্চার!
বিখ্যাত চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণ হয়েছে এখানে
রিওর সৌন্দর্য এতটাই মুগ্ধকর যে “ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৫”, “রিও”, ও “দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক”-এর মতো চলচ্চিত্রের দৃশ্য এখানে ধারণ করা হয়েছে!
রিও মানে মুক্ত জীবনধারা!
রিওর মানুষরা খুবই প্রাণবন্ত, মুক্তচিন্তক, আর জীবন উপভোগ করতে ভালোবাসে। সৈকত, ফুটবল, সাম্বা আর পার্টি—এগুলোই যেন তাদের জীবন!