“একটা দুর্গ, এক টাকা” —আর সেখান থেকেই ইতিহাসের এক অদ্ভুত অধ্যায়ের শুরু।
ইতিহাস কি শুধু বইয়ের পাতায় লেখা থাকে? না… কখনো কখনো তা লেখা থাকে পাথরের গায়ে খোদাই করা প্রতীকে, অন্ধকার টানেলের নীরবতায় কিংবা কোনো প্রাচীন দুর্গের ধূসর দেয়ালে।
“হিমলিক ক্যাসেল” (Wewelsburg Castle) জার্মানির এক নিস্তব্ধ পাহাড়ি অঞ্চলে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ এক দুর্গ। বাহিরে থেকে সাধারণ মনে হলেও এই দূর্গের অন্তরালে ছড়িয়ে আছে হিমশীতল এক ইতিহাস।
নাৎসি বাহিনীর গোপন পরিকল্পনা, অকালপ্রয়াত প্রাণের আর্তনাদ এবং এক মানসিক যুদ্ধের স্বাক্ষী এই ক্যাসেলটি।এখানকার পাথরের দেয়ালগুলো আজও যেন ফিসফিস করে সেই অমীমাংসিত ইতিহাসের কথা বলে।
ওয়েভেলসবুর্গ ক্যাসেল
জার্মানির প্যাডারবর্নের কাছে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকা হিমলিক ক্যাসেল বা ‘Wewelsburg Castle’ শুধু একটি মধ্যযুগীয় দুর্গ নয়। বরং এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর এসএস ইউনিটের আধ্যাত্মিক ঘাঁটি। নাৎসি নেতা হেনরিখ হিমলারের পছন্দের প্রকল্প ছিল এই ক্যাসেলটি।
যেখানে হাইনরিখ হিমলার চেয়েছিলেন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তার সম্রাজ “একটি কালো পবিত্র স্থান,” যা হবে এসএস বাহিনীর নিজস্ব ভ্যাটিকান। হিমলারের টার্গেট ছিল এই দুর্গটিকে নিয়ে একটি নতুন ইতিহাস বানানোর।
ওয়েভেলসবুর্গ ক্যাসেলের উৎপত্তি ও উদ্দেশ্য
সময়টা ছিল তখন ১৬০৩ সাল ইউরোপজুড়ে রেনেসাঁর ঢেউ।এরই মাঝে জার্মানির প্যাডারবর্ন এলাকার ধর্মযাজক ডিয়েটরিচ ফন ফুয়েরস্টেনবার্গের সিদ্ধান্ত নেন একটি দুর্গ তৈরি করার। তার উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় সাধনা, বিশ্রাম এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য ব্যবহৃত হবে এই দুর্গটি।
তিনি এমন একটি ভবন নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন যা হবে শান্তির প্রতীক। তার ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়েভেলসবুর্গ দুর্গের নকশাও করা হয়েছিল কিছুটা ভিন্নধর্মী। ত্রিভুজের মতো দেখতে তিনটি টাওয়ারকে একত্রিত করে নির্মাণ করা হয় একটি জাদুকরী গঠন।
তবে ইতিহাসের নির্মম পরিহাসে এক সময়ের শান্তির বার্তা বয়ে আনা দুর্গটি পরিণত হয় হিমলারের ভয়ঙ্কর এক অধিকারবাদের ঘাঁটিতে। কে এই হিমলার ? কেনই বা দখল করল এই দূর্গটিকে?
কে ছিলেন হিমলার?
হিমলারকে জার্মানির “সেই ছায়াময় ব্রেইন” বলা হয় যিনি নানা গুপ্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে হিটলারের আদর্শবাদী স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতেন।তিনি ছিলেন এসএস (SS – Schutzstaffel) বাহিনীর প্রধান।
হেনরিখ হিমলার ছিলেন শুধুই একজন রাজনীতিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন ভয়ঙ্কর কল্পনাবিলাসী। ওয়েভেলসবুর্গ দুর্গ ছিল তার মনের সেই ভয়ংকর চিত্রকল্পের বাস্তব রূপ। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত এই দুর্গটি ১৯৩৩ সালে হিমলারের নজরে আসার পর এক নতুন ‘জন্ম’ পায়।
হিমলারের ‘গ্রেইল’ অনুসন্ধান: ধর্ম, ইতিহাস ও অলৌকিকতায় আচ্ছন্নতা
অলৌকিক বিশ্বাসে আচ্ছন্ন হিমলার অলৌকিক মনে করতেন জার্মান জাতি (অ্যারিয়ান) পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। এবং তাদের এই শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব আবার ফিরিয়ে আনার একমাত্র চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে পুরনো ধর্ম, পৌরাণিক কাহিনি আর হোলি গ্রেইল-এর মতো প্রতীকে।
১৯৩৫ সাল। জার্মান জুড়ে তখন যুদ্ধের আগ্রাসন। নাৎসি নেতা হাইনরিখ হিমলার মনে করলেন যুদ্ধজয় শুধু ট্যাংক বা বন্দুক দিয়ে সম্ভব নয়। যুদ্ধ, বন্দুক, ট্যাংক এসব ছাড়িয়ে তিনি খুঁজছিলেন এক পবিত্র জিনিস, এক জাদুর পাত্র যার নাম হোলি গ্রেইল। তার ধারণা ছিল এই গ্রেইলের মাধ্যমে তারা খুব সহজেই শত্রুকে প্রতিহত করতে পারবে।
কী এই হোলি গ্রেইল?
‘হোলি গ্রেইল’ হলো খ্রিস্ট ধর্মের এক রহস্যময় বস্তু। বলা হয় এটি সেই পাত্র যেখানে যিশু খ্রিষ্টের শেষ ভোজের সময় পানি বা মদ রাখা হয়েছিল। এমনকি তার রক্তও পড়েছিল এই পাত্রে। তার বিশ্বাস এই পাত্রে আছে অলৌকিক শক্তি। যে একে পাবে সে হবে বিজয়ী, অমর আর অজেয়।
আর ওয়েভেলসবুর্গ ছিল তার এসব পাগলামি করার আস্তানা। সেখানে সে এসএস অফিসারদের নিয়ে একেকটা “কাল্টিক ক্লাস” (যেখানে ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা, অতিপ্রাকৃত বা বিশেষ কোনো বিশ্বাস নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হয়, এবং অংশগ্রহণকারীরা প্রায় অন্ধভাবে সেই বিশ্বাসে আস্থাশীল থাকে) করাতেন।
ভাবুন তো! যুদ্ধের মাঝেও সে ইতিহাস পড়াচ্ছে, জাদুবিদ্যা শেখাচ্ছে, বলছে “তোমরা গ্রেইল খুঁজে পেলে, পৃথিবী আমাদের পায়ে আসবে।”
হিমলারের ‘গ্রেইল’ খোঁজা আসলে ছিল এক আতঙ্ক আর মোহে ডুবে থাকা যাত্রা। যেখানে ইতিহাস, ধর্ম আর রহস্য মিলেমিশে গড়ে উঠেছিল এক বিকৃত স্বপ্ন।
এ যেন এক ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’ মুভির মতো। তবে এর বাস্তবতা ছিল রক্তমাখা আর হৃদয়বিদারক।
হিমলার যেভাবে ওয়েভেলসবুর্গ দুর্গটি পেল
হিটলার ক্ষমতায় আসার পরপরই হিমলার তাঁর এসএস বাহিনীকে ‘ধর্মীয় যোদ্ধা’ হিসেবে রূপান্তর করতে চাইলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন এই বাহিনীর প্রয়োজন এমন এক আধ্যাত্মিক ঘাঁটি যেখানে আদর্শ, ইতিহাস ও রহস্য মিলেমিশে থাকবে।
“কার্ল মারিয়া উইলিগুট” একজন এসএস কর্মকর্তা। যিনি নিজেকে “জার্মানিক দেবতাদের পুরোহিত” বলে দাবি করতেন। তিনি হিমলারকে বলেন, “ওয়েভেলসবুর্গ হলো প্রাচীন আর্য শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। এখানে কালের গভীরে এক প্রাচীন শক্তি ঘুমিয়ে আছে।” এই কথাতেই যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলেন হিমলার।
তিনি খুঁজে বের করলেন দুর্গটি। প্রায় পরিত্যক্ত, অব্যবহৃত এবং ইতিহাস-ভরা দুর্গটি ছিল স্থানীয় প্রশাসনের মালিকানাধীন।
হিমলারের মাত্র ১ রেইখ মার্কে দুর্গ কেনা
হিমলার তার কৌশলে ও প্রভাব খাটিয়ে ১০০ বছরের জন্য দুর্গটি ‘লিজ’ নিয়ে নেন মাত্র ১ রেইখ মার্কে । চুক্তিতে বলা হয়েছিল দুর্গটি সংস্কার করে ‘এসএস অফিসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ বানানো হবে। তবে বাস্তবে হিমলার চেয়েছিলেন এটিকে গড়ে তুলতে একটি জার্মানিক ধর্মীয় কেন্দ্র। একটি “নতুন টেম্পলার অর্ডার” এর সদর দফতর হিসেবে।
দুর্গটি সংস্কারের দায়িত্ব পড়ে SS-Bauleitung Wewelsburg নামক এক স্থাপত্য বিভাগে। হিমলারের আদেশে দুর্গটি সংস্কারে নিয়োজিত করা হয়েছিল কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের কয়েদিদের।
প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের দিয়ে দেয়াল ভাঙা ও পুনর্নির্মাণ ,গোপন কক্ষ খোঁড়া ভূমি সমতল করা সহ যাবতীয় বিপদজ্জনক কাজ করে নেওয়া হতো। প্রায় ১২০০ এরও বেশি বন্দির অক্লান্ত পরিশ্রমে পুনর্গঠিত হয় এই দুর্গ ।
দুর্গের কাজের পরিবেশ ছিল বেশ ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর। দুর্গটি পুনঃনির্মাণ করতে গিয়ে অসংখ্য কয়েদির মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছিল। নির্মাণকাজের বেশিরভাগই ছিল গোপন এবং অতিপ্রাকৃত কার্যক্রমের জন্য গোপন কক্ষ তৈরির উদ্দেশ্যে।
চলুন, তাহলে এবার ওয়েভেলসবুর্গ দুর্গের অন্দরের দিকে যায়। যেখানে এসএস নেতাদের গোপন সভা, অদ্ভুত আচার-অনুষ্ঠান পরিচালিত হতো।
ওয়েভেলসবুর্গ দুর্গের রহস্যময় অংশগুলো
Black Sun Hall
হিমলারের নির্দেশে দুর্গের উত্তর টাওয়ারে নির্মিত হয় সবচেয়ে আলোচিত এবং ভীতিকর অংশ Obergruppenführersaal। যেখানে মেঝেতে বসানো হয় ১২ টি তক্তা বিশিষ্ট এক গাঢ় কালো প্রতীক “Black Sun”।
প্রতীকটি কোনো ঐতিহ্যগত নাৎসি চিহ্ন নয় বরং এটি ছিল একধরনের আধ্যাত্মিক চক্র। যাকে বলা হয় “প্রাচীন শক্তির কেন্দ্রীভবন”। ধারণা করা হয় হিমলার এই কক্ষটিকেই বানাতে চেয়েছিলেন এস এস দের এক “গোপন কাউন্সিল”-এর সভাকক্ষ হিসেবে। যারা বিশ্বশাসনের নীলনকশা তৈরি করবে।
The Vault Room (Crypt)
এই গম্ভীর ভূগর্ভস্থ কক্ষটি ছিল একটি শবাগার বা মৃত আত্মার কেন্দ্র। যা আজও মানুষের মনে কাঁপুনি ধরায়। মূল কক্ষটির মাঝে রয়েছে গোল গর্ত যেটিকে ঘিরে রয়েছে ১২টি পাথরের স্তম্ভ। সেখানে বসে আচার করতেন এসএস নেতারা।
কেউ বলেন এটা ছিল শক্তি আহরণের স্থান। যেখানে “আধ্যাত্মিক শক্তি” নেমে আসত। আবার কেউ বলেন মৃত এসএস অফিসারদের ছাই এখানে রেখে সেই শক্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হতো এই কক্ষটিতে।
Hall of Ancestors
এই কক্ষের সমস্ত দেয়ালজুড়ে আঁকা ছিল আর্য ইতিহাসের পৌরাণিক চিত্র।তিব্বতের যোদ্ধা, নর্ডিক দেবতা, টিউটোনিক নাইটসএমনকি প্রাচীন জার্মানিক বংশের তালিকা পর্যন্ত ছিল এখানে।
এই কক্ষটি বানানোর উদ্দেশ্য ছিল এসএস সদস্যদের বোঝানো যে কোন তারা সাধারণ মানুষ নয় বরং তারা বিশেষ পূর্বপুরুষদের সন্তান। ঐশ্বরিক নিয়তির ধারক।এই কক্ষ অনেকটা ছিল “মস্তিষ্ক ধোলাই ও বিশ্বাস পুনর্গঠনের ক্যাথেড্রাল”।
Occult Archive
ওয়েভেলসবুর্গ দুর্গে একটি গোপন লাইব্রেরিও স্থাপন করা হয়। যেখানে সংগ্রহ করা হতো নেক্রোনমিকন টাইপের জাদুগ্রন্থ, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ওডিনীয় ধর্মগ্রন্থ আধ্যাত্মিক তন্ত্র-মন্ত্র সহ অসংখ্য জ্যোতিষ বই।
হিমলারের এসএস সদস্যরা এই গ্রন্থাগারে বসে গুপ্তজ্ঞান আহরণের চেষ্টা করত। তাদের ধারণা ছিল তারা এই গুপ্ত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে “জার্মানিক দেবতার সৈন্য” হয়ে উঠবে।
Unfinished Secret Chambers
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন হিমলারের আদেশে দুর্গের নিচে এবং পাশের অংশে গোপনে কিছু নতুন কক্ষ খনন শুরু হয়। এই গোপন কক্ষ নিয়ে রয়েছে মতভেদ।
কেউ বলেনএটি হতে যাচ্ছিল একটি বিশাল ‘এসএস বাহিনীর মন্দির’। আবার কেউ বলেন ভবিষ্যতে এসএস নেতাদের দেহ সংরক্ষণের জন্য হিমলার এই গোপন কক্ষটি নির্মাণ করেন।
গোপন গবেষণাগার ও অতিপ্রাকৃত গবেষণা
“জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, রহস্য সেখানে শুরু”এই কথাটাই যেন সত্যি করে তুলেছিলেন নাৎসি নেতা হেনরিক হিমলার। তার কাছে বিজ্ঞান মানেই ছিল না শুধু পদার্থবিদ্যা বা রসায়ন ছিল না,বরং পুরনো জাদুবিদ্যা, টেলিপ্যাথি, গুহ্য শক্তি আর মহাবিশ্বের গোপন নিয়মকানুন সবকিছুই। আর এই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নেয় নাৎসি বাহিনীর গোপন গবেষণাগার। যেখানে বিজ্ঞান ও অলৌকিকতা একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল।
ওয়েভেলসবুর্গ দুর্গ ছিল হিমলারের তৈরি এক বিশেষ গবেষণাগার। কিন্তু এই গবেষণাগারে চলত অদ্ভুত সব গবেষণা যেমন এস্ট্রোলজি (জ্যোতিষ) , অ্যান্টি-গ্র্যাভিটিপ্রাচীন আর্যদের “অলৌকিক উত্তরাধিকার”,টেলিকাইনেসিস (চিন্তা দিয়ে বস্তু নাড়ানো) সহ “হোলি গ্রেইল” নিয়ে নানা ধরনের আধ্যাত্মিক ও জাদুবিদ্যা গবেষণা।
হিমলার এখানে তৈরি করেছিলেন “Ahnenerbe” নামের এক গবেষণা সংস্থা। তাদের কাজ ছিল প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন খুঁজে আনা,আর্য জাতির অতিপ্রাকৃত ইতিহাস বের করা, প্রাচীন লিপি, প্রত্নতত্ত্ব, মন্দির, রুনিক চিহ্নের শক্তি বিশ্লেষণ করা ইত্যাদি।
নাৎসিদের এই গবেষণাগারে শুধু আধ্যাত্মিকতার চর্চা হতো না এখানে তৈরি করা হতো Die Glocke, উড়ন্ত চক্র বা “ফ্লায়িং সসার”: এর ভয়ংকর সব অস্ত্র।
পরিকল্পনার বিস্তার (যা বাস্তবায়িত হয়নি)
হিমলারের স্বপ্ন ছিল গোটা ওয়েভেলসবুর্গ অঞ্চলকে এসএস শহরে রূপান্তর করা। একটি “পৌরাণিক মিউজিয়াম”,একটি “গার্ডেন অব হিরোস” এমনকি সারাবিশ্বের রাজধানী বানানোর স্বপ্ন। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই পরিকল্পনা থেমে যায়। অসমাপ্ত থেকে যায় সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা।
পতনের আগে ধ্বংসের চেষ্টা
১৯৪৫ সালে মিত্রবাহিনী দুর্গের দিকে এগোলে হিমলার তার বাহিনীকে দুর্গটিকে ধ্বংস করার আদেশ দেন। যাতে এই দুর্গের ভিতরের গোপন কার্যক্রম সম্পর্কে আর কেউ জানতে না পারে।
এসএস অফিসার Heinz Macher এর নেতৃত্বে বিস্ফোরণ ঘটানো হলেও বিস্ফোরণে পুরোপুরি ধ্বংস সম্ভব হয়নি ওয়েভেলসবুর্গ ক্যাসেলকে।
মিত্রবাহিনী এসে দুর্গটি উদ্ধার করে এবং পরবর্তীতে এটি এক স্মারক ও জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়।
আজকের ওয়েভেলসবুর্গ: ইতিহাস না ষড়যন্ত্র?
বর্তমানে ওয়েভেলসবুর্গ ক্যাসেল একটি জাদুঘর। সেখানে নাৎসিদের কর্মকাণ্ড এবং এসএস বাহিনীর ইতিহাস ও হিমলারের ‘আধ্যাত্মিক ফ্যাসিবাদ’ সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। ওয়েভেলসবুর্গ দুর্গ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যখন রাজনীতির সাথে অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসে মিশে যায় তখন সৃষ্টি হয় সভ্যতার জন্য এক ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী ধর্ম।
ওয়েভেলসবুর্গ দুর্গ কেবল ইট-পাথরের নির্মাণ নয়। এটি ছিল এক অলৌকিক বিশ্বাসের মন্দির। যেখানে ইতিহাস, পৌরাণিকতা, আতঙ্ক আর পাগলামি মিশে এক ভয়ংকর রূপ নিয়েছিল।
বর্তমানে কিছু গবেষক ও ইতিহাসপ্রেমী হিমলিক ক্যাসেলের গোপন রহস্য উন্মোচনে কাজ করছেন। যদিও সরকারি কোনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না কিন্তু এই দুর্গের গোপন কক্ষে লুকিয়ে থাকা নথিপত্র ও বর্জিত উপকরণ আজও রহস্য উদঘাটনে সাহায্য করছে। পর্যটকদের জন্য এই জায়গাটি বন্ধ থাকলেও ইতিহাস ও রহস্যপ্রেমীদের কৌতূহল আজও অব্যাহত রয়েছে।
রেফারেন্স:
- https://en.m.wikipedia.org/wiki/Wewelsburg
- https://www.tracesofevil.com/search/label/Wewelsburg?m=1
- https://encyclopedia.ushmm.org/content/en/article/ss
- Heather Pringle, The Master Plan: Himmler’s Scholars and the Holocaust (2006)