নতুন iPhone 17 Air মাত্র ৫.৬ মিলিমিটার পাতলা। এতে আছে টাইটানিয়াম বডি, A19 Pro চিপের অবিশ্বাস্য শক্তি আর প্রো-লেভেলের ক্যামেরা। iPhone 17 Air নিয়ে এসেছে ১২০ হার্টজ ডিসপ্লে, Wi-Fi 7 প্রযুক্তি সবকিছুই এক অবিশ্বাস্য পাতলা ডিজাইনে।
প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে, প্রযুক্তি বিশ্ব অ্যাপলের দিকে তাকিয়ে থাকে এক নতুন আইফোনের প্রত্যাশায়। কিন্তু ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসটি ছিল একটু ভিন্ন। বছরের পর বছর ধরে ‘প্রো’ এবং ‘প্রো ম্যাক্স’ মডেলগুলোর উপর সমস্ত আলো থাকলেও, অ্যাপল এবার তাদের আর্কাইভ থেকে এমন একটি নাম ফিরিয়ে আনল, যা একসময় উদ্ভাবন এবং হালকা-পাতলা ডিজাইনের সমার্থক ছিল। মঞ্চের আলো যখন কমে এলো, তখন টিম কুক ঘোষণা করলেন সেই বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্ত “The Air is back.”
এভাবেই প্রযুক্তি জগতে আত্মপ্রকাশ করল iPhone 17 Air। এটি শুধু আরেকটি নতুন আইফোন নয়; এটি অ্যাপলের ডিজাইন দর্শনের এক সাহসী প্রত্যাবর্তন। যারা একটি শক্তিশালী, প্রিমিয়াম স্মার্টফোন চান, কিন্তু ‘প্রো’ মডেলগুলোর ওজন এবং আকারের সাথে আপোষ করতে রাজি নন, তাদের জন্যই তৈরি হয়েছে এই নতুন বিস্ময়। মাত্র ৫.৬ মিলিমিটার পাতলা শরীর, টাইটানিয়াম ফ্রেম, A19 Pro চিপের দানবীয় শক্তি এবং এক অসাধারণ ক্যামেরা সিস্টেম।
ডিজাইন ও অনুভূতি: হাতে ধরে রাখার এক নতুন অভিজ্ঞতা
iPhone 17 Air-এর সবচেয়ে বড় এবং প্রথম আকর্ষণ হলো এর ডিজাইন। অ্যাপল যেন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর এক নতুন শিখরে পৌঁছেছে এই ফোনটি তৈরি করতে গিয়ে।
- অবিশ্বাস্যরকম পাতলা (5.6mm): ফোনটি হাতে নিলে প্রথম যে অনুভূতিটি হবে, তা হলো এর অবিশ্বাস্য পাতলা গড়ন। মাত্র ৫.৬ মিলিমিটার পুরুত্বের সাথে, এটি এখন পর্যন্ত অ্যাপলের তৈরি সবচেয়ে পাতলা আইফোন। পুরনো আইপড টাচ বা আইপ্যাড এয়ারের সেই হালকা-পাতলা অনুভূতিটিই যেন ফিরে এসেছে এক নতুন এবং আরও শক্তিশালী রূপে। পকেটে রাখলে বা হাতে ধরে দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলেও এর অস্তিত্ব প্রায় বোঝাই যায় না।
- টাইটানিয়াম বডি ও নতুন সিরামিক শিল্ড: এই অবিশ্বাস্য পাতলা গড়ন সম্ভব হয়েছে এর উপকরণ নির্বাচনের কারণে। iPhone 17 Air-এর ফ্রেমে ব্যবহার করা হয়েছে ব্রাশড ফিনিশের গ্রেড-৫ টাইটানিয়াম, যা স্টেইনলেস স্টিলের চেয়ে অনেক হালকা কিন্তু সমান শক্তিশালী। এর ফলে, ফোনটি শুধু দেখতেই প্রিমিয়াম নয়, এটি অত্যন্ত টেকসইও বটে। ফোনের সামনে এবং পেছনে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন প্রজন্মের সিরামিক শিল্ড গ্লাস, যা অ্যাপলের মতে আগের চেয়েও বেশি স্ক্র্যাচ এবং ড্রপ রেজিস্ট্যান্ট।
- ওজন এবং রঙের বাহার: টাইটানিয়াম ব্যবহারের ফলে, ৬.৩ ইঞ্চি স্ক্রিন থাকা সত্ত্বেও ফোনটির ওজন অবিশ্বাস্যরকম কম। এটি হাতে নিলে মনে হবে যেন ভবিষ্যতের কোনো ডিভাইস ধরে আছেন। ২০২৫ সালের জন্য, অ্যাপল এই মডেলে কিছু নতুন এবং আকর্ষণীয় রঙ নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘স্টারলাইট সিলভার’, ‘স্পেস ব্ল্যাক’, এবং একটি বিশেষ সংস্করণ ‘অ্যাস্ট্রা ব্লু’।
শুধু eSIM, ফিজিক্যাল সিমের যুগ শেষ
এই পাতলা ডিজাইন অর্জনের পেছনে একটি বড় কারণ হলো ফিজিক্যাল সিম ট্রে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া। iPhone 17 Air হলো অ্যাপলের প্রথম গ্লোবাল মডেল, যা শুধুমাত্র eSIM প্রযুক্তি সাপোর্ট করে। এর অর্থ হলো, আপনাকে আর ছোট প্লাস্টিকের সিম কার্ড নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আপনি খুব সহজেই ডিজিটালভাবে আপনার মোবাইল নেটওয়ার্ক যুক্ত করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে একাধিক সিম প্রোফাইল ফোনে সংরক্ষণ করতে পারবেন। যদিও কিছু দেশের জন্য এটি একটি বড় পরিবর্তন, কিন্তু এর ফলে ফোনটি আরও বেশি ওয়াটারপ্রুফ এবং টেকসই হয়েছে।
ডিসপ্লে: আরও উজ্জ্বল, আরও মসৃণ
iPhone 17 Air-এর ডিসপ্লেতে অ্যাপল এমন কিছু ফিচার দিয়েছে, যা আগে শুধুমাত্র ‘প্রো’ মডেলগুলোর জন্যই সংরক্ষিত ছিল।
- ১২০ হার্টজ প্রোমোশন টেকনোলজি: এই প্রথমবার, অ্যাপল একটি নন-প্রো আইফোনে তাদের বিখ্যাত ১২০ হার্টজ প্রোমোশন (ProMotion) ডিসপ্লে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। এর ফলে, স্ক্রলিং, গেমিং এবং অ্যাপ ব্যবহারের সময় অ্যানিমেশনগুলো হবে অবিশ্বাস্যরকম মসৃণ এবং রেসপন্সিভ। একবার ১২০ হার্টজ ডিসপ্লে ব্যবহার করলে, পুরনো ৬০ হার্টজ স্ক্রিনে ফিরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব মনে হবে।
- উজ্জ্বলতা এবং বেজেল: এর ৬.৩ ইঞ্চি সুপার রেটিনা এক্সডিআর (Super Retina XDR) ডিসপ্লেটি আগের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল। সাধারণ ব্যবহারের সময় এর ব্রাইটনেস ১২০০ নিটস এবং HDR কনটেন্ট দেখার সময় এটি সর্বোচ্চ ২৫০০ নিটস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যার ফলে সরাসরি সূর্যের আলোতেও স্ক্রিন দেখা অত্যন্ত সহজ। এছাড়াও, অ্যাপল ডিসপ্লের চারপাশের বেজেলগুলোকে আরও সরু করে এনেছে, যা একটি এজ-টু-এজ ভিউয়িং অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
পারফরম্যান্সের নতুন দৈত্য: A19 Pro চিপ
iPhone 17 Air-এর নামের সাথে ‘এয়ার’ যুক্ত থাকলেও, এর পারফরম্যান্সের সাথে কোনোভাবেই আপোষ করা হয়নি। এর ভেতরে রয়েছে অ্যাপলের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী A19 Pro চিপ, যা এটিকে বাজারের যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফ্ল্যাগশিপের চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে রেখেছে।
- ২-ন্যানোমিটার আর্কিটেকচার: A19 Pro চিপটি বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ২-ন্যানোমিটার আর্কিটেকচারের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এর ফলে, এটি আগের প্রজন্মের A18 Pro-এর তুলনায় প্রায় ২০% বেশি দ্রুত এবং ৩০% বেশি শক্তি-সাশ্রয়ী।
- সিপিইউ এবং জিপিইউ: এর ৬-কোরের সিপিইউ দৈনন্দিন কাজগুলোকে মাখনের মতো মসৃণ রাখে, আর ৬-কোরের জিপিইউ হাই-গ্রাফিক্স গেম এবং ভিডিও এডিটিং-এর জন্য এক অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রদান করে।
- এআই এবং নিউরাল ইঞ্জিন: ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় আপগ্রেডটি হলো এর নিউরাল ইঞ্জিনে। A19 Pro-তে রয়েছে একটি ৩২-কোরের নিউরাল ইঞ্জিন, যা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন অপারেশন সম্পাদন করতে পারে। এই অবিশ্বাস্য শক্তিই iOS 26-এর নতুন সব এআই ফিচারকে সম্ভব করেছে। রিয়েল-টাইম লাইভ ট্রান্সলেশন, ফটোর ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে অবজেক্ট সরানো এবং Siri-র আরও বেশি বুদ্ধিমান এবং প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার পেছনে এই নিউরাল ইঞ্জিনই প্রধান চালিকাশক্তি।
ক্যামেরার কারুকার্য: কম আলোয় সেরা ছবি
iPhone 17 Air প্রমাণ করেছে যে, সেরা ছবি তোলার জন্য তিনটি ক্যামেরার প্রয়োজন নেই। এর ডুয়াল-ক্যামেরা সিস্টেমটি সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের এক অসাধারণ সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রো-লেভেলের ছবি তুলতে সক্ষম।
- ৪৮ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরা: ফোনটিতে রয়েছে একটি ৪৮ মেগাপিক্সেলের প্রধান ক্যামেরা, যা দ্বিতীয় প্রজন্মের সেন্সর-শিফট অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এটি পিক্সেল বিনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে চারটি পিক্সেলকে একত্রিত করে একটি বড় পিক্সেল তৈরি করে, যার ফলে ১২ মেগাপিক্সেলের অসাধারণ ডিটেইলস এবং কম আলোয় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স পাওয়া যায়। প্রয়োজনে প্রো-র (ProRAW) ফরম্যাটে ৪৮ মেগাপিক্সেলেও ছবি তোলা সম্ভব।
- ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরা: এর সাথে রয়েছে একটি নতুন ১২ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরা, যাতে প্রথমবারের মতো অটোফোকাস যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে, এটি শুধু সুন্দর ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল ছবিই তুলতে পারে না, বরং এটি একটি শক্তিশালী ম্যাক্রো ক্যামেরারও কাজ করে, যা মাত্র ২ সেন্টিমিটার দূর থেকেও কোনো বস্তুর নিখুঁত ছবি তুলতে পারে।
- ফটোনিক ইঞ্জিন ও এআই: A19 Pro চিপের শক্তিতে চালিত নতুন ফটোনিক ইঞ্জিন প্রতিটি ছবির পিক্সেল-বাই-পিক্সেল বিশ্লেষণ করে রঙ, ডিটেইলস এবং ডাইনামিক রেঞ্জকে আরও উন্নত করে। এর পোর্ট্রেট মোড এখন আরও নির্ভুলভাবে এজ ডিটেক্ট করতে পারে এবং সিনেমাটিক মোডে ৪কে রেজোলিউশনে ভিডিও রেকর্ড করা যায়।
ব্যাটারি ও কানেক্টিভিটি: সারাদিনের শক্তি এবং দ্রুততম সংযোগ
“এত পাতলা ফোনে ব্যাটারি কেমন হবে?” এই প্রশ্নটিই সবার মনে প্রথমে আসে। অ্যাপল এই চ্যালেঞ্জটি মোকাবেলা করেছে উদ্ভাবনের মাধ্যমে।
- ব্যাটারি লাইফ: A19 Pro চিপের অবিশ্বাস্য শক্তি-সাশ্রয়ী ক্ষমতা এবং নতুন ‘স্ট্যাকড ব্যাটারি’ (Stacked Battery) প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে, iPhone 17 Air-এর ব্যাটারি লাইফ নিয়ে কোনো অভিযোগের সুযোগ নেই। সাধারণ ব্যবহারে এটি সহজেই সারাদিন চলে যায়। অ্যাপলের দাবি অনুযায়ী, এটি একবার চার্জে ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভিডিও প্লেব্যাক দিতে সক্ষম।
- কানেক্টিভিটি (Wi-Fi 7): iPhone 17 Air হলো প্রথম আইফোন, যাতে Wi-Fi 7 প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে, সমর্থিত রাউটারের সাথে এটি অবিশ্বাস্যরকম দ্রুত গতি, কম ল্যাটেন্সি এবং আরও স্থিতিশীল সংযোগ প্রদান করে, যা অনলাইন গেমিং, ৪কে স্ট্রিমিং এবং বড় ফাইল ডাউনলোডের জন্য আদর্শ।
দাম ও স্টোরেজ অপশন
iPhone 17 Air-কে অ্যাপল তাদের স্ট্যান্ডার্ড iPhone 17 এবং iPhone 17 Pro-এর ঠিক মাঝখানে অবস্থান দিয়েছে। এর দাম এবং স্টোরেজ অপশনগুলো নিম্নরূপ (আনুমানিক বাংলাদেশি মূল্য পরিবর্তনশীল):
- ১২৮ জিবি: $৮৯৯
- ২৫৬ জিবি: $৯৯৯
- ৫১২ জিবি: $১১৯৯
iPhone 17 Air শুধু যে একটি নতুন মডেল নয়; বরং এটি অ্যাপলের ডিজাইন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার এক চূড়ান্ত প্রমান। এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে, একটি ফোন একই সাথে অবিশ্বাস্যরকম পাতলা, হালকা এবং শক্তিশালী হতে পারে। যারা একটি ফ্ল্যাগশিপ আইফোনের সমস্ত প্রিমিয়াম অনুভূতি এবং পারফরম্যান্স চান, কিন্তু ‘প্রো’ মডেলগুলোর অতিরিক্ত ওজন এবং কিছু নিষ্ক্রিয় ফিচার (যেমন টেলিফোটো লেন্স) প্রয়োজন মনে করেন না, তাদের জন্য iPhone 17 Air হতে পারে ২০২৫ সালের সেরা পছন্দ। ‘এয়ার’ ফিরে এসেছে, এবং আগের চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় রূপে।
তথ্যসূত্র –
- https://www.phonearena.com/news/iphone-17-17-air-17-pro-all-features-coming-in-week_id173755
- https://bengali.gadgets360.com/mobiles/iphone-17-pro-iphone-17-pro-max-launch-price-availability-specifications-features-details-apple-news-9246625
- https://www.apple.com/iphone-17/
- https://banglahunt.com/fight-started-among-the-buyers-for-iphone-17-srp/