Image default
ইউরোপদেশ পরিচিতি

ফিনল্যান্ড – সুখী দেশের মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?

ফিনিশ শব্দ ‘সিসু’। যার অর্থ হল, ‘চলার পথে যাই আসুক না কেন, দৃঢ় উদ্যম এবং মনের জোর ধরে রাখুন’। এমন এক দেশ, যেখানে মানুষ দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি নিয়ে জীবনযাপন করে। তবে এত আত্মহত্যা!

ইউরোপের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত দেশগুলির একটি ফিনল্যান্ড। ছবির মতোই সুন্দর এই দেশটি। শহরগুলো পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন সড়ক এবং রঙিন বাড়িঘর। বাড়িঘর গুলো যেন অপরূপ প্রকৃতির কোলে ফুটে থাকা ফুল। গাছ-গাছালি, ঝরনা, নদী, পাহাড়-টিলা, স্বচ্ছ পানির জলাধার। মানুষের নেই কোনো অভাব-অনুযোগ। মারামারি-খুনো’খুনির বালাই নেই। 

উন্নত দেশে যা থাকা প্রয়োজন তার সবই আছে ফিনল্যান্ডে। এ কারণে তারা বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলির মধ্যে শীর্ষে। তবে দেশটিতে আত্মহত্যার হার অত্যন্ত বেশি। সুখী দেশের লোকজন আত্মহত্যা করে কেন এটা অনেকরই বুঝে আসে না! 

দেশ ফিনল্যান্ড
রাজধানী হেলসিংকি 
আয়তন ৩,৩৮,১৪৫ বর্গকিমি  (১,৩০,৫৫৯ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা  ৫,৬২০,৮৬৪ জন
সরকারি ভাষা ফিনিস ও সুইডিস
প্রধান মুদ্রা ইউরো
সময় অঞ্চল ইউটিসি +২
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এয়ার ফিনল্যান্ড 

ম্যাপ

ফিনল্যান্ডের আয়তন ও জনসংখ্যা 

আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ফিনল্যান্ড ৬৫তম, আর ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ৮ম। দেশটির মোট আয়তন ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার ১শ’ ৪৫ বর্গকিলোমিটার এবং এর জনসংখ্যা প্রায় প্রায় ৫৬ লক্ষ ২০ হাজার ৮৬৪ জন। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে দেশটি ১১৮ নম্বরে রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী, ফিনল্যান্ডে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব মাত্র ১৮.৪ জন, যেখানে বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ১৪৩ জন বসবাস করে।

ফিনল্যান্ডের পশ্চিমে সুইডেন, পূর্বে ও দক্ষিণে রাশিয়া, উত্তরে নরওয়ে এবং দক্ষিণের অংশ বিশেষ ফিনল্যান্ড উপসাগর পরিবেষ্টিত। মাথাপিছু আয় ৫৪ হাজার ৭৭৩ মার্কিন ডলার হলেও এদেশের জাতীয় আয় জনসংখ্যার চেয়েও দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে।

ফিনল্যান্ডের ভাষা 

ঐতিহাসিকভাবে সপ্তম শতাব্দীতে রাশিয়ার ভোলগা নদীর অববাহিকা থেকে মানুষ ফিনল্যান্ড অঞ্চলে এসেছিল। 

একসময় ফিনল্যান্ড ছিল সুইডেনের অংশ। সে কারণে এদেশে এখনও সুইডিশ ভাষা ও সংস্কৃতির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭ শতাংশ এখনও সুইডিশ বংশোদ্ভুত। তারা সুইডিশ ভাষায় কথা বলে। 

রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিনিস ও সুইডিস ভাষা এদেশের রাষ্ট্র ভাষা। কিন্তু, এখানে রাশিয়ান ও আরবীও বহাল তবিয়তে স্থান করে নিয়েছে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়িক ও একাডেমিক যোগাযোগের কারণে জাপানি ভাষাভাষী লোকের সরব উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। তাই বেশির ভাগ ফিনিস নাগরিকই কমপক্ষে ৩টি ভাষায় কথা বলতে সক্ষম। কারণ, ইংরেজীও এখানে আন্তজার্তিক ভাষা হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছে। 

এদেশ জার্মানি কিংবা ইতালির মতো নয়, এখানে সর্বত্রই ইংরেজীর প্রচলন আছে। তাই ফিনিস কিংবা সুইডিস না জেনেও আপনি দিব্বি আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম সেরে নিতে পারবেন।

ফিনল্যান্ডের ইতিহাস 

ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতার সংগ্রাম

১৮৯৯ সালে রাশিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাস “ফিনল্যান্ডের অধিকার আইন” নামের একটি আইন প্রবর্তন করেন। নিকোলাস কর্তৃক প্রবর্তিত এ আইনের মাধ্যমে তিনি ফিনল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসন কিছুটা সীমিত করার চেষ্টা করেন। এর ফলে ফিনল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ আইন প্রণয়ন ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছিল। এই আইন ফিনল্যান্ডের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। এই পরিস্থিতির পর, ফিনল্যান্ডের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দুটি প্রধান শিবির গঠিত হয়:

প্রগতিশীল শিবির (সংবিধানবাদী) 

এই শিবির ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করতে চেয়েছিল এবং রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তারা রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ছিল এবং ফিনল্যান্ডের সাংবিধানিক অধিকার বজায় রাখার পক্ষে ছিল।

রক্ষণশীল শিবির (কমপ্লায়ার্স) 

এই দলটি রাশিয়ার সাথে সমঝোতা করতে ইচ্ছুক ছিল, এবং তারা মনে করত যে ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির জন্য কিছু প্রথাগত অধিকার এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আপস করা প্রয়োজন। তারা রাশিয়ার শাসনের অধীনে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে চাইত; তবে, যদি তা ফিনল্যান্ডের স্বার্থ রক্ষা করতে সাহায্য করে।

১৯১৭ সালে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের পর ফিনল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে থাকে। রাশিয়া দুর্বল হয়ে পড়লে, ফিনল্যান্ড স্বাধীনতার দাবি করে। ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ফিনল্যান্ডের সংসদ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। সৌভাগ্যবশত এ দাবি সোভিয়েত রাশিয়া শীঘ্রই স্বীকৃতি দেয়।

ফিনল্যান্ডের গৃহযুদ্ধ 

১৯১৮ সালে ফিনল্যান্ডে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই গৃহযুদ্ধ ছিল মূলত রেডস (বামপন্থী অর্থাৎ সমাজবাদী দল) এবং হোয়াইটস (ডানপন্থী, কনজারভেটিভরা) এর মধ্যে সংঘর্ষ। রেডসরা ছিল ফিনল্যান্ডের শ্রমিক শ্রেণি এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থক। এ দলের সমর্থকেরা ফিনল্যান্ডকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তারা ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন চাইছিলেন এবং শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিলেন।

অন্যদিকে, হোয়াইটস বা শ্বেতাঙ্গরা অধিকাংশই ছিল লিবারাল এবং রক্ষণশীল। তারা ফিনল্যান্ডে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রথাগত সমাজ ব্যবস্থা বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল কার্ল গুস্তাফ ম্যানারহেইম।

গৃহযুদ্ধের প্রথম দিকে, রেডস (বামপন্থীরা) দক্ষিণ ফিনল্যান্ডের বড় শিল্প শহরগুলো দখল করে এবং সরকারী ক্ষমতা গ্রহণ করে। তবে, শ্বেতাঙ্গদের (ডানপন্থীরা) নেতৃত্বে জেনারেল ম্যানারহেইম পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। এই যুদ্ধের পর, শ্বেতাঙ্গরা বিজয়ী হয় এবং ১৯১৮ সালের ৬ মে ফিনল্যান্ড স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফিনল্যান্ড

শীতকালীন যুদ্ধ

১৯৩৯ সালের শেষদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ডের কিছু ভূখণ্ড দাবি করে। ১৯৩৯ সালের ৩০ নভেম্বর, সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ডের উপর আকস্মিকভাবে আক্রমণ শুরু করে। ইতিহাসে এ সংঘর্ষ ‘শীতকালীন যুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিত। এই যুদ্ধে ফিনল্যান্ডের বাহিনী তাদের সাহসী প্রতিরোধ প্রদর্শন করে। 

১৯৪০ সালের মার্চের দিকে, মস্কো চুক্তির মাধ্যমে ফিনল্যান্ড কিছু অঞ্চল সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। যেমন, ভাইবোর্গ (Vyborg)  এবং ক্যারেলিয়ান ইস্তমাস। তবে, ফিনল্যান্ড তাদের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয় এবং স্বাধীনতা রক্ষা করে।

জার্মানির সাথে সহযোগিতা

১৯৪১ সালে, জার্মানিতে অপারেশন বার্বারোসা শুরু হয়। এ সময় ফিনল্যান্ড তাদের হারানো পূর্ব কারেলিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। এ যুদ্ধ ইতিহাসে “জুম্বো যুদ্ধ” (The Continuation War) নামে পরিচিত।

১৯৪৪ সালে সোভিয়েত বাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করে এবং ফিনল্যান্ডকে “টেলিকি চুক্তি” (Moscow Armistice) স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। যার মাধ্যমে ফিনল্যান্ড পূর্ব কারেলিয়া এবং ভিপুরি সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে হস্তান্তর করার মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা বজায় রাখে।

প্যারিস চুক্তি 

১৯৪৭ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ফিনল্যান্ডের আঞ্চলিক সীমান্ত চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়। এই চুক্তির আওতায় ফিনল্যান্ডকে পূর্ব কারেলিয়া, ভিপুরি, স্যালাপিলাটসি এবং অন্যান্য কিছু অঞ্চল সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে হস্তান্তর করতে হয়। 

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

১৯৪৭ সালের প্যারিস চুক্তি এবং পরবর্তী পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, ফিনল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে শুরু করে। ১৯৫৬ সালে, উরহো কালেভা কেক্কোনেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কেক্কোনেন ফিনল্যান্ডের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি দেশটির আভ্যন্তরীণ শান্তি ও বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নত করতে সক্ষম হন।

ফিনল্যান্ডের পর্যটন

স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশ ফিনল্যান্ড, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। এখানে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। 

লেভি

ফিনল্যান্ডের বরফে আচ্ছাদিত এই শহরটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি স্বপ্নপুরী। লেভি তার স্কিইং এবং স্নোবোর্ডিং এর জন্য বিখ্যাত। এজন্য বিশেষ করে শীতকালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা ছুটে আসে এ স্থানে । এখানে বহু রিসোর্ট রয়েছে, যেখানে পর্যটকরা একে অপরের সাথে স্কিইং করতে পারে এবং স্নোবোর্ডিংয়ের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। 

লেভি শহর

ট্যামপেয়ার

ফিনল্যান্ডের অন্যতম বড় শহর ট্যামপেয়ার। এটি একটি আধুনিক শিল্প শহর হলেও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলি গ্রামীণ পরিবেশে পরিপূর্ণ। এখানকার সবথেকে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হচ্ছে সারকানিয়েমি অ্যাডভেঞ্চার পার্ক। পার্কটি শিশু-কিশোরদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিনত হয়েছে। 

ট্যামপেয়ার শহর

অ্যালান্ড আর্কিপেলাগো

বাল্টিক সাগরের মধ্যে অবস্থিত অ্যালান্ড আর্কিপেলাগো ফিনল্যান্ডের একটি চমৎকার দ্বীপপুঞ্জ। এখানে অবস্থিত অ্যালান্ড ম্যারিটাইম মিউজিয়াম এবং ক্যাসটেলহলম দুর্গ স্থাপনা গুলো ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। প্রকৃতিপ্রেমী এবং ইতিহাস অনুসন্ধানকারীদের জন্য এটি হতে পারে এক পরিপূর্ণ গন্তব্য। 

অ্যালান্ড আর্কিপেলাগো

কেমি

কেমি শহর তার স্নো দুর্গ এর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই তিনতলাবিশিষ্ট বরফ দুর্গটি শীতকালীন পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। পুরো দুর্গটি বরফ ও তুষারে তৈরি, যা দেখতে অত্যন্ত চমৎকার। দুর্গটির উপরিভাগ থেকে পুরো শহরের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। পর্যটকদের জন্য এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা।

প্রতিবছর শীতকাল শুরু হলে, কেমি শহরের স্নো দুর্গটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। ভ্রমণকারীরা এসময় বরফে তৈরি বিভিন্ন স্থাপনা যেমন—আইস হোটেল, চমৎকার বরফ মূর্তি এবং তুষারশিল্প উপভোগ করতে পারে। 

এছাড়াও, এখানে বিভিন্ন স্নো-অ্যাকটিভিটিজ যেমন স্কি, স্নোবোর্ডিং, এবং স্নো মোবাইল রাইডের মতো অভিজ্ঞতার সুযোগও রয়েছে। দুর্গের আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে এর ভেতরের বরফের গির্জা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কিছু মানুষ বিয়ে করতে বা বিশেষ কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে এ গির্জায় আসে।

কেমি শহর

স্যাভোনলিনা

ফিনিশ লেকল্যান্ডের মধ্যে অবস্থিত একটি ছোট শহর স্যাভোনলিনা। শহরটি তার সেন্ট ওলাফের দুর্গ এর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। দুর্গটি পঞ্চদশ শতকে নির্মিত হয়েছিল। এছাড়াও, স্যাভোনলিনায় রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং মিউজিয়াম, যেমন, অর্থোডক্স মিউজিয়াম এবং স্যাভোনলিনা প্রাদেশিক মিউজিয়াম। ইতিহাসপ্রেমী পর্যটকদের জন্য এটি হতে পারে একটি চমৎকার গন্তব্য।

স্যাভোনলিনা শহর

হেলসিংকি শহর

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি একটি চমৎকার শহর। যেখানে আধুনিকতা ও ঐতিহ্য যেন একে অপরের সাথে মিশে যায়। শহরটি তার মনোরম স্থাপত্য, সবুজ পার্ক, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, এবং অনন্য রান্নার জন্য বিখ্যাত। হেলসিংকি ভ্রমণের মনোরম অভিজ্ঞতা যে কোন পর্যটকের মনে ছাপ রেখে যেতে বাধ্য।

হেলসিংকি শুধু ফিনল্যান্ডেরই নয়, বরং, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় শহর। এখানে রয়েছে ১৮১২ সালে রাশিয়ান নকশায় নির্মিত ঐতিহাসিক সেন্ট পিটার্সবার্গ গীর্জা। 

শহরের তিনটি গীর্জা – লুথারান ক্যাথেড্রাল, চার্চ ইন দ্য রক, এবং আপসেংকি ক্যাথেড্রাল – সবই হেলসিংকির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই গীর্জাগুলোর স্থাপত্য নিঃসন্দেহে শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। গীর্জাগুলি শহরের অতীত ও বর্তমানের সংযোগ স্থাপন করে।

হেলসিংকি শহর

সান্তা ক্লজ ভিলেজ

ফিনল্যান্ডের রোভানিয়েমিতে রয়েছে শিশুদের সেই স্বপ্ন রাজ্য, সান্তা ক্লজের বাড়ি। ফিনল্যান্ডে সান্তাক্লজকে ডাকা হয় “জৌলুপুক্কি” নামে। ২০১০ সালে ল্যাপল্যান্ডক গ্রামকে সরকারিভাবে সান্তার বাসস্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই গ্রামটির অবস্থান মেরু বৃত্তের মধ্যে হওয়ার এটি সান্তার বাসস্থান হিসেবে উপযুক্ত বিবেচিত হয়েছিল। সান্তার এই বাড়ির ওপর দিয়েই কাল্পনিক আর্কটিক লাইন বা উত্তর মেরু রেখা চলে গিয়েছে। 

এখানকার বাসিন্দাদের জন্য এটি এক বিশেষ আনন্দের ব্যাপার। কারণ, তারা এই অদ্ভুত অবস্থানে বাস করে, যেখানে একদিকে দিনের পর দিন অন্ধকার রাত আর অন্যদিকে বিরামহীন রোদ। বিশেষত ২২ ডিসেম্বর তারিখে, এই স্থানটি পৃথিবীর অক্ষাংশের কাছাকাছি হওয়ায় দিনরাত অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে। অন্যদিকে, ২১ জুন এ ২৪ ঘণ্টা সূর্যের আলোর দেখা মেলে। একে বলে “মিডনাইট সান” যে দিনে সূর্য কখনো অস্ত যায় না।

সান্তা ক্লজের বাড়ি যেন বরফের স্বর্গরাজ্য। রাস্তা, মাঠ-ঘাট, বাড়ির ছাদ, গাছ সব বরফে ঢাকা। এখানে বছরে প্রত্যেকদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে সান্তা ক্লজ সকলের সঙ্গে দেখা করেন। ভালোবাসা ঐক্যের বাণী ছড়িয়ে দেন পৃথিবীতে। এলাকা জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ, যেন আজকের দিনটাই বড়দিন। সান্তার বাড়ি ঘিরে নানা আয়োজন। সুভেনির শপ, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ থেকে ইগলু থিম পার্ক, রেন্ডিয়ারে টানা, স্লেজগাড়িতে চড়ে ঘোরা, স্নোমোবিল….আকর্ষণের যেন শেষ নেই এখানে! মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখানে সান্তার নিজস্ব পোস্ট অফিসও আছে। সেখান থেকে পৃথিবীর  যেকোন প্রান্তে চিঠি পোস্ট করা যায়।

সান্তা ক্লজ ভিলেজ

ফিনল্যান্ডের শীতকালীন অ্যাডভেঞ্চার: নর্দান লাইটস

আমাদের পৃথিবী অনেক আশ্চর্য জিনিস দিয়ে ঘেরা। যেগুলোর রহস্য আমরা আজও ভেদ করতে পারিনি বা কিছু কিছু পেরেছি। এই সব আশ্চর্য জিনিস গুলোর মধ্যে ফিনল্যান্ড এর উত্তরের আকাশ এর আলোর নাচ অন্যতম। এই আলো নর্দার্ন লাইট নামে পরিচিত । প্রতি বছর বহু পর্যটক এই দৃশ্য দেখার জন্য ভিড় করেন। 

উত্তর গোলার্ধে প্রতি শীতকালে, নর্দার্ন লাইটগুলি প্রাকৃতিক আলোর একটি দর্শনীয় প্রদর্শনে আকাশ জুড়ে নাচ করে। এখন কল্পনা করুন যে, আপনি উপরের দিকে তাকাচ্ছেন এবং রাতের আকাশ জুড়ে আলোর ঝলকানো, বহু রঙের পর্দা দেখতে পাচ্ছেন। নর্দার্ন লাইটের একটি শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য অনেকের জন্য একটি বহু প্রতীক্ষিত অভিজ্ঞতা। 

নর্দার্ন লাইট দেখার জন্য ফিনল্যান্ড ইউরোপের অন্যতম সেরা জায়গা। ফিনল্যান্ডের উত্তরে অবস্থিত ল্যাপল্যান্ড  হ্রদ ও বনের মধ্যে বিস্তৃত প্রকৃতির একটি অনন্য দৃষ্টি নন্দন স্থান। এখানকার নির্জন পরিবেশ এবং পরিষ্কার আকাশ উত্তরের আলো দেখার জন্য একেবারে আদর্শ।

নর্দান লাইটস

ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত খাবার

লোহিকিত্তো 

লোহিকিত্তো হলো ফিনল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় সালমন মাছের স্যুপ। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই খাবারটি  স্থানীয় সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ। এই স্যুপটি সাধারণত তাজা সালমন, আলু, পেঁয়াজ, গাজর, ক্রিমের মিশ্রণে তৈরি করা হয়। এর সাদৃশ্য ও সুস্বাদু স্বাদ ফিনিশদের মাঝে খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে শীতকালীন সময়ে, ফিনল্যান্ডের বাড়ি-বাড়িতে এটি একটি প্রিয় খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়। সাধারণত, লোহিকিত্তো খাবারটি গরম গরম পরিবেশন করা হয়। ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে গরম গরম এ স্যুপ। এটা শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টির দিক থেকেও অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

লোহিকিত্তো

স্মোকড হেরিং

সুইডিশ-ভাষী ফিনল্যান্ডিদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে স্মোকড হেরিং। হেরিং মূলত ছোট মাছ। এর রন্ধন প্রণালী কিছুটা বারবিকিউ এর মত। ফিনল্যান্ডে এটি সাধারণত রুটি বা স্যালাডের সাথে খাওয়া হয়। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং স্থানীয় মসলা দিয়ে পরিবেশন করা হয় বলে, এর স্বাদ আরো বেড়ে যায়। এই মাছের স্মোকড ফ্লেভার এবং টক স্বাদ ফিনিশদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

স্মোকড হেরিং

ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা 

ফিনল্যান্ডে শিক্ষা একটি জন্মগত অধিকার ও রাষ্ট্রকর্তৃক প্রদত্ত সেবা হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা বিনামূল্যে শিক্ষা লাভ করে। প্রাথমিক স্কুলে ৬ বছর এবং মাধ্যমিক স্কুলে ৩ বছর লেখাপড়া করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। 

গবেষণায় ফিনল্যান্ডের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিশ্বের শিক্ষাছকের শীর্ষে অবস্থান করছে। গবেষণার ফলাফল ভাষা, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়াবলীর ভিত্তিতে হয়েছে। 

উচ্চশিক্ষার জন্য ফিনল্যান্ডে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য কলেজ এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ স্কুল রয়েছে। ইউরোপের যে দেশেগুলোতে টিউশন ফি ছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যায় তাদের একটি ফিনল্যান্ড। তাই এদেশে প্রতি বছর এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। 

তবে তাদের বেশিরভাগই স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভর্তি হয়। এদেশে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এখানে অভিবাসীদের ছেলেমেয়েদের জন্য তাদের নিজেদের ভাষা শিক্ষার সুযোগও রয়েছে, যেটা যুক্তরাজ্যের মতো বহু বর্ণ ও সংস্কৃতির দেশেও অনুপস্থিত।

ফিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদ

বনজ সম্পদ ফিনল্যান্ডের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে যেখানে একটি দেশের ২৫ ভাগ এলাকায় বনভূমি থাকা দরকার, সেখানে ফিনল্যান্ডের ৭২ ভাগই বনভূমি। এদেশের বনাঞ্চলে ১২শ’ প্রজাতির গাছপালা এবং লতাগুল্ম আছে। তাই এদেশের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ কাঠ। 

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এদেশের বন এবং কাঠ চেরাই কারখানা সবচেয়ে বিখ্যাত। কাঠের গুড়ি চালি বেঁধে নদীপথে ভাসিয়ে উপকূলীয় এলাকার করাত কলগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। কলকারখানায় নানাবিধ কাঠের পণ্য তৈরি করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। 

এসব রপ্তানি সামগ্রীর মধ্যে আছে কাগজ, মন্ড, নিউজপ্রিন্ট, বোর্ড, প্লাইউড ইত্যাদি। এ থেকে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৪০ শতাংশ আসে, যা দিয়ে প্রয়োজনীয় নানা পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে। 

আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, লোহা, ইস্পাত, খাদ্য ও বস্ত্রসামগ্রী।

কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড?

টানা সাত বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় রয়েছে ফিনল্যান্ডের নাম। কিন্তু তুষারে ঢাকা হিমশীতল একটি দেশ কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হতে পারে? অনেকেই ভাবতে পারেন, ফিনিশরা হয়তো জন্মগতভাবেই সুখী। অর্থাৎ তাদের জিনে সুখের প্রবণতা বেশি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ফিনল্যান্ডের সুখ শুধুমাত্র তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে নয়। গত কয়েক বছর ধরে, ফিনল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে পরিচিত। এবং এটি শুধু ফিনিশ জনগণের জন্য নয়, বরং সেখানে বসবাসকারী অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও সত্য। 

ফিনল্যান্ডের মানুষের সুখের রহস্য তাদের জীবনযাত্রার ধরনে নিহিত। জীবনযাত্রার ধরনের বিশেষ ছয়টি চলকের উপর ভিত্তি করে কোনো দেশের সুখের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। প্রথমত, উপার্জন বা অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। যা মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করে এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়। দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতা- ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং জীবন নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি প্রদান করে। তৃতীয়ত, বিশ্বাস। যা সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা তৈরি করে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সাহায্য করে। চতুর্থত, স্বাস্থ্যসম্মত গড় আয়ুষ্কাল। পঞ্চমত, সামাজিক সমর্থন। এ সমর্থন পরিবার, বন্ধু এবং সমাজের সহায়তা থেকে পাওয়া যায়। এবং ষষ্ঠত, মহানুভবতা, যার মাধ্যমে ফিনল্যান্ডে সহযোগিতা এবং সহানুভূতির একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড

এছাড়া, ফিনল্যান্ডের মানুষের আবেগিক সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ্যও তাদের সুখের আরেকটি বড় কারণ। ফিনিশরা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে এবং প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা তাদের মানসিক শান্তি এবং সুখে সহায়তা করে। এই সব উপাদান একত্রে ফিনল্যান্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ফিনল্যান্ডের মানুষ  নিজেদের জীবনকে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করে এবং একে অপরকে সহায়তা করতে ভালোবাসে।

ফিনল্যান্ডে আত্মহত্যার প্রবণতা

ফিনল্যান্ড, দেশটি উন্নত শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ এবং অর্থনীতির জন্য সুপরিচিত। অপরাধের হার প্রায় নেই বললেই চলে। আর তাই প্রতি বছর ফিনল্যান্ডকে সুখী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

তবে, এই সুখী দেশের মধ্যে একটি চমকপ্রদ পরিসংখ্যানও রয়েছে। তা হল আত্মহত্যার প্রবণতা অত্যন্ত বেশি। ফিনল্যান্ড বর্তমানে আত্মহত্যাপ্রবণ দেশের তালিকায় ২১তম অবস্থানে রয়েছে। অর্থাৎ, এত উন্নত দেশেও মানুষের মধ্যে মানসিক অশান্তি এবং হতাশার প্রবণতা বিদ্যমান। 

ফিনল্যান্ডের শীত এবং অন্ধকারাচ্ছন্নতার সাথে বিষণ্নতা এবং আত্মহত্যা প্রবণতার গভীর যোগসূত্র রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে বছরের প্রায় ২০০ দিন শীত থাকে। মাঝে মাঝে শীত এত চরম পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তাপমাত্রা -৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। দিনের পর দিন সূর্যের আলোর অভাবে অন্ধকার হয়ে থাকে দেশটি, যা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।

১৯৯০ সালের আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফিনল্যান্ড ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আত্মহত্যাপ্রবণ দেশ। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। এখন ফিনল্যান্ডে আত্মহত্যার প্রবণতা ১৯৯০ সালের তুলনায় কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যা প্রবণতায় ২২তম অবস্থানে রয়েছে দেশটি। তবুও, সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে ফিনল্যান্ডের আবহাওয়া মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট বৈরী। প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ১৬.৪ জন এখানকার শীত এবং অন্ধকারের কারণে আত্মহত্যা করে।

ফিনল্যান্ডের বাৎসরিক আত্মহত্যার একটি চার্ট

ফিনল্যান্ড একটি বিপরীতমুখী দেশ। দেশটিতে একদিকে যেমন রয়েছে বিশ্বসেরা সুখী দেশ হিসেবে পরিচিতি, উন্নত জীবনযাত্রা, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। অন্যদিকে আছে, অত্যন্ত শীতল ও অন্ধকারময় আবহাওয়া, মানসিক অশান্তি এবং আত্মহত্যার উচ্চ হার।

ফিনল্যান্ড এমন একটি দেশ- যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক সভ্যতা, উন্নত শিক্ষা এবং সুখী জীবনযাত্রা এক অনন্য মিশ্রণ তৈরি করেছে, যা পৃথিবীজুড়ে ভ্রমণকারীদের কাছে একটি স্বপ্নময় অভিজ্ঞতা।সবকিছু মিলিয়ে ফিনল্যান্ড হতে পারে সত্যিই একটি আদর্শ পর্যটন গন্তব্য। 

ফিনল্যান্ড সম্পর্কে আরো কিছু মজার তথ্য 

২৩ ঘণ্টা রোজা:  ফিনল্যান্ডের উলু নামে একটি শহর আছে, যেখানকার বাসিন্দাদের ২৩ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। 

ন্যাশনাল ফেইলিওর ডে: ফিনল্যান্ডে প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর পালিত হয় “ন্যাশনাল ফেইলিওর ডে”, যা ২০১০ সালে শুরু হয়। এই দিনটি ফিনদের তাদের ভুলগুলো স্বীকার করার, সেগুলো থেকে শিখে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দেয়। এটি ফিনল্যান্ডের মানুষের সহ্যশক্তি এবং দৃঢ়তার প্রতীক।

ক্যাফেইন ক্যাপিটাল: ফিনল্যান্ড বিশ্বের সর্বোচ্চ কফি খাওয়া দেশ, যেখানে একজন ফিনল্যান্ডি বছরে গড়ে ১২ কেজি কফি পান। 

বিশেষ প্রতিযোগিতাসমূহ: ফিনল্যান্ডে বেশ কিছু অদ্ভুত এবং মজাদার প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়, যেমন ওয়াইফ ক্যারিং, মোবাইল ফোন ফেলে দেওয়া, এয়ার গিটার চ্যাম্পিয়নশিপ, বুট থ্রোইং ইত্যাদি ।

পে-ফোনের অভাব: ফিনল্যান্ডে আর পে-ফোন নেই, কারণ দেশটি নোকিয়া-এর জন্মস্থান। দেশটির অধিকাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, তাই পে-ফোন প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে।

হেভি মেটাল হেভেন: ফিনল্যান্ডে প্রতি ১০০,০০০ জনে ৫৩টি হেভি মেটাল ব্যান্ড রয়েছে। এই দেশটি হেভি মেটাল মিউজিকের অন্যতম বৃহত্তম কেন্দ্র, যেখানে বিখ্যাত ব্যান্ড যেমন নাইটউইশ, হিম, চিলড্রেন অফ বডম, এবং অ্যাপোক্যালিপটিকা রয়েছে।

সূত্র 

Related posts

প্রমিজ ল্যান্ড ইসরায়েল

লেবানন – পৃথিবীর প্রাচীনতম সংস্কৃতির দেশ

শেখ আহাদ আহসান

ইউরোপের রুটির ঝুড়ি ইউক্রেন

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More