Image default
নগর পরিচিতি

স্ল্যাব সিটি- যে শহরে নেই কোন আইন কানুন

গণতন্ত্রের সূতিকাগার খোদ আমেরিকার মধ্যে রয়েছে এমন একটি স্থান যেখানে নেই কোন গণতন্ত্র; খাটে না কোন আইন!    

এমন শহরের কথা কখনো শুনেছেন কি যেখানে অতিথি পাখির মতন মানুষ শুধু মাত্র শীতকালে ভিড় জমায়? যেখানে গরম কালে মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই বসবাস করে? বলছি স্ল্যাব সিটি বা দ্যা স্ল্যাবস এর কথা। দ্যা লাস্ট ফ্রি প্লেস ইন আমেরিকা। এই শহরে নেই কোন আইন ও শাসন। স্বাধীনচেতা মানুষেরই দেখা মিলবে এই শহরে। 

চলুন শহরটি সম্পর্কে অজানা  সব তথ্য জেনে আসি।

দেশ আমেরিকা
অঙ্গরাজ্য  ক্যালিফোর্নিয়া
শহর স্ল্যাব সিটি
আয়তন ৬৪০ একর
জনসংখ্যা গ্রীষ্মকালে ১৫০ , শীতকালে ৪০০০ 
সরকারি ভাষা ইংরেজি

ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু 

স্ল্যাব সিটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কাউন্টিতে অবস্থিত। সল্টন সাগরের পূর্বে মেক্সিকান সীমান্তের উত্তরে এই শহরের অবস্থান। 

এই শহরটি মরু অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ু বিরাজ করে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা প্রায়ই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, যা জীবনযাত্রাকে বেশ কঠিন করে তোলে। শীতকাল তুলনামূলকভাবে মৃদু এবং সহনীয় হয়, তখন তাপমাত্রা সাধারণত ১০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। 

এখানে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত কম হয়, যা মরু জলবায়ুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তীব্র রোদ ও খরার কারণে উদ্ভিদজগৎ সীমিত এবং পানি সংকট এখানে একটি সাধারণ সমস্যা।

ম্যাপ 

জনসংখ্যা

এ শহরে কোন আইনকানুন নেই, নেই কোন পরিষেবা কিংবা জনসেবা। শহরটির অবস্থান কলোরাডো মরুভূমির মধ্যখানে তাই এখানে আবহাওয়া সবসময় শুষ্ক এবং প্রচণ্ড গরম। ঋতুভেদে জনসংখ্যা পরিবর্তন হয়। এখানকার বেশির ভাগ অধিবাসীরা শীতের অতিথি পাখির মতো কেবল শীতকাল পার করতেই জায়গাটিতে আসে। 

শীতকালে এখানে ৪ হাজার মানুষ বসবাস করে। গরমকালের তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যায় সহ্যের সীমা। তাই স্থায়ী প্রায় ১৫০ জন বাসিন্দা ছাড়া সে সময় দেখা পাওয়া যায় না আর কারোরই। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় ওই শ’দেড়েক মানুষকে একরকম বাধ্য হয়েই থাকতে হয় এখানে।

ইতিহাস

স্ল্যাব সিটি গড়ে উঠেছিল দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়। কি শুনে অবাক লাগছে? এত পুরনো শহর? না তখন সেটি শহর ছিল না। ছিল একটি সামরিক ঘাঁটি। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমির জলবায়ু, বিশাল খোলা স্থান এবং দুর্গম ভূখণ্ডের কারণে সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোর জন্য একটি কৌশলগত স্থান ছিল। তাই মরুভুমিতে প্রশিক্ষণ ঘাঁটি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। 

১৯৪২ সালে নৌবাহিনী কর্তৃক সোনোরান মরুভূমিতে ৬০০ একরের বেশি জমিতে একটি মার্কিন মেরিন কর্পস ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। এটি মূলত মেরিন কর্পস ইউনিটগুলোর জন্য, বিশেষ করে আর্টিলারির জন্য, একটি প্রশিক্ষণ শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ক্যাম্পটিতে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর ভবন, জল, রাস্তা এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল। যুদ্ধের সময় ঘাঁটিটি তিন বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল। 

স্ল্যাব সিটির মেরিন ঘাটি

১৯৪৯ সালের মধ্যে, ক্যাম্প ডানল্যাপে সামরিক অভিযান ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল । যুদ্ধ শেষে প্রতিরক্ষা বিভাগ ১৯৬১ সালে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে জমি ফিরিয়ে দেয়। সামরিক ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছিল। তবে কংক্রিটের স্ল্যাবগুলো অবশিষ্ট ছিল।

অর্থনীতি

স্ল্যাব সিটির বাসিন্দাদের আয়ের প্রধান উৎস নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। বাসিন্দাদের সাধারণত সবচেয়ে প্রচলিত আয় আসে সম্ভবত supplemental Security Income (SSI) চেকের মাধ্যমে। স্ল্যাব সিটির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মূলত পর্যটকদের অনুদান এবং দানের ওপর নির্ভরশীল।

১৯৯৫ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানকার প্রায় প্রতিটি বাসিন্দাই প্রতিবন্ধী ভাতা, সামাজিক নিরাপত্তা বা বেকারত্ব ভাতা গ্রহণ করতেন। সে সময় আয় উপার্জনের আরেকটি উপায় ছিল পরিত্যক্ত জিনিস সংগ্রহ করে দর্শনার্থীদের কাছে বিক্রি করা।

স্ল্যাব সিটির বাজার

অনেক বাসিন্দা বিদ্যুতের জন্য সৌর প্যানেল বা জেনারেটর ব্যবহার করেন। কমিউনিটির গির্জার একটি ট্যাঙ্ক থেকে তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়। স্ল্যাব সিটির নিকটবর্তী সবচেয়ে কাছের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র হলো নীলান্ড, যা প্রায় চার মাইল (ছয় কিলোমিটার) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। বাসিন্দারা সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে যান , এবং তারা নীলান্ড থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে থাকেন।

শহরে নেই কোনো আইন-কানুন

কারোর প্রিয় বিড়াল চুরি গেছে, কারোর ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে কিন্তু কেউই পুলিশের শরণাপন্ন হচ্ছে না। কারণ যে শরনাপন্ন হবে তাকেই যে জেলে পাঠানো হবে। শহরটি অপরাধপ্রবণ। 

অদ্ভুত হলেও সত্যি, যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হয়েও আইনকানুনের কোনো বালাই নেই স্ল্যাব সিটিতে। এমনকি অবৈধভাবে গাড়ি রাখার জন্যও কোনো রকম মাশুল গুনতে হয় না বাসিন্দাদের। কোনো শহরের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় পানি বা বিদ্যুৎ সংযোগও নেই এখানে; দিতে হয় না কোনো ধরনের করও। 

স্ল্যাব সিটির বাসিন্দাদের জীবনযাপন

ক্যালিফোর্নিয়া ধনী রাজ্য হলেও স্ল্যাব সিটিতে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। ঘরহীন, বেকার ও যাযাবর মানুষদের অগ্রাধিকার আছে শহরটিতে। যদিও এ শহরে নেই তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা। নেই বিদ্যুৎ কিংবা পানির সুব্যবস্থা। এ কারণে বাসিন্দারা সৌর শক্তি ও জেনারেটরের উপর নির্ভর করেন। 

শত অভাব থাকলেও সেখানে বসবাসকারী ১৫০ মানুষ খুবই শান্তিতে থাকেন। কারণ তারা স্বাধীনভাবে বসবাস করেন এই শহরে। মাসে মাসে ঘর ভাড়া দেওয়ার তোড়জোড় নেই তাদের। যা তাদেরকে মানসিকভাবে স্বস্তি দেয়। পেট্রলের যোগান না থাকায় স্ল্যাব সিটির বাসিন্দারা কাছাকাছি নিল্যান্ড শহরে গাড়ি চালাতে পারে। 

স্ল্যাব সিটিতে ১৯৬০ সালে কয়েকজন শ্রমিক থাকতে শুরু করেন। তারা সেখানে পাতা কাটার জন্য গিয়েছিলেন। এরপর সেখানে একেক করে মানুষের আনাগোণা বেড়ে যায়। সুবিধামতো অনেকেই স্ল্যাব দিয়ে থাকার জায়গা গড়ে নেন। একে একে স্ল্যাব সিটিতে বাড়তে শুরু করে যাযাবর থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত, শিল্পী, দার্শনিক থেকে শুরু করে অন্যান্যরা। আসলে যারা স্বাধীনভাবে বাঁচার ইচ্ছে পোষণ করেন তারাই মূলত স্ল্যাব সিটির বাসিন্দা বনে যান। আর এ কারণে নানা ধরনের অসুবিধা স্বত্ত্বেও বাসিন্দারা বসবাস করছেন সেখানে। 

স্ল্যাব সিটির ঘরবাড়ি

দূর থেকে স্ল্যাব সিটিকে দেখলে তেমন আহামরি কোনো কিছু মনে নাও হতে পারে। পুরোনো কিছু দালানকোঠা, কিছু পুরোনো ট্রাকের সারি কিংবা ভেঙে পড়া তাঁবু দেখে একে পুরোনো কোনো শহরের ধ্বংসাবশেষ মনে হতেই পারে। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা ট্রেইলার (এক ধরনের মিনিবাস যেখানে থাকার সুব্যবস্থা আছে) এবং ভালো মানের কুঁড়েঘরে থাকে।

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, সেখানে কোনো পানি, বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই এবং কোনো বসতিরই নেই কোনো ঠিকানা। কর, শুল্ক এমনকি সার্বজনীন উপযোগিতাও নেই সেখানে। স্ল্যাব সিটিতে এমন ধরনের লোক রয়েছে যারা উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে তাদেরকে ‘টুইকার’ বলা হয়। টুইকারদের কাজ হল চুরি করা এবং বিভিন্ন অপরাধ করা।

স্ল্যাব সিটির পর্যটন

স্যালভেশন পাহাড়

স্ল্যাব সিটিতে দেখার মতো জায়গা হচ্ছে এর স্যালভেশন পাহাড়। প্রায় সাড়ে তিনতলার সমান উঁচু এই ছোট্ট পাহাড়টিতেও গর্ত করে বসবাস করছে স্ল্যাব সিটির স্থায়ী বাসিন্দারা। স্ল্যাব সিটির প্রবেশ পথেই রয়েছে পাহাড়টি যা সম্পূর্ণরূপে ল্যাটেক্স রঙ, কংক্রিট এবং অ্যাডোব দিয়ে আচ্ছাদিত এবং বাইবেলের আয়াত দ্বারা সজ্জিত। 

স্যালভেশন পাহাড়

এই অসাধারণ শিল্পকর্মটি স্ল্যাব সিটির বাসিন্দা লিওনার্ড নাইট ৩০ বছরের প্রচেষ্টায় নির্মাণ করেছিলেন। তার একমাত্র উদেশ্য ছিল ঈশরের প্রেম। হাজার হাজার অনুদানকৃত বালতি রং দিয়ে তিনি এই মনোমুগ্ধকর পাহাড়টি নির্মাণ করেছিলেন। ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ‘ন্যাশনাল ট্রেজার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই অঞ্চলে নৈরাজ্য থাকলেও রয়েছে সৃজনশীলতার ছোঁয়া।

ইস্ট জেসুস

এটি স্ল্যাব সিটিতে অবস্থিত একটি পরীক্ষামূলক ও বাসযোগ্য শিল্পস্থল, যেখানে বিদ্যুৎ বা পৌরসেবার সুবিধা নেই। ২০০৭ সালে চার্লি রাসেল এটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজও নৈরাজ্যিক শিল্প ও সৃজনশীলতার প্রতীক। ভাস্কর্য, পারফরম্যান্স আর্ট ও সংগীতসহ এখানে শিল্প ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে।

ইস্ট জেসুস

ইন্টারনেট ক্যাফে

এই ক্যফেটি পরিচালনা করেন চার্লি। এখানে মানুষ বিনা মূল্যে কফি খেতে পারেন, ফোন চার্জ দিতে পারেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। 

এছাড়া চার্লি এখানে সাইকেল মেরামত করে কিছু অর্থ উপার্জন করেন। তিনি সোলার প্যানেল থেকে ইলেকট্রিসিটি নিয়ে সেখানকার মানুষদের সেবা দিয়ে থাকেন।

ইন্টারনেট ক্যাফে

পরিসর

‘দ্য রেঞ্জ’ স্ল্যাব সিটির একটি উন্মুক্ত নাইটক্লাব, যেখানে মঞ্চ, আলো, অ্যামপ্লিফায়ার, স্পিকার, ছেঁড়া পালঙ্ক ও পুরনো চেয়ার বসানোর ব্যবস্থা রয়েছে। 

প্রতি শনিবার সন্ধ্যায়, স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা একটি প্রতিভা প্রদর্শনীতে অংশ নেন, যেখানে স্থায়ী সংগীতশিল্পীদের পাশাপাশি যে কেউ মঞ্চে এসে পরিবেশনা করতে পারেন। এই আয়োজনের নেতৃত্ব দেন উইলিয়াম অ্যামন, যিনি “বিল্ডার বিল” নামে পরিচিত। তার স্ত্রী রবিন অ্যামন স্ল্যাবসিটির মানুষের জন্য পুরানো প্রম পোশাক সংগ্রহ করেন, যা বিশেষভাবে প্রম অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।

অনেক বাসিন্দার জন্য এটি প্রথমবারের মতো প্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ এনে দেয়, যা স্ল্যাব সিটির অনন্য সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।

দ্য রেঞ্জ

স্ল্যাব সিটি কি পর্যটকদের জন্য নিরাপদ?

স্ল্যাব সিটির নিরাপত্তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এখানে বসবাসকারীরা সাধারণত সেই মানুষজন, যারা প্রচলিত সমাজের বাঁধন থেকে মুক্ত থাকতে চান, তবে অনেকেই নিজেদের ‘উম্মাদ’ বলে দাবি করেন। দিনের বেলা যে কেউ সেখানে ঘুরে দেখতে পারেন, তবে রাতের বেলা বা রাতযাপনের ক্ষেত্রে সতর্কতার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিভিন্ন গল্প ও অভিজ্ঞতা স্ল্যাব সিটির রহস্যময় পরিবেশের ইঙ্গিত দেয়।

Yahoo-এর এক প্রতিবেদনে, এক বাসিন্দা দাবি করেছেন যে, স্ল্যাব সিটিতে একটি ‘অশুভ সত্তা’ ঘুরে বেড়ায়, যা স্থানীয়রা “Bad Thing” নামে চেনে। যদিও স্ল্যাব সিটি সম্পূর্ণ আইনহীন নয়, তাই এটি ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বা স্বাভাবিক জায়গা নাও হতে পারে।

অধিকাংশ দর্শনার্থী স্ল্যাব সিটিতে আসেন মূলত স্যালভেশন মাউন্টেন নামের অলাভজনক শিল্পকর্মটি দেখার জন্য এবং সেখান থেকে খুব বেশি দূরে যান না। তবে যদি সত্যিই স্ল্যাব সিটির নাগরিকদের কাছ থেকে অনুভব করতে চান, তাহলে স্যালভেশন মাউন্টেনের ঠিক পাশেই একটি জায়গা খুঁজে নিয়ে এক বা দুই রাত ক্যাম্পিং করতে পারেন।

কমিউনিটির গভীরে যেতে চাইলে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ বাসিন্দারা যেখানেই থাকুন না কেন, সেটি হয়তো তাদের ব্যক্তিগত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। আইনত সেই জমির মালিকানা না থাকলেও, সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করলে তাদের ব্যক্তিগত সীমানা লঙ্ঘন হতে পারে।

দ্যা লাস্ট ফ্রি প্লেস ইন আমেরিকা

আইন-কানুন, নিয়মনীতি না থাকায় মানুষ এখানে স্বাধীন ভাবে থাকতে এখানে আসে। একে দ্যা স্ল্যাবস, দ্যা লাস্ট ফ্রি প্লেস বলা হয়। কিন্তু কতদিন টিকে থাকবে এই লাস্ট ফ্রি প্লেস?

স্ল্যাব সিটির জমি ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের মালিকানাধীন, এবং অর্থাৎ এখনাকার বাসিন্দাদের তাদের জমির ওপর কোনো আনুষ্ঠানিক অধিকার নেই। দীর্ঘদিন ধরে এমন খবর শোনা যাচ্ছে যে, ক্যালিফোর্নিয়া সরকার এই জমি বিক্রি করার পরিকল্পনা করছে।

এটি সম্ভবত জ্বালানি কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি হতে পারে, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি সোলার ফার্ম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্ল্যাব সিটির মানুষ একত্রে হাসিখুশি জীবন যাপন করছে

স্ল্যাব সিটির বাসিন্দারা তাদের কমিউনিটিকে রক্ষা করার জন্য জমি কেনার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে এর জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তবে এটি একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে—যদি বাসিন্দারা জমি কিনে ফেলেন, তাহলে এটি একটি মালিকানাভিত্তিক ব্যবস্থা হয়ে উঠতে পারে, যা স্ল্যাব সিটির স্বাধীন ও নৈরাজ্যিক ধারণার বিপরীত।

যদি কেউ স্ল্যাব সিটি ঘুরে দেখতে চান, তবে এখনই উপযুক্ত সময়, কারণ ভবিষ্যতে এটি হয়তো বিশাল বায়ু টারবাইন বন বা সৌর প্যানেলের সারিতে পরিণত হতে পারে। স্ল্যাব সিটি কি থাকবে নাকি হারিয়ে যাবে তা এক বিতর্কিত প্রশ্ন।

স্ল্যাব সিটি সম্পর্কে আরও কিছু মজার তথ্য

নামকরণঃ আজকের স্ল্যাব সিটি মুলত দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় সামরিক ঘাঁটি ছিল। যা ভেঙ্গে ফেলার পর অবশিষ্ট কংক্রিটের স্ল্যাবগুলো রয়ে যায় যার দ্বারা স্ল্যাব সিটির নামকরণ করা হয়।

বাসিন্দাঃ বাসিন্দাদের প্রায়ই “স্ল্যাবার” বা “বছরব্যাপী বাসিন্দা” বলা হয়।

কর বা শুল্কঃ বাসিন্দাদের দিতে হয় না কোন কর বা শুল্ক

মিডিয়াঃ স্ল্যাব সিটি কোল্ডপ্লে ও কেশার মিউজিক ভিডিওতে এবং ইন্টু দ্যা ওয়াইল্ড চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত হয়েছে। 

স্যালভেশন মাউন্টেইনঃ এই অসাধারণ শিল্পকর্মটি স্ল্যাব সিটির বাসিন্দা লিওনার্ড নাইট ৩০ বছরের প্রচেষ্টায় নির্মাণ করেছিলেন। হাজার হাজার অনুদানকৃত বালতি রং দিয়ে তিনি এই মনোমুগ্ধকর পাহাড়টি নির্মাণ করেছিলেন। ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ‘ন্যাশনাল ট্রেজার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। 

তথ্যসূত্র

Related posts

কায়রো – প্রাচীন কোলাহলের শহর

পার্থ: সোনালী সৈকতের রঙিন শহর

শেখ আহাদ আহসান

ফুটবলের রাজধানী মাদ্রিদ

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More