একসময় আলজেরিয়ানরা স্থাপত্য, নৌযান, শিল্পকলা আর কৃষিবিদ্যা শেখে। কিন্তু, এটাই পরবর্তীতে সাহারার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ একসময়ের সবুজের সমারোহপূর্ণ সাহারা অনুর্বর এবং ফাঁকা স্থান হয়ে যায়।
অন্ধকারাচ্ছন্ন আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশ। সেখানে আবার মাটির নিচে পাওয়া গেছে রোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ। এছাড়াও স্থানটিতে জুড়ে ছিলো কয়েকটি সভ্যতার মানুষদের আনাগোনা। এমনকি সে দেশের মাটির নিচেও লুকিয়ে রয়েছে এমন কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ যা পৃথিবীর অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! এ যেন সাক্ষাৎ মার্ভেল সিরিজের মুভি’র দেশ ওয়াকান্ডা।
আমরা যে দেশটির গল্প আজ পড়তে যাচ্ছি তা হলো আলজেরিয়া। সমৃদ্ধ ইতিহাস, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ আলজেরিয়া। চলুন, জেনে নেওয়া যাক আলজেরিয়ার মজার গল্প।
দেশ | আলজেরিয়া |
রাজধানী | আলজিয়ার্স |
আয়তন | ২৩,৮১,৭৪১ বর্গ কিলোমিটার |
জনসংখ্যা | ৪৫ মিলিয়ন |
সরকারি ভাষা | আরবী ও বার্বার |
প্রধান মূদ্রা | আলজেরিয়ান দিনার |
সময় অঞ্চল | ১ টি (উত্তর, পশ্চিম, কেন্দ্রিয় ও দক্ষিণ)। |
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর | হৌআরি বুমেদিয়েন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর |
আলজেরিয়ার জনসংখ্যা ও আয়তন
উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হলো আলজেরিয়া। এটাকে ‘ভূমধ্যসাগরের ব্যালকনি’ বলা হয়। এর অফিসিয়াল নাম ‘আলজেরিয়া গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্র’। ২৩ লক্ষ,৮১ হাজার, ৭৪১ বর্গকিলোমিটারের এই দেশটি আয়তনে আফ্রিকায় ১ম এবং বিশ্বে ১০ম।
মজার বিষয় হলো- তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চল নিয়ে আলজেরিয়া গঠিত। এই তিন ভৌগলিক অঞ্চল হলো- উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল, হাউটস মালভূমি অঞ্চল এবং সাহারা মরুভূমি অঞ্চল। দেশটির ৪০% মরুভূমি। এখানে প্রচন্ড গরম পড়ে, গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৫০°-এর বেশি হয়। আর, এখানে শীতকালে দিনের বেলার তাপমাত্রা আরামদায়ক আর রাত্রে ভয়াবহ ঠান্ডা পড়ে। অর্থাৎ এটি একটি চরমভাবাপন্ন এলাকা। এই অঞ্চলে বছরের পর বছর বৃষ্টি হয় না। বৃষ্টি হলে আবার তা হড়কা বাণে রূপান্তরিত হয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
ম্যাপ
আলজেরিয়ার ইতিহাস
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আফ্রিকার এ অঞ্চলে মানুষেরা দলসহ ক্রমান্বয়ে এসেছে। এদের মধ্যে কেউ শেকড়টাকে আঁকড়ে ধরেছে আর বাকিরা পদচিহ্ন রেখে গিয়েছে।
অ্যাটেরিয়ান সভ্যতা
আলজেরিয়ার মাটিতে প্রাগৈতিহাসিক কালে অ্যাটেরিয়ান সভ্যতার রাজত্ব ছিলো। সম্ভবত দেড় লক্ষ বছর আগে মরক্কোতে এদের প্রাথমিক যুগের শুরু হয়। এই সময়কালকে ‘মধ্য প্রস্তর যুগ’ বলা যায়। সেসময় পাথরের তৈরি হাতিয়ার শিল্প গড়ে উঠেছিলো যা উত্তর আফ্রিকাকে কেন্দ্র করে মৌরিতানিয়া থেকে মিশর (সম্ভবত ওমান) অবধি গিয়েছিল। এদের পদচিহ্ন থর মরভূমিতেও পাওয়া যায়। এরা প্রাচীন প্রযুক্তিগতভাবে অনেক শক্তিশালী ছিলো। ধারণা করা হয় ২০,০০০ বছর আগেই এই সভ্যতার বিলুপ্ত হয়েছে।
ক্যাসপিয়ান সভ্যতা
ক্যাসপিয়ান সভ্যতা তিউনিসিয়া ও আলজেরিয়ার মাটিতে শুরু হয়। এরা মধ্য এবং নব্য-প্রস্তরযুগীয় ছিলো। এই সভ্যতা খ্রি.পূ. ৮০০০ থেকে ২৭০০ অবধি স্থায়ী ছিলো। এ সময়কালে সাহারা মরুভূমি সবুজ ছিলো।
এ গেল আলজেরিয়ার প্রাগৈতিহাসিক সময়কাল। এরপর সাহারা তথা আলজেরিয়াতে আসে সাম্প্রতিক কালের নব্য-প্রস্তরযুগীয় যুগ।
নব্য-প্রস্তরযুগে আলজেরিয়া
এ সময়কালকে ‘উজ্জ্বল সভ্যতা’ বলা হয়। এই সময়ের অধিবাসীরা অনেক বুদ্ধিমান ছিলো বলে মনে করা হয়।
আগেই বলেছি, ক্যাসপিয়ান যুগে সাহারা সবুজ ছিলো। ক্যাসপিয়ান যুগের সম্ভাব্য বংশধরেরা এই সময়টাতে এসে ‘সমুদ্রের মানুষ’ এর সাহচর্য পেয়েছিল। এদের থেকে তারা Aegean এবং anatolian কৌশল শিখেছিল। Aegean কৌশল হলো স্থাপত্য, নৌযান এবং শিল্পকলার জ্ঞান আর anatolian হলো কৃষিভিত্তিক বিদ্যা। এটাই পরবর্তীতে সাহারার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সবুজের সমারোহপূর্ণ সাহারা অনুর্বর এবং ফাঁকা স্থান হয়ে যায়।
কার্থাজিনিয়ান সময়কাল
তাও প্রায় খি:পূ. ১২০০ অব্দের কথা। তখন ফিনিশীয়ানদের একচেটিয়া কর্তৃত্ব ছিলো। এরা জাতিতে ছিলো আধা-যাযাবর। বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এরা এসে পরবর্তীতে কার্থেজ দখল করে। এরপর থেকে এদের অধিবাসীদের নাম কার্থাজিনিয়ান।
কিন্তু কার্থাজিয়ানরা আলজেরিয়ায় বেশিদিন কর্তৃত্ব রাখতে পারেননি। অচিরেই তাদের সাথে রোমানদের ‘পিউনিক’ নামক যুদ্ধ বাঁধে। এই যুদ্ধে অপরাপর পরাজিত হতে থাকে কার্থাজিয়ানরা। এরপর উত্থান হয় আরেক রাজ্য, নুমিডিয়ান।
নুমিডিয়ান সময়কাল
প্রাচীনকালে আলজেরিয়া পরিচিত ছিলো ‘নুমিডিয়ান রাজ্য’ (অর্থ, মুক্ত রাজ্য)নামে। আর এখানকার অধিবাসীদের বলা হয় নুমিডিয়ান (অর্থ, মুক্ত মানব), এরা ছিলো আধা-যাযাবর। কার্থাজিয়ানরা স্তিমিত হয়ে গেছে এমন অবস্থাকেই এদের আবিভার্ব হয়। নুমিডিয়ানদের ঐক্যবদ্ধকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলো তাদের রাজা মাসিনিসা(Massinissa)। পরবর্তীতে এদের রাজত্ব বেশিদিন স্থায়ী হয় নি।
রোমানদের সময়কাল
খ্রি:পূ: ১০৬ অব্দে রোমানরা আলজেরিয়ার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। বর্তমান আলজেরিয়ার টেল অ্যাটলাস, হাউট মালভূমি রোমানদের কর্তৃত্বে ছিলো (যদিও বর্তমান আলজােরিয়ার কিছু অংশ তখনও নুমিডিয়ানদের হাতেই ছিলো)। রোমানদের অধীনের শহরগুলো রোমানরা খুব আভিজাত্যপূর্ণভাবে তৈরি করেছিলো।
রোমানদের এ দীর্ঘ রাজত্বকে ভেঙে ৫ম শতাব্দীতে আবার নুমিডিয়ানরা ক্ষমতায় বসে। এরপর ৪৩০-৩১ সালে রোমানদের রাজত্বের অফিসিয়ালি অবসান ঘটে। এরপর কিছুকাল বিচ্ছিন্নভাবে বাইজেন্টিনদের প্রভাব দেখা যায় আলজেরিয়া অঞ্চলে। কিন্তু এটাও ভেঙে যায় মুসলিমদের আগমনে।
মুসলিমদের আগমন
মুসলিম তথা আরবীয়দের বিস্তর প্রভাব পুরো উত্তর আফ্রিকা জুড়েই ছিলো। নতুন ধর্ম এখানকার চিন্তাভাবনা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সম্পর্ক প্রভৃতির উপরে শক্তিশালী প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছিল। আরবীয় স্বয়ংসম্পূর্ণ সংস্কৃতি, রাজনৈতিক চেতনা আলজেরিয়দের ভালোভাবে প্রভাবিত করেছিলো।
আলজেরিয়ার সংস্কৃতি
উপরিউক্ত ইতিহাস দেখে ইতোমধ্যেই বুঝে গেছেন আলজেরিয়া ঐতিহ্যগতভাবে কতোটা বৈচিত্র্যময়।প্রাচীন,সমসাময়িক কাল যেন একত্রিত হয়েছে এখানে।আসলে ভূমধ্যসাগরীয়,আরব,আমাজিঘ এবং আফ্রিকান এই চার বিশ্বের সংযোগস্থল হবার কারণে আলজেরিয়া ভৌগোলিকভাবেই এই বৈচিত্র্যের ধারক।বৈশ্বিক সংস্কৃতির মিশ্রণে সমৃদ্ধ এর সংস্কৃতি।
আলজেরিয়ার ধর্ম
ধর্মীয় দিক থেকে, আলজেরিয় প্রধান ধর্ম হলো ইসলাম। ইসলাম ধর্ম আলজেরিয়ার প্রতিটা ক্ষেত্রে মিশে গিয়েছে। ধর্ম ছাড়াও আতিথেয়তা, একে অপরকে সাহায্য করা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের শিষ্টাচারও এরা আরবীয়দের অনুসরণ করে।
আলজেরিয়ার পোশাক
পোশাকের দিক থেকে, আলজেরিয় জাতীয় পোশাক কারাকৌ। এর ডিজাইন আরবীয় সংস্কৃতির পোশাক ঘেষা। এখানকার পোশাকে ইসলামী রক্ষণশীলতা দৃশ্যমান।
আলজেরিয়ার খাবার
আলজেরিয় প্রধান খাবার হলো কৌসকৌস (couscous)। এই খাবার এসেছে আলজেরিয় প্রাগৈতিহাসিক কালের বর্বর জাতিদের খাবার থেকে। এছাড়াও সামগ্রিকভাবে তাদের খাবার আরবীয়, তুর্কি, আমাজাঘ এবং ফরাসী খাবারের ধরণ দ্বারা অনুপ্রাণিত।
আলজেরিয়ার সাহিত্য
আলজেরিয় সাহিত্য ফরাসী এবং আরবীয় সাহিত্যের মিশ্রণ বলা যায়। এছাড়াও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে, আলজেরিয়ার সঙ্গীতের ধরণ হলো ‘রাই’ (rai) যেটা উনিশ শতকের সঙ্গীতের এবং মরুভূমির ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের মিশ্রণ।
আলজেরিয়া মূলত সকল সংস্কৃতির সুস্থ ধারক, এটা বলাই যায়৷ সকল সংস্কৃতিকে দেশটি গ্রহণ করেছে পরম যত্নে এবং এভাবে নিজেদের ঐতিহ্যগতভাবে সমৃদ্ধ করেছে।
আলজেরিয়ার পর্যটন স্থান
ইতিহাস, সংস্কৃতি, আভিজাত্য সবকিছুর মিশ্রণেই পুরো আলজেরিয়া। আফ্রিকার এই বৃহত্তম দেশটির একটি দীর্ঘ ১৬০০ কি.মি. এর উপকূলীয় রেখা রয়েছে। আবার, এখানে রোমান সংস্কৃতির কিছু অসাধারণ ধ্বংসাবশেষও পাওয়া যায় যায়। আছে মরুভূমি এবং এর সাথে আকর্ষণীয় মরুভূমির শহর। আলজেরিয়ায় ভ্রমণস্পট অনেকই। এখন আমরা দেখবো এখানকার ভ্রমণের সবচেয়ে সুন্দর সুন্দর জায়গা কোনগুলো:-
টিমগাদ
রোমান মহাকাব্যের অনুরাগীদের এটা অন্যতম সেরা স্থান। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ নিয়েই এই স্থান।
ইউনেস্কোর তথ্য মতে, এই ধ্বংসাবশেষ ১০০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ট্রাজানের নির্মাণ করেছে। টিমগাদ রোমান নগর পরিকল্পনার একটি নিদর্শন। এই রোমান নগর, ৫০ হেক্টর এলাকা জুড়ে দাবাবোর্ডের মতো সুনির্দিষ্ট উপায়ে বিন্যস্ত। এইখানকার স্থাপনাগুলো অরেস পর্বতমালার মধ্যবর্তী এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মিত যেখান দিয়ে রোমানরা নিরাপদে সাহারায় যাতায়াত করতে পারতো। এছাড়াও এটা একটা কৌশলগত স্থান যা দিয়ে সাহারা প্রবেশে রোমানদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিলো।
এই নগরে মন্দির, বাজার, ফোরাম, থিয়েটার, বাথ হাউজ, আদালত, বসবাসের ভিলা, লাইব্রেরি সবকিছু রয়েছে। এইখানে প্রাপ্ত শিলালিপিতে উদ্ধৃতি পাওয়া যায়-
‘Venari lavari ludere ridere occ est vuvere’ অর্থাৎ,’শিকার করতে হবে, স্নানে যেতে হবে, খেলতে হবে, হাসতে হবে: এটাই জীবন’
এই শিলালিপির লেখনী তৎকালীন রোমানদের জীবন দর্শনকে বোঝায়।
কনস্টানটাইন
এই শহরটি অসম্ভব রকমভাবে সৃষ্ট শহরগুলোর মধ্যে সেরা। এই শহরটির বিস্ময় হিসাবে আছে, রুমেল নদীর উপরে অবস্থিত ২০০ মিটার উচু প্রবল গিরিখাত।
খ্রিস্টপূর্ব ৪ শতাব্দী থেকে কনস্টানটাইনরা এটা দখল করে। এছাড়াও সিডি এমসিড ব্রিজ, অক্স মোর্টস মনুমেন্ট, একটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মেমোরিয়ালস এসবও এর দর্শনীয় স্থান। মুসলিম সংস্কৃতির নিদর্শন হিসাবে এখানে অটোমান প্রাসাদ, জাতীয় জাদুঘর, আমির আবদেল কাদের মসজিদ।
সবমিলিয়ে এটি অন্যতম সুন্দর এবং শিক্ষনীয় পর্যটনকেন্দ্র। এখানকার মসজিদ সকল ধর্মাবলম্বীদের জন্য উন্মুক্ত।
আন্নাবা
এই স্থানটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সেন্ট অগাস্টিন এখানে কিছু শিক্ষনীয় কাজ শিখিয়েছেন এবং এখানে বসে কিছু বাণী লিখেছেন যা বর্তমান আধুনিক খ্রিস্টধর্মের ভিত্তি বলা চলে। এছাড়াও এখানে তাঁর সমাধি রয়েছে। বর্তমানে এটাকে একটি তীর্থস্থানের মতোই পরিচর্যা করা হয়।
তাসিলি এন’আজের জাতীয় পার্ক
তাসিলি এন’আজের জাতীয় পার্ক পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন আর্ট গ্যালারি বলা হয়। এখানে চিত্র হিসাবে আছে প্রাগৈতিহাসিক পেট্রেগ্লিফ, কারমাইন রঙের হাতির পাল, জিরাফ, মহিষ এর শিলাচিত্র, মরুভূমির দৃশ্যের চিত্র ইত্যাদি। পর্যটকনন্দিত এই জাতীয় পার্কেরসব চিত্রসমূহ দেখতে পর্যটকের ১০ দিন লেগে যাবে।
সাহারার জানেট জাদুঘর
জানেট সাহারার অন্যতম আকর্ষণ। এখানে প্রায় ১৫০০০ এর মতো শিলাচিত্র রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ১২,০০০ বছরের পুরাতন চিত্রকর্ম। এসব চিত্রকর্মে তৎকালীন সাহারার সবুজে মোড়ানো পরিবেশ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে যুদ্ধ, শিকার ও দৈনন্দিন জীবনের চিত্র। এই জাদুঘরে সংরক্ষিত ‘ঘোড়ার পিঠে যোদ্ধাদের’ ছবি দেখলে টাইম মেশিনে ইতিহাসে ভ্রমণের আনন্দ পাওয়া যায়। আসলে যে এই জাদুঘর যে কতবড় তা চোখে না দেখলে বোঝানো যায় না।
চার্চ অব নটর ডেম ডি’আফ্রিক
এটি আলজেরিয়ার একটি বিখ্যাত গীর্জা। এই গীর্জা আলজিয়ার্স শহরের কাছাকাছি একটি পাহাড়ে অবস্থিত। খ্রিস্টধর্মীয় লোকদের জন্য এটি একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র। কিন্তু এটি মূলত ধর্মীয় আবেদনের চেয়েও এর নির্মাণশৈলীর কারণে বেশি বিখ্যাত। ১৮৭২ সালে নির্মিত এই ক্যাথলিক গির্জাটি ইউরোপীয় এবং উত্তর আফ্রিকান ঐতিহ্যের স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে এর বিশাল গম্বুজ ও দৃষ্টিনন্দন মোজাইক কাজ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। মজার ব্যাপার হলো এই গির্জায় একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে। আর তা হলো-
“Our Lady of Africa, pray for us and for the Muslims.”
এই উক্তিটি অসামপ্রদায়িকতার সুন্দর প্রতিচ্ছবি।
বেনি আদ আইন ফেজা গুহা
বেনি আদ আইন ফেজা গুহা একটি নয়, মূলত অনেক গুলো গুহা নিয়ে তৈরি একটি পর্যটন স্থান। এই গুহাগুলো আশ্চর্য হওয়ার কারণ হলো, এর ছাদ এবং মেঝে হাজার হাজার বছর ধরে চুনা পাথর জমে অসাধারণ নকশা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে পূর্বে মানুষ থাকতো। তাই ইতিহাস এবং সৌন্দর্য মিলে এটি পর্যটনের জন্য একটি অন্যতম সেরা স্থান।
আলজেরিয়ার গ্রেট মসজিদ
আলজেরিয়ার গ্রেট মসজিদের আরেক নাম ‘কেচাউয়া মসজিদ’। এটি আলজিয়ার্সের কাসবারে অবস্থিত। মসজিদটির মিনারসহ এর নির্মাণশৈলীর প্রতিটা কারুকাজ সবাইকে মুগ্ধ করে। এই মসজিদের ভেতরে রয়েছে খুব সুন্দর সুন্দর সব ক্যালিগ্রাফি। সবমিলিয়ে ‘ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান’ হিসাবে সমাদৃত এই মসজিদটি দেখতে পর্যটকরা আসতে ভোলেন না।
হোগগার পর্বত
হোগগার পর্বতের আরেক নাম ‘আহাগগার পর্বত’। হোগগার অর্থ উঁচু স্থান। এটি তামানরাসেট শহরের কাছে অবস্থিত একটি অসম্ভব সুন্দর পর্বতশ্রেণী। এই পর্বত ছবির মতো করে সাহারা মরুভূমি থেকে উচুতে উঠে গিয়েছে। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের উচ্চতা ২,৯০০ মি.। এই পর্বতশ্রেণী পর্যটকদের আরেকটি কারণে আকর্ষণ করে, তা হলো ট্র্যাকিং করার সুযোগ রয়েছে।
আলজেরিয়ার অর্থনীতি
আলজেরিয়ার অর্থনীতির বিরাট অংশ হচ্ছে এর তেল, গ্যাস রপ্তানির বাণিজ্য। বিশ্বে ১০ম তম বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি আলজেরিয়াতে অবস্থিত। আর তেলের খনিতে দেশটি বিশ্বে ১৬তম। এছাড়াও দেশটিতে আরও শক্তিশালী লুকায়িত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। যেমন: হিলিয়াম। বিশ্বের ২১% হিলিয়াম এখানে আছে। এমনকি জিপসাম, ফসফরাসে আলজেরিয়া বিশ্বের নামকরা।
কিছু কিছু খনিজ আবার ইতোমধ্যে রপ্তানি শুরু হয়েছে। যেমন: ফসফেট, পারদ, আকরিক এবং দস্তা। ইদানিংকালে স্বর্ণের, রুপার খনিও পাওয়া যাচ্ছে আলজেরিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে। প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়াও বৈদ্যুতিক শিল্প, হালকা শিল্প, পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে প্রধানশিল্প ধরা হয়। আলজেরিয়া কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাদের খাদ্য আমদানি করতে হয়।
আফ্রিকা মহাদেশের দেশ হিসাবে আলজেরিয়া পশ্চাৎপদ নয়। উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার পথে এই দেশটি নিজেকে চলমান রেখেছে। এই দেশটিকে একটি গল্পের সাথে তুলনা করা যায় যা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি দৃশ্যে, কিন্তু নিজের যে চরিত্র সেটা ধরে রাখছে।