Image default
আফ্রিকাদেশ পরিচিতি

ছিদ্রায়িত রাষ্ট্র লেসোথো

লেসেথোকে আরও বলা হয় “Kingdom in the Sky” বা আকাশের রাজ্য। 

পৃথিবীর মানচিত্রে এমন একটি দেশ আছে যা ভৌগলিক দিক দিয়ে একেবারেই আলাদা। কারণ,পুরো দেশটি যেন অন্য একটি দেশের ভেতরে আটকে পড়ে আছে। হ্যাঁ, দক্ষিণ আফ্রিকা নামের বিশাল একটি দেশ ঘিরে রেখেছে এই ছোট্ট দেশটিকে। আর এই কারণেই এই দেশটিকে বলা হয় “ছিদ্রায়িত রাষ্ট্র” বা enclave state। আর এই দেশটির নাম হলো লেসেথো। 

আজকের আমরা জানবো সেই ছিদ্রায়িত রাষ্ট্র লেসেথো সম্পর্কে নানা জানা অজানা তথ্য।

লেসেথোর অবস্থান 

লেসেথোকে বলা হয় “Kingdom in the Sky” বা আকাশের রাজ্য। কারণ, দেশটির পুরো ভূখণ্ড জুড়েই পাহাড়। এমনকি এর সবচেয়ে নিচু অঞ্চলও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৪০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আর এই কারনেই এটি পৃথিবীর একমাত্র “উচ্চভূমি রাষ্ট্র”। পাহাড়, খাড়া উপত্যকা, আর বরফঢাকা চূড়া প্রায় সবই রয়েছে এই দেশে!

এই দেশটি পুরোপুরি দক্ষিণ আফ্রিকার ভেতরে অবস্থিত হওয়ায় এর সব দিকেই শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা, এবং এর বাইরে আর কোনো প্রতিবেশী দেশ নেই। এর মানে হলো, লেসেথো যদি বিশ্ববাজারে যেতে চায়, তবে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বন্দর, রাস্তা, বা আকাশপথ ব্যবহার করতেই হবে। ফলে, দেশটির অর্থনীতি, রাজনীতি, এমনকি মানুষের দৈনন্দিন জীবনও অনেকটাই দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর নির্ভরশীল। আর এই নির্ভরশীলতাই একে “ছিদ্রায়িত রাষ্ট্র” হিসেবে আলাদা করেছে। 

ম্যাপ

লেসেথোর আয়তন ও জনসংখ্যা

লেসোথোর প্রাচীন নাম বাসোথো। এর সরকারি নাম কিংডম অব লেসোথো। দেশটির সরকারি ভাষা সোথো ও ইংরেজি। এই লেসেথোর মোট আয়তন প্রায় ৩০,৩৫৫ বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস, যাদের বেশিরভাগই বাসোথো জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। 

লেসেথোর ইতিহাস

লেসেথোর জন্মকথা আফ্রিকার উপনিবেশিক ইতিহাসের সাথে গভীরভাবে জড়িত। উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় একদিকে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদী শক্তি প্রবল হয়ে উঠছিল, অন্যদিকে স্থানীয় উপজাতিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, খরা এবং খাদ্য সংকট দেশটির পরিস্থিতিকে অনেক জটিল করে তুলেছিল। এই সময় প্রথম মশেশো নামের একজন দূরদর্শী নেতা উঠে আসেন। তিনি ছিলেন বাসোথো জনগোষ্ঠীর নেতা। 

মশেশোর সময়কালে লেসেথো প্রায়ই আশেপাশের বড় শক্তির আক্রমণের মুখে পড়ত। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বুর বসতিগুলোর সাথে তাদের নিয়মিত সংঘর্ষ লেগেই থাকতো। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে মশেশো স্বেচ্ছায় ব্রিটিশদের সাহায্য চান। তিনি বিশ্বাস করতেন, ব্রিটিশদের সুরক্ষা ছাড়া বুরদের আগ্রাসন ঠেকানো কঠিন হবে।

১৮৬৮ সালে ব্রিটিশরা আনুষ্ঠানিকভাবে লেসেথোকে তাদের সুরক্ষার আওতায় নেয় এবং দেশটির নতুন নাম দেয় বাসোথোল্যান্ড। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে লেসেথো প্রায় এক শতাব্দী কাটায়। অবশেষে ১৯৬৬ সালে দেশটি ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে এবং এর নতুন নাম হয় Kingdom of Lesotho। স্বাধীনতার পর তারা সংবিধানিক রাজতন্ত্র হিসেবে তাদের রাজকীয় ঐতিহ্য বজায় রেখে দেশ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।

লেসেথোর সংস্কৃতি

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিকভাবে লেসেথো অনেক সংকটের সম্মুখীন হলেও তারা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ভুলে যায়নি। 

যেমন- দেশটির সংগীত তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাহাড়ি জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করতে সংগীতের ভূমিকা অপরিসীম। এখানকার লোকসঙ্গীতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বাদ্যযন্ত্র হলো “লেসিবা”। এটি একধরনের বাঁশির মতো বাদ্যযন্ত্র, তবে সাধারণ বাঁশির চেয়ে এর শব্দ অনেকটাই ভিন্ন। এর সুর প্রাকৃতিক পাখির ডাক বা বাতাসের শব্দের মতো শোনায়। কৃষকরা মাঠে কাজ করার সময় বা যোদ্ধারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এই বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন।

বাসোথো নৃত্য

নাচও বাসোথো সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লেসেথোর নৃত্যে দেখা যায় যুদ্ধকলা, ক্রীড়া ও আধ্যাত্মিক রীতির মিশ্রণ। পুরুষরা সাধারণত শক্তি ও সাহস প্রদর্শনের জন্য জোরে পা ফেলা, লাফানো এবং হাততালির মাধ্যমে ছন্দ তৈরি করেন। অপরদিকে নারীদের নাচ অনেকটা কোমল, যেখানে গানের সাথে শরীরের মুভমেন্ট মিলে যায়। উৎসব, ফসল কাটা, বিবাহ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই নাচ ও গান পুরো গ্রামকে একত্রিত করে আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি করে।

লেসেথোর মানুষের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সাথে যে জিনিসটি সবচেয়ে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে তা হলো বিখ্যাত বাসোথো কম্বল। সাধারণ কম্বলের সাথে এর পার্থক্য রয়েছে, আর তা হলো এটি কেবল শীত থেকে বাঁচার উপকরণ নয়, বরং এটি মর্যাদা, ঐতিহ্য ও সামাজিক অবস্থানের প্রতীক। এই কম্বলের বিশেষ নকশা ও রঙের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। কোনো কম্বল রাজকীয় মর্যাদার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, আবার কোনোটি সাধারণ মানুষের পোশাকে ব্যবহার করা হয়। আজকের আধুনিক যুগেও বাসোথো জনগণ তাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে এই কম্বল ব্যবহার করে আসছেন। ফলে, লেসেথোর পতাকা ও ডাকটিকিটে এই কম্বলের ছবি দেখা যায়।

লেসেথোর বিখ্যাত কম্বল

লেসেথোর খাবারও তাদের পাহাড়ি পরিবেশ ও কৃষিনির্ভর জীবনযাত্রার প্রতিফলন। সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো “পাপা” (Papa), যা ভুট্টার আটা দিয়ে তৈরি এক ধরনের ঘন খিচুড়ি বা পায়েস জাতীয় পদ। এটি সাধারণত সবজি বা মাংসের ঝোলের সাথে খাওয়া হয়। প্রতিদিনের প্রধান খাদ্যতালিকায় পাপা এক অপরিহার্য উপাদান।

এছাড়া “মোরোহো” (Moroho) নামের শাক অত্যন্ত জনপ্রিয়। পাহাড়ি অঞ্চলে সহজলভ্য এই শাক রান্না করা হয় সাধারণ মসলা ও তেলে। গরু ও ভেড়ার মাংসও তাদের খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ অনুষ্ঠান বা অতিথি আপ্যায়নে মাংস রান্না করা হয় বিশেষ রেসিপিতে, যা পরিবারের সবার জন্য আনন্দের বিষয়।

লেসেথোর পর্যটন স্থান

সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পাশাপাশি লেসেথোকে একটি অসাধারণ সৌন্দর্যের দেশও বলা হয়। 

ড্রাকেন্সবার্গ (The Drakensberg)

সৌন্দর্য্যের তালিকায় প্রথমেই আসি লেসেথোর সবচেয়ে বিখ্যাত পাহাড়ি অঞ্চল ড্রাকেন্সবার্গে। এই পর্বতমালার চূড়া তুষারঢাকা, খাড়া পাহাড় আর সবুজ উপত্যকার মিলনে যেন একটি ছবির মতো দৃশ্য উপস্থাপন করে। সকালে সূর্যের আলো পড়লে পাহাড়ের ঢালগুলো সোনালী রঙে ঝলমল করে, আর বিকেলে সূর্যাস্তের সঙ্গে সবুজ ও সোনালী ছায়া মিশে এক রহস্যময় আবহ সৃষ্টি করে। এছাড়াও এখানে রয়েছে ছোট ছোট ঝরনা, পাহাড়ি পথ ধরে হাইকিং করার মতো ট্রেইল, এবং পাহাড়ি গুহা যেখানে প্রাচীন বাসোথোদের আঁকা গুহাচিত্র দেখা যায়। এই গুহাচিত্রগুলো প্রাচীন যুদ্ধে ব্যবহার করা অস্ত্র, শিকার বা দৈনন্দিন জীবনের গল্প বলে।

থাবানা এনটলেনইয়ানা (Thabana Ntlenyana)

লেসেথোর সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ হলো থাবানা এনটলেনইয়ানা, যার উচ্চতা প্রায় ৩,৪৮২ মিটার, এটি পুরো দক্ষিণ আফ্রিকারই সর্বোচ্চ বিন্দু। তবে, স্থানীয় ভাষায় এর অর্থ “ছোট পর্বত”। এই পাহাড়কে ঘিরে আছে মালোটি পর্বতমালা, যা লেসোথোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মণিমুক্তা। শীতে থাবানা এনটলেনইয়ানা তুষারের চাদরে ঢাকা পড়ে, যা আফ্রিকার জন্য একেবারেই অস্বাভাবিক ও বিরল দৃশ্য। তাই এই অঞ্চলকে বলা হয় আফ্রিকার অন্যতম স্কি-ডেস্টিনেশন। এখানকার নির্মল আবহাওয়া, স্বচ্ছ আকাশ আর বরফে মোড়া প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক ও ট্রেকারকে টেনে আনে। 

লায়ন রক মাউন্ট (Lion Rock Mountain) 

লেসেথোর প্রাকৃতিক বিষ্ময়ে পরীপূর্ণ একটি পর্যটন স্থান হলো লায়ন রক মাউন্ট। অবাক করা বিষয় হলো এটি সিংহের মতো আকৃতির বিশাল একটি পাথুরে পাহাড়। দূর থেকে দেখলে একে সত্যিই মনে হয় পাহাড়টা সিংহ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর চূড়া থেকে দেখা যায় আশেপাশের উপত্যকা আর খোলা আকাশের অপূর্ব দৃশ্য। ট্রেকিং ও ফটোগ্রাফির জন্য জায়গাটি একেবারে আদর্শ।

লায়ন রক মাউন্ট

থাবা বোসিউ (Thaba Bosiu) 

এদিকে দেশটির থাবা বোসিউ শুধু পাহাড় নয়, লেসোথোর জাতীয় ইতিহাসের প্রতীক। রাজা মোশোশো এই পাহাড়ে তাঁর দুর্গ গড়ে তুলেছিলেন, এখান থেকেই লেসোথোর জন্ম। এখনো এই স্থানে রাজপরিবারের সমাধি এবং ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষিত আছে। স্থানীয়রা একে দেশের আত্মার পাহাড় বলে মানেন।

কাটসে ড্যাম (Katse Dam)

দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আরও একটি প্রমাণ হলো কাটসে ড্যাম। এটি দেখতে যেন প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিশাল নীল আয়না। লেসোথোর মালোটি পর্বতের কোলে তৈরি এই বাঁধ পুরো দেশটির অন্যতম প্রকৌশল বিস্ময়। বিশাল হ্রদ আর চারপাশে সবুজ পাহাড় মিলিয়ে দৃশ্যটা শ্বাসরুদ্ধকর। পর্যটকেরা এখানে বোট রাইড উপভোগ করতে পারেন, আবার স্থানীয় গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়।

মাফিকা লিসিউ পাস (Mafika Lisiu Pass View Point) 

লেসোথোর আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলোর মধ্যে মাফিকা লিসিউ পাস হচ্ছে সবচেয়ে নাটকীয় পর্যটন স্থান। কারণ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,০০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই আঁকাবাঁকা সড়ক ধরে ভ্রমণ করলে দেখা যায় শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য, দিগন্তজোড়া সবুজ পাহাড়, গভীর উপত্যকা আর মাঝে মাঝে ভেসে আসা সাদা মেঘ। এসময় মনে হয় যেন গাড়ি নয়, আসলে মেঘের ভেলায় ভেসে যাচ্ছেন পর্যটকেরা। ড্রাইভিং প্রেমীদের কাছে এটি নিছক রাস্তা নয়, বরং এক অ্যাডভেঞ্চারের নাম। প্রতিটি বাঁক নতুন চমক নিয়ে হাজির হয়। পর্যটকেরা এখানে এসে প্রায়ই থেমে যান ভিউ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে। 

মাফিকা লিসিউ পাস

গেটস অফ প্যারাডাইস (Gates of Paradise Pass) 

গেটস অফ প্যারাডাইস পাস লেসোথোর অন্যতম মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যপটের নাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,০০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই পাসে উঠতে উঠতে প্রথমে মনে হয় কেবলই একের পর এক বাঁকানো পাহাড়ি রাস্তা। কিন্তু হঠাৎ করেই যখন চোখের সামনে উন্মোচিত হয় বিশাল উপত্যকা, তখন সত্যিই মনে হয় স্বর্গের কোনো দরজা খুলে গেছে। এখানকার বাতাস ঠাণ্ডা ও নির্মল, আর চারদিকে সবুজ পাহাড়, ছোট ছোট গ্রাম আর আঁকাবাঁকা নদী মিলিয়ে এক অনন্য দৃশ্য তৈরি করে। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় এই ভিউ আরও জাদুকরী হয়ে ওঠে। পর্যটকরা তাই একে শুধু একটি ভিউপয়েন্ট নয়। অনেকে একে “লেসোথোর সবচেয়ে সুন্দর জানালা” বলে থাকেন। 

মালেতসুনিয়ানে জলপ্রপাত (Maletsunyane Falls) 

পাহাড় থাকবে আর জলপ্রপাত থাকবে না এমন কি হয়? ১৯২ মিটার উঁচু মালেতসুনিয়ানে জলপ্রপাতকে বলা হয় লেসোথোর প্রতীক। এই জলপ্রপাতের উপরের দিক থেকে গর্জে পড়া পানির শব্দ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু অ্যাবসেইলিং করার স্থান। অর্থাৎ অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা চাইলেই এই পাহাড়ি জলপ্রপাতটিতে দড়ির সাহায্যে উঠতে পারবেন। আর এটি হয়ে পারে পর্যটকদের কাছে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

কোমে কেভস (Kome Caves) 

লেসেথোর একটি অদ্ভুত এবং মজার পর্যটনস্থান হলো কোমে কেভস। এই কোমে কেভস দেখতে যেন রুপকথার গল্পের বইয়ের বাড়ি। পাহাড় কেটে বানানো এই গুহাগুলো মূলত শত শত বছর ধরে বাসোথো জনগোষ্ঠীর বসতি ছিল। মাটির দেয়াল আর গুহার ভেতর ছোট ছোট ঘরগুলোতে আজও মানুষ বসবাস করে। এটি লেসোথোর ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রার জীবন্ত নিদর্শন।

কোমে কেভস

অর্থনৈতিক অবস্থার দিক থেকেও লেসেথো একটি সংগ্রামী দেশ। এখানে বেকারত্বের হার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ, যা তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কাজের সুযোগ কম থাকায় বহু মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে খনির শ্রমিক বা স্বল্প বেতনের চাকরি করতে বাধ্য হয়। দারিদ্র্যের হারও উদ্বেগজনক জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে।

দেশটিতে পাহাড়ি অঞ্চলের আধিক্য থাকার ফলে চাষাবাদ যোগ্য জমির অভাব দেখা যায়। ফলে ভুট্টা, গম ও শাকসবজি চাষ করা হলেও তা দিয়ে দেশের খাদ্যচাহিদা পূরণ হয় না। অধিকাংশ সময় লেসেথোকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে খাদ্য আমদানি করতে হয়। আবার, খরা ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত কৃষিকাজকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

লেসেথোর গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো পশুপালন । এখানকার পাহাড়ি তৃণভূমি গবাদি পশু ও ছাগল পালনের জন্য উপযোগী। বিশেষ করে ভেড়া থেকে পাওয়া উলও রপ্তানি আয়ের একটি উৎস। যদিও এটি দেশের অর্থনীতিকে পুরোপুরি শক্তিশালী করতে পারে না, তবে বহু গ্রামীণ পরিবারের জীবিকার সহায়ক।

এছাড়াও লেসেথোর অর্থনীতিতে খনিজ সম্পদ বিশেষ ভূমিকা রাখে। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হীরার খনি রয়েছে। এখানকার হীরা আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমানের হিসেবে স্বীকৃত। হীরার রপ্তানি জাতীয় আয়ের বড় একটি উৎস এবং সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান ভরসা।

তবে, লেসেথো শুধু একটি দেশ নয়, এটি এক অদ্ভুত বৈপরীত্যের প্রতীক। মানচিত্রে লেসেথো হয়তো কেবল এক ক্ষুদ্র বিন্দু। কিন্তু সেই বিন্দুর ভেতরে লুকিয়ে আছে ইতিহাস, সংগ্রাম, এবং এক পাহাড়ি জাতির স্বপ্ন।

তথ্যসূত্র:

Related posts

নিউজিল্যান্ড – ‘আয়োটেয়ারোয়া’ বা সাদা মেঘের দেশ

আফগানিস্তান: সমালোচনা ও সম্ভাবনা যেখানে মিলেমিশে একাকার

দক্ষিণ কোরিয়ার জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার জগৎ!

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More