ইভকে যখন সাপ নিষিদ্ধ ফল খেতে প্ররোচিত করেছিল, তখনই ভুয়া খবরের জন্ম হয়েছিল।
ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর বলতে এমন এক খবরকে বোঝানো হয় যা বানোয়াট, যার কোনো ভিত্তি নেই। এধরনের খবরে সাধারণত প্রকৃতপক্ষে ঘটেনি এমন ঘটনাকে ঘটেছে বলে দাবি করা হয়; অথবা, যেভাবে প্রচার করা হয়, হয়তো ঘটনাটা সেভাবে না ঘটে উল্টোভাবে ঘটে। অসত্য তথ্যকে সত্যের মতো করে উপস্থাপন করা আধেয়কেই মূলত ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর বলা হয়।
ফেক নিউজ ব্যাপারটি একেকজনের কাছে একেক রকম হতে পারে। তবে, মূলকথা যেসব ঘটনা কোনোভাবে মনগড়া বা বানোয়াট এবং যেসব ঘটনার কোনো যাচাইযোগ্য তথ্য, উৎস কিংবা বক্তব্য নেই সেটিই ফেক নিউজ। কখনো সেটি হতে পারে নিছক গুজব, কখনোবা আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য তৈরি করা ‘ক্লিকবেইট’ নিবন্ধ।
ফেক নিউজের ইতিহাসঃ ঈশ্বরের বাগানে ফেক নিউজ
অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে, ইন্টারনেটের এই যুগে ফেক নিউজ মানবজীবনকে অনেক বেশি প্রভাবিত করছে। অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম বাই-প্রোডাক্টে পরিণত হয়েছে ফেক নিউজ। ভুয়া খবরের উদ্ভব নিয়ে সম্প্রতি আগ্রহোদ্দীপক কথা বলেছেন ক্যাথলিক চার্চ-এর প্রধান ধর্মগুরু ২৬৬তম পোপ ফ্রান্সিস। বাইবেলের নিদর্শন দিয়ে তিনি বলেছেন,
“ইভকে যখন সাপ নিষিদ্ধ ফল খেতে প্ররোচিত করেছিল, তখনই ভুয়া খবরের জন্ম হয়েছিল।”
বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, আদম ও ইভকে স্বর্গের জ্ঞাণবৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেন ঈশ্বর। ইভকে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেতে প্ররোচিত করে সাপ বলে যে, এই ফল খেলে তোমরা ভালো-মন্দ বিষয়ে জ্ঞান পাবে। সাপের প্ররোচনায় ইভ নিজে সেই ফল খায় এবং আদমকেও খেতে প্ররোচিত করে। ঈশ্বর যখন জিজ্ঞেস করলেন যে, কেন তার নিষেধ অমান্য করে তারা জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়েছে, তখন ইভ বলেছিলেন, সাপটা তাদেরকে মিথ্যে বলে প্ররোচিত করেছে। ইভ-এর সেই উত্তর ঈশ্বরের মনঃপুত হয়নি। জ্ঞানবৃক্ষের ফল না খাওয়ার আদেশ অমান্য করায় মানুষকে স্বর্গচুত্য করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন তিনি।
সাপের সেই মিথ্যেকেই ভুয়া খবরের সঙ্গে তুলনা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। ভুয়া খবর কতটা গর্হিত অপরাধ সে কথাও বলতে ভোলেননি তিনি। তার মতে, ভুয়া খবর হচ্ছে- আদমকে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ানোর মতো। এই ঘটনাকে ফেক নিউজ বা ভুয়া খবরের ঐতিহাসিক দিক বলা যেতে পারে।
১৮০৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন অভিযোগ করেছিলেন,
‘সংবাদপত্র যিনি পড়েন তার চেয়ে সংবাদপত্র যিনি পড়েন না, তিনি কোনো ঘটনা সম্পর্কে অনেক ভালো তথ্য জানেন।’
ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর বলতে বোঝানো হয় পুরো মিথ্যা তথ্যের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা সংবাদ। এটির প্রচলন আগেও ছিল। যেটি নতুন এবং পরিবর্তন হয়েছে সেটি হলো, কীভাবে মানুষ ভুয়া সংবাদ গ্রহণ করছে এবং সংজ্ঞায়িত করছে। আগে প্রচলিত গণমাধ্যমের সাহায্যে ভুয়া সংবাদ ছড়ানো হতো, এখন অনলাইন ও সামাজিক গণমাধ্যমের সাহায্যে বেশি ছড়ানো হচ্ছে।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা, ভুয়া বা ফেক নিউজ ছড়ানোর বিষয়টি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। মূলত ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মেসিডোনিয়ার ছোট্ট শহর ভেলেস থেকে সংবাদভিত্তিক প্রায় ১০০ ওয়েবসাইট প্রকাশিত হতো। ট্রাম্পপন্থী ‘ফেক নিউজ’ বা ভুয়া সংবাদ প্রচার করত এসব ওয়েবসাইট। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ত এসব ভুয়া খবর।
ওই বছর অক্সফোর্ড ডিকশনারির বিবেচনায় সবচেয়ে আলোচিত শব্দ ছিল ‘ফেক নিউজ’। আর ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্যাণেই শব্দটি আলোচিত শব্দাবলির তালিকায় স্থান পেয়েছিল। ট্রাম্প সিএনএন এর প্রতিবেদক জিম অ্যাকোস্টোকে বলেছিলেন, ‘আপনি ফেক নিউজ’। এরপর টুইটারে তিনি প্রায়ই এ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন এবং কিছুদিন পর ‘ফেক নিউজ অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা করেন। এরপর জার্মানি, মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল ফেক নিউজ।
ফেক নিউজ শনাক্তকরণঃ ফ্যাক্ট চেকিং
কোনো ওয়েব সাইটের তথ্য প্রকাশিত কোনো খবরকে যদি ফেক মনে হয় তখন তা বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে শনাক্ত করা যায়। ফেক নিউজ শনাক্ত করার জন্য দরকার পড়ে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের। ফ্যাক্ট চেকিংয়ের মাধ্যমে কোনো খবর মিথ্যা কিনা তা যাচাই করা সম্ভব। আর ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য প্রথমেই আমাদের দরকার ক্রিটিকালি চিন্তা করার ক্ষমতা। কোনো ঘটনাকে খুব সূক্ষভাবে চিন্তাভাবনা করে তা ফেক কিনা বুঝার চেষ্টা করতে হবে। যে তথ্য যাচাই করতে হবে সেটা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বানান ও ভাষার দিকেও খেয়াল রাখা যেতে পারে।
বর্তমান সময়ে অনেক বেশি ফটোকার্ডের মাধ্যমে অনেক ফেক নিউজ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে। বিশেষ করে কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে কোনো ভুয়া তথ্য বা ফেক নিউজ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ‘ডিপ ফেইক’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে ছড়ানো ফেক নিউজ শনাক্তকরণের জন্য প্রথমেই ছবি বা ভিডিওটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যদি এরকম ফেক নিউজ ছড়ানো হয় তাহলে যাচাইয়ের জন্য মন্তব্যগুলো একটা মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। ছবি যাচাইয়ের জন্য গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ(Google Reverse Image Search), টিএনআই(TNI), ফটোফরেনসিকস(FotoForensics), আইএমজিঅপস(ImgOps) এবং জিওলোকেশন(Geo-location) ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফেক নিউজ ও মানুষের মনস্তত্ত্ব
মানুষ কোনো বিষয় গভীরভাবে তলিয়ে দেখার বিষয়ে উদাসীন। যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে মানুষ এখন খুব দ্রুত স্ক্রল করতে অভ্যস্ত। ফলে অধিকাংশ সময়ই তারা কোনো তথ্য দেখার পর, সেটি গভীরভাবে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করে দেখে না। এছাড়া সেই বিষয় সম্পর্কে পূর্ববর্তী ধারণা না থাকার কারণেও সঠিকভাবে সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করতে পারে না।
একটা সময় ভাবা হতো যারা ফেক নিউজে বিশ্বাস করছে তারাই মূলত এই নিউজগুলো ছড়ানোর পেছনে দায়ী। তবে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সংবাদগুলো ভুল বলে চিহ্নিত করছে, তারা সেসব সংবাদ শেয়ার দিতেই বেশি আগ্রহী।
ফেক নিউজ ছড়ানোর পেছনে অনেক সময় মিস ইনফরমেশন ইফেক্টও কাজ করে। সংবাদপত্র কিংবা টেলিভিশনে কোনো ঘটনার রিপোর্টও মিসইনফরমেশন ইফেক্টে অবদান রাখতে পারে। মানুষ প্রায় সময়েই ঘটনার মূল উৎস ভুলে যায়। এর ফলে, অনেকেই অবচেতনভাবে নিজেকে সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ভেবে থাকে। অথচ, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছে কোনো সংবাদ প্রতিবেদন থেকে।
মানুষ যত বেশি বিভ্রান্তিকর তথ্যের সান্নিধ্যে থাকে, ততোই তারা মূল ঘটনার অংশ হিসেবে সেই তথ্যটিকে বিশ্বাস করে। ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফেক নিউজের ক্ষেত্রে এই মিস ইনফরমেশন ইফেক্ট আরো বেশি কাজ করে। যারা ফেক নিউজ ছড়ায়, যাদের আসলে সেরকম লাভবান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না, তারা খুব সহজেই আবেগ তাড়িত হয়ে কোনোরকম যাচাই ছাড়াই এসব ফেক নিউজ শেয়ার করেন।
ফেক নিউজের ফলে বাংলাদেশে যত ঘটনা
বিশ্বজুড়ে ফেক নিউজের প্রভাব ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজ, ধর্ম এবং রাজনীতিতেও পড়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে তথ্যপ্রাপ্তি সহজ হওয়ার ফলে মানুষ একদিকে যেমন দ্রুত বিশ্বের যেকোনো প্রান্তর সংবাদ পাচ্ছে, তেমনি ফেক নিউজের দৌরাত্ম্যও বাড়ছে।
বিশ্বের অনেক দেশেই সাম্রদায়িক হামলা, দাঙ্গা, হত্যা এমন অনেক কিছুর জন্য দায়ী ফেইসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফেক নিউজ দায়ী।
কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ পল্লিতে হামলা
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের রামুতে হঠাৎ শোনা যায় সেখানকার একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে উত্তম বড়ুয়া নামে কোন এক বৌদ্ধ তরুণের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ইসলাম ধর্ম, ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরআন অথবা নবীকে অবমাননা করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকটি দল ১৯ টি বৌদ্ধমন্দির ধ্বংস অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। সেসময় বৌদ্ধ ধর্মাবল্মবীদের প্রচুর বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছিলো।
নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা
২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবরে ফেইসবুকে কথিত একটি ইসলাম বিদ্বেষী ছবি পোস্ট করার অভিযোগে নাসিরনগরে হিন্দুদের অন্তত ৫টি মন্দির ও বহু বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছিলো।
আর এই ঘটনায় সামনে এসেছিলো রসরাজ নামের এক ব্যাক্তির নাম। তার নামে একটি ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে যে ছবি প্রকাশের অভিযোগ উঠেছিলো, তা সেখানকার গ্রামবাসীকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল। অভিযোগ ছিল মুসলমানদের কাবা ঘরের সঙ্গে হিন্দুদের দেবতা শিবের একটি ছবি জুড়ে দিয়েছিলেন রসরাজ।
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হামলা
২০১৭ সালের নভেম্বরের ১০ তারিখ রংপুরের গঙ্গাচড়ায় এক হিন্দু যুবকের ফেইসবুক থেকে ইসলামের নবীকে অবমাননার অভিযোগে স্থানীয়ভাবে দানাবাঁধা ক্ষোভ থেকে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছিলো। ফেইসবুকের ছড়ানো ঘটনাটি গড়িয়েছিল গুলি ও একজনের মৃত্যু পর্যন্ত।
শাপলা চত্বরে নিহতের সংখ্যা বিতর্ক
২০১৩ সালের ৫ই মে ঢাকার শাপলা চত্বরে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগে বেশ কজন ব্লগারের বিরুদ্ধে কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সেদিন তাদের ঢাকা অবরোধ করেছিল হেফাজতে ইসলাম। টিভির পর্দায় সেদিন যে দৃশ্য আলোড়ন তুলেছিল তা হল শাপলা চত্বর, পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের চারপাশের রাস্তায় আশপাশে নানা ভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের দৃশ্য। এঘটনায় পুরো মতিঝিল এলাকাকে মনে হয়েছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি অঞ্চল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
ফেক নিউজের কারণে যে শুধু সহিংসতা বা হামলার মতো ঘটনা ঘটে তা নয়। অনেক সময় অনেক অদ্ভুদ কান্ডও ঘটে।
ফেক নিউজের ফলে ঘটেছে যত অদ্ভুত কাণ্ড
মাটি খুঁড়লেই সোনা অবশেষে ১৪৪ ধারা জারি
মাটি খুঁড়ে পাওয়া যাচ্ছে স্বর্ণ— এমন আজগুবি খবরে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ইট-ভাটায় প্রায় মাসখানেক ধরে ভিড় করছেন আশপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষ। দিনে দিনে অবস্থার অবনতি হলে প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে আনতে বাধ্য হয়ে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
ফেক নিউজ ও নির্মম সুইসাইড নোট
চীনে হুনান প্রদেশে ৩৪ বছর বয়সী ব্যক্তি হে। তিনি ইন্সুরেন্স জালিয়াতির জন্য গাড়ি দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে রটিয়ে দিয়েছিলেন নিজের মৃত্যুর খবর। কিন্তু সেই খবর বিশ্বাস করে ওই ব্যক্তির স্ত্রী দুই সন্তানসহ আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে এক সুইসাইড নোটে ওই ব্যক্তির স্ত্রী লিখেন, তিনি তার স্বামীর সঙ্গী হতে যাচ্ছেন। তার ইচ্ছে তারা চারজন আবার যেন এক সঙ্গে হতে পারেন।
জেলেনস্কির ও ‘ বেলি ড্যান্স’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর মস্কো ও কিয়েভ ভুয়া খবরের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। লক্ষ্যে পরিণত হন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেপ্টেম্বরে ছাড়া একটি ভিডিওতে দেখানো হয় জেলেনস্কি আঁটোসাঁটো সোনালি পোশাকে ‘বেলি ড্যান্স’ করছেন। তবে ডয়চে ভেলে পরীক্ষা করে দেখেছে ভিডিওটি ডিপফেইক। একজন নৃত্যশিল্পীর মুখের জায়গায় জেলেনস্কির মুখ বসিয়ে দেয়া হয়।
সুইডেনে ‘সেক্স টুর্নামেন্ট’
যৌনক্রিয়াকে ক্রীড়া হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে সুইডেন, এমন একটি ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে। দেশটি সেক্স টুর্নামেন্টের আয়োজন করছে বলেও গুজব ছড়ানো হয়। এমনকি টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো নামি গণমাধ্যমও এই ফাঁদে পড়ে খবর প্রকাশ করে। একটি ভুয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইডেন একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে চায় যেখানে অংশগ্রহণকারীরা একে অন্যের সাথে দিনে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত যৌনক্রিয়া করবে এবং তাদের মধ্য থেকে সেরাকে বেছে নেয়া হবে।
কেনিয়ায় ব্যবহৃত কনডম বিক্রির
বছরের শুরুর দিকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবিতে দাবি করা হয়, ব্যবহৃত কনডম পরিষ্কার করে নতুনভাবে বিক্রি করায় কেনিয়ায় ছয় ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় এই দাবি মিথ্যা। ২০২০ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন লাখ ২৪ হাজার ব্যবহৃত কনডম পরিষ্কার করে বিক্রি করা হয়েছে, তবে সেটি কেনিয়ায় নয় ভিয়েতনামে। তার সাথে ছয় শিক্ষার্থী নন, জড়িত ছিলেন একটি ছোট কারখানার কর্মীরা।
মানুষের বুকের এক্সরে ছবিতে তেলাপোকা
কেনিয়া নিয়ে আরেকটি ভুয়া খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা লিখেছেন, কেনিয়ায় একজনের বুকের এক্স-রে’র ছবিতে জীবন্ত তেলাপোকা ধরা পড়েছে। কিন্তু রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় এই সংক্রান্ত ছবিটি মূলত এডিট করা। মূল ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল রেডিওলজি সংক্রান্ত একটি জার্নালে।
ছবি : বুকের এক্সরে ইমেজে তেলাপোকার ছবি
বাইডেন ও ডায়াপার বিতর্ক
২০২৩ সালের জুনে কিছু দেশে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মেঝেতে পড়ে আছেন, আর, তার ট্রাউজারের ভেতর থেকে ডায়াপার উঁকি দিচ্ছে। রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় ছবিটি আসলে জোড়াতালি দেয়া। মূলত মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে বাইডেন পড়ে যান। সেখানে আসল ছবিতে ডায়াপার ছিল না।
ফেক নিউজঃ বাংলাদেশ নিয়ে ভারতে যত অদ্ভুত কান্ড
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফেক নিউজ ছড়ায় ভারত। তবে, বাংলাদেশকে নিয়ে যেনো একটু বেশিই ফেক নিউজ ছড়াতে পছন্দ করে ভারতীয় জনগণ ও মিডিয়া। তবে বর্তমান সময়ে তার মাত্রাও যেনো একটু বেড়ে গিয়েছে।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সীমানা ছাড়িয়ে ভারতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে একের পর এক গুজব। ছড়িয়ে পড়া এসব গুজবের মধ্যে ছিলো
১। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার নামে ভুয়া খোলা চিঠি,
২। মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ পুত্রের সন্ধানে মানববন্ধন করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার,
৩। ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার ভুয়া খবর,
৪। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভিত্তিহীন দাবি,
৫। ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি,
৬। পাকিস্তানি জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি,
৭। নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী হিসেবে প্রচার,
৮। বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়া গুজব,
৯। বাংলাদেশে মুসলিমদের হামলায় হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবিতে ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার,
১০। শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি, এবং
১১। বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা জারির বিভ্রান্তিকর খবর।
ফেক নিউজ ছড়ানোর কারণ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কারণে ফেক নিউজ ছড়ানো হয়ে থাকে। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কতোগুলো কারণ রয়েছে যেমন, কারও প্রতি বিদ্বেষ-প্রতিহিংসাপরায়ণতা, সবার আগে তথ্য পৌঁছানোর প্রযোগিতা, হিরোইজম, কোনো তথ্য ক্রস চেক করার মতো জ্ঞান না থাকা, অন্যের মাধ্যমে প্ররোচিত হওয়া ইত্যাদি।
তবে দেশ ভেদে যে এটা আলাদা হতে পারে সেটা বিবিসির ‘বিয়ন্ড ফেক নিউজ’ নামের এক গবেষণায় দেখিয়েছে। তারা ভারত, কেনিয়া এবং নাইজেরিয়ায় এই গবেষণা চালান। ভারতের জনগণ হিন্দুত্ববাদ আর জাতীয়তাবাদের মতো বিষয় নিয়ে ফেক নিউজ ছড়ায়। তবে কেনিয়া ও নাইজেরিয়াতে ফেক নিউজ ছড়ায় কোনো ব্রেকিং নিউজকে, কে কতো দ্রুত পরিচিত মানুষদের কাছে পাঠাতে পারে সেই চিন্তা থেকে।
ফেক নিউজ যেভাবে ছড়ায়
ছবি ও ভিডিওতে কারসাজি
ফেক নিউজ ছড়াতে বহুল ব্যবহৃত অপকৌশল হচ্ছে ছবি বা ভিডিওতে কারসাজি করা। বিকৃতি (Manipulation), মিরর ইফেক্ট (দিক বদলে দেয়া), ক্রোপ এবং কোলাজ (ছবি বা ভিডিওর কিছু অংশ কেটে অন্য ছবি বা ভিডিওর সাথে জুড়ে দেয়া) ইত্যাদি অপকৌশলে এধরণের কারসাজি করা হয়।
ছবি নিয়ে কারসাজির খেলায় সাধারণত নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা স্থানের পুরনো কোনো ছবিকে ফটোশপের মত বিভিন্ন সফটওয়্যার দিয়ে বিকৃত কিংবা একাধিক ছবির সমন্বয়ে নতুন আরেকটি ছবি তৈরি করা হয়। ভিডিওতে কারসাজির ক্ষেত্রে একাধিক ভিডিও কাটছাঁট করে কিংবা এক ভিডিওর সাউন্ড অন্য ভিডিওতে জুড়ে দেয়া হয়।
বানোয়াট ছবি ও ভিডিও
আজকাল প্রায়ই নায়ক-নায়িকা, রাজনৈতিক নেতা এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে নানান বিব্রতকর ছবি, ভিডিও এবং অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের আগ্রহ এবং আলোচনা-সমালোচনার ফলে মুহূর্তেই এসব ঘটনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রিন স্ক্রিন, ডিপ ফেক এবং বিভিন্ন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তির সহায়তায় এ ধরণের কাজগুলো এতটা সূক্ষ্মভাবে করা সম্ভব যে, সেটি কি বাস্তব না বানোয়াট, সাধারণ দৃষ্টিতে তা বোঝার কোনো উপায় থাকে না।
ছবি ও ভিডিওর অসঙ্গত উপস্থাপন
ছবি ও ভিডিওর বিকৃত উপস্থাপন হচ্ছে ফেক নিউজ ছড়ানোর সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি। এক্ষেত্রে, একটি বাস্তব ছবি বা ভিডিওর প্রকৃত প্রেক্ষাপট বা সংশ্লিষ্ট তথ্য গোপন করে ভিন্ন কোনো প্রেক্ষাপটে ছবি বা ভিডিওটি ব্যবহার করা হয়।
তথ্যের বিকৃতি ও বিভ্রাট
তথ্যের বিকৃতি বা বিভ্রাট ফেক নিউজ ছড়ানোর প্রাচীনতম অপকৌশল। প্রযুক্তিগত বিপ্লবের পূর্বে গত শতাব্দীতেও মূলত তথ্য বিকৃত করে এবং বিভ্রাট সৃষ্টি করে অপপ্রচার চালানো হতো। ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমে সংবাদ প্রচারে সম্পাদনা এবং সেন্সরশিপের তেমন বালাই না থাকায় গুজব ছড়াতে এখনো তথ্যের বিকৃতি ঘটানো হয়।
ভুয়া ব্যক্তি ও উক্তি
ফেক নিউজকে পাঠক-দর্শকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে অপপ্রচারকারীদের আরেকটি কৌশল হচ্ছে ভুয়া বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি করা। আর তা সম্ভব না হলে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে বানোয়াট উক্তি প্রচার করা।
গণমাধ্যমের অপব্যবহার
অধিকাংশ দর্শক-পাঠকদের মাঝেই গণমাধ্যমকে অন্ধভাবে বিশ্বাসের প্রবণতা রয়েছে। গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত একদল অসাধু লোক এই প্রবণতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মূলধারার গণমাধ্যমেই সুকৌশলে সংবাদের আড়ালেো ফেক নিউজ প্রচার করে।
অপপ্রচারকারীদের আরেকটি কৌশল হচ্ছে গণমাধ্যমকে ভুল ও মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক সংবাদ প্রচারের চেষ্টা চালাতে গিয়ে গণমাধ্যমগুলো প্রায়ই বিভিন্ন উৎস বা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য যথাযথ মূল্যায়ন না করেই সংবাদ প্রকাশ করে প্রকারান্তে ফেক নিউজ ছড়িয়ে দেয়।
ফেক নিউজ ও সামাজিক মাধ্যম
সোশ্যাল মিডিয়াতে একদিকে যেমন মানুষের স্বার্থে কাজ করেন এমন সংগঠন ও গোষ্ঠী জনসংযোগ, প্রচার ও জনমত সংগঠিত করার কাজে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে এটিকে ব্যবহার করেন। অন্যদিকে আরেকদল সমাজে বিভেদ, বৈষম্য এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির কাজে এই গণমাধ্যমটিকে ব্যবহার করেন। ফেক নিউজকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বে যতো হামলা, দাঙ্গা হয়েছে তার বেশির ভাগই প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বিশেষ করে বললে, ফেসবুক এবং টুইটারে। করোনার (কোভিড-১৯) সময়ে যতো ফেক নিউজ হয়েছে তার সবই ছড়িয়েছে ফেসুবকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে। ফেসবুকে কোনো তথ্য আসার পরে তা যদি কারো মনকে কোনোভাবে ম্যানিপুলেট করতে পারে তাহলে কোনো বাছ-বিচার ছাড়াই মানুষ একের পর এক ছড়িয়ে দিতে থাকে।
প্রযুক্তির মাধ্যমেই চাইলেই ফেক নিউজকে অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। মানুষ সচেতন হলেও কোনো ঘটনা ফেক কিনা তা যাচাইয়ের জন্য সেই প্রযুক্তিরই দারস্থ হতে হবে মানুষকে। ফেসবুক সম্প্রতি ভুয়া খবর ছড়ানো রোধ করতে নতুন প্রযুক্তি হাতে নিয়েছে। এখন থেকে কোনো ইউজার কোনো খবর ভুয়া মনে হলে তিনি সেটি ফেসবুকে রিপোর্ট করতে পারবেন। এরপর ফেসবুক সেই খবরের যথার্থতা ‘থার্ড পার্টি’র মাধ্যমে যাচাই করে দেখবে। যাচাইয়ের পর যদি খবরটি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয় তাহলে ফেসবুকে লিংকটির সঙ্গে ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হবে।
ফেসবুকের পাশাপাশি ইন্টারনেটে ‘ভুয়া খবর’ ছড়ানো রোধে উদ্যোগ নিয়েছে গুগল। ভুয়া নিউজ সাইটগুলো যেন ভুল তথ্য দিয়ে অর্থ আয়ের সুযোগ না পায় সেজন্য বিজ্ঞাপনগ্রহিতাদের কন্টেন্ট মূল্যায়নের ঘোষণা দিয়েছে তারা। তবে ফেসবুক বা গুগলের উদ্যোগ ভুয়া খবর কতটা প্রতিরোধ করতে পারবে সেটা নিয়েও সংশয় থেকে যায়। কারণ এরকম উদ্যোগ নেওয়ার পরেও যে ফেক নিউজের সংখ্যা কমেছে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই মাত্রা আরো বেড়ে গিয়েছে বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরিতে।
রেফারেন্সঃ
- https://pibelearning.gov.bd/%E0%A6%AD%E0%A7%81%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%96%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A6%BF/
- https://archive.roar.media/bangla/main/science/misinformation-effect/amp
- https://www.dw.com/bn/%E0%A7%A8%E0%A7%A6%E0%A7%A8%E0%A7%A9-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AF%E0%A6%A4-%E0%A6%85%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A7%81%E0%A6%A4-%E0%A6%AD%E0%A7%81%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%96%E0%A6%AC%E0%A6%B0/g-67843791
- https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-634556
- https://www.bbc.com/bengali/news-46176003
- https://www.bbc.com/bengali/news-46126648.amp
- https://www-prothomalo-com.cdn.ampproject.org/v/s/www.prothomalo.com/amp/story/opinion/column/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%95-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%89%E0%A6%9C?amp_gsa=1&_js_v=a9&usqp=mq331AQIUAKwASCAAgM%3D#amp_ct=1734898087882&_tf=From%20%251%24s&aoh=17348979612049&referrer=https%3A%2F%2Fwww.google.com&share=https%3A%2F%2Fwww.prothomalo.com%2Fopinion%2Fcolumn%2F%25E0%25A6%25B8%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A7%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A8-%25E0%25A6%25AB%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%2595-%25E0%25A6%25A8%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2589%25E0%25A6%259C
- https://www.talkofthetime.com/feature-opinion/news/88
- https://www.risingbd.com/amp/news/349281
- https://www.bbc.com/bengali/articles/ce55ypl580yo
- https://mzamin.com/news.php?news=52295