ইসালকো আগ্নেয়গিরিটি প্রায় ২০০ বছর ধরে এত নিয়মিতভাবে লাভা উদগিরণ করত যে, এর আলো দেখেই প্রশান্ত মহাসাগরের নাবিকরা দূর পথ চিনত।
মধ্য আমেরিকার বুকে এক টুকরো আগুনের দেশ। প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউ এসে যার পায়ে আছড়ে পড়ে, যার মাথার উপরে জেগে থাকে জীবন্ত আগ্নেয়গিরির সারি। মানচিত্রে ছোট্ট একটি বিন্দু, কিন্তু এই দেশের ইতিহাসে লুকিয়ে আছে অপরাধের অসহনীয় বোঝা, লুকিয়ে আছে আগ্নেয়গিরির কান্না আর হাজারো মানুষের রক্তের দাগ।
চলুন, এল সালভাদর নামের এই দেশটি সম্পর্কে জেনে নেই নানা জানা-অজানা গল্প।
এল সালভাদর এর অবস্থান
এল সালভাদর কোনো সাধারণ দেশের গল্প নয়, বরং, এটি এক রূপান্তরের গল্প। এটি এমন এক দেশের কাহিনি, যে নিজের পরিচয়কে নতুন করে লিখতে চাইছে, কিন্তু অতীতের ছায়া তাকে ছাড়তে চাইছে না। এই দেশটাকে বুঝতে হলে, সবার তাকাতে হবে, এর মানচিত্রের দিকে।
মধ্য আমেরিকার ঠিক কেন্দ্রভাগে অবস্থিত এল সালভাদরের তিন দিকেই স্থলভাগ। এর উত্তরে ও পূর্বে হন্ডুরাস, পশ্চিমে গুয়াতেমালা। আর দেশটির দক্ষিণভাগের পুরোটা জুড়ে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের বিশালতা। জানলে অবাক হবেন, এল সালভাদর মধ্য আমেরিকার একমাত্র দেশ, যার সাথে ক্যারিবিয়ান সাগরের কোনো সংযোগ নেই। এই ভৌগোলিক অবস্থানই দেশটিকে এক অনন্য চরিত্র দিয়েছে।
ম্যাপ
আগ্নেয়গিরি যেখানে পথ দেখায়
এই দেশের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো, এটি “আগ্নেয়গিরির দেশ”। প্রায় ২০টিরও বেশি জীবন্ত ও সুপ্ত আগ্নেয়গিরি এই ছোট দেশটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যা এল সালভাদরকে পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূতাত্ত্বিক অঞ্চলের একটিতে পরিণত করেছে।
সান্তা আনা, সান মিগুয়েল এবং ইসালকো আগ্নেয়গিরি এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত আগ্নেয়গিরি। এর মধ্যে ইসালকো আগ্নেয়গিরিটি প্রায় ২০০ বছর ধরে এত নিয়মিতভাবে লাভা উদগিরণ করত যে, এর আলো দেখেই প্রশান্ত মহাসাগরের নাবিকরা দূর পথ চিনত। আর তাই এর নাম হয়ে গিয়েছিল “প্রশান্ত মহাসাগরের বাতিঘর”।
এল সালভাদরের আয়তন ও জনসংখ্যা
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এই আগ্নেয়গিরির দেশে আসলে কারা বাস করে? আয়তনে এল সালভাদর খুবই ছোট, মাত্র ২১,০৪১ বর্গ কিলোমিটার। তুলনা করার জন্য বললে, দেশটির আয়তন বাংলাদেশের প্রায় সাত ভাগের এক ভাগ। কিন্তু এই ছোট জায়গাতেই বাস করে প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষ এবং এ কারণেই দেশটি আমেরিকার মূল ভূখণ্ডের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত।
এল সালভাদরের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এর জলবায়ুও আমেরিকা থেকে কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। এখানকার জলবায়ু গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং বছরে মূলত দুটি ঋতুর আধিপত্য দেখা যায়। প্রথমত, শুষ্ক মৌসুম, যা নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত স্থায়ী হয়, এবং দ্বিতীয়টি, বর্ষা মৌসুম, যা মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলে। উপকূলীয় অঞ্চলের আবহাওয়া উষ্ণ এবং আর্দ্র থাকলেও, আগ্নেয়গিরি আর পাহাড়ে ঘেরা উঁচু অঞ্চলগুলোতে সারা বছরই এক মনোরম পরিবেশ বিরাজ করে।
এল সালভাদরের পর্যটনস্থান
জলবায়ুর এমন জটিল চিত্রের বাইরেও এল সালভাদরের আরেকটি পরিচয় আছে, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর আগ্নেয়গিরি। আগুনের দেশে এসেছেন অথচ আগ্নেয়গিরি দেখবেন না, তা কী হয়?
সান্তা আনা
এল সালভাদরের আগ্নেয়গিরির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো সান্তা আনা, যেটিকে স্থানীয়ভাবে ইলামাতেপেক বলা হয়। এটি এল সালভাদরের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয়গিরিতে ওঠার পথ শুরু হয় সেরো ভের্দে জাতীয় উদ্যান থেকে। তাই যাত্রার শুরুতে প্রথমে দেখা যায় ঘন সবুজ বন, তারপর পাহাড়ি পাথুরে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাতাসে যখন সালফারের গন্ধ পাবেন, ঠিক তখন বুঝবেন আপনি একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির পথে চলেছেন। আর দুই ঘণ্টার মতো হাঁটার পর চূড়ায় পৌঁছালে দেখা যায় জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির মুখে একটি সবুজ রঙের হ্রদ। উপরে নীল আকাশ, নিচে সবুজ পানি, এ যেন এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। এখান থেকে কোয়াটেপেক হ্রদ আর দূরের প্রশান্ত মহাসাগরও দেখতে পাওয়া যায়।
কোয়াটেপেক হ্রদ
সান্তা আনার চোখ ঝলসানো সৌন্দর্য দেখা হয়ে গেলে যেতে হবে কোয়াটেপেক হ্রদে। জেনে অবাক হবেন, এটিও তৈরি হয়েছে এক পুরনো আগ্নেয়গিরির মুখে। তবে এখন এই জায়গাটি ভীষণ শান্ত আর সুন্দর একটি জায়গা। এখানে আপনি নৌকাভ্রমণ, কায়াকিং করতে পারেন কিংবা শুধু বসে বসে চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। হ্রদের চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ। এল সালভাদরের স্থানীয় খাবারের স্বাদ খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে চলে যেতে পারেন রেস্তোরাঁগুলোতে।
রুটা দে লস ফ্লোরেস
জ্বলন্ত আগুন আর শান্ত জলের সৌন্দর্য দেখা শেষ করে একটু রোমান্টিক কোন স্থানে যেতে চাইলে পর্যটকেরা বেছে নেন ‘রুটা দে লস ফ্লোরেস’ বা ‘ফুলের রাস্তা’। এটি ৩৬ কিলোমিটার লম্বা একটি রাস্তা, যে রাস্তার আশেপাশে কিছু ছোট ছোট শহরের দেখা মিলবে। এছাড়াও এখানে আছে কফি বাগান আর ছোট ছোট জলপ্রপাত। এই রাস্তার পাশ দিয়েই গড়ে উঠা হুয়াইয়ুয়া শহরে প্রতি সপ্তাহে ফুড ফেস্টিভ্যাল হয়। সেসময় শহরের দেয়ালে নানা ছবি আঁকা হয় যা শহরটিকে আলাদা রূপ দেয়।
জোয়া দে সেরেন
শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়, এল সালভাদর ঐতিহাসিক পর্যটন স্থানেও বেশ সমৃদ্ধ। এল সালভাদর নামটির অর্থ “ত্রাণকর্তা”, নামটি রেখেছিলেন স্প্যানিশ বিজেতা পেদ্রো দে আলভারাদো, যিশু খ্রিস্টের সম্মানে। কিন্তু ইউরোপীয়দের আগমনের বহু আগে থেকেই এই অঞ্চলটি বিভিন্ন উন্নত সভ্যতার আবাসস্থল ছিল। এর মধ্যে মায়া এবং পিপিল সভ্যতা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পিপিলরাই এখানকার সবচেয়ে প্রভাবশালী আদিবাসী গোষ্ঠী ছিল, যারা কুজকাতলান নামক একটি শক্তিশালী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাদের উন্নত সমাজব্যবস্থার প্রমাণ আজও পাওয়া যায় ‘জোয়া দে সেরেন’-এর মতো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে। এই স্থানটিকে “আমেরিকার পম্পেই” বলা হয়। কারণ আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে একটি আগ্নেয়গিরির আকস্মিক অগ্ন্যুৎপাতের ফলে পুরো একটি গ্রাম উত্তপ্ত ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে। তবে, সেই সময়ের সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, চাষের যন্ত্রপাতি এবং এমনকি খাবারের অবশেষও প্রায় অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করা গেছে।
সুচিতোতো
এছাড়াও, দেশটির আরেক ঐতিহাসিক শহরের নাম, সুচিতোতো, যা এল সালভাদরের বেশ পুরনো একটি শহর, যেখানে পাথরে নির্মিত রাস্তা আর অনেক পুরনো গির্জার দেখা মিলবে। এখানে গেলে মনে হবে আপনি অনেক বছর পেছনে চলে গেছেন। এই শহরের অলিগলিতে রয়েছে পুরনো আর্ট গ্যালারি, হস্তশিল্পের দোকান আর ছোট ছোট থিয়েটার। শহরের পাশ দিয়েই রয়েছে সুচিতলান হ্রদ, যেখানে নৌকাভ্রমণ আর অনেক অচেনা পাখি দেখার সুযোগ মিলবে।
এল ইম্পসিবল ন্যাশনাল পার্ক
সবশেষে, যারা দেশটির প্রকৃতির গভীরে হারিয়ে যেতে চান, তাদের জন্য রয়েছে ‘এল ইম্পসিবল ন্যাশনাল পার্ক’। এটি বেশ বড় একটি বড় উদ্যান যেখানে আপনি চাইলে হাইকিং করতে পারেন। এছাড়া এল সালভাদরের ৫০০ প্রজাতির জীববৈচিত্র্যের দেখা মিলবে এই উদ্যানে। এখানে নানা ধরনের পাখি, প্রজাপতি, এমনকি বন্যপ্রাণীও বসবাস করে। এর পাশাপাশি নদী, হ্রদ আর ঝরনা এই জায়গাটিকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।
এল সালভাদরের সংস্কৃতি
এল সালভাদরের সংস্কৃতিতে স্প্যানিশ এবং আদিবাসী পিপিল সংস্কৃতির এক সুন্দর মিশ্রণ দেখা যায়। এখানকার জাতীয় খাবার হলো ‘পুপুসা’। এটি ভুট্টার আটা বা চালের আটা দিয়ে তৈরি এক ধরনের রুটি, যার ভেতরে চিজ, বিনস বা মাংসের পুর দেওয়া থাকে। এটি শুধু একটি খাবার নয়, এটি সালভাদোরানদের পরিচয়ের অংশ।
জেনে অবাক হবেন, প্রতি বছর নভেম্বরের দ্বিতীয় রবিবার ‘জাতীয় পুপুসা দিবস’ পালিত হয়। এছাড়াও, এখানকার কফি বিশ্ববিখ্যাত। শিল্প-সাহিত্যেও দেশটি কম নয়। লা পালমা শহরের শিল্পী ফার্নান্দো ইয়োর্ত-এর আঁকা উজ্জ্বল এবং রঙিন চিত্রকর্মগুলো সালভাদোরান লোকশিল্পের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এল সালভাদরের এক রক্তাক্ত ইতিহাস
তবে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর শিল্প-সংস্কৃতির বাইরে এল সালভাদরের রয়েছে এক রক্তাক্ত ইতিহাস। যে ইতিহাসের গ্লানি আজও বহন করে চলতে হচ্ছে দেশটিকে। ১৫২৪ সালে স্প্যানিশরা এই অঞ্চল দখল করে এবং প্রায় ৩০০ বছর ধরে তাদের ঔপনিবেশিক শাসন চালায়। ১৮২১ সালে এল সালভাদর স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, কিন্তু প্রকৃত মুক্তি আসেনি।
পরবর্তী এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে দেশটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সামরিক অভ্যুত্থান এবং অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যায়। এই সময়ে দেশের অর্থনীতি কফি চাষের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং ‘লাস কাতোরসে ফামিলিয়াস’ বা “চৌদ্দ পরিবার” নামে পরিচিত কয়েকটি অভিজাত পরিবার দেশের প্রায় সমস্ত জমি ও সম্পদের মালিক হয়ে ওঠে। এই চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামাজিক অবিচারই বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের বীজ বপন করে।
১৯৮০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে, এল সালভাদর এক নৃশংস গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত হয়। একদিকে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত স্বৈরাচারী সরকার, অন্যদিকে ছিল ভূমি সংস্কার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত বামপন্থী গেরিলা সংগঠন এফএমএলএন। এই যুদ্ধে ৭৫,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। মার্কিন প্রশিক্ষিত “ডেথ স্কোয়াড” বা গুপ্তঘাতক বাহিনীগুলো নির্বিচারে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেয়।
এই সময়েই আর্চবিশপ অস্কার রোমেরোর মতো ব্যক্তিত্ব শান্তির পক্ষে কথা বলার জন্য জীবন দেন। ১৯৯২ সালে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটলেও, একটি নতুন এবং আরও ভয়ঙ্কর সমস্যার জন্ম হয়। যুদ্ধের সময় পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীরা যখন লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় নিজেদের গ্যাং তৈরি করে এবং পরবর্তীতে আমেরিকা তাদের ফেরত পাঠায়, তখন দেশটি এক ভয়াবহ গ্যাং সহিংসতার যুগে প্রবেশ করে, যা পরবর্তী তিন দশক ধরে স্থায়ী হয়।
তবে এই চরম হতাশা আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্য থেকেই জন্ম হয় এক নতুন রাজনৈতিক ধারার, যার কেন্দ্রে রয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে। এল সালভাদরের শাসন ব্যবস্থা একটি রাষ্ট্রপতি-শাসিত প্রজাতন্ত্র। কিন্তু গৃহযুদ্ধের পর থেকে প্রায় তিন দশক ধরে দেশটির রাজনীতি মূলত ডানপন্থী ARENA এবং বামপন্থী FMLN নামের দুটি দলের এর দখলে ছিল।
তবে, দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং গ্যাং সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে এই দুই দলের ওপরই মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। এমন রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যেই ২০১৯ সালে উত্থান ঘটে নায়িব বুকেলের। তিনি নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠান-বিরোধী, আধুনিক এবং ক্যারিশম্যাটিক নেতা হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং তার নতুন দল ‘নুয়েভাস আইডিয়াস’ বা ‘নতুন ধারণা’ নিয়ে নিবার্চনে বিজয় অর্জন করেন।
বুকেলের শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হলো গ্যাংগুলোর বিরুদ্ধে ‘লৌহকঠিন নীতি’। ২০২২ সালে তিনি ‘স্টেট অফ এক্সেপশন’ বা জরুরি অবস্থা জারি করেন, যার অধীনে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশকে, অর্থাৎ প্রায় ৮০,০০০ সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর ফলে দেশের হত্যার হার নাটকীয়ভাবে কমে গেছে এবং তিনি ৯০ শতাংশের বেশি জনসমর্থন ধরে রেখেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিচার বিভাগ ও আইনসভার ক্ষমতা খর্ব করে নিজের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেছেন এবং দেশকে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
এল সালভাদরের অর্থনীতি
কিন্তু একটি দেশ শুধু নিরাপত্তা দিয়ে চলে না, তার প্রয়োজন একটি মজবুত অর্থনীতি। এল সালভাদরের অর্থনীতি একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতি। ঐতিহাসিকভাবে এটি কফি এবং চিনির মতো কয়েকটি কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। জেনে অবাক হবেন, আগ্নেয়গিরিগুলোর লাভা থেকে তৈরি উর্বর ছাই এখানকার মাটিকে সোনায় পরিণত করেছে। আর এই কারণেই দেশটির মাটি বিশ্বসেরা কফি চাষের জন্য আদর্শ।
তবে বর্তমানে এর অর্থনীতি অনেকটাই বৈচিত্র্যময় হয়েছে। তবে দেশটির অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হলো বিদেশে থাকা সালভাদোরানদের পাঠানো রেমিট্যান্স। এটি দেশের মোট জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশ। ২০২১ সালে, বুকেলে বিটকয়েনকে আইনগত মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দেন, যা সময়ের একটি সাহসী পদক্ষেপ হলেও পৃথিবীতে দারুণ বিতর্কের ঝড় তোলে।
অর্থনীতির পাশাপাশি একটি দেশের আসল চেহারা বোঝা যায় তার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দিয়ে। গৃহযুদ্ধ এবং দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্যের কারণে এল সালভাদরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঐতিহাসিকভাবেই দুর্বল ছিল। গ্রামাঞ্চলে স্কুল এবং হাসপাতালের অভাব প্রকট।
তবে বিগত দশকগুলোতে পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৯০ শতাংশের উপরে উঠেছে এবং শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বর্তমান সরকার শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য নতুন নতুন হাসপাতাল ও ক্লিনিক নির্মাণ করছে। তবে এখনও এই খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করা বেশ চ্যালেঞ্জিং।
এসব কারণে এল সালভাদর দেশটি আজ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। জনগণের মনে প্রশ্ন একটাই, নায়িব বুকেলের হাত ধরে পাওয়া নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা কি দীর্ঘস্থায়ী হবে কিংবা বিটকয়েন ব্যবহার করার মতো সাহসী পদক্ষেপ কি দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে নিয়ে যাবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ভবিষ্যতই দেবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—আগ্নেয়গিরির মতো এই দেশটি যেমন ধ্বংসের ছাই থেকে বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে, তেমনি এর ভেতরেও লুকিয়ে আছে এক অদম্য শক্তি।
এল সালভাদর সম্পর্কে ৫ টি মজার তথ্য
সবচেয়ে ছোট দেশ, কিন্তু সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ – মধ্য আমেরিকার মধ্যে এল সালভাদর সবচেয়ে ছোট দেশ হলেও, জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। ছোট আয়তনের মধ্যে প্রচুর মানুষ বসবাস করে।
“ভলকেনোর দেশ” – দেশটিকে প্রায়ই “Land of Volcanoes” বলা হয় কারণ এখানে ২০টিরও বেশি আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি এখনো সক্রিয়।
ডলার ও বিটকয়েন – অফিসিয়াল কারেন্সি – এল সালভাদর প্রথম দেশ যে সরকারি মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের পাশাপাশি বিটকয়েনকে বৈধ করেছে (২০২১ সালে)।
কফির জন্য বিশ্বখ্যাত – এল সালভাদরের উচ্চভূমি ও আগ্নেয়গিরির মাটি মানসম্মত কফি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত, যা বিশ্বব্যাপী রপ্তানি হয়।
পুপুরা – দেশের জাতীয় খাবার – মোটা টরটিলা সদৃশ খাবার “Pupusa” হলো এল সালভাদরের জাতীয় খাবার। এটি ভেতরে বিন, চিজ বা মাংস ভরে তৈরি করা হয় এবং দেশটির মানুষের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়।
তথ্যসূত্র-
- https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%8F%E0%A6%B2_%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%B0
- http://www.digestyc.gob.sv/index.php/temas/des/ehpm/publicaciones-ehpm.html?download=488%3Aestimaciones-y-proyecciones-de-poblacion
- https://rusticpathways.com/inside-rustic/online-magazine/fun-facts-about-el-salvador
- https://factsinstitute.com/countries/facts-about-el-salvador/