Image default
প্রযুক্তি

কাজের চাপ কমাবে এই ১০টি এআই টুল

অফিসের টেবিলের যুদ্ধক্ষেত্র, ইমেইলের স্তুপ, মিটিংয়ের খাতা, রিপোর্টের পাহাড়  ইত্যাদির মত ঝামেলা গুলো নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এখন আপনার পাশে আছে স্মার্ট এআই টুলস—আপনার ডিজিটাল সহকারী।

ভাবুন তো আপনার ডেস্কে কাজের স্তূপ,ইমেইলের পাহাড়, রিপোর্ট, প্রেজেন্টেশন, মিটিং নোট। এই সব কিছু একসাথে সামলাতে গিয়ে আপনি প্রায় ক্লান্ত। কিন্তু হঠাৎই এআই টুলগুলো আপনার পাশে দাঁড়িয়ে কাজের চাপ অর্ধেকে নামিয়ে দিল! এআই মানে যে শুধু রোবটিক সিস্টেম এমনটা নয়। এ আই টুলস গুলো হলো আপনার স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট। এই টুলসগুলো আপনার কাজকে আরও সহজ, দ্রুত ও মজার করে তুলবে।

গ্রামারলি (Grammarly): বানান ও ব্যাকরণের চিন্তা দূর করুন

লেখার সময় কি আপনার মনে হয়, “এই বাক্যটা কি ঠিক আছে?” ইমেইল, রিপোর্ট বা প্রেজেন্টেশন লিখতে গিয়ে বানান ও ব্যাকরণের ভুল এড়ানো অনেকের জন্যই কঠিন। তবে গ্রামারলি ব্যবহার করলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার লেখার বানান শুদ্ধ করবে, ব্যাকরণগত ত্রুটি ঠিক করবে এবং আপনার লেখার স্টাইলও উন্নত করবে।

জরুরি ইমেইল লিখছেন? গ্রামারলি সাথে সাথেই সব ভুল ধরিয়ে দেবে এবং সংশোধন করে দেবে। এটি শুধু বানানই চেক করবে না বরং আপনার বাক্যগুলো বরং আপনার বাক্যগুলো শুনতে কেমন হবে তাও পর্যালোচনা করে দিবে।

গ্রামারলি

ট্রেলো-বাটলার: আপনার ডিজিটাল প্রোডাক্টিভিটি পার্টনার

একসাথে কয়েকটি প্রজেক্ট ম্যানেজ করতে গিয়ে কি আপনি ডেডলাইন মিস করার ভয় পাচ্ছেন? প্রতিটি প্রজেক্টের টাস্ক ম্যানেজ করতে গিয়ে কি সময় ও শক্তি নষ্ট করছেন? ট্রেলো হতে পারে আপনার এই জটিলতার সেরা সমাধান। এটি একটি ইন্টুইটিভ টাস্ক ম্যানেজমেন্ট টুল যেখানে আপনি মাল্টিপল প্রজেক্টের সমস্ত কাজ গোছানোভাবে ট্র্যাক করতে পারবেন। আর যখন ট্রেলোর সাথে যুক্ত হয় বাটলার ফিচার, তখন এটি আপনার ভার্চুয়াল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটরে রূপ নেয়।

এই স্মার্ট অটোমেশন টুলটি আপনার জন্য:

স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাস্ক অর্গানাইজ করে

ইন্টেলিজেন্ট শিডিউল তৈরি করে

স্মার্ট নোটিফিকেশন পাঠায়

উদাহরণস্বরূপ, কোনো ক্রিটিক্যাল মিটিংয়ের আগে যদি কোনো টাস্ক জমা দিতে হয়, বাটলার আপনাকে প্রি-সেট টাইমলাইনে রিমাইন্ডার দেবে একই সাথে রিয়েল-টাইম প্রগ্রেস আপডেট প্রদান করবে। এটি শুধু টাস্কই রিমাইন্ড দেয় না, বরং আপনার পুরো ওয়ার্কফ্লোকে করে তুলবে স্ট্রেস-ফ্রি। 

ট্রেলো-বাটলার

ওটার এআই (Otter.ai): স্মার্ট মিটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট

মিটিংয়ের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কথা কি মনে রাখতে সমস্যা হয়? ওটার এআই আপনার এই চ্যালেঞ্জকে সহজ করে দেবে! এই ইন্টেলিজেন্ট টুলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিটিং রেকর্ড করে এবং কথোপকথনকে টেক্সটে কনভার্ট করে। ফলে হাতে হাতে নোট নেওয়ার ঝক্কি থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।

ওটার এআই শুধু কথোপকথন ট্রান্সক্রাইবই করে না, বরং আলোচনার মূল পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে সম্পূর্ণ নোট প্রস্তুত করে দিবে।

ওটার এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার মিটিংয়ের সমস্ত আলোচনা বিশ্লেষণ করে, মূল বিষয়বস্তু হাইলাইট করে এবং সিদ্ধান্তগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিবে। এর ফলে মিটিং শেষে তৈরি নোটগুলো দেখে মুহূর্তেই পুরো আলোচনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন – কোনো তথ্য বাদ পড়ার চিন্তা করতে হবে না। এটি শুধু ট্রান্সক্রিপশনই করে না, বরং আপনার জন্য একটি সম্পূর্ণ মিটিং সামারি তৈরি করে, যাতে পরবর্তীতে রেফারেন্স নেওয়া সহজ হয়।

ওটার এআই

জেপিয়ার (Zapier): অ্যাপসের মধ্যে স্মার্ট সেতুবন্ধন!

প্রতিদিনের কাজে কি আপনি একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? ইমেইল, গুগল শিট, ফর্মসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ডাটা আদান-প্রদান করতে গিয়ে কি প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে? জেপিয়ার আপনার জীবনের সুপার হিরো হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। এই টুলটি আপনার সব অ্যাপসকে একসাথে সংযুক্ত করে পুরো প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করে তোলে ।

জেপিয়ার আপনার ফর্ম থেকে গুগল শিটে ডাটা অটোমেটিক্যালি আপডেট করবে, বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে ডাটা সিঙ্ক করবে। যার ফলে, আপনার প্রতিদিনের রুটিন কাজগুলোকে হয়ে যাবে সহজ এবং সময়সাশ্রয়ী। 

এটি এমনভাবে কাজ করে যাতে করে, আপনি কোনো চেষ্টা ছাড়াই সবকিছু হাতের নাগালে পেয়ে যাবেন। জেপিয়ারকে বলুন আপনার চাহিদা, বাকি কাজ সে নিজেই করে দেবে। 

জেপিয়ার

নোশন এআই: আপনার সৃজনশীল সহকারী

একটা নতুন প্রজেক্ট নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন? কোথা থেকে শুরু করবেন, কীভাবে পরিকল্পনা করবেন – এই চিন্তায় আটকে আছেন? নোশন এআই আপনার জন্য পারফেক্ট সলিউশন হতে পারে। এটি আপনার অগোছালো চিন্তাগুলোকে গুছিয়ে দেবে, নতুন আইডিয়া দেবে এবং পুরো প্রজেক্টটাকে ধাপে ধাপে সাজিয়ে দেবে।

মজার ব্যাপার হলো, এটা শুধু আপনার নোট আর টাস্ক গুছিয়ে রাখে না – বরং আপনার চিন্তাভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করে। যখনই আপনি আটকে যাবেন তখনই নোশন এআই নতুন আইডিয়া নিয়ে হাজির হবে। আপনার কাজের ফ্লো কে লজিক্যালভাবে সাজিয়ে দেবে। এটা আপনাকে শুধু অর্গানাইজডই করবে না, বরং আপনার প্রোডাক্টিভিটিও বাড়িয়ে দেবে কয়েক গুণ।

নোশন এআইয়ের মতো স্মার্ট সঙ্গী পেলে আপনার ক্রিয়েটিভিটি যেন উইংস পেয়ে যায়। যখনই দ্রুত কোনো নতুন কনসেপ্ট চাইবেন, এই এআই বন্ধুটিকে সবসময় আপনার পাশে পাবেন।

নোশন এআই

ক্যানভা এআই: ডিজাইনের জাদুকর!

মনে করুন, হঠাৎ করেই বস বললেন, “দুই ঘণ্টার মধ্যে একটা চোখ ধাঁধানো ইভেন্ট পোস্টার চাই!” আপনি তো ডিজাইনার নন, কিন্তু এখনি প্রফেশনাল কিছু বানাতে হবে। ঘাবড়ানোর কিছু নেই – ক্যানভা এআই আপনার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

ক্যানভা এআই এমন একটা স্মার্ট টুল জেটি মাত্র কয়েকটা ক্লিকেই আপনাকে প্রফেশনাল মানের ডিজাইন বানাতে সাহায্য করবে। তাও আবার কোনো গ্রাফিক্স ডিজাইনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই।

আপনাকে শুধু ইভেন্টের ধরন, পছন্দের রঙ বা প্রয়োজনীয় টেক্সটের মতো কিছু তথ্য দিতে হবে। এরপর ক্যানভা এআই নিজের মতো করে টেমপ্লেট, রঙের কম্বিনেশন আর ফন্ট মিলিয়ে চমৎকার একটা ডিজাইন একদম ঝটপট সাজিয়ে দেবে। 

ক্যানভা এআই

ক্লকিফাই (Clockify) : সময় ম্যানেজমেন্টের জাদুকর

কেমন লাগে যখন দিন শেষে মনে হয়, “সময় কোথায় গেল?” মিটিং, ইমেইল, রিপোর্ট – সবকিছুর ভিড়ে সময় ফুরিয়ে যায়, কিন্তু কাজ ঠিকমতো এগোয় না। এই অবস্থায় ক্লকিফাই টাইম ট্র্যাকার হতে পারে আপনার সময় ব্যবস্থাপনার জাদুকর। এটি আপনার প্রতিদিনের কাজের সময়কে এমনভাবে ট্র্যাক করে, যেন আপনি প্রতি মুহূর্তে বুঝতে পারেন ঠিক কোন কাজে কতটা সময় ব্যয় হচ্ছে।

ক্লকিফাই এমন এক দুর্দান্ত টাইম ট্র্যাকার, যা আপনার প্রতিটা কাজের সময় নিখুঁতভাবে ধরে রাখে। এতে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন, কোন কাজে কতটা সময় ব্যয় হচ্ছে, আর কোথায় অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে।এছাড়া ক্লকিফাই সময়মতো আপনাকে ব্রেক নিতে মনে করিয়ে দেবে, কাজের গতি বাড়াতে সাহায্য করবে, এমনকি দেখিয়ে দেবে কোন কাজগুলো বারবার করে আপনার সময় নষ্ট হচ্ছে।

ক্লকিফাইয়ের সাহায্যে আপনি আপনার কাজের তালিকাকে সুন্দরভাবে সাজাতে পারবেন। সময় অপচয়ের ভয় থেকে আপনাকে মুক্ত রাখবে  ক্লকিফাই। 

ক্লকিফাই

স্ক্রাইব (Scribe): মুহূর্তেই তৈরি হবে নির্দেশিকা

ভাবুন তো, আপনার অফিসে একজন নতুন সহকর্মী এসেছে। এখন তাকে শিখাতে হবে কীভাবে কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হয়, রিপোর্ট জমা দিতে হয় কিংবা কোন ফাইল কোথায় আপলোড করতে হয়। আপনি হয়তো চিন্তায় পড়ে যাচ্ছেন, “এতসব বিষয় একে একে বুঝিয়ে বলা কতটা সময়সাপেক্ষ হবে!” ঠিক তখনই স্ক্রাইব আপনার সহায়ক হয়ে হাজির হবে।

স্ক্রাইব এমন একটি চমৎকার টুল, যা আপনি কোনো কাজ করার সময় সেই কাজের প্রতিটি ধাপ নিজে থেকেই রেকর্ড করে রাখে এবং তা দিয়ে তৈরি করে একটি গোছানো নির্দেশিকা। আপনি শুধু কাজটি করে যান স্ক্রাইব আপনার প্রতিটি ক্লিক আর পদক্ষেপ নিঃশব্দে ধরে রাখবে। এরপর সে ধাপগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে, একটি পরিপূর্ণ গাইড আকারে আপনাকে দেবে। ভাবুন তো, আপনি নতুন কোনো সিস্টেমে কাজ করছেন আর আপনার সব কার্যপ্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে নথিবদ্ধ হয়ে গেল—মাত্র কয়েক মিনিটেই!

স্ক্রাইব

চ্যাটজিপিটি (OpenAI): সব প্রশ্নের সহজ সমাধান

আপনার মাথায় হয়তো একসাথে অনেক প্রশ্ন আসছে—‘এই ইমেইলটা কীভাবে লিখব?’, ‘রিপোর্টের ফরম্যাট কেমন হবে?’, ‘বসকে প্রভাবিত করব কীভাবে?’ এমন সময় মনে হয়, কেউ থাকলে ভালো হতো যে সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য করতে পারত। ঠিক তখনই চ্যাটজিপিটি এসে যায় আপনার ডিজিটাল সহকারী হয়ে।

চ্যাটজিপিটি এক ঝটকায় আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কাজকে করে তোলে আরও সহজ ও দ্রুত। যদি আপনি চিন্তাভাবনার সময় না পান, তাহলেও চিন্তার কিছু নেই। চ্যাটজিপিটি মুহূর্তেই আপনার জন্য কনটেন্ট তৈরি করে দিতে পারে। এটি শুধু উত্তর দেয় না, বরং ইমেইল, প্রেজেন্টেশন কিংবা রিপোর্ট তৈরিতেও দেয় কার্যকর পরামর্শ। যেন আপনার ডেস্কে একজন দক্ষ ও সবজান্তা সহকর্মী সবসময় পাশে বসে সাহায্য করছে।

চ্যাটজিপিটি

মাইক্রোসফ্ট কো-পাইলট (A): অফিসের আদর্শ ডিজিটাল সহকারী

আপনার টেবিলে একের পর এক এক্সেল শিট আর রিপোর্ট জমা হয়ে আছে, আর আপনি দিশেহারা। কোনটা আগে ধরবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ঠিক তখনই মাইক্রোসফ্ট কো-পাইলট হয়ে ওঠে আপনার নির্ভরযোগ্য সহচর। এটি এমন এক এআই টুল, যা মাইক্রোসফ্ট অফিস ৩৬৫-এর এক্সেল, ওয়ার্ড আর পাওয়ার পয়েন্টে কাজকে অনেক দ্রুত এবং সহজ করে তোলে।

আপনি শুধু বলে দিন ‘এই এক্সেল ডেটাগুলো বিশ্লেষণ করে দাও।’ কো-পাইলট সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্লেষণ করে দেবে। রিপোর্ট লেখার সময় মাথা গরম? কো-পাইলট নিশ্চিন্তে বলে, ‘চিন্তা কিসের? আমি তো আছি!’ এমনকি প্রেজেন্টেশন তৈরির কাজেও এটি আপনার জন্য সাজিয়ে দেবে প্রয়োজনীয় স্লাইড।

মাইক্রোসফ্ট কো-পাইলট

সবচেয়ে বড় কথা, এআই এখন শুধু কোনো ট্রেন্ড নয়। বরং দিন দিন এটি কাজের ধরন বদলে দিচ্ছে। উপরে যেসব এআই টুলের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো শুধু কাজের গতি বাড়ায়েই দেয় না,  কাজকে  করে তোলে আরও সৃজনশীল, আনন্দদায়ক ও ফলপ্রসূ । এই টুলগুলো অফিসের চাপ কমিয়ে আপনাকে করে তোলে আরও বেশি কার্যকর। এখনই সময়, এআইয়ের সহায়তায় আপনার কাজকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার।

তথ্যসূত্র-

Related posts

প্রতারকদের পছন্দ টেলিগ্রাম! কেন স্ক্যামাররা এই অ্যাপ ব্যবহার করে?

শেখ আহাদ আহসান

২০২৫ সালে যেসব এআই স্মার্টফোন আসছে

শেখ আহাদ আহসান

ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ: আইফোনের দাম কি আকাশছোঁয়া হবে?

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More