Image default
যাপন

ইম্পোস্টার সিনড্রোম কীভাবে সফলতার পথে বাধা সৃষ্টি করে?

জীবনে সাফল্য ধরা দেওয়ার পর মনে হয় ভাগ্যক্রমে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে আসলে আপনি যোগ্য নন? ৭০ শতাংশ মানুষ তাদের জীবদ্দশায় কোনো না কোনো পর্যায়ে এরকম ভাবনায় জর্জরিত হয়, এমনকি বিশ্ববিখ্যাত সেলিব্রেটিরাও। এর পেছনে রয়েছে যে কারণ তা হল ইম্পোস্টার সিনড্রোম।

ইম্পোস্টার(Imposter) হল ছদ্মবেশী, ভণ্ড ও প্রতারক; আর সিনড্রোম (Syndrome) মানে হলো লক্ষণ। অর্থাৎ, ইম্পোস্টার সিনড্রোম হলো—এমন এক ধরনের মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষ তার নিজের অর্জন, সাফল্য, যোগ্যতা ও খ্যাতিকে সন্দেহের চোখে দেখে। এমনকি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করে। তার মনে হতে থাকে নিছকই ভাগ্যগুণে সে এখানে অবস্থান করছে। সে যে যোগ্য নয়, এই বিষয়টি সবার সামনে ক্রমশ প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে বা যাবে। এই মানসিক অবস্থার নাম ইম্পোস্টার সিনড্রোম।

ইম্পোস্টার সিনড্রোম এর প্রতীকী ছবি

ইম্পোস্টার সিনড্রোম কেন হয়?

‘ইম্পোস্টার সিনড্রোম’ শব্দগুচ্ছটি প্রথম সবার সামনে আনেন মনস্তত্ত্ববিদ সুজানা ইমস এবং পলিন রোজ ক্ল্যান্স।

১৯৭৮ সালে তাদের ‘The Impostor Phenomenon in High Achieving Women: Dynamics and Therapeutic Intervention’ প্রবন্ধে ইম্পোস্টার সিনড্রোম নিয়ে সর্বপ্রথম আলোচনা করা হয়। তাঁরা বলেন, অনেক সাফল্য পাওয়া নারীর মধ্যে এমন উপস্বর্গ দেখা গিয়েছে। তাঁরা মূলত সেসব নারীদের নিয়েই গবেষণা করেন। পরে অবশ্য, বিভিন্ন রিসার্চ থেকে জানা যায় যে, শুধু নারী নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই ইম্পোস্টার সিনড্রোমের মধ্যে দিয়ে যায়।

ইম্পোস্টার সিনড্রোমের পেছনে বেশ কিছু মূল কারণ থাকতে পারে, যা একজন ব্যক্তির মধ্যে এই অনুভূতি তৈরি করতে সহায়ক হয়। যেমন—

ডিপ্রেশন (হতাশা) 

হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই নিজেদের অযোগ্য মনে করেন এবং আত্মসম্মানবোধের অভাব অনুভব করেন, যার ফলে তারা তাদের জীবনের সাফল্য কিংবা অর্জনে আনন্দ খুঁজে পান না। এই হতাশা তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের সংকট ও অযোগ্যতার অনুভূতি সৃষ্টি করে, যা ইম্পোস্টার সিনড্রোমের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

অবাস্তব প্রত্যাশা 

ইম্পোস্টার সিনড্রোমের অন্যতম প্রধান কারণ হলো নিজের প্রতি অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত প্রত্যাশা। নিখুঁত হওয়ার প্রবণতা বা ব্যর্থতা মেনে নিতে না পারার মানসিকতা, ব্যক্তিকে নিজের সাফল্যের তুলনায় অন্যদের অর্জনকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করাতে পারে, যা তার মধ্যে অযোগ্যতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।

তুলনামূলক চিন্তাভাবনা 

নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করার প্রবণতা একজন ব্যক্তির মনে গভীরভাবে একধরনের অযোগ্যতার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত, যখন কেউ নিজেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বা সফল ব্যক্তিদের সঙ্গে তুলনা করে, তখন মনে হতে পারে যে সে কখনোই তাদের সমকক্ষ হতে পারবে না।

নেতিবাচক আত্মকথন 

যারা নেতিবাচক আত্মকথনের শিকার, তারা সাধারণত নিজেদের দুর্বলতার ওপর বেশি মনোযোগ দেন এবং সামান্য ভুল বা ব্যর্থতার জন্য আত্মসমালোচনা করেন। এই মানসিকতা আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং ইম্পোস্টার সিনড্রোমকে আরও তীব্র করে তোলে।

বাহ্যিক কারণ 

সমাজের প্রত্যাশা, লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা এবং সাংস্কৃতিক নিয়ম-কানুনও অনেক সময় ব্যক্তির মনে অযোগ্যতার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। এসব কারণে অনেকে মনে করেন যে, তারা নির্দিষ্ট মানদণ্ডের উপযোগী নন বা সমাজের নির্ধারিত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন না।

এই সকল কারণ একত্রে মিলে একজন ব্যক্তির মধ্যে ইম্পোস্টার সিনড্রোমের অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে, যা তার আত্মবিশ্বাস ও কর্মদক্ষতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ইম্পোস্টার সিনড্রোমের লক্ষণ

‘দ্য সিক্রেট থটস অব সাক্সেসফুল উইমেন’ বইয়ের লেখক ভ্যালেরি ইয়াং একজন ইম্পোস্টার সিনড্রোম বিশেষজ্ঞ। ইম্পোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আচরণে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য তিনি খুঁজে পেয়েছেন—

পারফেকশনিস্ট  (The Perfectionist)

পারফেকশনিস্ট মানুষজন তাদের কাজেকর্মে সবকিছুতেই নিখুঁত হতে চেষ্টা করেন। ৯৯% শতাংশ সফল হলেও তারা নিজেকে ব্যর্থ মনে করেন। নিজেদের দোষারোপ করে তাদের কর্মদক্ষতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করতে থাকেন। কারণ ১০০% পারফেকশন না থাকলে সেই সাফল্যকে তারা সাফল্য হিসেবে মানতে চান না।

সহজাত প্রতিভাবান  (The Natural Genius) 

কিছু মানুষ আছে, যারা জন্ম থেকেই প্রতিভাবান। এমন ন্যাচারালি জিনিয়াস মানুষজনের মধ্যে মাঝে মাঝে একটা ধারণা জন্মায় যে, কোনো কাজ তারা একবারের চেষ্টাতেই পারবেন। কোনো কাজে তাদের বেশি পরিশ্রম দিতে হবে না। 

কিন্তু কোনো কাজে তারা যদি সেটা করতে না পারেন বা অন্য কথায়, যদি তারা কোনো কিছু আয়ত্ত করতে দীর্ঘ সময় নেন, তবে তারা লজ্জা বোধ করেন। তখন তাদের মধ্যে ইম্পোস্টার সিনড্রোম দেখা দেয়।

সুপারম্যান বা সুপারওম্যান  (The Superman/Superwoman)

এই ধরনের  ব্যক্তিরা নিজেদের জীবনের সব ক্ষেত্রেই সাফল্য দেখতে বদ্ধপরিকর। আশেপাশের মানুষের চেয়ে তারা সর্বদা একধাপ বেশি পরিশ্রম করতে চান, শুধু এ কারণে যে, তাদের প্রমাণ করতেই হবে, তারা অযোগ্য নন। একজন ইম্পোস্টার নই আমি—শুধু এ ধারণাটি প্রতীয়মান করার জন্য তারা সবসময় নিজেদের ওপর চাপ তৈরি করতে থাকেন।

একাকী মননের ব্যক্তি  (The Soloist)

‘আমার কারও সাহায্যের দরকার নেই আমি সব নিজেই করতে পারবো’—এই ধরনের স্বাধীনচিন্তা থাকা ভালো। পরনির্ভর না হয়ে নিজের প্রতি দায়িত্ব নেওয়া। কিন্তু যদি কেউ সর্বদা অন্যের সাহায্যকে প্রত্যাখ্যান করে সর্বদা একলা চলো নীতিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকেন এইভেবে যে, কারও কাছে সাহায্য চাইলে তাকে অন্যেরা প্রতারক বা ব্যর্থ মনে করতে পারে। এই ভয়ে সে নিজেকে সাহায্য চাওয়া থেকে বঞ্চিত রাখেন তবে বিষয়টি ইম্পোস্টার সিনড্রোম এর ইঙ্গিত দেয়।

বিশেষজ্ঞ  (The Expert) 

বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা যেকোনো কাজে হাত দেওয়ার আগে সে সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। আর তারা মনে করেন, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের সব তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতেই হবে। কর্মক্ষেত্রে বা কোনো মিটিং চলাকালীন তারা কোনো রকম প্রশ্ন করেন না। 

কারণ, তাদের ভেতর ভয় কাজ করে, তারা ভাবে যদি ওই প্রশ্ন তাকে অন্যদের সামনে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দেয় বা সবাই তাকে বোকা মনে করেন। গবেষণায় জানা যায় ৭০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময় ইম্পোস্টার সিনড্রোমে ভোগেন। 

ইম্পোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত বিখ্যাতরা

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বা নানান পেশার মানুষ যেমন- মায়া অ্যাঞ্জেলো, মিশেল ওবামা, অস্কার জয়ী অভিনেতা টম হাংকস বা পেনেলোপ ক্রুজ—যারা নিঃসন্দেহে সফল ও বিখ্যাত। অথচ, তারা প্রত্যেকেই এই কথিত ইম্পোস্টার সিনড্রোম এর সাথে লড়াই করেছেন।

নিজের যোগ্যতা বা দক্ষতা নিয়ে সংশয় বিখ্যাত ব্যক্তিদের অনেকের মধ্যেই ছিল বা আছে। আলবার্ট আইনস্টাইন তার এক বন্ধুকে বলেছিলেন যে, তাকে নিয়ে যে প্রশংসা করা হয় সেটি তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।

আইন্সটাইনের উক্তি

দু বারের অস্কার জয়ী এবং অন্তত সত্তরটি সিনেমার তারকা অভিনেতা টম হাংকস ২০১৬ সালে অনুধাবন করেন যে পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই আত্ম-সংশয়ের সাথে লড়াই করেছেন তিনি। টম এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, 

“আমি কী করেছি সেটা বিষয় নয়। বিষয়টা হলো কিভাবে এখানে এলাম, যখন মনে হয় আসলে আমি একজন প্রতারক এবং এটিই সব কিছু নিয়ে যায় আমার কাছ থেকে। 

আর সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা বলেছেন ইম্পোস্টার সিনড্রোম তাকে রীতিমত বিকল করে দিয়েছে, কারণ এটি নিজের ধ্যান-জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাসকে আক্রান্ত করে।

কর্মক্ষেত্রে নারীর ইম্পোস্টার সিনড্রোম

নারীরা, বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা মারাত্মকভাবে ইম্পোস্টার সিনড্রোমের শিকার হয়ে থাকেন। ঠিক একইভাবে এলজিবিটিকিউ কিংবা আদিবাসী জনগণও এই সিনড্রোমে ভোগার ঝুঁকিতে থাকেন। এবারে এর কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক-

রোল মডেল খুঁজে না পাওয়া

নারীরা কোনো রোল মডেল খুঁজে পাচ্ছেন না। অর্থাৎ, তাদের সামনে অনুসরণীয় কোনো নারী নেই। থাকলেও সেটা প্রচারের অভাবে বা সংখ্যার বিচারে প্রভাব বিস্তারকারী কিছু হতে পারছে না। এর ফলে কোনো একজন নারী সম্পূর্ণভাবেই তার নিজস্ব মেধা, শ্রমের মাধ্যমে যখন খুব উঁচু একটি পদে আসীন হচ্ছেন, তখন তিনি একধরনের অনিরাপদবোধ করতে শুরু করেন। 

কারণ, পুরুষ যেখানে তার চারপাশে অসংখ্য রোল মডেল বা তারই মতো প্রচুর ‘হাই অ্যাচিভার’ দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে নারী নিজেকে আবিষ্কার করছেন একদম একাকী। কর্পোরেট দুনিয়ায় তিনি যত উপরে উঠছেন, লৈঙ্গিক বিচারে তিনি নিজের সহচারী খুঁজে পাচ্ছেন না বললেই চলে। 

বর্ণবাদী মনোভাব এবং লিঙ্গভিত্তিক চিন্তাভাবনা 

এই যখন শ্বেতাঙ্গ নারীদের অবস্থা, তখন ওম্যান অফ কালারস বা কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ঠিক কোথায় আছেন, বোঝাই যাচ্ছে। বর্ণবাদী মনোভাব এবং লিঙ্গভিত্তিক তথাকথিত চিন্তাভাবনার প্রচার-প্রসার নারীদের ইম্পোস্টার সিনড্রোমের শিকার হওয়ার আরেকটি বড় কারণ। 

নারীরা গণিতে বা বিজ্ঞানে ভালো না, নারীদের বুদ্ধিমত্তা কম, আবেগ দিয়ে চিন্তা করার কারণে নারীরা বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, আদিবাসী এবং কৃষ্ণাঙ্গরা খুবই অলস, মাথামোটা এবং তাদের মাঝে ঐক্যের অভাব ইত্যাদি প্রচলিত ধারণাগুলো বহুল চর্চার ফলে মানুষের মনে পাকাপাকিভাবে অবস্থান করে নিয়েছে। এগুলোও নারীদের নিজেদেরকে ইম্পোস্টার ভাবতে বাধ্য করে।

বিশ্ব জুড়ে নারীদের রূপের প্রশংসা

সারা বিশ্ব জুড়ে নারীদের রূপের প্রশংসা একটি তুমুল জনপ্রিয় চর্চা। পশ্চিমা দেশগুলো জ্ঞান-বিজ্ঞানে আকাশচুম্বী খ্যাতি অর্জন করলেও নারীদের প্রতি তাদের মনোভাব সেই তুলনায় খুব একটা প্রশংসনীয় নয়। 

বাহ্যিক রূপ কিংবা সৌন্দর্যের প্রশংসা করা হয় দু’ভাবে। প্রথমত, একজন নারীর চেহারার গুণকীর্তন করে তাকে মোহিত করার চেষ্টা করা। দ্বিতীয়ত, তাকে আকারে ইঙ্গিতে এটা বোঝানো যে, আপনার সাফল্য, অর্জন সবই আপনার শারীরিক সৌন্দর্যের দান। কর্মক্ষেত্রে এ বিষয়টি এত বেশি প্রচলিত যে, নারীরা নিজেরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটিকেই সত্য বলে বিশ্বাস করা শুরু করেন; বিশেষত তিনি যদি সত্যিই রূপবতী হয়ে থাকেন। অর্থাৎ দক্ষতা, জ্ঞান, মেধা ইত্যাদির প্রশংসা না করে রূপের প্রশংসা করার প্রথাও নারীদেরকে ইম্পোস্টার ভাবতে প্রেরণা যোগায়।

কিছু সময় শুধু নারী হওয়াই যখন সমস্যা 

স্রেফ নারী হওয়াই কখনও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নারী-পুরুষ সমতা রক্ষা করতে গিয়ে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কখনও কখনও ইচ্ছাকৃতভাবেই নারীদেরকে নিয়োগ প্রদান করে। এখানে লক্ষ রাখা দরকার যে, এই কাজটি কেউ কেউ করে থাকে মানে এই নয় যে, এটিই সর্বক্ষেত্রের স্বীকৃত বাস্তবতা। 

নারীদের এহেন নিয়োগযোগ্য নারীদেরকেও একই কাতারে ফেলতে প্রলুব্ধ করে। নিজের যোগ্যতা, মেধা, প্রতিভা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার পরও অনেক নারীই বিশ্বাস করেন যে, তিনি শুধু আজ নারী বলেই এ জায়গায়। প্রতিষ্ঠানের নারী-পুরুষ ভারসাম্য রক্ষা নীতির আশীর্বাদেই তিনি আজকের অবস্থানে।

ইম্পোস্টার সিন্ড্রোমে ভোগা নারী

ইম্পোস্টার সিনড্রোম থেকে মুক্তির উপায়

সহানুভূতিশীল হওয়া

নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হন; আপনি একা নন। আপনার অনুভুতিগুলো প্রিয়জনদের সঙ্গে শেয়ার করুন। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন। নিজের কাজকে নিজে স্বীকৃতি দিন। তাহলে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। নিজের অর্জন ও যোগ্যতার একটি তালিকা তৈরি করুন। ভাগ্যই আপনার সব অর্জনের মূলে কিন্তু যখন কাগজে আপনার অর্জনগুলো লিখবেন তখন মনে হবে এ চিন্তা হাস্যকর।

ভুল হলে নিজেকে ক্ষমা করুন

যারা পারফেকশনিস্ট তাদের একটা ভালো দিক হলো—তারা কোনো কাজ অতি যত্ন সহকারে করতে চান। নিখুঁত করে তুলতে নিয়মিত পরিশ্রম করেন। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে যে , এই কাজের জন্য একেবারে যন্ত্রের মতো অমানবিক ভাবে খাটলে চলবে না। রুটিনের বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে একটু রিলাক্স ভাবে কাজ করবে হবে । আর কাজে কোনো ভুল হলে নিজেকে ক্ষমা করতে হবে।

ব্যর্থতাকে মেনে নিতে শিখুন

সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থতাকেও মেনে নিতে শিখুন। কারণ সাফল্যের সিঁড়িই হল ব্যর্থতা। নিজেকে নিজে মূল্যায়নের আগে অন্যের ফিডব্যাক গ্রহণ করুন। কারণ অন্যের চোখে দেখা নিজেকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। সবারই আলাদা আলাদা ক্ষমতা সম্পন্ন । তাই অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে নিজের পূর্বের কাজের সঙ্গে বর্তমান কাজের দক্ষতার তুলনা করুন ।

নিজেকে কৃতিত্ব দিন

মনে রাখবেন, আপনার জীবনের একটি মহান উদ্দেশ্য রয়েছে, আপনার জীবনে আপনিই সেরা। আর আপনি নিজেকে যতটা ভাবেন, তার চেয়েও বেশি ক্ষমতা আপনার আছে। নিজেকে আপনি যতটুকু স্মার্ট মনে করেন, তার চেয়েও অনেক বেশি স্মার্ট আপনি। আর যতটুকু কৃতিত্ব নিজেকে দিয়ে থাকেন তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি কৃতিত্ব ধারণের অধিকার আপনার রয়েছে। তাই এই কথাগুলো আপনি নিজেকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন আপনার চেয়ে আপন কেউ নেই আপনার, যে আপনাকে উজ্জীবিত করে তুলতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী নারী-পুরুষ

পরিশেষে, ইম্পোস্টার সিনড্রোম যদি যথাযথভাবে মোকাবিলা করা না হয়, তবে এটি কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস ও কর্মদক্ষতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে নিজের চিন্তাভাবনাকে ইতিবাচকভাবে গঠন করা, বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করা, শক্তিশালী সহায়ক নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং কর্মপরিবেশে মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমে এই সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। এভাবে, ব্যক্তি ইম্পোস্টার সিনড্রোমের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তার কর্মজীবনে উন্নতি করতে সক্ষম হবে।

তথ্যসুত্র:

Related posts

ইনডোর প্ল্যান্ট নাকি জাদুর কাঠি?

admin

ত্বকের ধরণ অনুযায়ী কোন রঙের পোশাক সবচেয়ে ভালো ?

২০২৫ বসন্তে ফ্যাশনে নতুন ট্রেন্ড

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More