Image default
জীবনী

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের জীবন ও অর্জন

ক্ষুদ্রঋণের জনক থেকে জাতীয় নেতা—অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের জীবন এক সাহসী পথচলার গল্প। নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক সংকটময় সময়ে।

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়া অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সমাজসেবক, ক্ষুদ্রঋণের জনক ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। তার অর্থনৈতিক চিন্তাধারা ও সামাজিক উদ্যোগ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং সারা বিশ্বে দারিদ্র্য বিমোচনের মডেল হিসেবে স্বীকৃত।

ক্ষুদ্রঋণের ধারণার মাধ্যমে তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণে এক নতুন পথ উন্মোচন করেছেন, যা পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তবে রূপ নেয়। তার এই উদ্যোগ লাখো দরিদ্র মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। 

এই আর্টিকেলে আমরা ক্ষুদ্রঋণ বিপ্লবের এই পথিকৃৎকে আরও গভীরভাবে জানার চেষ্টা করব।

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার সময় ড. মুহাম্মদ ইউনুস

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৮ জুন, ১৯৪০ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী দুলা মিয়া সওদাগর যিনি পেশায় একজন জহুরি ছিলেন এবং মাতার নাম সুফিয়া খাতুন। দুই ভাই ও নয় বোনের মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছিলেন তৃতীয়। শৈশব থেকেই তিনি একজন মেধাবী ও কৌতূহলী শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

চট্টগ্রামের লামাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এরপর চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

যুবক বয়সে ড. ইউনূস

শিক্ষাজীবনে অসাধারণ সাফল্যের জন্য তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ড. ইউনুস মধ্য টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। তবে দেশের প্রতি টান তাকে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে। দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের দুরবস্থা দেখে গভীরভাবে ব্যথিত হন। সুফিয়া বেগম নামে গ্রামের এক নারীকে মোড়া বানাতে দেখে তার ভাবনা নেয় নতুন মোড়।

টাকার অভাবে সুফিয়া বাঁশ কিনতে পারছিলেন না, তাই আরও মোড়া বানাতেও পারছিলেন না। তিনি পাইকারের কাছ থেকে ৫ টাকা ধার নিতেন, বিনিময়ে তার বানানো সব মোড়া ওই পাইকারকে দিয়ে দিতে হতো। আর বিনিময়ে তিনি দিনে পেতেন মাত্র ১০ আনা।

গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনুস

মাত্র ৫ টাকার জন্য এই শ্রম দাসত্ব দেখে হতাশ হন ইউনূস। তিনি তার অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে ওই গ্রামে সুফিয়ার মতো ৪২ জন হতদরিদ্র নারীকে খুঁজে বের করেন। পাইকার কিংবা মহাজনদের কাছে তাদের দেনা ছিল ৮৫৬ টাকা। নিজের পকেট থেকে সেই টাকা ওই নারীদের দিয়ে দেনা পরিশোধ করতে বলেন তিনি। ফলে মোড়া বানিয়ে তা নিজের মতো করে বিক্রি করার সুযোগ পায় ওই নারীরা। আর তার দেওয়া ধার সময়-সুযোগ মতো ফেরত দিতে বলেন ইউনূস। 

তখনই এই নারীদের জন্য তার ব্যাংকের ভাবনাটি আসে। এই ক্ষুদ্র ঋণের ধারণাটি এতটাই কার্যকর প্রমাণিত হয় যে তিনি ১৯৮৩ সালে সরকার অনুমোদিত গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক

ক্ষুদ্রঋণ মডেলের ধারণা ও প্রয়োগ

গ্রামীণ ব্যাংকের মূল নীতি ছিল বিনা-বন্ধক ঋণ প্রদান করা, বিশেষ করে দরিদ্র নারী উদ্যোক্তাদের। ইউনূসের বিশ্বাস ছিল যে, দরিদ্ররাও ঋণ পরিশোধে সক্ষম, যদি তাদের উপযুক্ত সুযোগ দেওয়া হয়। এই মডেলের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো ছিলো ঋণদানের জন্য কোনো জামানত বা গ্যারান্টির প্রয়োজন নেই এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিজেদের ছোট ছোট দল গঠন করে পারস্পরিক সহায়তা ও দায়িত্ব ভাগ করে নেন। এদিকে ঋণের টাকা সপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়, যা ঋণগ্রহীতার উপর চাপ কমায়। আর এই ব্যাংকের লক্ষ্য শুধুমাত্র মুনাফা নয়, বরং দারিদ্র্য বিমোচন। 

এছাড়াও লক্ষ্য ছিল নারীর ক্ষমতায়ন। ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের ৯০% নারী, যা তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি করেছে। পরবর্তীতে এটি বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পগুলোর মডেল হিসেবে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, যা গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য। আর এই মডেল বিশ্বের অনেক দেশে গৃহীত হয়েছে এবং ফলস্বরূপ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে।

গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেল শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তনে অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

নোবেল পুরস্কার জয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

২০০৬ সালে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন। নোবেল কমিটি তাদের দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার প্রদান করে। 

নোবেল পুরষ্কার সহ ড. মুহাম্মদ ইউনুস

বিশেষত, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারণে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ মডেল প্রমাণ করেছে যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধুমাত্র বড় মাপের বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত প্রকল্পের ওপর নির্ভর করে না, বরং নিচু স্তর থেকে শুরু করেও টেকসই পরিবর্তন আনা সম্ভব।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননা

নোবেল পুরস্কার ছাড়াও অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১০ টি দেশ থেকে বিশেষ সম্মাননা সহ সর্বমোট ২৬ টি দেশ থেকে ১১২ টি পুরষ্কার লাভ করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:

  • প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম (২০০৯, যুক্তরাষ্ট্র) – যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।
  • কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল (২০১৩, যুক্তরাষ্ট্র) – আমেরিকান কংগ্রেস প্রদত্ত অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার।
  • ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ (১৯৯৪) – ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে তার অবদানের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
  • সিডনি শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮) – মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারে অবদানের জন্য এই সম্মাননা লাভ করেন।
  • কিং বডুয়েন ডেভেলপমেন্ট প্রাইজ (১৯৯৮, বেলজিয়াম) – উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি।

বিশ্বব্যাপী ড. মুহাম্মদ ইউনুস-এর কাজের প্রভাব

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মডেল শুধু বাংলাদেশেই নয়, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তার এই উদ্যোগের ফলে ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে অর্থনৈতিক সুযোগ পৌঁছেছে, যা বহু দেশের দারিদ্র্য নিরসনে সহায়ক হয়েছে। 

এছাড়াও ইউনূস শুধুমাত্র ক্ষুদ্রঋণেই থেমে থাকেননি, বরং সামাজিক ব্যবসার ধারণা জনপ্রিয় করেছেন, যেখানে ব্যবসার উদ্দেশ্য শুধু মুনাফা নয়, বরং সামাজিক সমস্যা সমাধান। নোবেল পুরস্কার অর্জনের পর ইউনূস ও তার কাজের প্রতি বিশ্বব্যাপী আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায় এবং তার মডেল বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

মুহাম্মদ ইউনূসের অর্থনৈতিক চিন্তাধারা ও প্রভাব

সামাজিক ব্যবসা ও দারিদ্র্য বিমোচনে তার ধারণা

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেবল ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের পথিকৃৎ নন, তিনি সামাজিক ব্যবসা (Social Business) ধারণারও উদ্ভাবক। তার মতে, সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ব্যবসাকে ব্যবহার করা সম্ভব, তবে এর লক্ষ্য মুনাফা অর্জন নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তন সাধন।

তিনি সামাজিক ব্যবসার জন্য সাতটি মূলনীতি নির্ধারণ করেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যবসার উদ্দেশ্য সমাজের কোনো সমস্যা সমাধান করা, লাভ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নয়। এছাড়াও, বিনিয়োগকারীরা তাদের আসল অর্থ ফেরত পাবেন, তবে অতিরিক্ত লভ্যাংশ নয়। পাশাপাশি, ব্যবসাটি টেকসই এবং স্বনির্ভর হতে হবে এবং পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল হতে হবে। এছাড়াও, কর্মীদের ভালো মজুরি এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে ড. ইউনূসের অবদান

ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা: ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ মডেল প্রমাণ করেছে যে, ঋণ শুধুমাত্র বড় ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং গরিব মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

নারীর ক্ষমতায়ন: গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের ৯০% নারী, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে এবং পরিবার ও সমাজে তাদের অবস্থান সুসংহত করেছে।

উদ্যোক্তা তৈরি: ক্ষুদ্রঋণ সুবিধার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ নিজেদের ছোট ব্যবসা শুরু করতে পেরেছেন, যা দারিদ্র্য কমানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করেছে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে তার চিন্তাধারার প্রভাব

ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা মডেল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। জার্মানির BASF, ফ্রান্সের Danone এবং জাপানের Uniqlo-এর মতো প্রতিষ্ঠান তার সামাজিক ব্যবসার ধারণা অনুসরণ করে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প চালু করেছে।

ইউনূসের মডেল উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোতেও গ্রহণযোগ্য হয়েছে, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক সেবার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার মডেলকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কার্যকর কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে।

অধ্যাপক ইউনূসের অর্থনৈতিক চিন্তাধারা শুধুমাত্র বাংলাদেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বৈশ্বিক উন্নয়ন নীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের বই ও প্রকাশনা

তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর পরিচিতি

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধুমাত্র একজন অর্থনীতিবিদ ও সমাজসেবী নন, তিনি একজন বিশিষ্ট লেখকও। তার বইগুলোতে তিনি দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক ব্যবসা, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে তার ভাবনা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই হলো:

  1. “Banker to the Poor” (১৯৯৭) – এই বইটিতে তিনি তার জীবন, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা, এবং ক্ষুদ্রঋণ মডেলের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
  2. “Creating a World Without Poverty” (২০০৮) – সামাজিক ব্যবসার ধারণা কীভাবে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূর করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
  3. “Building Social Business” (২০১০) – কীভাবে সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলা যায় এবং এটি কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
  4. “A World of Three Zeros” (২০১৭) – ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক মডেল সম্পর্কে তার ধারণা যেখানে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নির্গমন থাকবে শূন্যের কোঠায়।
  5. “কর্মসৃজনের নতুন দিগন্ত” – বাংলায় প্রকাশিত এই বইতে তিনি ক্ষুদ্রঋণ এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর ‘’থ্রি জিরো” তত্ত্ব

ড. মুহাম্মদ ইউনূস “থ্রি জিরো” ধারণাটির প্রবক্তা, যার লক্ষ্য তিনটি শূন্য অর্জন করা: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ।

ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্ব

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিজেই দারিদ্র্য সৃষ্টি করে এবং এই ব্যবস্থার অধীনে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। তিনি বিশ্বাস করেন যে, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং পরিবেশগত সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এই উদ্দেশ্যে তিনি থ্রি জিরো একটি তত্ত্ব দেন যা আন্তর্জাতিক মহলে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই “থ্রি জিরো” ধারণাটি মূলত তিনটি লক্ষ্য অর্জনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে:

  • শূন্য দারিদ্র্য: ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন যে, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। সামাজিক ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা, যা মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সমস্যার সমাধান করে।
  • শূন্য বেকারত্ব: তিনি মনে করেন, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। এর মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস করা যেতে পারে।
  • শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ: ড. ইউনূসের মতে, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি না করে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব। এর মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানো যেতে পারে।

ড. ইউনূসের “থ্রি জিরো” ধারণাটি বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে এবং এটি টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ হলেও বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্যতম ভূমিকা হল জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সরকারের মধ্যবর্তী সময়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। তিনি সরকারের একটি নিরপেক্ষ এবং অ-দলীয় চরিত্র নিশ্চিত করতে সাহায্য করছেন। 

ড. ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও, ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতিকে তিনি আবার সচল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করছেন, যা দেশের আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে। এর পাশাপাশি, তার নেতৃত্বে সরকারের কার্যক্রমের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং ন্যায্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

তথ্যসূত্র

Related posts

উর্দুভাষী সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গপ্রেম

ইসরাত জাহান ইরা

যোগেন মন্ডল- রাজনীতির হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র

দ্য রেড মাওলানা-আবদুল হামিদ খান ভাসানী

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More