Image default
অস্ট্রেলিয়াদেশ পরিচিতি

নিউজিল্যান্ড – ‘আয়োটেয়ারোয়া’ বা সাদা মেঘের দেশ

সাধারনত আমরা সাতটি মহাদেশের কথা জেনে থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে আরো একটি মহাদেশের খোঁজ পাওয়া গেছে। যেটি আসলে পানির নিচে ডুবন্ত অবস্থায় আছে। এ মহাদেশকে জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ হিসেবে ডাকা হয়। এ মহাদেশের যেটুকু অংশ পানির উপরে জেগে আছে সে অংশটুকুই আসলে নিউজিল্যান্ড।  

মাওরি আদিবাসীদের দেশ ‘আয়োটেয়ারোয়া’ অর্থাৎ নিউজিল্যান্ড, যেন  এক রহস্যময় সৌন্দর্য! সাদা মেঘের দেশ হিসেবে পরিচিত নিউজিল্যান্ডকে সৃষ্টিকর্তা যেন নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন। এখানে পা রাখতেই দেখা মেলে আকাশছোঁয়া পাহাড়, সবুজ বনভূমি, অনন্য প্রাণী বৈচিত্র্য, স্বপ্নের মত স্বচ্ছ নীল জল; সব মিলিয়ে যেন এক অপার শান্তিময় অভিজ্ঞতা। 

নিউজিল্যান্ড একটি উন্নত দেশ। এটি আন্তর্জাতিক ভাবে প্রচলিত মানব-উন্নয়ন সূচকে উপরের দিকেই অবস্থান করছে। পৃথিবীর সর্বাধিক বাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের শহরগুলো অন্যতম। আবার, পৃথিবীর শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় বেশ কয়েকবার প্রথম স্থান দখল করেছে এই দেশটি।

রাজধানী ওয়েলিংটন 
সরকারি ভাষা ইংরেজি
জনসংখ্যা ৫,০৯৩,২৩০ (২০২০ আদমশুমারি )
মোট আয়তন ২,৬৮,০২১ কিলোমিটার
মুদ্রা নিউজিল্যান্ড ডলার 
সময় অঞ্চল UTC +১২ 

UTC + ১৩ (গ্রীষ্মকালীন)

নিউজিল্যান্ডের অবস্থান ও একটি নতুন মহাদেশের আবিষ্কার

দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড। দেশটি সম্পর্কে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হচ্ছে, নিউজিল্যান্ড ওশেনিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত হলেও এটি প্রকৃতপক্ষে পানির নিচে ডুবে থাকা জিলান্ডিয়া মহাদেশের অংশ। সাধারনত, আমরা সাতটি মহাদেশের কথা জেনে থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে আরো একটি মহাদেশের খোঁজ পাওয়া গেছে। এই মহাদেশটি আসলে পানির নিচে ডুবন্ত অবস্থায় আছে; যাকে জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ হিসেবে ডাকা হয়। এ মহাদেশের যেটুকু অংশ পানির উপরে জেগে আছে সে অংশটুকুই আসলে নিউজিল্যান্ড।  

ম্যাপ

নিউজিল্যান্ডের আয়তন ও জনসংখ্যা 

নিউজিল্যান্ডের মোট আয়তন ২,৬৮,০২১ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ৭৫তম দেশ। দেশটির বর্তমান মোট জনসংখ্যা ৫০ লাখ ৩১ হাজার। অবাক করা একটি বিষয় হলো, এদের মধ্যে প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ নাস্তিক, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। বাকিদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ খ্রিস্টান, ৩ শতাংশ হিন্দু এবং ২ শতাংশ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। বাকিরা অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাসী। 

নিউজিল্যান্ডের জনসংখ্যা

ওয়েলিংটন নিউজিল্যান্ডের রাজধানী এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এই শহরটি দেশের প্রধান রাজনৈতিক কেন্দ্র। জীবন-যাপনের মানের দিক দিয়ে ওয়েলিংটন পৃথিবীর ১২তম শ্রেষ্ঠ শহর।  ওয়েলিংটন জমজমাট ক্যাফে সংস্কৃতি আর রাতের বৈচিত্র‍্যের জন্য বিখ্যাত। 

তবে, নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম ও সবচেয়ে জনবহুল এলাকা হলো অকল্যান্ড। অকল্যান্ড দেশের প্রধান অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রধান ব্যবসায়িক কেন্দ্র। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ এ শহরে বাস করে। 

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস 

১৬৪২ সালে ইউরোপীয় ওলন্দাজ অভিযাত্রি ‘আবেল তাসমান’ নিউজিল্যান্ডে প্রথম নোঙ্গর ফেলেন। ১৮শ শতকের শেষের দিকে এখানে বিভিন্ন দেশের অভিযাত্রী, নাবিক ও বনিকেরা আসতে থাকেন। পরবর্তীতে ১৮৪০ সালে নিউজিল্যান্ড বৃটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশটি পুনঃস্বাধীনতা লাভ করে। দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তবে তিনি রাষ্ট্র প্রধান হলেও প্রকৃতপক্ষে দেশের রাজনৈতিক ব্যাপারে রানীর কোনো প্রভার নেই। রানী কেবলই আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান। তার প্রতিনিধি নিউজিল্যান্ড সরকারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী।

নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া ও প্রকৃতি 

নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া ও প্রকৃতির উপর সমুদ্রের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। সমুদ্র যেন নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীদেরকে সত্যিই হাত বাড়িয়ে ডাকছে সারাক্ষণ।

সমুদ্র-কন্যা নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডে মূলত একটি তীব্র সামুদ্রিক জলবায়ু বিদ্যমান। দেশেটির গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ১০-১৬° সেলসিয়াসের ভেতরে থাকে। নিউজিল্যান্ডকে বলা হয়, সত্যিকার অর্থে সমুদ্র কন্যা। ছোট্ট এই দেশটির উপকূলীয় তটরেখার দৈর্ঘ্য ১৫,১৩৪ বর্গ কিলোমিটার; যা বিশ্বের নবম বৃহত্তম। কেউ নিউজিল্যান্ডে গেলে সমুদ্র থেকে সর্বোচ্চ ১২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করতে পারবে, এর বেশি নয়। 

নিউজিল্যান্ডের ভূ-খণ্ড 

নিউজিল্যান্ড মূলত দুটি প্রধান বৃহৎ দ্বীপ নিয়ে গঠিত। যেগুলো উত্তর ও দক্ষিণ দ্বীপ নামে পরিচিত। কুক প্রনালী নামে অপেক্ষাকৃত সরু সামুদ্রিক প্রনালী দ্বীপ দুটিকে পৃথক করে রেখেছে। এছাড়াও, এখনে আরো বেশকিছু ক্ষুদ্র দ্বীপ আছে। যার মধ্যে স্টুয়ার্ট ও চাখাম দ্বীপপুঞ্জ দুটির নাম উল্লখযোগ্য। নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটন উত্তর দ্বীপে অবস্থিত।

কিউই পাখি

নিউজিল্যান্ডের প্রানীবৈচিত্র্য মনোমুগ্ধকর। মানব-বসতি প্রতিষ্ঠার পূর্বে থেকেই এখানে প্রচুর পাখির বসবাস ছিলো। এর মধ্যে অনেক প্রজাতি ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এদের মধ্যে দীর্ঘ চক্ষু বিশিষ্ট কিন্তু উড়তে অক্ষম কিউই নামের পাখিটি কেবল নিউজিল্যান্ডেই দেখতে পওয়া যায়। পাখিটি নিউজিল্যান্ডের জাতীয় প্রতীক। অনেক সময় নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীদেরকেও গণমাধ্যমে কিউই নামে সম্বোধন করা হয়।

নিউজিল্যান্ডের কিউই পাখি

নিউজিল্যান্ডের বিলুপ্তপ্রায় কৌরিগাছ

নিউজিল্যান্ডের প্রকৃতির আশ্চর্য একটি উপাদান হলো কৌরি গাছ। জেনে অবাক হবেন,  এই গাছটি বড় হতে সময় নেয় প্রায় দুইশ বছর। আর কৌরি গাছের বিখ্যাত ফল কিউয়ি। যদিও কিউয়ি আদি উৎস চীন। কিন্তু নিউজিল্যান্ড কিউয়ি উৎপাদনে বিখ্যাত। 

নিউজিল্যান্ডের কৌরি গাছ

নিউজিল্যান্ড ডেইরি

এই ফলের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের আরকটি বিখ্যাত জিনিস হচ্ছে ডেইরি প্রোডাক্ট। দুধ ও দুদ্ধজাত খাবারের উৎপাদনে নিউজিল্যান্ড সেরা। একবছরে দেশটিতে প্রতিটি মানুষের জন্য গড় হিসেবে মাথাপিছু ১০০ কেজি মাখন এবং ৬৫ কেজি পনির উৎপন্ন হয়। 

পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি পোকা 

নিউজিল্যান্ডের জায়ান্ট ওয়েটা পোকা

নিউজিল্যান্ডে জায়ান ওয়েটা নামের এক ধরনের পোকা পাওয়া যায়।  যারা বিশ্বের সবথেকে ভারি পোকা। তবে, এখানে যত প্রকার প্রাণী আছে তার মধ্যে ক্যাটিপো স্পাইডার নামের মাকড়সাই একমাত্র প্রানী যারা বিষধর। 

পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডকে ভেড়ার শহরও বলা চলে। মানুষ ও ভেড়ার মোট সংখ্যা হিসেব করে দেখা যায়, একজন মানুষের বিপরীতে এ দেশে রয়েছে নয়টি ভেড়া। অবশ্য এর পেছনের বড় কারণটি হচ্ছে এদেশের জনসংখ্যা। 

নিউজিল্যান্ডের ক্যাটিপো স্পাইডার

নিউজিল্যান্ডের সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনধারা 

আদিবাসীদের মাওরি ভাষা

ইংরেজি নিউজিল্যান্ডের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। দেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ মানুষ ইংরেজিতে কথা বলে। আর, দেশটির আদিবাসী মাওরিদের মাতৃভাষা হলো, মাওরি ভাষা। একসময় মাওরি ভাষা প্রায় বিলুপ্তির মুখোমুখি ছিল। বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং অনেক তরুণ মাওরি ভাষা শিখছে। 

১৯৮৭ সালে মাওরি ভাষাকে নিউজিল্যান্ডের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটি ছিল মাওরি জনগণের দীর্ঘ সংগ্রামের একটি অর্জন। মাওরি ভাষা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে “কোহাঙ্গা রেও” বা মাওরি ভাষার শিশু বিদ্যালয়। এই প্রোগ্রাম শিশুদেরকে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই মাওরি ভাষায় শিক্ষিত করে তুলে। 

মাওরি ভাষার বর্ণমালা

নিউজিল্যান্ডের শান্তিপ্রিয় মানুষ

নিউজিল্যান্ড বসবাসের জন্য চমৎকার একটি দেশ হলেও এখানকার জনসংখ্যা অত্যন্ত কম। এর জনসংখ্যা ৫০ লক্ষের খানিকটা বেশি। নির্জন প্রকৃতির মতোই শান্তি প্রিয় এদেশের মানুষ। এতোটাই শান্তিপ্রিয় যে এখানে কোথাও কোনদিনই আইন-রক্ষা বাহিনীর কড়াকড়ি ছিল না। এখানে মানুষজন ঘরে তালা না দিয়েও বেড়িয়ে চলে যেতে পারতো। তবে, ২০১৯ সালে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর আর আগের মতো অবাধ স্বাধীনতা নেই নিউজিল্যান্ডবাসীর। তবুও এখনও এটি পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ দেশেগুলোর মধ্যে একটি।

জেনে অবাক হবেন, নিউজিল্যান্ডই পৃথিবীর সর্বপ্রথম দেশ, যারা নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে। ১৮৯৩ সাল থেকে দেশটি পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে। আবার, এখানে ১৫ বছর বয়সেই যে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যায়। নিউজিল্যান্ডে মদ্যপান করার জন্য বয়স মাত্র ১৬ হলেই চলে।

নিউজিল্যান্ডের মদ খুব বিখ্যাত। নিউজিল্যান্ড বছরে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের ওয়াইন রপ্তানি করে। বিখ্যাত মালবোরো ও হকসবে ছাড়াও নিউজিল্যান্ডে রয়েছে অন্তত দশটি বৃহৎ মদ উৎপাদন অঞ্চল। 

নিউজিল্যান্ডের একটি চমৎকার বিষয় হচ্ছে,  তারা প্রকৃতি সংরক্ষণে খুব বেশি সচেতন। প্রকৃতির বৈচিত্র্য যাতে মানুষের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হতে পারে, তাই দেশটির মোট আয়তনের এক তৃতীয়াংশই সেখানকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আওতায় রয়েছে। 

নিউজিল্যান্ডের নাইটলাইফ 

নিউজিল্যান্ডের রাতের অভিজ্ঞতা সত্যিই স্বপ্নময়, কল্পনাতীত এবং দুঃসাহসিক। নিউজিল্যান্ডবাসির রাতের জীবনে প্রবল ভাবে মাওরি সংস্কৃতি এবং আধুনিকতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। 

নাইটলাইফের জন্য বিখ্যাত অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন এবং ক্রাইস্টচার্চের মত বড় ও প্রাণবন্ত শহরগুলো। এই শহরগুলোর প্রতিটি কোনায় কোনায় থাকে আলোর ঝলকানি, সংগীতের ছন্দ আর প্রাণবন্ত লোকজনের ভিড়। সব মিলিয়ে এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা রাতের মজাটা দারুনভাবে উপভোগ করতে পারে। 

নিউজিল্যান্ডের রাত্রিকালীন অভিজ্ঞতাকে সুন্দর করে তোলার আরও একটো উপায় হলো স্টারগেজিং বা তারা দেখা। এ অভিজাত অভিজ্ঞতাটি নিতে চাইলে সুপার ইয়াট ভাড়া করতে হয়। সুপার ইয়াটে করে ভ্রমণ এবং রাতের আকাশের তারা দেখার অভিজ্ঞতা পর্যটকদের নিয়ে যেতে পারে এক স্বপ্নের দেশে। 

নিউজিল্যান্ডের ইয়টে নাইটলাইফ অভিজ্ঞতা

এরপর রয়েছে, অকল্যান্ডের স্কাই টাওয়ার। ৩২৮ মিটার উঁচু টাওয়ারটি মূলত অকল্যান্ডের টেলিযোগাযোগ এবং পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। জনসাধারণের জন্য প্রবেশাধিকার যোগ্য টাওয়ারটি প্রতিদিন গড়ে ১,১৫০ জন দর্শককে ধারণ করতে পারে। টাওয়ারটির উপরের অংশগুলো রাতে আলোকিত হয়ে থাকে। টাওয়ারের উপরের অংশে দুটি  রেস্তোরাঁ এবং একটি ক্যাফে রয়েছে। মজার বিষয় হলো এটি  নিউজিল্যান্ডের একমাত্র ঘূর্ণায়মান রেস্তোরাঁ। রেস্তরাঁটি প্রতি ঘন্টায় ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে। আকাশ ছোঁয়া টাওয়ারটির উপরে রোমাঞ্চকর ডাইনিং, পর্যটকদের রাতের জাদুকরী সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাহায্য করবে। 

এছাড়া, ওয়েলিংটনের লাইভ মিউজিক ভেন্যুতে কনসার্ট, মিউজিক্যাল পারফরম্যান্স বা আর্ট ইভেন্ট নিউজিল্যান্ডের নাইট লাইফের উল্লেখযোগ্য উপভোগ্য জায়গা।

নিউজিল্যান্ডের স্কাই টাওয়ার

মাওরি সংস্কৃতি 

মাওরি জনগোষ্ঠীর দিকে তাকালেই বোঝা যায় নিউজিল্যান্ড কতটা  শান্তিপ্রিয়! সাধারনত সব দেশেই আদিবাসীদের অবহেলিত চোখে দেখা, তাদেরকে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা কাজ করা একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সে তুলনায়  নিউজিল্যান্ডের মাওরিরা অনেক এগিয়ে। তারাই নিউজিল্যান্ডের আদিম অধীবাসি। মাওরি শব্দ ‘আয়োটেয়ারোয়া’, যার অর্থ সাদা মেঘের দেশ।

মাওরি জাতি

মাওরিদের ইতিহাস

১২৫০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মাওরি জাতির মানুষেরা কয়েকটা বাঁকানো নৌকা নিয়ে সমুদ্র পথে নিউজিল্যান্ডে প্রবেশ করে এবং সেখানেই স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে। যতদিন না ইউরোপীয়রা নিউজিল্যান্ডে প্রবেশ করে; মাওরিদের জীবন যাত্রা প্রকৃত অর্থেই ছিলো খুব সাধারণ।

১৭০০ শতকের প্রথম ভাগের দিকে। নিউজিল্যান্ড ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায়। তারা, মাওরিদের নিজেদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে। তবে, সেসময় মাওরিরা রুখে দাঁড়ায়। দুই পক্ষ জড়িয়ে পরে বিশাল সংঘাতে। ১৮৪০ সালে ‘ওয়েলটাঙ্গি চুক্তি’র মাধ্যমে এ সংঘাতের শান্তিপূর্ণ অবসান ঘটে।

১৮৬০ সালে বাসস্থান ও চাষাবাদের জমি বণ্টন নিয়ে মাওরিরা পুনরায় ইউপীয়দের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পরে। ফলে, তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মাওরিরা নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে, তাদের অনেকটা উন্নতি ঘটে। বর্তমানে তাদের সংস্কৃতি, বিশেষ করে নাচ, নিয়ে গর্ব করে নিউজিল্যান্ডবাসীরা। 

ইউরোপীয়দের সাথে মাউরিদের যুদ্ধ

মাওরিদের নৃত্য

মাওরিদের নাচ খুবই আকর্ষণীয় ও অনন্য। এই নাচের সময় গায়ে রং মেখে আকর্ষনীয় সব অঙ্গভঙ্গি করে তারা নাচ প্রদর্শন করে। গুরুত্বপূর্ণ কোনো অতিথিকেও তারা এই নাচের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানায়। এ থেকে নিউজিল্যান্ডের আদিবাসীদের প্রতি উদার মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। 

মাওরিদের নৃত্য

নিউজিল্যান্ডের খাবার 

ঐতিহ্যবাহী খাবার থেকে আধুনিক রান্না, নিউজিল্যান্ডের প্রতিটি খাবারেই রয়েছে অনন্য বৈচিত্র্য। অধিকাংশ খাবারেই ইউরোপীয় এবং মাওরি রন্ধনশৈলির প্রভাব রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবারের মধ্যে রয়েছে – 

ল্যাম্ব-মাটন

ল্যাম্ব বা ল্যাম্ব-মাটন নিউজিল্যান্ডের একটি বিখ্যাত এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার। ভেড়ার মাংসকে রোজমেরি ও রসুন দিয়ে ভেজে এ খাবারটি প্রস্তুত করা হয়।

ল্যাম্ব/মাটন

মারমাইট

মার্মাইট সাধারণত রুটি বা ক্র্যাকারসের সাথে খাওয়া হয়। এটি এক ধরনের বিশেষ সস এর মতো। এর স্বাদ তীব্র এবং খানিকটা কড়া, প্রথমে খেতে ভালো না লাগলেও, অভ্যাস করা হলে অনেকেই এই খাবারটি পছন্দ করতে শুরু করেন। নিউজিল্যান্ডে এটি একটি জনপ্রিয় খাবার।

মারমাইট

পাউয়া  

পাউয়া মাওরি সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ। এটি মূলত একটি সামুদ্রিক শামুক, যা সাধারণত তরকারি হিসাবে খাওয়া হয়। রান্নার পর ফেলে দেওয়া শামুকের খোলসগুলোকে শো-পিস বা অ্যাশট্রে হিসাবেও ব্যবহার করা হয়। 

পাউয়া

ওয়াইন এবং পনির

নিউজিল্যান্ড নীল পনিরের জন্য বিখ্যাত। বিশেষকরে, ‘কপিতি ‘ এবং ‘হুইস্টোন’ পনির ব্র্যান্ডগুলি সারা বিশ্বে অনেক জনপ্রিয়। 

নিউজিল্যান্ডের স্যাভিগনন ব্লাঙ্ক নামের  ওয়াইনটি বিশ্বের সেরা ওয়াইন হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও, ক্যানটারবেরি ও মার্লবারোর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

ওয়াইন

হকি পকি আইসক্রিম

নিউজিল্যান্ডের একটি অন্যতম বিখ্যাত মিষ্টির নাম হচ্ছে হকি পকি আইসক্রিম। এটি ভ্যানিলা আইসক্রিমের সাথে চিনি কেরামেল দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি নিউজিল্যান্ডের সব জায়গাতেই এই আইস্ক্রিম পাওয়া যায়।

হকি পকি আইসক্রিম

সবুজ রঙের ঝিনুক 

সবুজ ঝিনুক নিউজিল্যান্ডের একটি বিশেষত্ব। কারণ, এটি পৃথিবীর আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এর খোলসগুলো সবুজ রঙ্গের হয়। আর এই ঝিনুকের মাংসের আকার বেশ বড় এবং নরম হয়। বিখ্যাত এই ঝিনুকটি পার্না ক্যানালিকুলাস নামেও জনপ্রিয়। এছাড়াও,  গ্রিনশেল ঝিনুক , কুকু এবং কুতাই নামেও পরিচিত।

পার্না ক্যানালিকুলাস

নিউজিল্যান্ডের পর্যটন আকর্ষণ এবং দর্শনীয় স্থানসমূহ 

লেক তাওপো 

নিউজিল্যান্ডের একটি অপুর্ব সুন্দর হ্রদ হচ্ছে লেক তাওপো। ১৮৬ খ্রীস্টপূর্বাব্দে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে লেকটির সৃষ্টি হয়। স্থানীয় গল্পে প্রচলিত আছে, সেই অগ্ন্যুৎপাত এতটায় ভয়ানক ছিলো যে, ইউরোপ ও চীনের সমগ্র আকাশ লাল হয়ে গিয়েছিলো। 

নিউজিল্যান্ডের লেক তাওপো

ব্লু লেক 

এই লেকের পানি এতটায় পরিষ্কার যে, পানির উপর থেকে তাকালে ৮০ মিটার গভীর পর্যন্ত দেখা যায়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে স্বচ্ছ জলাশয়। এই লেকটি নিউজিল্যান্ডের নেলসন লিগ পার্ক কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত আছে বলে, সেখানে কারো প্রবেশের অনুমতি নেই। 

নিউজিল্যান্ডের ব্লু লেক

কুইন্সটাউন

“নিউজিল্যান্ডের অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল” হিসাবে পরিচিত কুইন্সটাউন নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপে অবস্থিত। এখানকার কাওয়ারাউ ব্রিজ থেকে বাঞ্জি জাম্পিং, নদীতে জেট বোটিং বা ওয়াকাটিপু হ্রদে প্যারাগ্লাইডিং করার সুযোগ রয়েছে ।

নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউন শহর

অকল্যান্ড

“সিটি অফ সিলস” নামে পরিচিত অকল্যান্ড নিউজিল্যান্ডের অন্যতম  বৃহত্তম শহর। যেকোন পর্যটকের জন্য এটি অবশ্যই একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। 

অকল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানগুলি উপভোগ করার সবচেয়ে সেরা মাধ্যম হচ্ছে নৌকা ভ্রমণ। দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে ডাউনটাউন অকল্যান্ড, ওয়াইহেকে দ্বীপ, অলিভ গ্রোভসসহ আরো অনেক কিছু। 

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহর

ফিওর্ডল্যান্ড জাতীয় উদ্যান

নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে ফিওর্ডল্যান্ড জাতীয় উদ্যান। উদ্যানটিকে বিপন্ন সব স্থানীয় প্রাণীর অভয়ারণ্য বলা চলে। নিউজিল্যান্ডের বিলুপ্তপ্রায় পাখির প্রজাতি, যেমন- তাকাহে, মোহুয়া, কাকাপো, দক্ষিণী বাদামী কিউই সহ নানা নাম না জানা পাখির সন্ধান মেলে এই উদ্যানটিতে। কায়াকিং এবং হাইকিং এর জন্য ফিওর্ডল্যান্ড জাতীয় উদ্যান একটি উপযুক্ত স্থান।

নিউজিল্যান্ডের ফিওর্ডল্যান্ড জাতীয় উদ্যান

রোটোরুয়া

রোটোরুয়া শহরটি তার ভূ-তাপীয় জলের জন্য বেশ পরিচিত। রোটোরুয়া শুধু প্রাকৃতিক বিষ্ময়ের জন্যই নয়, বরং এটি মাওরি সংস্কৃতিত সমৃদ্ধ একটি এলাকা। মাওরিরা সর্বপ্রথম রোটোরুয়াতেই বসতি স্থাপন করেছিল। 

নিউজিল্যান্ডের রোটোরুয়া শহরের ভূ-তাপীয় জল

আবেল তাসমান জাতীয় উদ্যান

দক্ষিণ দ্বীপের আবেল তাসমান জাতীয় উদ্যানটি তার ছবির মতো সুন্দর সমুদ্র সৈকত এবং অত্যাশ্চর্য উপকূলীয় সৌন্দর্যের জন্য খ্যাত। সৈকতের স্বচ্ছ ফিরোজা রং এর পানি সাঁতার কাটা এবং কায়াকিং এর জন্য একদম উপযুক্ত জায়গা। অনেক সময় এ সৈকতে অনন্য কিছু বন্যপ্রাণী যেমন- সীল এবং ডলফিন দেখার সুযোগ মেলে ।

নিউজিল্যান্ডের আবেল তাসমান জাতীয় উদ্যান

মাউন্ট কুক জাতীয় উদ্যান

নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কুক এর নাম থেকে উদ্যানটির নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৫৩ সালে এই পার্বত্য অঞ্চলটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। ১৯৯০ সালে প্রাকৃতিক গাছপালা এবং প্রাণী- প্রাচুর্য রক্ষার জন্য ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। প্রকৃতি ও এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য অবশ্য দর্শনীয় স্থান এই উদ্যানটি। তুষার- ঢাকা চূড়ার এই উদ্যানটি পর্বতারোহীদের জন্য একটি স্বর্গ বলা যেতে পারে। ১৯১০ সালে,  এমেলিন ফ্রেডা ডু ফৌর- প্রথম মহিলা হিসেবে এই পর্বত আরোহণের রেকর্ড করেন।পর্বতারোহণ ছাড়াও ট্রেকিং, হাইকিং এবং শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য মাউন্ট কুক জাতীয় উদ্যানটি পর্যটকদের জন্য একটি সেরা পছন্দ।

নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট কুক জাতীয় উদ্যান

স্টুয়ার্ট দ্বীপ

নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ হচ্ছে স্টুয়ার্ট দ্বীপ। সবুজ অরণ্য, অনন্য বন্যপ্রাণী, হাইকিং ট্রেইল এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য দ্বীপটি সুপরিচিত। স্টুয়ার্ট দ্বীপটির সবথেকে আকর্ষণের বিষয় হচ্ছে এখানকার অনন্য বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। আলবাট্রস- কিউইসহ বিভিন্ন পাখির অভয়ারণ্য এ দ্বীপটি হাইকিং, মাছ ধরা, কায়াকিং, এবং নৌকা ভ্রমণের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম উপভোগ করার জন্য আদর্শ স্থান।

নিউজিল্যান্ডের স্টুয়ার্ট দ্বীপ

লেক টেকাপো

পর্যটকদের জন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ স্থান হতে পারে লেক টেকাপো। এটি একই সাথে নিউজিল্যান্ডের অন্যতম হট ওয়াটার বিচ। এখানে যে কেউ চাইলে বালি খনন করে নিজের জন্য পুল তৈরি করে নিতে পারে। এছাড়াও, সমুদ্র সৈকতে বসে এমন গরম গরম প্রাকৃতিক স্পা’র অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারে। 

নিউজিল্যান্ডের লেক টেকাপো

টোঙ্গারিরো জাতীয় উদ্যান 

চমৎকার প্রাকৃতিক  সৌন্দর্যে ঘেরা টোঙ্গারিরো জাতীয় উদ্যানটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, শান্ত বনাঞ্চল এবং বিভিন্ন আলপাইন তৃণভূমির আবাসস্থল। পাশাপাশি এই উদ্যানটিকে হাইকিংয়ের জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা বলা যায়। 

নিউজিল্যান্ডের টোঙ্গারিরো জাতীয় উদ্যান

নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ সুবিধা

নিউজিল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত মানের। এখানে ৬ থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামুলক। দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ শিক্ষিত।

শিক্ষার মান আর বিভিন্ন সূচক হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অতুলনীয়। OS Ranking এবং Times Higher Ranking মতে নিউজিল্যান্ডের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ই বিশ্বের প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত। 

উচ্চশিক্ষা পরবর্তী চাকুরির ক্ষেত্রেও নিউজিল্যান্ডের বাজার অত্যন্ত ঈর্ষনীয়। দেশটির প্রায় ৯৩ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা শেষ করে সরাসরি চাকুরিতে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। এই কারণটিই নিউজিল্যান্ডকে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে অন্যতম দেশ হিসেবে আলাদা করে রাখে।

নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক, মাস্টার্স বা পিএইচডি ধাপে বিভিন্ন ধরণের বিষয়ে অধ্যায়নের সুযোগ রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ট্যুরিজম এন্ড হস্পিটালিটি’র মতো বিষয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সেরা একটি প্ল্যাটফর্ম। এছাড়া বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্নাতক এবং মাস্টার্স প্রোগ্রামগুলোতে তুলনামূলক কম টিউশন ফি নেয়।

নিউজিল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা থাকলে সেখানে পিএইচডি শুরু করা সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক ছাত্রদের সেখানে স্থায়ী বসবাসের জন্য অনুপ্রাণিতও করছে দেশটি। পিএইচডি করার সময় সেখানে শিক্ষার্থীদের সীমাহীন কর্ম-ঘন্টার অনুমতি দেওয়া হয়। 

নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা

নিউজিল্যান্ড অভিবাসন ও কর্মসংস্থান সুযোগ

পাহাড়-পর্বতে ঘেরা এই নিউজিল্যান্ড ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতই অর্থনৈতিক দিক থেকে অন্যতম এক ধনী রাষ্ট্র। এখানে মানুষের গড় মাথাপিছু আয় ৩১,০৬৭ ডলার। এছাড়াও নিউজিল্যান্ডের পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ১১২টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়। দেশটির পাসপোর্ট বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে ৬ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। 

আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বিদেশীদের সঙ্গে তাদের আচরণও একই রকমের। এর পাশাপাশি খুব সহজেই স্থায়ী নাগরিকত্ব লাভ করা যায়।  

নিউজিল্যান্ডে অধ্যয়ন শেষে শিক্ষার্থী ভিসাকে কাজের ভিসাতে পরিবর্তনের সুযোগ প্রদান করা হয়। নিউজিল্যান্ডই একমাত্র দেশ যেখানে মাত্র দুই থেকে তিন বছর থাকার পর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করার সুযোগ পায়। 

নিউজিল্যান্ড অভিবাসনের ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ব্যয়ের জন্য ব্লক একাউন্টে অনেক বেশি সঞ্চয়ও দেখানোর প্রয়োজন নেই; মাত্র ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা দেখালেই চলবে।   

নিউজিল্যান্ডের অর্থনৈতিক অবস্থা 

নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতি একটি উন্নত ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’। জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে দেশটির অবস্থান ৫১তম, মানব-উন্নয়ন সূচকে এর অবস্থান ১৬ তম এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় ৩য়। দেশটির অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে পরিসেবা খাত। এই খাত থেকে দেশের মোট জিডিপির ৬৩ শতাংশ আসে। 

নিউজিল্যান্ড বিভিন্ন প্রজাতির ভেড়ার জন্য সুপরিচিত; যেগুলোর পোশম বিশ্বখ্যাত। দেশটির দক্ষিণ দ্বীপের বিভিন্ন পাহাড়ে বহু বিশালাকার ভেড়ার খামার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভেড়ার পোশম ছাড়াও নিউজিল্যান্ড উৎকৃষ্ট মানের মাখন, পনির ও মাংস উৎপাদন করে। 

পর্যটন খাত দেশটির আরেকটি বড় শিল্প,। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের কারণে এখানে হসপিটালিটি এবং ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্টে প্রচুর চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। নির্মাণ শিল্পও দ্রুত বাড়ছে, যা স্থপতি, প্রকৌশলী, এবং নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি করছে। 

এছাড়াও, স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক, নার্স, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য অনেক চাহিদা রয়েছে, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায়। দ্রুত প্রযুক্তির প্রসারের কারণে আইটি খাতেও কর্মসংস্থান বাড়ছে, যেখানে সফটওয়্যার ডেভেলপার, সাইবারসিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ এবং আইটি ম্যানেজারদের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।

উপসংহার 

নিউজিল্যান্ড এমন একটি দেশ যা ভ্রমণকারীদের নির্বাক করে দেবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, অনন্য জীববৈচিত্র্য এবং উন্নত জীবনযাত্রার মান হিসাবে নিউজিল্যান্ড একটি সমৃদ্ধশালী দেশ। এর শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত বিশেষ করে পর্যটন, কৃষি, নির্মাণ, প্রযুক্তি খাত পাশাপাশি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা দেশটির অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে চলেছে। পাশাপাশি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে নিউজিল্যান্ড একটি সেরা গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করার মতো নিরাপদ পরিবেশ এবং উন্নত জীবন-যাপনের কেন্দ্র হিসেবে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে নিউজিল্যান্ড বর্তমানে পছন্দের শীর্ষে। 

নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য 

সমকামীতা বৈধ: নিউজিল্যান্ড সরকার সমকামীতাকে বৈধ ঘোষণা করেছে।

সবচেয়ে বেশি হেলিকপ্টার: নিউজিল্যান্ডে চলাচলের জন্য জনপ্রতি সবচেয়ে বেশি হেলিকপ্টার রয়েছে।

অপরাধের মাত্রা: নিউজিল্যান্ডের আইন কানুন এতটাই কড়া যে এখানে অপরাধের মাত্রা একদম নেই বললেই চলে। এখানকার জনগণ রাস্তায় বের হওয়ার সময় বাড়িতে তালা না মেরেই অনায়াসে বাহিরে ঘুরাফেরা করতে পারেন।

কোনো সাপ নেই: আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, নিউজিল্যান্ড এমন একটি দেশ, যে দেশে কোন সাপ নেই।

মাউন্ট এভারেস্ট জয়কারী প্রথম ব্যক্তি: মাউন্ট এভারেস্ট জয়কারী প্রথম ব্যক্তি স্যার এডমন্ডস্ হিলারি নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা। তিনি নেপালের তেনজিং নর্গের সাথে ১৯৫৩ সালে এই রেকর্ডটি করেন।

ধর্মীয় উৎসবকে বাতিল: আশ্চর্যজনক তথ্য হচ্ছে নিউজিল্যান্ড সরকার ক্রিসমাস ডে, গুডফ্রাইডে, স্টার সানডের মতো ধর্মীয় উৎসবকে বাতিল করে দিয়েছে। টিভিতে এসব দিন নিয়ে প্রচার-প্রচারণাও নিষিদ্ধ। 

সবচেয়ে বেশি প্রজাতির পেঙ্গুইন: নিউজিল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি পেঙ্গুইন প্রজাতির দেখা মেলে। 

নতুন দেশ: নিউজিল্যান্ডকে নতুন দেশ বলা হয় কারণ, এটি মাত্র চারশো বছর আগে আবিষ্কার হয়েছে। 

পৃথিবীর প্রথম হিজরা: নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী জর্জেনা বায়ার ছিলেন পৃথিবীর প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের নারী। 

ইল মাছ: নিউজিল্যান্ডে দেখা মিলে এক আশ্চর্য প্রজাতির মাছ। এই মাছ ৮০ বছর পর্যন্ত বেচে থাকে এবং জীবনের শেষ সময়ে মাত্র একবার প্রজনন করে।

নিউজিল্যান্ড বিক্রয়: আশ্চর্য হলেও সত্য যে, ২০০৬ সালে অষ্ট্রেলিয়ার এক ব্যক্তি নিউজিল্যান্ডকে ; বিখ্যাত ই-কমার্স সাইট ‘ই-বেতে’ নিলামে তোলেন! 

Related posts

ইংল্যান্ড: Sorry, Please, ও Thank you এর দেশ!

আশা রহমান

পৃথিবীর কেন্দ্র ইকুয়েডর

আবু সালেহ পিয়ার

দক্ষিণ কোরিয়ার জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার জগৎ!

1 comment

Leave a Comment

1 review

admin November 7, 2024 at 12:54 pm
1 reviews

aaa

Leave a review

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More