পুরো বিশ্বের সামনে সুদান একটি দরিদ্র দেশ হিসেবে পরিচিত। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, সুদানকে আরব বিশ্বের খাবারের ঝুড়ি বলা হয়। আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে অনেক বেশি আবাদি জমি রয়েছে।
সুপ্রাচীন কাল থেকেই সুদান ভূমধ্যসাগর এবং আফ্রিকান সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো বিশ্ব মিডিয়া সুদানকে সবসময়ই বিকৃতভাবে বিশ্বের সামনে প্রদর্শন করে। আশ্চর্যজনকভাবে সুদানের ইতিবাচক দিকগুলো পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষেরই অজানা। সুদান সম্পর্কে জানা-অজানা মজার তথ্য নিয়েই থাকছে আজকের গল্প।
রাজধানী | খার্তুম |
সরকারি ভাষা | সুদানি আরবি |
জনসংখ্যা | ৫ কোটি |
মোট আয়তন | ১৮ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬৮ বর্গ কিলোমিটার |
মুদ্রা | সুদানিজ পাউন্ড |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি +২ |
সুদানের ভৌগোলিক অবস্থান
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদান। দেশটির উত্তরে রয়েছে মিশর, পূর্বে লোহিত সাগর, ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়া। এছাড়াও, দক্ষিণে রয়েছে দক্ষিণ সুদান, দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, পশ্চিমে চাদ এবং উত্তর-পশ্চিমে লিবিয়া অবস্থিত।
ম্যাপ
সুদানের আয়তন ও জনসংখ্যা
সুদান একসময় পুরো আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম এবং পৃথিবীর দশম বৃহত্তম দেশ হিসাবে পরিচিত ছিলো। দেশটি আফ্রিকা মহাদেশের ৮% এরও বেশি এবং বিশ্বের মোট আয়তনের প্রায় ২%জায়গা জুড়ে অবস্থিত বিস্তৃত ছিলো।
কিন্তু, দক্ষিণ সুদানের জন্মের পর সুদান এখন বিশ্বের ১৫ তম এবং আফ্রিকা মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। দেশটির বর্তমান আয়তন ১৮ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬৮ বর্গ কিলোমিটার। সুদানে বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি ৮১ লক্ষ্য ৯ হাজার ৬ জন (২০২৩) লোক বসবাস করে। এই জনসংখ্যার ৭০% নিগ্রো আরবি জাতির জনগোষ্ঠী। সুদানের বেশির ভাগ মানুষ আরবি এবং সুদানি আরবি ভাষায় কথা বলে।
সুদানের নামকরণ
সুদানের নামকরণ করা হয়েছে ‘বিলাদ-আস-সুদান’ নামক আরবি শব্দ থেকে। যার অর্থ কালো মানুষের দেশ।
সুদানের রাজধানীর ‘খার্তুম’ নামটিও আরবি শব্দ আল জার্তুম থেকে এসেছে। তবে, অনেকের ধারণা রাজধানীর নামটি ডিনকা ভাষার শব্দ ‘খার-তুম’ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। যা দ্বারা বোঝানো হয় ‘দুই নদীর মিলনস্থল’।
সুদানের ইতিহাস
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে প্রমাণ অনুযায়ী, সুদানে ৬০ হাজার বছর আগেও মানব বসতি ছিল। প্রায় আট হাজার বছর আগে এ অঞ্চলে ‘স্থায়ীভাবে’ মানুষ বসবাস করা শুরু করে। ‘কুশ’ রাজ্য থেকে শুরু করে প্রাচীন মিশরীয় ‘ফারাও’ পর্যন্ত সুদান অসংখ্য সভ্যতার সাক্ষী হয়েছে।
কুশ রাজবংশ থেকে ব্রিটিশ শাসন
তিন হাজার বছরের অধিক সময় ধরে সুদান বিখ্যাত কুশ রাজবংশের শাসনাধীন ছিল। ৭৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে কুশ রাজা কাস্তা মিশর দখল করে নেন। এর মধ্যে দিয়েই সুদানে নুবিয়ান সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। কুশের রাজধানী ছিল ‘নাপাটা’। সেই সময় থেকেই আরবের মুসলমানরা সুদানে আসতে শুরু করে।
তারা ওই অঞ্চলে প্রায় ২০০ বছর কুশ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখে। ৬৬৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সর্বশেষ কুশ রাজা মিসর থেকে রাজত্ব গুটিয়ে নাপাটে ফিরে আসেন।
সুদানের শেষ খ্রিষ্টান সাম্রাজ্য ছিল আ্যালেঅডিয়াদের। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে এই শাসনের সমাপ্তি ঘটে। এরপর সুদানে মুসলিম সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। ফুঞ্চ ও ওসমানীয়দের শাসন ছিল দীর্ঘকাল।
পরবর্তীতে ১৮৯৯ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত সুদান যৌথভাবে ব্রিটিশ-মিশরীয় শাসনের অধীনে ছিল। সুদান দেশটি স্ব-শাসনের অধিকার পায় ১৯৫৩ সালে। পরবর্তীতে, ১৯৫৬ সালে দেশটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা লাভ করে।
সুদানের গৃহযুদ্ধ
বিশ্ব মিডিয়ায় সুদানের অশান্ত চিত্র প্রদর্শনের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশটির গৃহযুদ্ধ। ১৮৮৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর চলে এই যুদ্ধ। এই গৃহযুদ্ধটি দ্বিতীয় সুদানের গৃহযুদ্ধ নামে সুপরিচিত। এই যুদ্ধে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ নিহত এবং ৪০ লক্ষের অধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
২০০৫ সালে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলস্বরূপ ২০১১ সালের দক্ষিণ সুদান নামে আলাদা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। দেশ ভাগাভাগি হলেও সুদান এবং দক্ষিণ সুদানের মধ্যে তেলের আয় এবং দুই অঞ্চলের সীমান্ত নিয়ে চলমান বিরোধ আজও থামেনি।
সুদানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রকৃতি
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর সুদানের সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্যের ছাপ লক্ষ্য করা যায়। সুদানের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময়তার অন্যতম একটি কারণ হলো, দেশটি প্রাচীন সভ্যতায় সমৃদ্ধ একটি দেশ।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা
ইসলাম ধর্মের একক রাজত্ব সুদানে প্রচলিত রয়েছে। সুদানের ৯৭% মানুষ মুসলিম। বাকি ১ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টান এবং দুই শতাংশ মানুষ আফ্রিকান স্থানীয় ধর্মে বিশ্বাসী। আর তাই, দেশটির সমাজ গড়ে উঠেছে সুদানি এবং মুসলিম সংস্কৃতির মেলবন্ধনে।
সুদানের ফ্যাশন ডিজাইন
সুদানের জনসংখ্যার বৃহদাংশই তরুণ। সুদানের ফ্যাশন ডিজাইন শিল্প বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। সুদানে এথিনিক ডিজাইনের পোশাকের অনন্য নিপুনতা এবং ঐতিহ্যের ছাপ এটিকে এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
ভূতের বিবাহ
সুদানের ঐতিহ্যের একটি অদ্ভুত দিক হলো ভূতের বিবাহ। নীলেটি ঐতিহ্যের আদলে সুদানের অধিবাসীরা ভূতের বিবাহ রীতি উদযাপন করে থাকে। পরিবারে কোনো ভাই মারা গেলে পরবর্তী বিবাহযোগ্য কোনো ভাই থাকলে মনে করা হয় যে, মৃত ভাইয়ের আত্মা তার মধ্যে চলে এসেছে এবং অনায়াসেই সে তার ভাইয়ের সদ্য বিধবা স্ত্রিকে বিয়ে করতে পারে। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, নবদম্পতির যদি কোন সন্তান জন্ম হয়, তবে সে মৃত ব্যক্তির সন্তান হিসেবে পরিচিত হবে।
সুদানের রন্ধনশৈলি
সুদানের অধিবাসীরা বেশ ভোজন রসিকও বটে! এদেশের রন্ধন প্রণালীতে আফ্রিকান আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রভাব রয়েছে। তাদের খাবারের তালিকায় বাজরা মসুর ডাল এবং মসলাদার মাংস বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
এর পাশাপাশি সুদানের চা সংস্কৃতিরও বেশ প্রচলন রয়েছে। সুদানে চা ‘শাই’ নামে পরিচিত। এই চায়ের উপকরণ হিসাবে নেওয়া হয় সুগন্ধিযুক্ত ভেষজ উদ্ভিদ এবং মসলা। চা দিয়ে অতিথি বরণের রীতি সুদানের একটি বহুল প্রচলিত ধারা।
এছাড়াও সুদানে প্রচলিত খাবার গুলোর মধ্যে ‘ফাউল মেডামস’ ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ব্রেকফাস্ট। এই খাবার টি সকাল সন্ধ্যা যেকোনো সময়ে, যেকোনো ঋতুতে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মসলা, রসুন, লেবুর রস, অল্প পরিমানে কাচা মরিচ, উদ্ভিজ্জ তেল এবং শাটা নামের একটি গরম সস দিয়ে এই খাবারটি তৈরি করা হয়।
সুদানের নীল নদ
পৃথিবীর সর্বজন গৃহীত একটি সত্য হচ্ছে নীল নদের অবস্থান মিশরে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর এই দীর্ঘতম নদটি সুদানেও রয়েছে। নীলনদ সুদানের এক্কেবারে মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এখানেই শেষ নয় সুদানের রাজধানী খার্তুমে এসে নীল নদের দুইটি প্রধান উপনদী ‘ব্লু-নাইল’ এবং ‘হোয়াইট-নাইল’ একসাথে মিলিত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই মিলনের স্থলের জায়গাটিতে পাশাপাশি সাদা ও নীল রংয়ের পানি এক অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়।
সুদানের পিরামিড
সুদানের আরেকটি অবাক করা সৌন্দর্য হলো পিরামিড। স্বভাবগতভাবে পিরামিড শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে মিশরের দৃশ্য ভেসে ওঠে। খুবই অবাক করা একটি তথ্য হলো, সুদানে মিশরের থেকে বেশি পিরামিড রয়েছে। ২,৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন নুবিয়ান সভ্যতার রাজারা সুদানে প্রায় ২৫০ টিরও অধিক পিরামিড নির্মাণ করে।
সুদানের বিখ্যাত পর্যটন স্থান
সুদান কম জনপ্রিয় হলেও এখানে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি পর্যটন স্থান রয়েছে। বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি দর্শনীয় স্থান এবং সকল প্রকার পর্যটনগত সুযোগ সুবিধা মিলিয়ে সুদানকে পর্যটকদের জন্য একটি লোভনীয় গন্তব্য বলা যায়।
মেরো দ্বীপ
মেরো দ্বীপ সুদানের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মেরো দ্বীপে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে নির্মাণ করা প্রায় ১০০ টি পিরামিড রয়েছে। মজার বিষয় হলো, মেরো দ্বীপের নামে দ্বীপ থাকলেও এটি আসলে কোন দ্বীপ নয়। স্থানটি নীল নদ এবং আটবারা নদীর মধ্যবর্তী একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং পর্যটন কেন্দ্র।
ইস্টার্ন ডিফুফা
সুদানের কেরমা শহরে অবস্থিত আরো একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হচ্ছে ইস্টার্ন ডিফুফা। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতানুসারে, সুদানের এই স্থানটি কুশ রাজপরিবারের কবরস্থান। একই সাথে এটি একটি রহস্যময় স্থানও বটে!
এখানে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি কবরের অবশিষ্টাংশ রয়েছে। এখানে শুধু মানুষের কঙ্কালই পাওয়া যায়নি, প্রায় ৫ হাজার গবাদি পশুর খুলিয়ও এই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হয় যে, রাজ পরিবারের সদস্যরা যাতে পরকালে শান্তিতে থাকতে পারে এজন্য গবাদি পশুগুলোকে তাদের সাথে কবর দেওয়া হতো।
সুদানের মরুভূমি ও তৃণভূমির অদ্ভুত সহাবস্থান
সুদান দেশটি আংশিকভাবে বিশ্বের উষ্ণতম মরুভূমি দ্বারা আচ্ছাদিত। সুদানের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অঞ্চলে মরুভূমি অথবা মরুভূমির প্রবণ শুষ্ক অঞ্চল। বিশ্বের বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা মরুভূমির কিছু অংশ সুদানে রয়েছে।
পরতে পরতে বিস্ময় মোড়ানো এই মরুভূমি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণে এবং উদ্ভিদের আবাসস্থল। শুধু মরুভূমি নয়, সুদানে মরুভূমির পাশাপাশি সবুজের সমরোহও চোখে পড়ে। সুদান দেশটি আংশিকভাবে ‘সাহেল তৃণভূমি’ দ্বারা আচ্ছাদিত। ‘সাহেল তৃণভূমি’ সেনেগাল থেকে সুদান পর্যন্ত প্রায় ৫৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃত আধা-মরুভূমির একটি অঞ্চল।
গ্রেট গ্রিন ওয়াল
চীনের মহাপ্রাচীরের কথা আমরা কে না জানি! মজার বিষয় হলো, সুদানেও মহাপ্রাচীর রয়েছে। সৌন্দর্যের বিবেচনায় চীনের মহাপ্রাচীরের থেকে কোন অংশে কম নয় সুদানের এই মহাপ্রাচীর।
সুদানের এই মহাপ্রাচীর কে বলা হয় ‘গ্রেট গ্রিন ওয়াল’। গ্রেট গ্রিন ওয়াল হলো ৮ হাজার কিলোমিটার জায়গা জুড়ে গাছ দিয়ে তৈরি একটি বৃহত্তম জীবন্ত প্রাচীর। এই গাছের মহাপ্রাচীরটি আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত প্রায় ২১ টি আফ্রিকান দেশ জুড়ে বিস্তৃত।
মুক্কাওয়ার দ্বীপ মেরিন ন্যাশনাল পার্ক
সুদানের আরেকটি প্রাকৃতিক বিষ্ময় হলো ইউনেস্কো স্বীকৃত মুক্কাওয়ার দ্বীপ মেরিন ন্যাশনাল পার্ক। এই এই পার্কটি প্রবাল পাথর সমুদ্র সৈকত এবং ম্যানগ্রোভ এক অপরূপ মেলবন্ধন। এক কথায় বলা যায়, স্থানটি একটি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময়তা অবলোকন করার আদর্শ একটি জায়গা। এখানে বিভিন্ন ধরনের হাঙ্গর, কচ্ছপ এবং আরো অনেক আজব জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে সুদানের এই পার্কটি স্বর্গের মতো।
ডিন্ডার ন্যাশনাল পার্ক
আফ্রিকান জংলি প্রাণীদের বিশাল এক সংরক্ষণাগার হচ্ছে ডিন্ডার ন্যাশনাল পার্ক। এই স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, মহিষ, ডিগ ডিগ এন্টিলোপ, গ্যাজেল, উটপাখি, সিংহ সহ বিভিন্ন প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়।
এছাড়াও, এ পার্কে কালো গন্ডার, হাতি, হায়না, শেয়াল এবং চিতার দেখাও মেলে। পাখি জগতের বিখ্যাত ‘সেক্রেটারি পাখি’ সুদানে দেখতে পাওয়া যায়। এই সেক্রেটারি পাখি সুদানের জাতীয় প্রতীক।
পোর্ট সুদান
সুদানের অন্যতম সমুদ্র বন্দর ‘পোর্ট সুদান’ পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। ১৯৬৩ সালে এই বন্দরে একটি আন্ডার ওয়াটার গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৬৪ সালে এখান থেকে তথ্য নিয়ে ‘ওয়ার্ল্ড উইদাউট সারেন’ নামে একটি বিখ্যাত প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হয়। গবেষণা কেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে পর্যটকদের কুবা ড্রাইভিং করার সুযোগ রয়েছে।
সুদানের শিক্ষা ব্যবস্থা
সুদানের শিক্ষা ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। যদিও দেশটিতে ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং তার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশুনার সুযোগও সুদানে রয়েছে। দেশটিতে ৩৬ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয় সুদানের একটি সুপরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালের একটি হিসাব মতে, সুদানের মোট জনসংখ্যার ৬০.৭ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত।
সুদানের অর্থনীতিঃ আরব বিশ্বের খাবারের ঝুড়ি
পুরো বিশ্বের সামনে সুদান একটি দরিদ্র দেশ হিসেবে পরিচিত। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, সুদানকে আরব বিশ্বের খাবারের ঝুড়ি বলা হয়। আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে অনেক বেশি আবাদি জমি রয়েছে। এছাড়াও, সুদান বিশ্বের বৃহত্তম আঠা রপ্তানিকারক দেশ। পুরো বিশ্বের মোট ৭৫% আঠার যোগানদাতা এ দেশটি।
সুদানের অন্যতম বৃহৎ একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হল ‘সুক আল আরাবি’, যা দেশটির বৃহত্তম মার্কেট। রাজধানী খার্তুমের প্রাণ কেন্দ্রে এই বাজারটি অবস্থিত। এই বাজারের একটি বিশাল অংশ স্বর্ণ বেচাকেনার সাথে জড়িত। সুদানের রাষ্ট্রীয় আয়ের অন্যতম আরেকটি অংশ হচ্ছে দেশটির তেল শিল্প।
সুদানে চলমান খাদ্য সংকট
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকট পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ত্রাণ সরবরাহও কমে যাওয়ায় দেশটি এখন প্রকট ক্ষুধার মুখোমুখি। খাদ্যের অভাবে টিকতে না পেরে হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। দ্য গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ২৫ হাজারেরও বেশি সুদানি নাগরিক মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদে আশ্রয় নিয়েছেন।
২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে সংঘাত শুরু হয়, যা পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এই যুদ্ধের ফলে বহু মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সংঘাতের কারণে দেশটির কৃষি উৎপাদন ৭৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় খাদ্য সংকট আরও বিপর্যস্ত রূপ ধারণ করেছে।
উপসংহার
সুদান একটি ঐতিহাসিক দেশ, যেখানে যুগে যুগে গড়ে উঠেছে বহু সভ্যতা। নীল নদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা দেশটি তার অংখ্য পিরামিডের সম্ভার, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, এবং সৌন্দর্য্যমন্ডিত প্রাকৃতিক নিদর্শনের জন্য সুপরিচিত।
তবে, বর্তমানে খাদ্য সংকট এবং গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সুদানের বিশাল কৃষিজমি থাকার পরও সংঘাতের কারণে খাদ্য উৎপাদন কমে গেছে, ফলে লাখ লাখ মানুষ অশান্তির শিকার হচ্ছে এবং দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে।
সুদান সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য
চলাচলের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ : সুদানে পাকা রাস্তা খুব কম, যার ফলে চলাচলের ক্ষেত্রে অধিকাংশ জনগণকে বিপাকে পড়তে হয়।
সুদানের পতাকাঃ সুদানের পতাকায় তিনটি রং রয়েছে। এই তিন রং বিশেষ চিহ্ন বহন করে। পতাকার কালো অংশ দেশটির নামের প্রতিনিধিত্ব করে। লাল অংশটি দ্বারা বোঝানো হয় দেশটি স্বাধীনতা অর্জনের রক্তক্ষয় সংগ্রামকে।সর্বশেষ, সবুজ রং দ্বারা সুদানের ধর্মীয় আদর্শগত দিক অর্থাৎ ইসলাম ধর্মকে বোঝানো হয়।
সুদানের জাতিঃ সুদানে রয়েছে ৫০০ টিরও অধিক জাতি গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে।
দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসঃ সুদানের প্রায় ৪৭ শতাংশ মানুষ আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।
ভাষাঃ সুদানে প্রায় ৭০টি মতো স্থানীয় ভাষা প্রচলিত আছে।