যুদ্ধ বিদ্ধস্ততা, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ইসরায়েলের চোখ রাঙ্গানীর পরেও যে দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার নাম ইরান। আর, সেই দেশেরই সবথেকে সাজানো শহরটি হলো তেহরান।
মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ইরানের রাজধানী তেহরান। শুধুমাত্র রাজধানী বলেই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তেহরান শহরটি ইরানের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। মন্ত্রমুগ্ধকর পরিবেশ, বৈচিত্রে ভরা খাবার, রঙীন উৎসব, অতিথিপরায়ণ অধিবাসী এবং চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে তেহরান পুরো পৃথিবীতে অনন্য হয়ে উঠেছে। একই সাথে এটি মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেট্রোপলিটন শহর তেহরান।
দেশ | ইরান |
অঞ্চল/রাজ্য | তেহরান |
আয়তন | ২,২৩৫ বর্গকিমি (৮৬৩ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | ১ কোটি ৬০ লক্ষ (২০১৭ সালের আদমশুমারি) |
সরকারি ভাষা | ফার্সি |
প্রধান মুদ্রা | রুপি |
সময় অঞ্চল | UTC+03:30 (Iran Time) |
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর | মেহেরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর |
ম্যাপ
তেহরান শহরের নামকরণ
তেহরান শব্দটির উৎপত্তি ফারসি শব্দ ‘তাহরান’ থেকে; যেখানে ‘তাহ’ অর্থ শেষ এবং ‘রান’ অর্থ পর্বতের ঢাল। নামটির পিছনে যৌক্তিকতাও আছে বৈকি। তেহরান শহরটিকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছে আলবুর্জ পর্বতমালা। মূলত, এই কারণে শহরটির এমন নামকরণ করা হয়েছে বলে ইতিহাসবিদদের ধারণা।
তেহরানের ইতিহাস
প্রাচীন শহর তেহরানের ইতিহাসে প্রায় আট হাজার বছর আগে থেকেই মানব বসতির প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু লিখিত রূপে ইরানের রাজধানীর ইতিহাসটা শুরু হয় সপ্তম শতাব্দীতে। প্রথমে এই শহরটি রে শহরের অধীনের ছিলো। এসময় শহরটি অনেকবার আক্রমণ প্রতিআক্রমণের শিকার হয়েছে। ৬৪১ সালে আরবদের আক্রমণের পর শহরটির রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সে সময়কার সেনাপতি ফাররুখ আজাদ শহরটির পুনর্নির্মাণ করেন।
পরবর্তী সময়ে তুরস্কের ‘ওঘুজ’ উপজাতি ক্রমান্বয়ে দুইবার শহরটিতে আক্রমণ করে। ১৩ শতাব্দীতে মোঙ্গলদের আক্রমণে রে শহরের পতন হয়। পরবর্তীতে রে শহরের বর্ধিত জায়গা গুলো তেহেরান শহরের অধীনস্থ হয়ে যায়, যা বর্তমানে তেহেরার মেট্রোপলিটন এর অংশ হিসেবে আছে।
১৪০৪ সালে ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত মোঙ্গল শাসক তৈমুর লং এর শাসন কার্য পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু এবং তৎকালীন ইরানের রাজধানী ছিল বলে জানা যায়। এর পরবর্তীতে ১৭৫১ সালে জান্দ রাজবংশ মোঙ্গলদের আক্রমণের মাধ্যমে তেহরান তথা ইরানের ক্ষমতার অধিপতি হয়ে ওঠে। কাজার রাজ বংশের ‘রাজা আগা মুহাম্মদ খান ১৭৮৯ সালে তেহরান শহরকে ইরানের রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত করেন।
তেহরান শহরের জনসংখ্যা ও আয়তন
মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেট্রোপলিটন শহর এবং ইরানের সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ শহর হিসেবে খ্যাত তেহেরানের আয়তন ২,২৩৫ বর্গকিলোমিটার। তেহরানের মেট্রোপলিটন এলাকায় বর্তমানে বসবাস করছে প্রায় এক কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ। মূল তেহেরান শহরের ৭৩০ কিলোমিটার এর মতো জায়গা জুড়ে বসবাস করছে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ। ইরানের অধিকাংশ অধিবাসীদের মতোই তেহরানের বেশিরভাগ মানুষ শিয়া মতাদর্শী মুসলিম।
বিচিত্র ভাষার তেহরান
তেহরানের সরকারি ভাষা ফার্সি। কিন্তু, শহরটির প্রায় তিন চতুর্থাংশ মানুষ ইন্দো- ইউরোপিয়ান অঞ্চলের ভাষায় কথা বলে। পাশাপাশি আল টাইক এবং আ্যফ্রো-এশিয়াটিক ভাষার প্রচলনও তেহেরানে লক্ষ্য করা যায়।
তেহরানের আবহাওয়া
তেহরানের আবহাওয়া শুষ্ক। তেহরানের আবহাওয়া অনেকটাই এ অঞ্চলের অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত। অঞ্চলটি উত্তরে অবস্থান করছে বিশাল আলবুর্জ পর্বতমালা এবং দক্ষিণে রয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় মরুভূমি। গ্রীষ্মকাল তেহরানের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ঋতু। এ সময় শহরের আবহাওয়া থাকে গরম এবং শুষ্ক। শরৎ ও বসন্তকালে আবহাওয়ায় গরমের পরিমাণ সামান্য কম হয় এবং শীতকালে অঞ্চলটিতে ঠান্ডা এবং আর্দ্র আবহাওয়া লক্ষ্য করা যায়।
মজার ব্যাপার হল, তেহেরানের আবহাওয়া একই সাথে যেমন মরুভূমির প্রভাব লক্ষ্য করা যায় তেমনি দেশটিতে শীতের সময় তুষারপাতের দৃশ্য চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।
তেহরানের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
তেহরানের পোশাক-পরিচ্ছেদ
তেহরান শহরের অধিবাসী পুরুষেরা সাধারণত পাঞ্জাবির সাথে পাজামা কিংবা কুর্তা পরিধান করে। অনেককে আবার পাগড়ী পরতেও দেখা যায়। পশ্চিমা ভাবধারা অনুসরণ করে অনেকে স্যুট, ফুল হাতা শার্ট এবং প্যান্টও পরিধান করেন।
মজার ব্যাপার হলো, তেহরানের অনেক নারীও স্যুট পরেন। তেহেরানে নয় বছর বয়স থেকে মেয়েদের বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরিধান করতে হয়। হিজাব দিয়ে মাথা চুল ঢেকে না রাখলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ও প্রচলন আছে এই শহরে।
তেহরানের খাবার
মুসলিম বিশ্বের বেশিরভাগ শহরের অধিবাসীদের মতই তেহরানের অধিবাসীরাও বেশ ভোজন রসিক। শহরের অধিবাসীরা বিভিন্ন বিভিন্ন উৎসবে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পছন্দ করে।
ঘোরমেহ সবজি
ভোজন রসিক তেহরানের অধিবাসীদের অন্যতম একটি প্রচলিত খাবার হচ্ছে ঘোরমেহ সবজি। এই খাবার সমগ্র ইরানের অধিবাসীদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়। এ খাবারটি সাধারণত মেথি, পেয়াজ, ধনেপাতা, সরিষা শাক, সিমের বীজ এবং অন্যান্য ভেষজ উপাদান সহকারে রান্না করা হয়। তেহরানের এই খাবারটি গরুর গোশ এবং ভেড়ার গোশের সাথে মিশিয়ে গরম ভাত সহকারে খাওয়ার রীতিও রয়েছে।
কাবাব
তেহরানের রন্ধন শিল্পকে আভিজাত্যের ছোঁয়া দিয়েছেন নানা রকম কাবাব। বিভিন্ন ধরনের কাবাব এর মধ্যে কাবাব-ই-বার্গ এবং কাবাব কোবিদেহ বেশি জনপ্রিয়। দেখতে একই রকম হলেও কাবাব দুইটি রন্ধন শৈলীতে সূক্ষ্ম পার্থক্য দেখা যায়।
কাবাব ই বার্গ তৈরির সময় গরু, ভেড়া কিংবা মুরগির মাংসকে লম্বা করে কেটে এর সাথে পেয়াজ, জলপাই তেল ও মসলা মিশিয়ে তা বারবিকিউ চুলায় প্রস্তুত করা হয়।
আর কাবাব কোবিদেহ তৈরির সময় সব কিছু প্রায় একই থাকলেও এক্ষেত্রে লম্বা টুকরোর স্থানে গোসতের কিমা ব্যাবহার করেন রন্ধন শিল্পীরা।
কাবাব ই বার্গ এবং কাবাব কবিতেহ একত্রিত করে তেহরানের হোটেলগুলোতে সোলতানি নামে পরিবেশন করা হয়।যা এখানকার অধিবাসীদের অত্যন্ত প্রিয়।
তেহেরানের উৎসবনামা
নওরোজ
তেহরানের অধিবাসিরা ভীষনরকম উৎসবপ্রিয়। নওরোজ এখানকার জনপ্রিয় একটি উৎসব। এই উৎসবে বছরের প্রথম দিকে শহরবাসি তেহরানের বাজারে কেনাকাটা ও তেহরানের দর্শনীয় স্থান ঘোরাঘুরিতে মেতে থাকেন। এসময় তারা কবিতা আবৃতি করেন, অনেকে নেচে গেয়ে মেতে উঠেন।
তাসুয়া এবং আশুরা
মুসলিম তেহেরানে প্রতিবছর বারবি মহরম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ তাসুয়া এবং আশুরা পালন করা হয়। তাসুয়া পালনের সময় শিয়া মুসলিমরা হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতপর শোক পালনের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। অধিবাসীরা এদিনে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য প্রস্তুত করেন এবং গরীব-দুঃখীদের মাঝে খাদ্য বিতরন সহ নানা কর্মকান্ড করে থাকেন।
পরের দিন আশুরায় সবাই সাধারন ঘুরতে যান, বাড়িতে মুখরোচক খাবারের আয়োজন করেন, পরিবারের সাথে সময় কাটানোর পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তাকে প্রাণভরে স্মরন করেন।
ইয়ালদা
ইয়ালদা তেহরানবাসীর একটা জনপ্রিয় উৎসব। বছরের দীর্ঘতম রাতের এ উৎসবে সবাই পরিবার পরিজনের সাথে দেখা সাক্ষৎ, খাওয়াদাওয়া ও কবিতা পাঠেন আয়োজন করে সময় কাটান। এদিন বিশেষ করে ডালিম, তরমুজ ও বাদাম খান তেহরানবাসী। ফলের লাল রংকে ভোরের লাল আভা ও জীবনের আলোর প্রতিক হিসেবে গন্য করা হয়।এসময় প্রাপ্ত বয়স্করা মধ্যরাত পর্যন্ত শাহনাম পাঠ করেন।
তেহরানের শিক্ষা ব্যবস্থা
কেবল মাত্র সংস্কৃতিই নয়, শিক্ষার দিক থেকেও এগিয়ে শহরটি। তেহরানের প্রায় ৮৬ শতাংশ জনগোষ্ঠী শিক্ষিত।
মজার বিষয় হলো, অতি শিক্ষিত হলেও এখানকার প্রতি ৫ জনের একজন কৃষিকাজের সাথে জড়িত। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই কলকারখানায় এবং পন্য উৎপাদন ক্ষত্রে কাজ করেন। বাকিরা পরিবহন পরিসেবা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার কাজে জড়িত।
তেহরান ইরানের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কেন্দ্র। বৃহত্তর তেহরানে প্রায় ৫০টি প্রধান কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় ইরানের প্রাচীনতম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আমির কবিরের আদেশে ‘দার ওল ফোনুন’ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তেহরান বিপুল সংখ্যক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইরানি রাজনৈতিক ঘটনা উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ইরানের শিক্ষায় একজন পথিকৃৎ হলেন স্যামুয়েল এম জর্ডান। তিনি তেহরানের আমেরিকান কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পথিকৃৎদের মধ্যে একজন ছিলেন। তার নামে যার নামে তেহরান শহরে জর্ডান এভিনিউ নামকরণ করা হয়েছিল।
তেহরানের অর্থনীতি
তেহেরান শহরটি ইরানের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অবলম্বন। এখানেই দেশটির প্রায় ৪৫ শতাংশ শিল্পকারখানার অবস্থান।
তবে আন্তর্জাতিক বেশ কিছু জটিলতা এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে অধিকাংশ বিদেশি কোম্পানি এখানকার স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। এ শহরে প্রচুর পরিমাণে বৈদ্যুতিক পন্য, টেক্সটাইল, রাসায়নিক পণ্য এবং সিমেন্ট উৎপন্ন হয়। এগুলো রপ্তানি করে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখতে সহায়তা করে তেহরান।
পাশাপাশি শহরটির যানবাহনের উপরও এখানকার অর্থনীতি বিশেষভাবে নির্ভরশীল। তেহরানের বিশ্বের সবথেকে বেশি মোটর নির্ভর যানবাহন দেখতে পাওয়া যায়। তেহরান স্টক মার্কেট পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরশীল শেয়ার বাজারগুলোর মধ্যে একটি।
ইরানের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এই শহরে কিন্তু ঘুরে দেখার মতো বেশ কয়েকটি ভ্রমন স্থানও রয়েছে।
তেহরানের দর্শনীয় স্থান
রুপ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ স্থানগুলোতে পর্যটকদের ভীর লেগেই থাকে।
গোলেস্তান প্রাসাদ
ইরানের ঐতিহ্যবাহী গোলেস্তান প্রাসাদের অবস্থান তেহরানে। কাজার রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হওয়া এই প্রাসাদ বিভিন্ন রাজকীয় উৎসব পালনে ব্যবহৃত হয়। একটি ফটোগ্রাফিক আর্কাইভ, পান্ডুলিপি লাইব্রেরি এবং নথির সংরক্ষণাগারসহ ১৭টি কাঠামো নিয়ে এই প্রাসাদ কমপ্লেক্সটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শনই বটে। শহরবাসীর কাছে স্থাপনাটি খুবই জনপ্রিয়।
আজাদী টাওয়ার
তেহরানের সবথেকে জনপ্রিয় ল্যান্ডমার্কগুলোর মধ্যে রয়েছে আজাদী টাওয়ার। এই টাওয়ারটি ১৯৭১ সালে পাহলভি রাজবংশের মোহাম্মদ রেজা শাহের শাসনামলে, মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে নির্মিত হয়েছিল। টাওয়ারটির নিচে আছে কংক্রিটের সিলিংযুক্ত একটি জাদুঘর। এখানে প্রাচীন চিত্রকর্ম ও অন্যান্য নিদর্শনের দেখা পাওয়া যায়।
তাবিয়াত সেতু
তাবিয়াত সেতু তেহরানের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অনন্য। ৮৯০ ফুট লম্বা এই সেতু দুই প্রান্তের দুই উদ্দানকে সংযুক্ত করেছে। শুধু তাই নয়, এখানে অলস ভাবে বসে সেতুটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নির্ধারিত জায়গাও রয়েছে। এখানে কিন্তু ভোজনরসিকদের খাওয়াদাওয়া এবং অবকাশ যাপনের জন্য হোটেল রয়েছে। এই সেতুর উপর দিয়ে হাটলে যে কারো বনের মাঝপথ দিয়ে হাটার অনুভূতি হবে। প্রতিবছর প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ এই সেতু পরিদর্শন করতে আসেন।
ফারাহ পার্ক
ফারাহ পার্ক বা লালে পার্ক তেহরানের মানুষের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু। হাটার জন্য উদ্যানটি আলো-ছায়া ঘেরা পথও আছে। পার্কটি শহরের অবকাশ যাপনকারী পরিবারগুলোর জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা।
মোঘাদাম জাদুঘর এখানকার সবথেকে জনপ্রিয় স্থানগুলোর একটি। প্রায় ২০০ বছর আগে ইরানের কাজার রাজবংশের রাজাদের নির্মিত এই জাদুঘরটি মূলত একটি বিশাল ও বিলাসবহুল প্রাসাদ। বর্তমানে প্রাসাদটিকে একটি সংগ্রহশালায় রুপান্তরিত করা হয়েছে।
ট্রেজারি অফ ন্যাশনাল জুয়েলস
তেহেরানে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশে অবস্থিত ট্রেজারি অফ ন্যাশনাল জুয়েলস পর্যটকদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৩০ এর দশকে এটি এতোটাই মূল্যবান হয়ে উঠেছিলো যে, তখন এ স্থাপনাটি ইরানের রিজার্ভ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
১৯৮২ সালে এই স্থাপনাটি জাদুঘরে রুপান্তর করে সাধারন জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ জাদুঘরে বিশ্বের বিখ্যাত সব হিরা এবং অন্যান্য রত্ন-পাথরের বিশাল সংরক্ষণ রয়েছে।
উপসংহার
ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যময় খাবার এবং উৎসবের সংমিশ্রণে শহরটি এখন সারা বিশ্বের কাছে অনন্য হয়ে উঠেছে। দর্শনীয় স্থানগুলো যেন শহরটির সৌন্দর্যের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তেহেরান নিজস্ব সৌন্দর্যের আধার হয়ে যুগ যুগ ধরেই ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন হয়ে থাকুক।
তেহরান নিয়ে কিছু মজার তথ্য
- তেহরান গ্র্যান্ড বাজার: আনুমানিক ৪৫০ বছর আগে সাফা ভিদ শাসন আমলে নির্মিত তেহরান বাজার এক বিস্ময়। প্রচলিত আছে ‘ মুরগির দুধ থেকে শুরু করে মানুষের জীবন সবই নাকি পাওয়া যায় তেহেরানের এই বাজারে।
- সব থেকে উচু টাওয়ার: তেহেরানে অবস্থিত মিলাদ টাওয়ার পৃথিবীর সব থেকে উচু টাওয়ার।
- প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়: তেহরান বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি।
- পরিচ্ছন্ন রাস্তা: তেহরান তার পরিচ্ছন্ন রাস্তা ও পদচারণাপথ নিয়ে গর্বিত। তেহরানের রাস্তাগুলি রাতের বেলায় পরিষ্কার করা হয়। রাস্তা ও সরকারি ভবনগুলোর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সাধারণত প্রচুর গর্ব অনুভূত হয়।
- পোষা প্রাণী নিয়ে হাঁটা নিষিদ্ধ: ২০২১ সালের সরকারী আইন অনুসারে, তেহরানে পাবলিক প্লেস, যেমন পার্কে, পোষা প্রাণী নিয়ে হাঁটা নিষিদ্ধ। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহে কুকুর ও বিড়াল পালন করাকেও অশুচি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।