Image default
পথে প্রান্তরে

ঘুরে আসুন এশিয়ার দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত – কক্সবাজার

এশিয়া মহাদেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। বাংলাদেশকে ঘুরে দেখতে হলে কক্সবাজার ভ্রমণ আবশ্যকীয়। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের উত্তাল ঢেউ দর্শনার্থীদের এক অদ্ভুত মায়াজালে আবদ্ধ করে রাখে। সময়ে সময়ে প্রকৃতি বদলায়, প্রকৃতির সেই রূপের প্রভাব থাকে কক্সবাজারেও। আর তাই ভিন্ন স্বাদ নিতে ঝুম বর্ষায় বা শরতের নীল আকাশের সাথে মিতালির জন্যে চলে যেতে পারেন কক্সবাজার, অথবা হেমন্তের এক পূর্ণিমার রাতে এই সমুদ্র সৈকত তার রূপ দিয়ে আপনাকে মুগ্ধ করবে অবশ্যই।

কক্সবাজারের অবস্থান

কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর ও পর্যটন কেন্দ্র। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা শহর। দেশের সব জায়গা থেকে কক্সবাজার আসার জন্য হাইওয়ে রোড রয়েছে। তবে, ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও বিমানে কক্সবাজার যাওয়া যায়। 

ম্যাপ

কক্সবাজারে গিয়ে যা যা দেখবেন

কক্সবাজার এমন একটি জায়গা যেখানে প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য দেখার সুযোগ হবে। এখানে সৈকত ছাড়াও আশেপাশে অনেক কিছু রয়েছে যার সব কিছু উপভোগ করার জন্য বেশ সময়ের প্রয়োজন। আজকে আমরা জেনে নিব এই দীর্ঘ সৈকতে আমাদের রয়েছে। 

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত জুড়ে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী বালু। বিকেলের স্নিগ্ধ হাওয়ায় বালুর ওপর দিয়ে সাগরের নোনা জলে পা ভেজাতে পারেন। সৈকতের পানিতে গোসল ও সাঁতার কাটতে পারেন। তবে, সৈকতের এক অদ্ভুত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন রাতে। এসময় সমুদ্র পানির ঢেউ আপনাকে স্বর্গীয় অনুভূতি দিবে।

কক্সবাজারে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত 

কক্সবাজারে সূর্যাস্ত

বাংলাদেশের দুটো জায়গা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত সবচেয়ে সুন্দর ভাবে দেখা যায়। এরমধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অন্যতম। সমুদ্র তীরে বসে থাকলে সূর্যোদয়ের সময় মনে হবে পানির নিচ থেকে আগুনের গোলা ধেয়ে আসছে; আর সূর্যাস্তে মনে হবে একটা অগ্নিকূণ্ডলী পানির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে।

রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড

কক্সবাজারে সার্ফিং

যদি আপনি ব্যক্তিগতভাবে সাহসী হয়ে থাকেন এবং রোমাঞ্চকর কিছু করতে পছন্দ করেন, তাহলে এই সৈকতে অনেক কিছু করার ব্যবস্থা রয়েছে।  যেমন- সার্ফিং, প্যারাসেলিং, জেট স্কিইং বা নৌকা ভ্রমণের মতো রোমাঞ্চকর সব কিছু উপভোগ করতে পারেন।

কক্সবাজারে প্যারাসেলিং

কক্সবাজার জুড়ে কয়েকটি আকর্ষণীয় বিচ রয়েছে। যেমন লাবণী, ইনানী ও হিমছড়ি। এইসব বিচে অনায়েসে ঘন্টার পর ঘন্টা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এছাড়াও, নৌকা, স্পিড বোটে চড়ে সমুদ্রের বিশালতা দেখতে পারেন। স্থানীয় সংস্কৃতি জানার জন্য আশেপাশের গ্রাম ঘুরে দেখতে পারেন। ভোজনরসিক না হলেও সামদ্রিক মাছ ও স্থানীয় কিছু খাবার উপভোগ করতে পারেন।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আরো যা যা দেখবেন

কক্সবাজার গিয়ে সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখার পর এর আশেপাশে আরও অনেক চমৎকার স্পট আছে যা ঘুরে দেখা যেতে পারে। যেমন-

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

১৯৯৯ সালে কক্সবাজারের চকরিয়ায় এই সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই পার্কে নানা ধরনের পশুপাখি মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করে। এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক  নামেও পরিচিত। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল বা চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনাল থেকে যে কোন যানবাহনে এখানে যেতে পারেন।

মেরিন ড্রাইভ

কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ

কক্সবাজার ভ্রমনের অন্যতম আকর্ষণ হলো মেরিন ড্রাইভ রোড (Marine Drive Road)। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রোড কক্সবাজারের কলাতলী থেকে শুরু হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। মেরিন ড্রাইভ রোডের এক দিকে রয়েছে উত্তাল সমুদ্র সৈকত আর অন্য দিকে রয়েছে সবুজে ঢাকা ছোট-বড় পাহাড়। সব মিলিয়ে এই দীর্ঘ রাস্তা আপনাকে দেবে রোমাঞ্চকর এক দারুণ অভিজ্ঞতা। 

মহেশখালী দ্বীপ

মহেশখালী দ্বীপ (Moheshkhali Island) হলো কক্সবাজারের একটি পাহাড়ি দ্বীপ। যা কক্সাবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম সাগরের মাঝে অবস্থিত। এই দ্বীপ পান, মাছ, শুটকি, চিংড়ি, লবণ ও মুক্তার জন্য বিখ্যাত। 

মহেশখালী দ্বীপ

অগ্গমেধা বৌদ্ধ বিহার

কক্সবাজার শহরে অবস্থিত ঐতিহাসিক রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায়ের ইতিহাস ঐতিহ্য এক অনন্য রূপ। আড়াই হাজার বছরে পুরাতন এই ধর্মের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। সংরক্ষিত আছে অগ্গমেধা (ক্যাং) বৌদ্ধ মন্দিরে তালপাতার উপর হাতের লেখা আড়াই হাজার বছরের পুরাতন ত্রিপিটক ও বৌদ্ধ মূর্তি। ১৭৬৮ সালের দিকে মিয়ানমার (বার্মা) থেকে আগত বৌদ্ধ ভিক্ষু অগ্গামেজুই বৌদ্ধ ধর্মদেশনা দিতে একটি মন্দির প্রতিষ্টা করেন। তার নাম অনুসারে অগ্গমেধা বৌদ্ধ মন্দির।

অগ্গমেধা বৌদ্ধ বিহার কক্সবাজার

এছাড়া ছেঁড়া দ্বীপ, শাহপরীর দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ, রামু উপজেলা, কুতুবদিয়া দ্বীপ, শাহ ওমরের সমাধি, চকরিয়া, মানিকপুরের ফজল কুকের সাতগম্বুজ মসজিদ, মাথিনের কূপ , টেকনাফ রামকোট বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন পাড়া এসবও দেখতে পারেন।  

কক্সবাজারের খাবারঃ কোথায় কি খাবেন

সামুদ্রিক মাছ হলো কক্সবাজারের প্রধান আকর্ষণ। অনেকে সমুদ্র সৈকত ঘুরেফিরে চলে আসেন কিন্তু খাবারের ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখান না। তবে কক্সবাজার গিয়ে সামুদ্রিক খাবার না খেয়ে আসলে ভ্রমণের অর্ধেকটায় অপূর্ণ রয়ে যায়। কক্সবাজার গিয়ে অন্তত রূপচাঁদা, চিংড়ি, টুনা, কাঁকড়া, স্কুইড ও সামুদ্রিক নানা মাছের শুঁটকি অবশ্যই খেতে পারেন।

কক্সবাজারের স্ট্রিট ফুড

কক্সবাজারের অনেক যায়গায়ই রূপচাঁদা, চিংড়ি, টুনা, কাঁকড়া, স্কুইড, শুঁটকি এগুলো পাওয়া যায় কিন্তু সবচেয়ে ভালটি পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে সুগন্ধা বিচে । 

এখানে রূপচাঁদা গুলো ১০০-৩৫০টাকা, চিংড়ি ৫-২০০টাকা, টুনা ১০০-৮০০, কাঁকড়া ২০-৩০০, স্কুইড ৫০-২৫০, এবং শুঁটকি গুলো বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে।

এছাড়াও কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে- 

মুন্ডি

মুন্ডি

কক্সবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী সম্প্রদায়ের খাবার মুন্ডি। বর্তমানে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে এই খাবারটি। মূলত, নুডুলস, চিংড়ি ও মুরগির স্যুপ দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে এটি ঝাল জাতীয় খাবার।

মোচা ভাত

মোচা ভাত

জেলার আঞ্চলিক ও ঐতিহ্যবাহী খাবার মোচা ভাত। বিশেষ অনুষ্ঠানে এই মোচা ভাত তৈরি করা হয়। মোচা ভাত মূলত ভাত, মাংস, বিভিন্ন ধরনের মাছ ও ডিমের সম্মিলিত একটি খাবার। একই খাবারে ভাত, মাছ, মাংস, ডিম একসাথে সবগুলো খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়।

ভর্তা

কক্সবাজারের নানা পদের ভর্তা

কক্সবাজারের পাঁচ তারকা থেকে রাস্তার পাশের হোটেলেও নানা পদের ভর্তা পাওয়া যায়। এখানের ভর্তাগুলো অন্য যেকোনো শহরের তুলনায় বেশ স্বাদের। সাধারণ আলু ভর্তা থেকে শুরু করে সামুদ্রিক আনকমন সব শুটকি ও মাছ ভর্তা। প্রত্যেকটা ভর্তার মধ্যেই যেন এক অসাধারণ স্বাদ লুকিয়ে থাকে। তাই কক্সবাজার গিয়ে কেউ ভর্তা অন্তত মিস করবেন না। 

লইট্যা ফ্রাই

লইট্যা ফ্রাই

কক্সবাজারে পাওয়া যায় বাহারি ধরনের মাছ। প্রতিবেলায় ভিন্ন ভিন্ন রকম মাছ খেয়েও এক সপ্তাহে কেউ মাছ শেষ করতে পারবেন না। সব ধরনের মাছের মধ্যে লইট্যা অন্যতম একটি স্বাদের মাছ। লইট্যা শুধু ফ্রাই হিসেবে নয়, গরম ভাত, পোলাও দিয়ে খেতে দারুণ মজা।

ছুরি শুটকি

ছুরি শুটকি

কক্সবাজারের বিচের ধারে ঘুরতে বের হলে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার চোখে পড়বে বিশাল সাইজের কিছু ছুরি মাছ। মনে হবে কেউ ফেলে রেখেন মাছ কিন্তু আদৌও তা নয়। এসব মাছ শুটকি করার জন্য শুকাতে দেওয়া হয়েছে। এখানে ছুরি শুটকি সারা দেশব্যাপী জনপ্রিয়। তাই কক্সবাজার ঘুরতে আসলে ছুরি মাছ খেতে কেউ ভুলবেন না।  

যেভাবে কক্সবাজার যেতে পারবেন

বাস

ঢাকা থেকে বেশ কিছু কোম্পানির এসি-নন এসি বাস নিয়মিত চলাচল করে। তাদের মধ্যে অন্যতম এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন, সৌদিয়া, দেশ ট্রাভেলস। শ্রেণীভেদে বাসগুলোর প্রতি সিটের ভাড়া ১,১০০ টাকা থেকে ২,৭০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেন

ঢাকা থেকে ট্রেনে সরাসরি কক্সবাজার যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে কক্সবাজার এক্সপ্রেস অথবা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে করে কক্সবাজার যেতে পারবেন। 

আবার, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে বাসে করেও কক্সবাজার যেতে পারবেন। ট্রেনের ভাড়া ৭০০ টাকা থেক ২০০০ টাকা পর্যন্ত। 

কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন

কক্সবাজারে কোথায় থাকবেন

বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার জুড়ে ৫০০টির বেশি হোটেল-রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। সব হোটেলে মিলিয়ে প্রায় এক লাখের বেশি দর্শনার্থীরা থাকতে পারেন। তবে, সিজনে লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজার ভিড় করেন তাই মেইন সিজনে গেলে হোটেল বুকিং দিয়ে যাওয়া ভালো। 

এছাড়া, অফ সিজন হলে গিয়ে দেখেশুনে হোটেল নিতে পারেন। সিজনের তুলনায় অন্য সময়ে সব হোটেলের ভাড়া প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। ভাড়া অনুসারে কক্সবাজার হোটেল/মোটেল/রিসোর্ট গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

৫, ০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা:

মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, জলতরঙ্গ, রামাদা, লং বীচ, কক্স টুডে, হেরিটেজ, হোটেল কল্লোল ইত্যাদি।

৩,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা:

হোটেল সী ক্রাউন, ভিস্তা, সমুদ্র বিলাস, সী প্যালেস, সী গাল, কোরাল রীফ, নিটোল রিসোর্ট, বীচ ভিউ, ইউনি রিসোর্ট ইত্যাদি।

১, ০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা:

উর্মি গেস্ট হাউজ, সবুজ হোটেল, কক্স প্যারাডাইজ, মোরক বাংলা, বিচ ভিউ, নীলিমা রিসোর্ট ইত্যাদি।

এসবের বাইরেও অনেক হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে। সময় থাকলে নিজের মতো করে দেখেশুনে এবং দামাদামি করে ভাড়া করত পারেন।

Related posts

বাংলাদেশে বাইক রাইড ট্রিপ এর সেরা রাস্তা

পুশরাম চন্দ্র

​’লাল’ নয় ‘সাদা কেল্লা’ ভ্রমণ

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন ‘সুন্দরবন’ ভ্রমণ

সাবরিনা শায়লা ঊষা

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More