ইংল্যান্ড এমন একটি দেশ যেখানে “Sorry” শব্দটি শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশের জন্য নয়,বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য একটি বহুমুখী অস্ত্র।
‘ইংল্যান্ড’এখানে ভদ্রতা আর উদ্ভটতা একে অপরকে হাত ধরে চলে। ভদ্রতা আর বিশৃঙ্খলার এমন অদ্ভুত সহাবস্থান ইংল্যান্ড ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ইংল্যান্ড মানেই এক অদ্ভুত দ্বৈততা। আর সেই ইংল্যান্ডই আমাদের আজকের গল্পের কেন্দ্রবিন্দু।
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ইংল্যান্ড, যা তার রাজকীয় ঐতিহ্য, সমৃদ্ধ সাহিত্য, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং আধুনিক উন্নয়নের জন্য বিখ্যাত। যুক্তরাজ্য অর্থাৎ United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland এর চারটি প্রধান অংশের মধ্যে ইংল্যান্ড সবচেয়ে বড়। দেশটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
দেশ | ইংল্যান্ড |
রাজধানী | লন্ডন |
আয়তন | ১,৩০,০০০ বর্গকিলোমিটার |
জনসংখ্যা | ৫৬ মিলিয়ন |
ভাষা | ইংরেজি |
মুদ্রা | ব্রিটিশ পাউন্ড |
ইংল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু
ইংল্যান্ড এর ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বেশ বিস্ময়কর। দেশটির উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত পাহাড়, উপত্যকা, নদী, সবুজ মাঠ এবং মনোমুগ্ধকর সমুদ্রসৈকত রয়েছে।
ইংল্যান্ড উত্তরে স্কটল্যান্ড, পশ্চিমে ওয়েলস, পূর্বে উত্তর সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং দক্ষিণে রয়েছে ইংলিশ চ্যানেল।
ইংল্যান্ডের আবহাওয়া নিয়ে একটা মজার কথা প্রচলিত আছে, আর তা হলো “এক দিনে চার ঋতু”! অর্থাৎ, সকালে রোদ, দুপুরে বৃষ্টি, বিকেলে ঠান্ডা বাতাস আর রাতে কুয়াশা। এই চমকপ্রদ বৈচিত্র্য এখানে হরহামেশাই দেখা যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ইংল্যান্ডে সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়! আর এজন্যই দেশটিকে বলা হয় “The Green and Pleasant Land” যেখানে সবুজ প্রকৃতি সবসময় সতেজ ও প্রাণবন্ত থাকে।
ম্যাপ
ইংল্যান্ডের আয়তন ও জনসংখ্যা
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় এবং জনবহুল দেশ ইংল্যান্ডের মোট আয়তন প্রায় ১,৩০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৫০,০০০ বর্গমাইল)। এটি যুক্তরাজ্যের মোট আয়তনের ৭৫% এবং দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫৬ মিলিয়ন। যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০% মানুষই ইংল্যান্ডে বসবাস করে।
ইংল্যান্ডের ইতিহাস ও ক্ষমতার পালাবদল
ইংল্যান্ডের ইতিহাস এক অদ্ভুত ও রোমাঞ্চকর গল্প। রাজা-রাণীর লড়াই, বিপ্লব ও ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন সবকিছুই রয়েছে দেশটির ইতিহাসে।
৪৩ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা যখন ব্রিটেন দখল করে তখন থেকেই ইংল্যান্ডে শুরু হয় এক নতুন যুগের। এরপর ১০৬৬ সালে উইলিয়াম দ্য কনকুয়েস্টর ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন। যার ফলে দেশটিতে নতুন শাসনব্যবস্থায় চালু হয়। পরবর্তীতে ১৫০৯ সালে অষ্টম হেনরি তার ধর্মীয় বিপ্লবের মাধ্যমে ইংল্যান্ডকে রোমান ক্যাথলিক গির্জা থেকে আলাদা করে, যা ছিল দেশটির ইতিহাসের এক বড় পরিবর্তন।
রাণী এলিজাবেথ এর শাসনকালে ইংল্যান্ডের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে শুরু করে। ১৮ শতকে ইংল্যান্ড এক বিশ্ব ক্ষমতায় পরিণত হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেই ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ২০ শতকে ইংল্যান্ড প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটিতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং ইংল্যান্ড একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পুনর্গঠিত হয়।
ইংল্যান্ডের শাসনব্যবস্থা ও রাজতন্ত্র
কল্পনা করুন একটি টাইম মেশিনে বসে আপনি প্রাচীন যুগে চলে গেলেন। সামনে বিশাল বিশাল প্রাসাদ, সোনায় মোড়ানো মুকুট, ঘোড়ায় চড়া সৈন্যরা “জয় হোক মহারাজের’’ বলে চিৎকার করছে। রাজা হাত তুলে ইশারা করা মাত্রই নতুন আইন জারি হয়ে গেল! কি খুব সিনেমাটিক মনে হচ্ছে?
কল্পনার রাজ্যগুলো ঠিক এমনই হয়। অপরদিকে ইংল্যান্ড এমনই একটি দেশ যেখানে এখনও রাজা আছেন, মুকুটও আছে, রাজকীয় প্রাসাদও আছে; কিন্তু বাস্তবে দেশ চালায় প্রধানমন্ত্রী। রাজা চার্লস তৃতীয় এখন দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান, কিন্তু, তার ক্ষমতা সীমিত। বেশিরভাগ সময় তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন ও রাষ্ট্রীয় সফর করেন।
ইংল্যান্ডে এখনও কেন রাজতন্ত্র রয়েছে
এখন প্রশ্ন হলো তাহলে রাজতন্ত্রের দরকার কী? রাজা কি তবে শুধুই শো-পিস?
যদিও তারা আইন বানাতে পারেন না, তবে তাদের কিছু সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে। যেমন, তারা নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন (যদিও এটি শুধু আনুষ্ঠানিকতা)। রাজা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখেন। এমনকি তিনি ব্রিটেনের জনগণ এবং মিডিয়ার সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।
আরেকটি মজার বিষয় হলো—রাজা বা রানির একটা গোপন শক্তি আছে! ব্রিটেনে কেউ যদি আইনগতভাবে বড় সমস্যা তৈরি করে তাহলে রাজা বা রানি Royal Pardon (রাজকীয় ক্ষমা) করতে পারেন। তবে এটি এখন খুব কম ব্যবহার হয়।
পর্যটন আকর্ষণ ও দর্শনীয় স্থান
লন্ডনের রাজকীয় মহিমা থেকে শুরু করে স্টোনহেঞ্জের রহস্যময় পাথর, কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ডের ইতিহাসসমৃদ্ধ ক্যাম্পাস এবং লেক ডিস্ট্রিক্টের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সব কিছু মিলিয়ে ইংল্যান্ড হলো এমন একটি জায়গা যেখানে পর্যটকেরা নিজেদের হারিয়ে ফেলবেন।
বাকিংহাম প্যালেস
লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা বাকিংহাম প্যালেস কেবল একটি রাজপ্রাসাদ নয়। এটি ব্রিটিশ রাজকীয় ঐতিহ্যের গর্বিত প্রতীক। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাজপরিবারের ইতিহাস, ষড়যন্ত্র, রাজকীয় উৎসব এবং চমকপ্রদ রহস্যের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই অতুলনীয় প্রাসাদটি।
প্রাসাদটিতে ৭৭৫টি বিশাল কক্ষ রয়েছে। মজার বিষয় হলো, এত গুলো ঘর যে প্রতিদিন একটিতে থাকলেও সবগুলো ঘরে থাকতে ২ বছর লেগে যাবে। তাছাড়াও কিংবদন্তি অনুসারে এই প্রাসাদের নিচে একটি গোপন সুড়ঙ্গপথ আছে, যা লন্ডনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত।
স্টোনহেঞ্জ
স্টোনহেঞ্জ ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর একটি। স্টোনহেঞ্জ হলো বিশালাকৃতির পাথরের একটি বৃত্তাকার কাঠামো। লন্ডন থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে উইল্টশায়ার কাউন্টিতে এই প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়টি অবস্থিত। হাজার বছরের রহস্যে ঘেরা স্টোনহেঞ্জ একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান (UNESCO World Heritage Site)। এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এখানে ঘুরতে আসে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
ইংল্যান্ডের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সম্মানিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি হলো ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। ১২০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় আজও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে। এটি শুধুমাত্র শিক্ষা নয় বরং এক ধরনের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মেধার কেন্দ্রস্থল। ক্যামব্রিজের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম কিংস কলেজ। এটি ক্যামব্রিজের প্রাণকেন্দ্র। তাছাড়াও রয়েছে ক্যামব্রিজ বোটানিক গার্ডেন, পিট রিভারস মিউজিয়াম ।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং সবচেয়ে সম্মানিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ১১০০ শতকেরও আগে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় টির ঐতিহ্য আজও বেশ সমৃদ্ধ।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল আকর্ষণ হচ্ছে তার অসাধারণ ক্যাম্পাস এবং বিল্ডিংগুলি। “অক্সফোর্ড” নামটি শুনলেই যে দৃশ্যটি মাথায় আসে তা হলো প্রাচীন বিল্ডিং, পুরানো গাথা, এবং অমুল্য সংগ্রহশালা। সেখানে প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি ভবন যেন ইতিহাসের সাক্ষী।
এখানে রয়েছে প্রায় ৩৮টি কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়টির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে আশমোলিয়ান মিউজিয়াম, বোটনিকার গার্ডেন, টেমস নদী।
লেক ডিস্ট্রিক্ট
ইংল্যান্ডের লেক ডিস্ট্রিক্ট (Lake District) একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এলাকা, যা ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। এটি ইউনেস্কোর একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান। লেক ডিস্ট্রিক্ট মূলত তার মনোরম পাহাড়, প্রাকৃতিক লেক এবং ছোট ছোট গ্রামগুলোর জন্য পরিচিত।
তবে এটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয় বরং সাহিত্যিক দৃষ্টিতেও বিখ্যাত। বিখ্যাত ইংরেজ কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ (William Wordsworth) এখানে বাস করতেন এবং তিনি তার কবিতায় এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী এবং শান্ত পরিবেশকে বিভিন্ন রুপে বর্ননা করেছেন। আরও এক বিখ্যাত সাহিত্যিক বিয়াট্রিস পটার (Beatrix Potter)তার জনপ্রিয় পটার টেইলস বইগুলির অধিকাংশই এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে লেখেন।
এছাড়া এখানে হাইকিং, হর্স রাইডিং, প্যাডলবোট চালানো ইত্যাদি বাহন ব্যবহার করে নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চারও করা যায়। প্রকৃতির অনুরাগীদের জন্য লেক ডিস্ট্রিক্ট একটি স্বর্গসম স্থান।
ইয়র্ক
ইংল্যান্ডের একটি ঐতিহাসিক শহর ইয়র্ক, যা তার প্রাচীন রোমান এবং ভাইকিং ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। ইয়র্ক মিনস্টার, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গথিক ক্যাথেড্রাল। এছাড়া Clifford’s Tower ও Jorvik Viking Centre-এ ভাইকিং যুগের ইতিহাস দেখা যায়। পাথুরে রাস্তাগুলো, সুন্দর পার্ক এবং অসংখ্য মিউজিয়াম ইয়র্ককে একটি সাংস্কৃতিক ও পর্যটক ফ্রেন্ডলি শহর করে তুলেছে।
ক্যানটারবুরি ক্যাথেড্রাল
ক্যানটারবুরি ক্যাথেড্রাল ইংল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গির্জা। এটি ১,৪০০ বছরের পুরানো এবং এক সময়ে টমাস বেকেট এর হত্যাকাণ্ডের স্থান ছিল। এটি একটি ইউনোস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, যার আর্কিটেকচার এবং ইতিহাস সত্যিই প্রশংসনীয়।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি লন্ডনের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক স্থান। এখানে ব্রিটিশ রাজাদের রাজ্যাভিষেক হয় এবং অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সমাধি রয়েছে এখানে। যেমন— আইজ্যাক নিউটন ও চার্লস ডিকেন্স। এখানে প্রবেশ করলে আপনি ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ের সাক্ষী হতে পারবেন।
ব্রিটিশ মিউজিয়াম
লন্ডনে অবস্থিত ব্রিটিশ মিউজিয়াম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীনতম মিউজিয়ামগুলোর একটি। এখানে আপনি দেখতে পাবেন ৮ মিলিয়নেরও বেশি প্রদর্শনী, যা মানব সভ্যতার বিভিন্ন যুগের ইতিহাস চিত্রিত করে। মিশরের বিখ্যাত রোজেট্টা স্টোন থেকে শুরু করে গ্রিক প্রাচীন শহর পম্পেইয়ের ভাস্কর্য সব কিছুই এখানে সংরক্ষিত। এই মিউজিয়ামে একদিন সময় কাটালে আপনি যেন পুরান সভ্যতার যাত্রায় চলে যাবেন।
সংস্কৃতি ও জীবনধারা
দেশটি কেবলমাত্র একটি দর্শনীয় স্থান নয় বরং একটি জীবন্ত সংস্কৃতি। সাহিত্যের জগৎ থেকে শুরু করে খাবারের রুচি, ক্রীড়ার উত্তেজনা এবং মানুষের জীবনধারা সবকিছুই যেন নতুন অনুভূতি তৈরি করে।
স্বাদে ভরা ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ডের খাবার এমন এক ধরনের অভিজ্ঞতা, যা আপনার স্বাদ গ্রহণের ধারণাকেই বদলে দিতে পারে।
ফিশ অ্যান্ড চিপস (Fish and Chips)
ফিশ অ্যান্ড চিপ্স ইংল্যান্ডের সেরা স্ট্রিট ফুড। এটি মূলত মসলাযুক্ত সাদা মাছের টুকরা, যা মুচমুচে আলুর চিপসের সঙ্গে খেতে হয়। প্রথমবার মুখে দিতেই আপনি বুঝে যাবেন এটি একদম সেরা কম্বো! আর হ্যাঁ, টার্টার সস অথবা ভিনেগার যোগ করলে তো খাবারটির মজাই আলাদা।
পাই (Pie)
পাই মানে শুধু প্যাস্ট্রি নয়, এটি হলো ইতিহাস। মাংস, সবজি, গ্রেভি এবং খাস্তা পেস্ট্রি; এই সব কিছু একসাথে যেন এক অদ্ভুত ম্যাজিক। “মিন্স পাই” আর “করনিক পাই” যখন একসাথে হাতে আসে তখন খাওয়া যেন একটা শিল্প হয়ে ওঠে। আর “পাই অ্যান্ড মাশ” (পাইয়ের সঙ্গে মাশড আলু) তো এক অন্য ধরনের মজা!
ফুল ইংলিশ ব্রেকফাস্ট (Full English Breakfast)
মর্নিং ক্লাইমেক্স! সসেজ, বেকন, ভাজা ডিম, টমেটো, মাশরুম, আলু আর ভিনেগারে ডোবানো বেকড বিনস। এগুলো ইংরেজদের পুরো দিনের শক্তির মন্ত্র! ফুল ইংলিশ ব্রেকফাস্ট বলতে সাধারণত এই খাবারগুলোকে একসাথে বোঝায়, যা ইংল্যান্ডের একটি ঐতিহ্য।
সানডে রোস্ট (Sunday Roast)
রবিবারের দিনের জন্য ইংল্যান্ডের বিশেষ খাবার হলো রোস্টেড মাংস। গরুর মাংস বা মুরগি, ভেজি, মাশড আলু এবং সুস্বাদুগ্রেভির এক অন্যরকম কম্বিনেশন। এটি এমন একটি খাবার যা পুরো পরিবারকে একসাথে নিয়ে আসে। ইংল্যান্ড বাসীদের কাছে রবিবার মানেই উৎসব আর সানডে রোস্ট।
ইংল্যান্ডের সাহিত্য আর থিয়েটার
ইংল্যান্ডের সাহিত্য ও থিয়েটার এক জীবন্ত জাদু। যেখানে শেক্সপিয়র এর নাটক কিংবা চার্লস ডিকেন্স এর উপন্যাস শুধু গল্প নয়, যেন এক গভীর জীবনবোধের প্রতিফলন। গ্লোব থিয়েটার এর মঞ্চে ম্যাকবেথ বা রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট আজও জীবন্ত। যেখানে প্রতিটি চরিত্রের মাধ্যমে মানবিক আবেগ ও দ্বন্দ্বের অমোঘ চিত্র ফুটে ওঠে।
এখানকার থিয়েটার মঞ্চে জীবন এবং বাস্তবতা এমন এক রূপে প্রকাশিত হয় যা দর্শকদের চিরকাল মনে থাকে। এ খানকার পপুলার মিউজিক্যাল “লেস মিসারাবলস” কিংবা হ্যারি পটার থিয়েটার শো এর বেশ জনপ্রিয়।
ইংল্যান্ডের ক্রীড়া উদ্মাদনা
“GOOOAAALLLLL’’
একটি আওয়াজেই যেন পুরো দেশ কেঁপে উঠে! এই একটি আওয়াজেই কারো হাতের বিয়ার ছিটকে পড়ে, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, কেউবা উল্লাসে নাচানাচি করে আবার কেউ উন্মাদনার চোটে টেবিলের ওপর উঠে যায়। এটাই ইংল্যান্ডের ফুটবল। ফুটবলের জন্মভূমি ইংল্যান্ডে ফুটবল শুধু একটি খেলা নয় বরং আরো বেশি কিছু।
১৮৬৩ সালে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (FA) তৈরি হওয়ার পর থেকে এই খেলা শুধু মাঠে আটকে নেই, এটি ঢুকে পড়েছে মানুষের শিরা-উপশিরায়। সকাল-বিকেল পাবে বসে আলোচনার একটাই বিষয় “এইবার কি ট্রফিটা আসছে?”
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, এনফিল্ড, স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ, এমিরেটস এগুলো শুধুই ইংল্যান্ডের স্টেডিয়াম নয়, বরং, যেন যুদ্ধক্ষেত্র! ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম লিভারপুল, আর্সেনাল বনাম টটেনহ্যাম, এগুলো ম্যাচ নয়, যেন, দুই সাম্রাজ্যের যুদ্ধ!
দেশটিতে ফুটবল নিয়ে বাবা-ছেলের তর্ক হয়, বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, আবার সম্পর্ক ভেঙেও যায়!
ইংল্যান্ডের অর্থনীতি
ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি। ইংল্যান্ডের অর্থনীতি সেবা খাত, বিশেষ করে ব্যাংকিং, বীমা, এবং ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেসের উপর বিপুলভাবে নির্ভরশীল।
তবে এদেশের অর্থনীতির শুধুমাত্র সেবা খাতেই সীমাবদ্ধ নয়, ইংল্যান্ড শিল্পক্ষেত্রেও একসময় অগ্রগামী ছিল। বিশেষ করে ১৯শ শতকে ইংল্যান্ড ছিল শিল্প বিপ্লবের সূতিকাগার। তখন থেকেই দেশটি প্রযুক্তি, কেমিক্যাল, এবং মেশিনারি উৎপাদনে এক শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। বর্তমানে প্রযুক্তি, সাইবার সিকিউরিটি, এবং নির্মাণ খাতও বেশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে।
আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো ইংল্যান্ডের বাণিজ্য সম্পর্ক। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক নোড হিসেবে কাজ করে, যেখানে সারা বিশ্বের নানা দেশ থেকে পণ্য আসে এবং যায়। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর অর্থাৎ ব্রেক্সিট, ইংল্যান্ডের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। তবে দেশটি এখনও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রেখেছে।
ইংলিশদের ভদ্রতা বনাম উদ্ভটতা
ইংল্যান্ডের মানুষ কিছু ব্যাপারে এতটাই সিরিয়াস যে আপনি হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারবেন না। চলুন ইংরেজদের কিছু অদ্ভুত ম্যানার সম্পর্কে জেনে নিই।
ইংল্যান্ডের মানুষ এতটাই ভদ্র যে, তাদের দেখলে মনে হবে তাদের জন্মই হয়েছে শুধু “Sorry,” “Please,” আর “Thank you” বলার জন্য। ইংল্যান্ড এমন একটি দেশ, যেখানে “Sorry” শব্দটি শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশের জন্য নয়, বরং, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য একটি বহুমুখী অস্ত্র।
আপনি কাউকে ধাক্কা দিলেন? আপনি বলবেন, “Sorry!” কেউ আপনাকে ধাক্কা দিল? তবুও আপনিই বলবেন, “Oh, sorry!” অর্থাৎ, এখানকার মানুষ এতটাই ভদ্র যে, যদি আপনি রাস্তায় একটা খুঁটির সাথে ধাক্কা খান, আপনার প্রথম প্রতিক্রিয়া হবে খুঁটিকে উদ্দেশ্য করে “Oh, sorry!” বলা!
ইংল্যান্ডে “চা” কোনো সাধারণ পানীয় নয়, এটি একটি ধর্মীয় রীতি! আপনাকে কখন যদি কোন ইংরেজ চা এর অফার করে, আর প্রত্যুত্তরে আপনি যদি বলেন, “আমি চা খাই না,”। তাহলে চারপাশের ইংলিশ মানুষদের চোখে এমন এক শূন্য দৃষ্টি ফুটে উঠবে,যেন আপনি বললেন, “আমি অক্সিজেন নিই না!”
এমনকি দেশটিতে চা বানানোর পদ্ধতি নিয়েও একধরনের অলিখিত যুদ্ধ চলে। আর তা হলো, দুধ আগে, নাকি পরে? ইংল্যান্ডে এই অলিখিত যুদ্ধ নিয়ে পরিবারে বিভেদ, বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ, এমনকি রাজনীতির থেকেও বড় বিতর্ক হতে পারে!
ইংল্যান্ডে “Queueing” বা লাইন ধরে দাঁড়ানো একটি পবিত্র ব্যাপার। যদি কেউ লাইন ভেঙে ঢুকে পড়ে তবে, সবার মুখে হাসি থাকবে। কিন্তু মনে মনে তারা তাকে সমাজচ্যুত ঘোষণা করবে। ট্রেন যদি এক ঘণ্টা দেরি করে, কেউ চিৎকার করবে না সবাই নিঃশব্দে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে যেন তারা ধৈর্যের পরীক্ষায় বসেছে!
প্রকাশ্যে আবেগ দেখানো ইংল্যান্ডে মহাপাপ ইংলিশরা “Making a Scene” অর্থাৎ প্রকাশ্যে অতিরিক্ত আবেগ দেখানো সহ্য করতে পারে না। রেস্টুরেন্টে খাবার যদি পুড়ে যায়, তারা সরাসরি বলবে না, “এইটা জঘন্য!” বরং বলবে, “It’s… interesting.”
তারা একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব রেখে কথা বলে। খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ালে মনে হবে, আপনি কোনো মারাত্মক সামাজিক অপরাধ করেছেন!
ইংলিশদের ভদ্রতা আর উদ্ভটতা এক অদ্ভুত কিন্তু আকর্ষণীয় বিষয়। তারা এমন এক জাতি যারা আপনাকে ছুরিকাঘাত করলেও প্রথমে বলবে, “Oh dear, I’m terribly sorry for that!”
ব্রিটিশদের জীবনযাত্রার রহস্যময় হলে ও কিন্তু দারুণ মজার।
ইংল্যান্ড সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য
বিশ্বের প্রথম লাইব্রেরি ইংল্যান্ডে
ইংল্যান্ডের “অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়”-এ বিশ্বের প্রথম সর্বজনীন লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছিল। এটি ১২৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখনও এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো লাইব্রেরিগুলোর মধ্যে একটি।
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রাস্তা ইংল্যান্ডে অবস্থিত
ইংল্যান্ডের “এল্ডমিল লেন” হল পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট রাস্তা। যার দৈর্ঘ্য মাত্র ১২ ফুট।
পেপার টাকার প্রথম ব্যবহার করা হয় ইংল্যান্ডে
ইংল্যান্ডই প্রথম দেশ ছিল যেখানে ব্যাংক নোট চালু হয়েছিল। যা প্রথম ১৬৮৫ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড চালু করেছিল।
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট পুলিশ স্টেশন ইংল্যান্ডে অবস্থিত
এটি লন্ডনে “ফ্ল্যাট আইল্যান্ড”-এ অবস্থিত।যেখানে দুটি পুলিশ অফিসারই জায়গা পেতেন।এটি একসময় “ব্রিটিশ ইতিহাসের সবচেয়ে ছোট পুলিশ স্টেশন” হিসাবে পরিচিত ছিল।
এক দেশে দুই সময়
গ্রিনিচ মান সময় (GMT) বিশ্বব্যাপী সময় গণনার ভিত্তি হলেও ইংল্যান্ডে একসময় “অক্সফোর্ড টাইম” নামে একটি ভিন্ন সময় ব্যবস্থাও প্রচলিত ছিল। যা GMT-এর চেয়ে পাঁচ মিনিট পিছিয়ে ছিল।
ইংল্যান্ডে ৩০০টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত
ইংল্যান্ডে বসবাসকারী নাগরিকরা প্রায় ৩০০+ ভাষায় কথা বলে।
ইংল্যান্ডের কোনও জাতীয় সংগীত নেই
“গড সেভ দ্য কিং” সাধারণত জাতীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি অফিসিয়ালি ইংল্যান্ডের জাতীয় সংগীত নয় বরং ব্রিটেনের।
ইংল্যান্ডে একসময় টমেটোকে বিষাক্ত ভাবা হতো
১৬০০ সালের দিকে ইংল্যান্ডের অভিজাত শ্রেণি মনে করতো টমেটো বিষাক্ত।তারা মনে করত এটি খেলে মৃত্যু হতে পারে।
ফুটবলের জন্মভূমি ইংল্যান্ড
আধুনিক ফুটবল খেলার নিয়ম-কানুন প্রথম ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।১৮৬৩ সালে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (The Football Association) গঠিত হয় এবং ফুটবলের প্রথম সাধারণ নিয়মাবলী তৈরি করা হয়।