বিভিন্ন দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল ফ্রি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে, যার আওতায় থাকা-খাওয়া, টিউশন ফি, ভিসা ও বিমান ভাড়াসহ সব সুবিধা দেওয়া হয়। এটি উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে দুর্দান্ত এক সুযোগ।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনেকেরই, কিন্তু খরচের চিন্তায় অনেকেই পিছিয়ে যান। তবে চিন্তার কিছু নেই! বিশ্বের নানা দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদান করে ফুল ফ্রি স্কলারশিপ; যা আপনার স্বপ্নপূরণে হতে পারে সবচেয়ে বড় সহায়ক। এই লেখায় জেনে নিন এমন কিছু স্কলারশিপের তথ্য, যেগুলো আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
বিদেশে পড়ার জন্য স্কলারশিপ
বিভিন্ন দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল ফ্রি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে, যার আওতায় থাকা-খাওয়া, টিউশন ফি, ভিসা ও বিমান ভাড়াসহ সব সুবিধা দেওয়া হয়। এটি উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে দুর্দান্ত এক সুযোগ।
আজ আমরা এই স্কলারশিপগুলোর মধ্যে বিদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ব সেরা ৫টি স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো-
১. ডাড(DAAD) স্কলারশিপ-
ডাড হলো জার্মানির অন্যতম একটি স্কলারশিপ। দ্য জার্মানি একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ডাড স্কলারশিপ। এটি প্রথম চালু হয় ১৯২৫ সালে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও এ স্কলারশিপে আবেদন করতে পারেন। এ স্কলারশিপে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে অর্থায়ন করা হয়ে থাকে। ডিএএডি জার্মানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৃত্তি। জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিসের অর্থায়নে এ বৃত্তি দেওয়া হয়। উন্নয়নশীল দেশের স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। যদিও সব বিষয়ে এ বৃত্তি পাওয়া যায় না। অনলাইনে আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে এবং আবেদনের বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে।
২. ফুলব্রাইট স্কলারশিপ
ফুলব্রাইট স্কলারশিপ যুক্তরাষ্ট্রের একটি সম্মানজনক শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, যার যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৬ সালের ১ আগস্ট। ‘ফুলব্রাইট ফরেইন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম’-এর আওতায় প্রতি বছর বিশ্বের ১৫৫টি দেশ থেকে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে সুযোগ পান। স্কলারশিপটি টিউশন ফি, যাতায়াত ভাড়া, মাসিক ভাতা ও স্বাস্থ্য বীমা বহন করে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের শিক্ষার্থীরা এতে আবেদন করতে পারেন। বিজ্ঞান, ব্যবসা, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে ও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে।
৩. শেভেনিং স্কলারশিপ
যুক্তরাজ্যে পড়ার ক্ষেত্রে জনপ্রিয় একটি স্কলারশিপ হলো ব্রিটিশ চেভেনিং বা শেভেনিং স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপের অফিসিয়াল নাম শেভেনিং মাস্টার্স স্কলারশিপ, যা যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ডিগ্রী প্রত্যাশীদের দেওয়া হয়ে থাকে। ১৯৮৩ সাল থেকে ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিসের অর্থায়নে যাত্রা শুরু করে শেভেনিং স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। প্রতি বছর প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় এই বৃত্তি। এ প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার্থীরা মাসিক ভাতা, বিমান ভাড়া ও নানা ধরনের সুযোগ সুবিধাসহ সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। চেভেনিং বৃত্তির আবেদনের লিংক।
৪. কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ
কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ প্রদান করে থাকে। স্কলারশিপটি ইউকে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) দ্বারা অর্থায়িত হয়। বৃত্তির আওতায় একজন শিক্ষার্থী পাবেন বিনা টিউশন ফিতে যেকোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ। এছাড়াও আবাসন ও বসবাসের আনুষঙ্গিক খরচ এবং বিমানে যাতায়াত খরচও বহন করা হয়।স্নাতকোত্তর ও পিএইচডির জন্য আবেদন করা যাবে অনলাইনে।
*স্নাতকোত্তরে আবেদন করতে এবং বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
*পিএইচডিতে আবেদন করতে এবং আবেদনের বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
৫. ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ
ইউরোপীয় কমিশনের একটি প্রোগ্রাম, যা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মাস্টার্স ও পিএইচডি পড়ার সুযোগ দেয়। ১৯৮৭ সাল থেকে চালু হওয়া এই স্কলারশিপের আওতায় টিউশন ফি, জীবনযাত্রার খরচ, বিমান ভাড়া, লাইব্রেরি ও গবেষণা খরচসহ সব ব্যয় বহন করা হয়। প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীরা কমপক্ষে ২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান এবং সর্বোচ্চ ৩টি বিষয়ে আবেদন করতে পারেন। মোট ১১৬টি মাস্টার্স ও ১২৯টি পিএইচডি কোর্স রয়েছে। কৃষি, প্রকৌশল, স্বাস্থ্য, মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসা, আইনসহ নানা বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচনে সিভি, একাডেমিক রেজাল্ট, ভাষাজ্ঞান ও মোটিভেশন গুরুত্ব পায়। আবেদনের বিস্তারিত দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
কিভাবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়া যায়?
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য কিছু প্রস্তুতি ধাপে ধাপে নিতে হয়। নিচে সহজভাবে ধাপগুলো তুলে ধরা হলো:
১. লক্ষ্য নির্ধারণ:
আপনি কোন বিষয়ে, কোন পর্যায়ে (ব্যাচেলর/মাস্টার্স/পিএইচডি) এবং কোন দেশে পড়তে চান, সেটি আগে ঠিক করুন।
২. স্কলারশিপ খোঁজা:
পছন্দের দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্কলারশিপগুলোর তথ্য অনুসন্ধান করুন।
৩. যোগ্যতা পূরণ:
প্রত্যেক স্কলারশিপের নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকে। যেমন:
- ভালো একাডেমিক ফলাফল
- ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ (IELTS/TOEFL)
- মোটিভেশন ও রেকমেন্ডেশন লেটার
- প্রাসঙ্গিক কাজ বা গবেষণার অভিজ্ঞতা (বিশেষ করে পিএইচডির ক্ষেত্রে)
৪. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি:
- একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট
- সিভি/রিজ্যুমে
- স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP)
- রিকমেন্ডেশন লেটার
- ভাষার দক্ষতার সনদ
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন:
পছন্দের প্রোগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করুন। অনেক স্কলারশিপে আলাদা আবেদন করতে হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ই স্কলারশিপের জন্য বিবেচনা করা হয়।
৬. সময়মতো আবেদন:
প্রায় সব স্কলারশিপের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। তাই সময়মতো আবেদন জমা দেওয়াটা খুব জরুরি।
৭. প্রস্তুতি ও ধৈর্য:
স্কলারশিপ পাওয়া একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া। তাই মানসিক প্রস্তুতি, ধৈর্য, এবং নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা দরকার।
ইচ্ছা, পরিকল্পনা, সঠিক প্রস্তুতি আর পরিশ্রম থাকলে বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়া অসম্ভব নয়।
আবেদন প্রক্রিয়া
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়তে চাইলে গ্রাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন (GRE) এবং ব্যবসা ও মানবিক শাখার জন্য গ্রাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট (GMAT) দিতে হয়। উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর বিদেশে কলেজে ভর্তি হতে চাইলে স্কলাস্টিক অ্যাপটিটিউড টেস্ট (SAT) প্রয়োজন হয়। GRE ও GMAT পরীক্ষার মেয়াদ ৫ বছর হলেও অনেক সময় ২–৩ বছরের বেশি হলে প্রফেসররা আবার পরীক্ষায় বসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ইউরোপীয় দেশগুলোতে এই পরীক্ষাগুলোর প্রয়োজন হয় না।
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণে মূলত দুটি পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ—IELTS এবং TOEFL। IELTS যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক এবং TOEFL যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক, তবে দুই পরীক্ষাই প্রায় সব দেশেই গ্রহণযোগ্য। IELTS স্কোর ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় বেশি প্রাধান্য পায়, আর TOEFL যুক্তরাষ্ট্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটি পরীক্ষার মেয়াদ ২ বছর। যদিও কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পরীক্ষাগুলো বাধ্যতামূলক নয়, তবে গন্তব্য অনুযায়ী একটিতে ভালো স্কোর রাখা উচিত।
উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনের শুরুতেই প্রয়োজন হয় বায়োডাটা, স্টেটমেন্ট অব পারপাস, একাডেমিক মার্কশিট, IELTS বা TOEFL স্কোর, এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কনফার্মেশন অব এনরোলমেন্ট (COE) পাওয়া গেলে ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। ভিসার জন্য অতিরিক্ত কিছু ডকুমেন্ট যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ, বিবাহের সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়), ও ট্যাক্স সনদ জমা দিতে হয়।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, চীন, মালয়েশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।