আটলান্টিকের বুকে যেন মুক্তোর সারি! সাদা বালির সৈকত, নীল জল আর সবুজ দ্বীপ – রূপকথার জগৎ যেন জীবন্ত, নাম তার বাহামা।
আটলান্টিক মহাসাগরের বুকজুড়ে সাদা মুক্তোর মতো ছড়িয়ে আছে চমৎকার এক দ্বীপরাষ্ট্র, নাম বাহামা দ্বীপপুঞ্জ। এই দ্বীপরাষ্ট্রটি তার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আর মনোমুগ্ধকর পরিবেশের জন্য বিশ্বজুড়ে ‘পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য’ হিসাবে সুপরিচিত। আর দশটি দ্বীপের চেয়ে বাহামা দ্বীপপুঞ্জের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য একেবারে আলাদা।
শুধু প্রাকৃতিক রূপ-লাবণ্যই নয়, প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্যপূর্ণ সংস্কৃতি আর বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা বাহামাকে করেছে আরও আকর্ষণীয়। কী সেই বৈশিষ্ট্য, যা বাহামা দ্বীপপুঞ্জকে করেছে ‘পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য’? এখানে কি আসলেই পাওয়া যায় স্বর্গীয় অনুভূতি? সবই জানবো আজকের লেখায়।
দেশ | বাহামা দ্বীপপুঞ্জ |
আয়তন | ১৩,৮৭৮ বর্গ কিলোমিটার |
জনসংখ্যা | ৩,০৭,৪৫১ জন |
সরকারি ভাষা | ইংরেজি |
প্রধান মুদ্রা | বাহামিয়ান ডলার |
সময় অঞ্চল | GMT-5 |
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর | লিন্ডেন পিন্ডলিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর |
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের ভৌগোলিক পরিচিতি, আয়তন ও জনসংখ্যা
বাহামাস দ্বীপপুঞ্জ (The Bahamas) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে, কিউবা ও হিস্পানিওলা দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত প্রায় ৭০০টি দ্বীপ ও হাজার খানেক “কি” (Cay – এক ধরনের ক্ষুদ্র বালুময় দ্বীপ) নিয়ে গঠিত একটি দ্বীপপুঞ্জ।
এখানে নীল সমুদ্রের পাশে অনেক সুন্দর সুন্দর সমুদ্রসৈকত অবস্থিত। বাহামা এর বীচগুলো বিখ্যাত এর নীল রঙের জন্য। নীলের এমন সৌন্দর্য অন্য কোথাও চোখে পড়েনা। এর কারণ হল, পৃথিবী’র সবচে’ বড় প্রবাল প্রাচীর বাহামায়। প্রবাল প্রাচীর বা দ্বীপের পানি এমনিতেই অনেক নীল হয়। আর নাসা’র সূত্র মতে বাহামার পানি সবচেয়ে পরিস্কার। বাহামার সমুদ্রে খালি চোখেই পানির ২০০ ফুট পর্যন্ত দেখা যায়।
দ্বীপরাষ্ট্রটির মোট আয়তন ১৩,৯৪০ বর্গকিলোমিটার, যেখানে প্রায় ৪ লক্ষ ১০ হাজার মানুষের বাস। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৯ জন। জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো আফ্রিকান বংশোদ্ভূত (প্রায় ৯০%)। বাহামার রাষ্ট্রীয় ভাষা ইংরেজি হলেও স্থানীয়ভাবে বাহামিয়ান উপভাষা বেশ প্রচলিত। দেশটির রাজধানী নাসাউ (Nassau)। তবে, একে নিউ প্রভিডেন্সও বলা হয়।
ম্যাপ
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। প্রাক-কলম্বাস যুগে, এখানে লুকায়ান নামে পরিচিত আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। ধারণা করা হয়, তারা প্রায় ৫০০ খ্রিস্টাব্দে হিস্পানিওলা ও কিউবা থেকে এসে এরা বাহামাতে বসতি স্থাপন করে। এই শান্তিপূর্ণ দ্বীপগুলোতে লুকায়ানরা প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে সহজ জীবনযাপন করত।
ক্রিস্টফার কলম্বাসের আগমণ
ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালে যখন আমেরিকাতে আসেন, তখন প্রথম যে স্থানটিতে তিনি অবতরণ করেছিলেন তা ছিল বাহামা দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ। কলম্বাস দ্বীপটিকে স্পেনের সম্পত্তি বলে দাবী করেন এবং এর নাম দেন সান সালবাদোর। ১৭১৭ সালে এটিকে ব্রিটিশ উপনিবেশ করা হয়।
স্পেনীয়রা বাহামাকে তাদের কলোনি দাবি করলেও, এখানে তারা স্থায়ী বসতি স্থাপন করেনি। কিন্তু ১৬ শতাব্দীতে বাহামার স্থানীয়দের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে উপনিবেশের অভিশাপ। স্পেনীয় ঔপনিবেশিকরা বাহামা দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রায় ৪০,০০০ লুকায়ান আদিবাসীকে ক্রীতদাস হিসেবে ধরে যায়। যার ফলে বাহামার আদিবাসী সংস্কৃতি প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
বাহামায় ইংরেজ বসতি
পরবর্তীকালে, বাহামা দ্বীপপুঞ্জ স্পেন ও ব্রিটেনের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে। ১৭শ শতাব্দীতে ইংরেজ বসতি স্থাপনকারীরা এখানে আসতে শুরু করে এবং ১৬৭০ সালে বাহামা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বাহামার স্বাধীনতা
দীর্ঘকাল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকার পর, ১০ই জুলাই ১৯৭৩ সালে বাহামা স্বাধীনতা লাভ করে এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয়।
স্বাধীনতা লাভের পর বাহামা আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে এবং পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে শুরু করে। বাহামার রক্তাক্ত ইতিহাস দেশটির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে আজও প্রবলভাবে জীবন্ত।
বাহামার নামকরণ
“বাহামা” নামটি স্প্যানিশ ভাষা থেকে উদ্ভূত। এটি “bajamar” শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ “অগভীর সমুদ্র” বা “জোয়ারের সময় জল কমে গেলে দৃশ্যমান বালুচর”।
এই দ্বীপপুঞ্জের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অগভীর সমুদ্র এবং বালুচরের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে স্প্যানিশ নাবিকেরা এই নামকরণ করেছিলেন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, স্পেনীয় উপনিবেশের সময় থেকেই “বাহামা” নামটি প্রচলিত হতে শুরু করে। দ্বীপপুঞ্জটি যখন ব্রিটিশ কলোনিতে পরিণত হয়, তখনও এই নামটি অপরিবর্তিত থাকে।
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের শাসন ব্যবস্থা ও রাজনীতি
বাহামা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র যা সাংবিধানিক রাজতন্ত্র এবং সংসদীয় গণতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত। এই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন ব্রিটেনের রাজা বা রাণী, বর্তমানে তৃতীয় চার্লস, যিনি একজন গভর্নর জেনারেলের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
বাহামার আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট – একটি সেনেট (Upper House) এবং একটি নির্বাচিত হাউস অফ অ্যাসেম্বলি (Lower House)। সেনেটের সদস্যরা গভর্নর জেনারেল কর্তৃক নিযুক্ত হন, এবং হাউস অফ অ্যাসেম্বলির সদস্যরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। আইন প্রণয়ন এবং দেশের নীতি নির্ধারণে এই সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাহামার আকর্ষণীয় যত স্থান
বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, আটলান্টিকের বুকে এক রহস্যময় মায়াবী জগৎ, যার প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে প্রকৃতির অপার বিস্ময় আর রোমাঞ্চের হাতছানি।
নাসাউ
প্রথমেই বলতে হয়, বাহামা দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী নাসাউয়ের কথা। কোন দেশের রাজধানী হিসেবে আমরা প্রথমেই কল্পনা করি অত্যন্ত ব্যস্ততম শহরের চিত্র। কিন্তু ২১/৭ মাইলের এই দ্বীপটা প্রশান্তির এক বিমূর্ত মূর্তি যেন। এই রঙিন শহর যেন এক জীবন্ত পোস্টকার্ড, যেখানে প্যাস্টেল রঙের ঔপনিবেশিক স্থাপত্য আর আধুনিকতার মিশেলে দারুণ এক শিল্পকর্মের সৃষ্টি হয়েছে।
ইতিহাস প্রেমীদের জন্য ফোর্ট ফিনক্যাসল যেন এক টাইম মেশিন, যা আপনাকে নিয়ে যাবে জলদস্যুদের সোনালী যুগে। জুনকানু উৎসবের সময় নাসাউ এক ভিন্ন রূপে সেজে ওঠে, যেখানে সুরের মূর্ছনা আর রঙের ঝলকানিতে মুখরিত হয় নাসাউয়ের আকাশ-বাতাস।
প্যারাডাইস আইল্যান্ড
এই দ্বীপের সাথে লাগোয়া আরেকটি ছোট্ট দ্বীপের নাম হল প্যারাডাইজ আইল্যান্ড। নামেই যার পরিচয়। দুটি দ্বীপের মাঝে এখন একটি সেতু আছে। সেই সাথে ফেরি সার্ভিস তো আছেই। মানুষের ভিড়ে ভারাক্রান্ত হলেও জায়গাটি এখনো পর্যটক আকর্ষণ হারায়নি বিন্দুমাত্র।
ক্যাবল বীচ
বাহামা এর বীচগুলো বিখ্যাত এর নীল রঙের জন্য। নীলের এমন সৌন্দর্য অন্য কোথাও চোখে পড়েনা। এর কারণ হল, পৃথিবী’র সবচে’ বড় প্রবাল প্রাচীর বাহামায়। প্রবাল প্রাচীর বা দ্বীপের পানি এমনিতেই অনেক নীল হয়। আর নাসা’র সূত্র মতে বাহামার পানি সবচেয়ে পরিস্কার। বাহামার সমুদ্রে খালি চোখেই পানির ২০০ ফুট পর্যন্ত দেখা যায়।
এক্সুমা
বাহামাসের পূর্ব দিকে No Take Zone হিসেবে রয়েছে Exuma Cays Land and Sea Park। এটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। পার্কটির অন্তর্গত সমূদ্র সীমায় শ্বাসরুদ্ধকর সুন্দর সব দৃশ্যের দেখা মেলে। স্বচ্ছ নীল জলের নীচে সাদা বালিতে প্রতিফলিত হয় সূর্যের আলো। পানির রঙ এত স্বচ্ছ যে আপনি এর তলের সব কিছুই দেখতে পাবেন। ভেসে চলা মাছেরা পানিতে ভাসছে নাকি উড়ে বাড়াচ্ছে বোঝা দায়!
এখানে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ শূকরদের সাথে সাঁতার কাটার এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, পিগ বিচ-এর এই মিষ্টি শূকরগুলো পর্যটকদের দেখলেই আনন্দে ছুটে আসে, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। ডাইভিং এর জন্য জায়গাটি বিশেষ জনপ্রিয়। সুন্দর আবহাওয়ায় এখানে স্নোরকেলিং করে আপনি ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পাবেন তেমনি স্পস্ট যেমনি দেখতে পান পানির ওপরে। তবে এখানে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ।
ডিন’স ব্লু হোল
ডাইভিং করতে ভালোবাসেন? তাহলে ডিন’স ব্লু হোল আপনাকে দেবে এক দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। বিশ্বের গভীরতম নীল গর্তগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম, যার রহস্যময় গভীরতা দু:সাহসী পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। এখানকার নীল জলরাশিতে ডুব দিলে মনে হবে যেন অন্য কোনো গ্রহে চলে এসেছেন।
আর আপনি যদি হোন প্রকৃতির নীরবপ্রেমী তবে সেই প্রকৃতির স্নিগ্ধ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন লুসায়ান ন্যাশনাল পার্ক-এ। ম্যানগ্রোভ বন, ভূগর্ভস্থ গুহা আর নির্জন সৈকতের শান্ত পরিবেশ মনকে এক অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয়। এখানকার গোল্ড রক বিচ যেন এক সোনার গালিচা, যা দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না যে এমন সৌন্দর্যও পৃথিবীতে থাকতে পারে।
নাসাউ ডাউন টাউন (Nassau Downtown)
এই যায়গাটিই নাসাউ এর প্রাণকেন্দ্র। শপিংমল, বানিজ্য কেন্দ্র, অফিস আদালত সব এখানেই অবস্থিত। নাসাউ ডক (এর আরেক নাম প্রিন্স উইলিয়াম রাফট) ও এখানেই। অন্য সব যায়গা থেকে এখানে বাস সার্ভিস আছে। বাসগুলোকে বলে ‘জিটনি’। যেখানেই যান, ভাড়া সোয়া এক টাকা।
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
বাহামার সংস্কৃতিতে আফ্রিকান, ইউরোপীয় ও আমেরিকান প্রভাব লক্ষণীয়। দেশটির সরকারি ভাষা ইংরেজি হলেও স্থানীয় বাহামিয়ান উপভাষা বেশ জনপ্রিয়। অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।
শিল্পকলা ও হস্তশিল্পে স্থানীয় কারুকার্য ও ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মের নিদর্শন পাওয়া যায়। গোম্বায় ও রাকে-এন-স্ক্র্যাপ এখানকার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সংগীত ও নৃত্য শৈলী। পোশাকে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণ দেখা যায়। এছাড়া স্থানীয় খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতি পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।
এখানকার ভূ-গর্ভস্থ গুহাগুলো যেমন বিস্ময়কর, তেমনি এর গাছপালাও দারুণ অন্যরকম। ক্রান্তীয় উদ্ভিদ, পাম গাছ ও ফুলের বাগান প্রকৃতিকে আরও মনোরম করে তুলেছে।
জীব বৈচিত্র্যের দিক থেকেও বাহামা বেশ সমৃদ্ধ। এখানে স্থলজ ও জলজ প্রাণী, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ ও ডলফিন দেখা যায়। বিপন্ন প্রজাতি সংরক্ষণেও এখানে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাহামা দ্বীপপুঞ্জের অর্থনীতি
পর্যটন শিল্প বাহামার অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি, যা দেশটির মোট জিডিপিতে প্রায় ৫০% এরও বেশি অবদান রাখে। সাগরের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য এবং বিলাসবহুল রিসোর্টগুলো বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রাজস্ব আয়ে প্রধান ভূমিকা রাখে। পর্যটন ছাড়াও, ব্যাংকিং এবং আর্থিক পরিষেবা খাতও বাহামার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
কৃষি ও মৎস্য শিল্প অর্থনীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও, এগুলোর অবদান তুলনামূলকভাবে কম। নারকেল, কলা, শাকসবজি এবং সামুদ্রিক খাদ্যদ্রব্য এখানে উৎপাদিত প্রধান পণ্য। ক্ষুদ্র শিল্পও স্থানীয় অর্থনীতিতে কিছু ভূমিকা রাখে।
বাহামা দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ১০ টি আকর্ষণীয় তথ্য
এবার জানবো বাহামা দ্বীপপুঞ্জ সম্পর্কে ১০টি আকর্ষণীয় তথ্য যা দেশটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেবে-
১. সাত শতাধিক দ্বীপের সমষ্টি: বাহামা দ্বীপপুঞ্জ আসলে প্রায় ৭০০টি দ্বীপ এবং ২,৪০০ টিরও বেশি ছোট ছোট কী ও প্রবাল প্রাচীর নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে মাত্র ৩০ থেকে ৪০টি দ্বীপে জনবসতি রয়েছে। বাকি দ্বীপগুলো প্রায় সম্পূর্ণ জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে থাকে বছরের পর বছর।
২. গোলাপি বালির সৈকত: বাহামার হারবার দ্বীপে “পিঙ্ক স্যান্ডস বিচ” (Pink Sands Beach) বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। এই সৈকতের বালি প্রাকৃতিকভাবে গোলাপি রঙের, যা প্রবাল এবং ক্ষুদ্র প্রাণীর অবশেষের কারণে তৈরি হয়েছে। এটি বিশ্বের বিরল এবং সুন্দরতম সৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম।
৩. সুইমিং পিগস বা সাঁতার কাটা শূকর: বাহামার এক্সুমা দ্বীপে “পিগ বিচ” (Pig Beach) নামে একটি বিশেষ সৈকত আছে, যা বন্য শূকরদের জন্য পরিচিত। এই শূকরগুলো পর্যটকদের সাথে সাগরে সাঁতার কাটে এবং খাবার গ্রহণ করে, যা পর্যটকদের জন্য একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এদেরকে “সুইমিং পিগস” বলা হয় এবং এটি বাহামার অন্যতম জনপ্রিয় আকর্ষণ।
৪. নীল গর্তের দেশ: বাহামাতে বিশ্বের গভীরতম নীল গর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম “ডিন’স ব্লু হোল” (Dean’s Blue Hole) অবস্থিত। এটি ডাইভিং এবং স্নোরকেলিংয়ের জন্য বিখ্যাত, যা এর গভীরতা এবং স্বচ্ছ নীল জলের জন্য পরিচিত। নীল গর্তগুলো মূলত চুনাপাথরের গুহা, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা পরিবর্তনের কারণে গঠিত হয়েছে।
৫. জলজ উদ্যান ও মেরিন পার্ক: বাহামাতে অনেকগুলো সুরক্ষিত জলজ উদ্যান ও মেরিন পার্ক রয়েছে, যা এখানকার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে। Exuma Cays Land and Sea Park বিশ্বের প্রথম “ল্যান্ড অ্যান্ড সী পার্ক” গুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী ও প্রবাল প্রাচীর দেখা যায়।
৬. ঐতিহাসিক জলদস্যুদের আশ্রয়: সপ্তদশ শতাব্দীতে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ জলদস্যুদের অভয়ারণ্য ছিল। বিখ্যাত জলদস্যু ব্ল্যাকবার্ড (Blackbeard) সহ অনেক কুখ্যাত পাইরেটের ঘাঁটি ছিল নাসাউ এবং এর আশেপাশের দ্বীপগুলো। ঐতিহাসিক Fort Fincastle এবং Pirate Museum এই সময়ের অনেক ঘটনার সাক্ষী বহন করে।
৭. ফ্লেমিঙ্গো পাখির স্বর্গ: বাহামা ফ্লেমিঙ্গো পাখির অন্যতম বৃহত্তম breeding ground বা প্রজনন ক্ষেত্র। এখানে “ইনাকুয়া ন্যাশনাল পার্ক”-এ (Inagua National Park) হাজার হাজার ফ্লেমিঙ্গোর দেখা পাওয়া যায়। বাহামার জাতীয় পাখিও ফ্লেমিঙ্গো।
৮. আন্ডারওয়াটার কেভ সিস্টেম: বাহামার দ্বীপগুলোতে বিশ্বের দীর্ঘতম আন্ডারওয়াটার কেভ সিস্টেম বা ভূগর্ভস্থ গুহা ব্যবস্থা বিদ্যমান। এই গুহাগুলোতে স্ট্যালাকটাইট এবং স্ট্যালাগমাইট এর মতো আকর্ষণীয় geological formations দেখা যায়, যা ডাইভারদের কাছে খুব জনপ্রিয়।
৯. জুঙ্কানুর উৎসব: বাহামার সবচেয়ে বড় এবং রঙিন উৎসব হলো জুঙ্কানুর (Junkanoo)। এটি ২৬ শে ডিসেম্বর বক্সিং ডে এবং নববর্ষের দিনে অনুষ্ঠিত হয়। জুঙ্কানুর উৎসবে স্থানীয়রা ঐতিহ্যবাহী কস্টিউম পরে রাস্তায় গান-নাচ ও বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে আনন্দ উদযাপন করে। এটি বাহামিয়ান সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১০. স্যান্ড ডলারের নামকরণ: বাহামার মুদ্রা “বাহামিয়ান ডলার” হলেও, তাদের সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সির (CBDC) নাম “স্যান্ড ডলার” রাখা হয়েছে। এই নামটি বাহামার বিখ্যাত গোলাপি বালির সৈকত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র-
- https://masterliveaboards.com/10-interesting-facts-about-the-bahamas/
- https://mangotreetravel.com/fun-facts-bahamas/
- https://everything-everywhere.com/8-facts-about-the-bahamas/
- https://www.westernairbahamas.com/9-fun-facts-about-the-bahamas/
- https://cholojaai.net/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%AA%E0%A6%AA%E0%A7%81-2/
- https://www.bbarta24.net/parzoton/11308
- https://adarbepari.com/abroad/bahamas