Image default
ইউরোপদেশ পরিচিতি

ফ্রান্সের অজানা গল্প: মৃত ব্যক্তিকে বিয়ে থেকে আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, যদি কেউ মৃত ব্যক্তির সাথে বিয়ে করতে চায় তেহলে কেমন হবে! হ্যা ঠিকই শুনেছেন। সত্যি সত্যি এমন সম্ভব, আর তা আবার অন্য কোথাও না, ফ্রান্সে। 

এই দেশটি প্রেমের প্রতীক আইফেল টাওয়ার গড়েছে, সেই দেশই আবার মানুষের মাথা কাটতে গিলোটিন আবিষ্কার করেছিল! হ্যাঁ, এটাই ফ্রান্স—যেখানে রোমান্স আর রক্তাক্ত বিপ্লব যেখানে পাশাপাশি চলে। ভালোবাসা, শিল্প, ফ্যাশন, আবার একই সাথে যুদ্ধ, রাজনীতি আর বিদ্রোহ সব মিলেই ফ্রান্স আজও বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় দেশগুলোর একটি। 

আজকের লেখায় সেই ফ্রান্স সম্পর্কে জানবো নানা জানা-অজানা গল্প। 

ফ্রান্সের অবস্থান আয়নত ও জনসংখ্যা 

ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে ফ্রান্স বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির উত্তর-পূর্বে রয়েছে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গ, পূর্বে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও ইতালি। আবার দক্ষিণ-পশ্চিমে আছে অ্যান্ডোরা ও স্পেন। আয়তনের বিচারে ফ্রান্স ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭,৯০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফ্রান্সের মোট আয়তন প্রায় ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে ফ্রান্সে প্রায় ৬ কোটি ৬২ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। আর এই দেশটির অধিবাসীদের বলা হয় ফরাসি বা ফ্রেঞ্চ। 

শুধু মানুষকেই নয়, ফ্রান্সের সরকারি ভাষাকেও বলা হয় ফরাসি ভাষা। এছাড়াও দেশটিতে বসবাসরত অভিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রভাবে আরবি, আর্মেনীয়, ইতালীয়, কাবিলে, পর্তুগিজ, তুর্কি এবং ওলফ ভাষা প্রচলিত রয়েছে। তাছাড়া জিপসি বা রোমানি ভাষার ব্যবহারও এখানে দেখতে পাওয়া যায়। 

ধর্মীয় দিক থেকে ফ্রান্স একটি বৈচিত্র্যময় এবং একইসাথে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে প্রায় অর্ধেক মানুষ খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নিজেদের নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দেন। এই বৈচিত্র্যময় মানববসতীর কিন্তু একটি প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে।

ম্যাপ

ফ্রান্সের ইতিহাস

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের দিক থেকে ফ্রান্স পশ্চিমা বিশ্বের অন্যতম প্রধান দেশ। বহুমুখী চিত্রকলা, স্থাপত্যকীর্তি এবং সাহিত্যকর্মের জন্য ফরাসি জাতি বিশ্বজুড়ে রোমান্টিক হিসেবে পরিচিত। দেশের নাম হিসেবে “ফ্রান্স” শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ফ্রান্সিয়া থেকে, যার অর্থ “ফ্রাঙ্কদের ভূমি”। 

ধারণা করা হয়, প্রায় ১০,০০০ বছর আগে থেকেই এই অঞ্চলে মানুষের বসবাস শুরু হয়েছিল। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৬০০ বছর পর এখানে প্রথমে গ্রিক ও ফিনিশীয় ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে ফ্রান্স রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায় এবং টানা প্রায় ৫০০ বছর রোমানরা ফ্রান্স শাসন করে।

রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গোত্র নিজেদের শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শুরু করে। এর মধ্যেই ফ্রাঙ্ক নামের এক শক্তিশালী জাতি উঠে আসে এবং তাদের নাম থেকেই জন্ম নেয় ফ্রাঙ্কদের এলাকা।

ইউরোপের জনক শার্লেমেন

এরপর ৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলের ক্ষমতায় আসেন কার্লোম্যান, তবে শিগগিরই তাঁর ভাই শার্লোম্যান বা চার্লস দ্য গ্রেট ফ্রান্সের একক শাসক হয়ে ওঠেন। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে ফ্রান্স শুধু শক্তিশালী রাজ্যেই পরিণত হয়নি, বরং ইউরোপের বিশাল অংশ তাঁর শাসনে একত্রিত হয়। মজার ব্যপার হলো, শার্লোম্যান এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে তাঁকে “ইউরোপের জনক”ও বলা হয়। আর ৮০০ খ্রিস্টাব্দে পোপ তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্রাট হিসেবে মুকুট পরিয়ে দেন।

মধ্যযুগে ফ্রান্স

মধ্যযুগে এসে ফ্রান্সে রাজতন্ত্র দুর্বল হতে থাকে এবং উত্থান ঘটে সামন্ততন্ত্রের। জমিদার ও প্রভাবশালী অভিজাতরা তখন নিজেদের প্রায় আলাদা রাজ্যের মতো চালাতো। তবে ধীরে ধীরে অসন্তোষ বাড়তে থাকে এবং শেষমেশ ১৭৮৯ সালে ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ফরাসি বিপ্লব। 

এসময় ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের পতনের মধ্য দিয়ে জনগণ ঘোষণা করে “স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব” এর স্লোগান। জেনে অবাক হবেন, বিপ্লব চলাকালে রাজা ষোড়শ লুইকে প্রকাশ্যে গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যা সারা ইউরোপে সাড়া ফেলে।

গিলোটিন হলো এক ধরনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যন্ত্র, যা মূলত শিরচ্ছেদ করার জন্য ব্যবহৃত হতো। এতে একটি ভারী ধারালো ব্লেড থাকে, যা কাঠের ফ্রেমের ভেতর দিয়ে উঁচুতে তোলা হয় এবং তারপর দ্রুত নিচে ফেলে দেওয়া হয়। ব্লেডটি পড়ে আসার সাথে সাথে অপরাধীর মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ফরাসি বিপ্লব

কিন্তু বিপ্লব হওয়া মানেই শৃঙ্খলা এমন নয়। ফরাসি বিপ্লবের পর দেশটি বহু বছর বিশৃঙ্খলার মধ্যে কাটায়। অবশেষে আবির্ভূত হন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। তিনি শুধু এক মহান সেনাপতি নন, বরং আধুনিক প্রশাসকও ছিলেন। তাঁর আমলে ফ্রান্সে একীভূত আইন, শিক্ষা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু হয়। মজার ব্যাপার হলো, নেপোলিয়নের প্রবর্তিত নেপোলিয়নিক কোড আজও বিশ্বের বহু দেশের আইন ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিন্তু এই সুখও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফ্রান্সকে আবারও ধ্বংসস্তূপে ফেলে দেয়। তবে, নাৎসি জার্মানির দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দেশটি পুনর্গঠনের পথে হাঁটে। এ সময়ে ফ্রান্সকে নেতৃত্ব দেন চার্লস দ্য গল। তিনি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেন এবং ফ্রান্সকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাধীন ও প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে দাঁড় করান। এই চার্লস দ্য গলের নামেই প্যারিসের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয়েছে চার্লস দে গল এয়ারপোর্ট।

ফ্রান্সের সংস্কৃতি

এই ইতিহাস, শিল্প ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যে ভরা ফ্রান্স শুধু ইউরোপ নয়, বরং বিশ্ব সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। মধ্যযুগ থেকেই দেশটির রাজধানী শহর প্যারিস পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। সাহিত্য, দর্শন, শিল্পকলা, ফ্যাশন ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে প্যারিসকে এখনো বিশ্বের অন্যতম শহর হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

ফরাসি রান্না

আর এই ফরাসি সংস্কৃতির সবচেয়ে উজ্জ্বল ও বৈচিত্র্যময় দিক হলো তাদের রন্ধনশৈলী। পৃথিবীর সেরা রান্নার মধ্যে ফরাসি খাবারের নাম হয়তো প্রথম দিকেই থাকবে। ফরাসিদের কাছে খাবার শুধু পেট ভরার উপায় নয়, বরং এটি এক ধরনের শিল্পকলা। প্রতিটি পদ তৈরিতে থাকে ঐতিহ্য, রুচি, স্বাদ ও উপস্থাপনার অসাধারণ সমন্বয়। ফ্রান্সের গ্যাস্ট্রোনমি বা খাদ্যসংস্কৃতি এতটাই সমৃদ্ধ যে, ২০১০ সালে ইউনেস্কো তার কালচারাল হেরিটেজ তালিকায় ফ্রান্সের খাবারকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। 

ফ্রান্সের খাবারের মধ্যে একটি জনপ্রিয় এবং ব্যতিক্রমী খাবার হলো এস্কারগো। এটি মূলত একটি সামুদ্রিক শামুকের রেসিপি। শুনতে কিছুটা অদ্ভুত লাগলেও ফরাসিদের কাছে এটি দারুণ পছন্দের একটি খাবার। শুনে অবাক হবেন যে, প্রতি বছর ফরাসিরা প্রায় ২৫,০০০ টন শামুক খায়। তারমানে গড়ে প্রতি মানুষ বছরে প্রায় ৬.৫টি শামুক খেয়ে থাকে! আর, এই খাবার তৈরির সময় শামুকগুলোকে বিশেষভাবে পরিষ্কার এবং প্রস্তুত করা হয়। এরপর মাখন, রসুন এবং বিভিন্ন হালকা মসলার সঙ্গে ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। এটি পরিবেশনের সময় ছোট কাঁচের বা মাটির পাত্র রাখা হয় এবং বিশেষ চামচ দিয়ে খাওয়া হয়। ফ্রান্সের অনেক রেস্টুরেন্টে এস্কারগোকে ঠান্ডা রেড ওয়াইনের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। 

এছাড়াও, ফ্রান্সের একটু ভারি খাবারের মধ্যে রয়েছে র‍্যাটাটুই (Ratatouille)। র‍্যাটাটুই (Ratatouille) নামটি কিছুটা পরিচিত শোনাচ্ছে? হ্যাঁ, বিশ্বখ্যাত অ্যানিমেটেড ফিল্ম র‍্যাটাটুই (“Ratatouille”) দেখে থাকলে এই খাবারটিকে দর্শক অবশ্যই চিনবেন। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী সবজির পদ, যা বেগুন, টমেটো, জুচিনি, ক্যাপসিকাম এবং বিভিন্ন ধরণের মরিচ, রসুন ও অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি করা হয়। র‍্যাটাটুইকে সাধারণত ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। র‍্যাটাটুই সাধারণত ভাত, পাস্তা বা রুটি-র সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।

র‍্যাটাটুই মুভির পোস্টার

ফরাসিদের সবচেয়ে প্রিয় পানীয়ের কথা না বললেই নয়। তাদের প্রিয় পানীয় হলো ওয়াইন। খাবারের সাথে ওয়াইন না থাকলে যেন ফরাসি ভোজনের আয়োজন অসম্পূর্ণ থাকে। অবাক করার মতো তথ্য হলো, ফরাসিরা বছরে প্রায় ১১.২ বিলিয়ন গ্লাস ওয়াইন পান করে! ফরাসিদের প্রতিদিনের জীবনে এক গ্লাস বা দুই গ্লাস ওয়াইন যেন স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর বড় কারণ হলো, ফ্রান্স বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ওয়াইন উৎপাদনকারী দেশ। বিশেষ করে বোর্দো, শ্যাম্পেন এবং বারগান্ডি অঞ্চলের ওয়াইন বিশ্বজুড়ে খ্যাত। 

আর ওয়াইনের সাথে খাওয়া হয় ব্রি, ক্যামেমবার্ট কিংবা রোকফোর চিজ। প্রতিটি কাপে ওয়াইন এবং প্রতিটি কামড় চিজের সঙ্গে ফরাসিরা তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। চিজ ফরাসিদের আরেকটি বড় ভালোবাসা। মজার বিষয় হলো, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি চিজ খাওয়া হয় ফ্রান্সেই। আর তাই, এই দেশের প্রায় অর্ধেক জনগণ প্রতিদিনের খাবারে চিজ রাখেন। আর সেই চাহিদা মেটাতে ফ্রান্সে তৈরি হয় ৪০০-রও বেশি ধরনের চিজ! প্রতিটি চিজের স্বাদ, ঘ্রাণ আর গঠন একেক রকম, যেন একেকটি শিল্পকর্ম। 

ফরাসি ওয়াইন ও বিভিন্ন রকম চিজ

ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী পোশাক

শুধু খাবারেই নয়, ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী পোশাকেও দেখা যায় রুচি ও নান্দনিকতা। বিশেষ করে ফরাসি নারীদের পোশাকের প্রতি বিশ্বজোড়া আগ্রহ রয়েছে। জেনে অবাক হবেন যে, বর্তমানের বহুল জনপ্রিয় পোশাক শর্ট স্কার্ট কোন এক সময় ফরাসি মেয়েরা নাচের কস্টিউম হিসেবে ব্যবহার করত। এছাড়াও তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের তালিকায় রয়েছে বেরেট। এটি একটি গোলাকার, নরম টুপি, যা সাধারণত উল বা তুলো দিয়ে তৈরি হয়। প্রাচীনকালে ফরাসি কৃষক ও সৈন্যরা এটি ব্যবহার করতেন, পরবর্তীতে এটি ফ্যাশনের অংশ হয়ে উঠে।

এছাড়াও, ফরাসি মহিলাদের পরনে দেখা যায় ব্লাউজ ও শেমিস। এগুলো মূলত শার্টের মতো হালকা, আরামদায়ক পোশাক। মজার বিষয় হলো, শেমিস প্রাচীন সময়ে ফ্রান্সের পুরুষ ও মহিলা, উভয়ের পোশাক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর ফরাসি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্যালোচট। এটি মূলত এক ধরনের কোট বা জ্যাকেট। 

ফ্রান্সের উৎসব

ফ্রান্স শুধু পোশাক বা ফ্যাশনের জন্যই নয়, বরং বিশ্বের অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। এখানে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসব, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিনেমাজগতের এক মর্যাদাপূর্ণ আসর। এই উৎসবে সারা বিশ্ব থেকে পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং কলাকুশলীরা জড়ো হন। এখানে প্রদর্শিত হয় বিশ্বের নামিদামি নির্মাতাদের অসাধারণ সব চলচ্চিত্র।

কান চলচ্চিত্র উৎসব

ফরাসিদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো বাস্তিল দিবস। ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব চলাকালে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাস্তিল দুর্গের স্মরণে ফরাসিরা এই দিনটি উদযাপন করে থাকে। ফ্রান্সে এটি কেবল একটি জাতীয় উৎসবই নয়, বরং গণতন্ত্রের জন্মদিন হিসেবেও পালিত হয়। এ দিনটিতে আপনি ফ্রান্সে থাকলে দেখতে পাবেন আইফেল টাওয়ার ঘিরে রংবেরঙের আতশবাজি এবং আলোকসজ্জা। এই আলোকসজ্জা এই দিবসের মূল আকর্ষণ। 

এছাড়াও ফ্রান্সে পালিত হয় জনপ্রিয় নিস কার্নিভাল । প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্সের দক্ষিণের নিস শহরে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি ফ্রান্সের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক কার্নিভাল। এ উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো ফুলের যুদ্ধ। এখানে রঙিন ফ্লোটে বসে সুন্দরী কন্যারা ও অংশগ্রহণকারীরা দর্শকদের দিকে নানা ধরনের ফুল ছুঁড়ে দেয়। আর এই ফ্লোট  হলো এক ধরনের বড়, সাজানো গাড়ি বা প্ল্যাটফর্ম, যা উৎসব, কার্নিভাল বা প্যারেডের সময় শহরের রাস্তায় প্রদর্শনের জন্য বের করা হয়। এই উৎসবের সময় রাতের বেলা পুরো শহর আলোকসজ্জায় ঝলমল করে ওঠে। এখানকার বিভিন্ন রকম আয়োজন এর মধ্যে দেখতে পাবেন ফায়ারওয়ার্কস, নাচ-গান আর মিউজিক শো।

আপনি যদি ফুটবল প্রেমী হন, তবে ফ্রান্স ভ্রমণ করা আপনার জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হবে। কারণ ফরাসি সংস্কৃতি ও ক্রীড়া জগতের কথা উঠলে ফুটবলকে বাদ দেওয়া যায় না। ফ্রান্স শুধু ইউরোপেই নয়, বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে এক বিশাল শক্তি। দেশটি উপহার দিয়েছে অসংখ্য কিংবদন্তি খেলোয়াড়, আর তাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য নাম হলো জিনেদিন জিদান। 

এছাড়াও ফ্রান্সের আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ হলো বিশ্বখ্যাত সাইক্লিং রেস ট্যুর দ্য ফ্রান্স। ১৯০৩ সালে প্রথমবার আয়োজিত হওয়া এই রেসটি আজও প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। এই রেসে প্রতিযোগীরা ফরাসি গ্রাম, পাহাড়, লুৎফুল সমুদ্রতীর ধরে ৩,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে। রেসটি কেবল একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, এটি ফ্রান্সের প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং মানুষের উদ্দীপনার এক জীবন্ত উৎসব। 

ফ্রান্সের পর্যটন আকর্ষণ

যখন আকর্ষণের বৈচিত্র্য এবং পর্যটন সম্ভাবনার কথা আসে, তখন ফ্রান্সের নাম আপনা-আপনি মুখে চলে আসবে। কারণ, এখানে আসলেই যেন এক স্বপ্নপুরীর দেখা মেলে। আইকনিক সব ল্যান্ডমার্ক, রাজকীয় প্রাসাদ, ঝলমলে রিসোর্ট থেকে শুরু করে রূপকথার মতো সমুদ্র সৈকত সবকিছুই আপনাকে মুগ্ধ করবে।

আইফেল টাওয়ার

ফ্রান্সের প্যারিসে এসে সর্বপ্রথম যেটি সবার চোখে পড়ে, সেটি হলো বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত স্থাপনা আইফেল টাওয়ার। এর সৌন্দর্য এতটাই মনোমুগ্ধকর যে দিনের আলোতে যেমন এটি ঝলমল করে, রাতের আলোতেও এটি চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য তৈরি করে।

আইফেল টাওয়ার

ল্যুভর মিউজিয়াম

শিল্পপ্রেমীদের জন্য প্যারিস হতে পারে আরও আকর্ষণীয়, কারণ এখানেই রয়েছে ল্যুভর মিউজিয়াম, যেখানে সংরক্ষিত আছে দা ভিঞ্চির বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসা। মোনালিসা না দেখেছেন এমন শিল্পপ্রেমী মানুষের খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য। এছাড়া মিউজিয়ামে আরও অসংখ্য প্রাচীন এবং আধুনিক শিল্পকর্ম পর্যটকদের মুগ্ধ করে, যা ফরাসি সংস্কৃতি ও শিল্পের গৌরবের পরিচয় বহন করে।

প্রেমের শহর প্যারিস

আর রোমান্স এবং প্রেমের শহর হিসেবে প্যারিস তো আছেই। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। সীন নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরকে প্রায় সবাই “ভালোবাসার শহর” বলে ডাকে। প্যারিসে হাঁটলেই আপনি অনুভব করবেন শহরের প্রতিটি গলিই যেন একেকটি শিল্পকর্ম। 

এর মধ্যে শ্যঁজ এলিজে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত এভিনিউ। এখানেই পেয়ে যাবেন সারি সারি দোকান, রেস্তোরাঁ আর ফ্যাশন হাউসে সাজানো রাস্তা। রাতে আলোয় ঝলমল করা এই রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাবেন আর্ক দে ত্রিয়ঁফে। আর্ক দে ত্রিয়ঁফে হলো প্যারিসের অন্যতম আইকনিক স্থাপত্য, যা ফরাসি ইতিহাসের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। 

প্যারিস শহর

ল্যাটিন কোয়ার্টার

প্যারিস শহরেই অবস্থিত ল্যাটিন কোয়ার্টার শহরের অন্যতম প্রাণবন্ত এবং ঐতিহাসিক এলাকা। এটি সীন নদীর বাম তীরে অবস্থিত এবং মধ্যযুগ থেকেই এটি শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত। এখানে গিয়ে দেখতে পাবেন নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়,  যেমন  সোরবোন ইউনিভার্সিটি। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন লাইব্রেরি ও প্রাচীন বইয়ের দোকান। ছাত্র-ছাত্রী ও জ্ঞানপিপাসু পর্যটকদের কাছে এসব এক বিশেষ আকর্ষণ।

লুক্সেমবার্গ পার্ক

ফ্রান্সের আরেকটি পর্যটন আকর্ষণ হলো লুক্সেমবার্গ পার্ক। এই পার্কটিতে রয়েছে বিশাল আপেল ও অর্কিডের বাগান।এখানে শতাধিক প্রজাতির আপেল গাছ রয়েছে। বাগানের মধ্যে সাজানো অর্কিডের বিশেষ অংশও আছে, যেখানে বিরল প্রজাতির অর্কিড বিভিন্ন রঙে ফুটে থাকে। এছাড়া এখানকার মেডিচি ফোয়ারা বিশেষভাবে বিখ্যাত। ফোয়ারা ঘিরে সাজানো পথ ধরে হাঁটতে গেলে প্রায়শই শৈল্পিক ভাস্কর্য এবং সুন্দর ঝর্ণার দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। দিনের বেলায় পার্কটি পরিবার, শিক্ষার্থী এবং পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত থাকে।পার্কের  ভেতরে ঢুকলেই দেখবেন কেউ বেঞ্চে বসে বই পরছে, আবার শিশুরা কাগজ দিয়ে ছোট ছোট নৌকা বানিয়ে পানিতে ভাসিয়ে আনন্দ করছে। 

লুক্সেমবার্গ পার্ক

নটর ডেম দে প্যারিস

ফ্রান্সের রাজকীয় স্থাপত্যের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে নটর ডেম দে প্যারিস। এটি সীন নদীর ছোট্ট দ্বীপ ইল দে লা সিতে তে অবস্থিত। এটি শুধু একটি গির্জা নয়, বরং ফ্রান্সের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। অসাধারণ গথিক স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন এই মহাকায় ক্যাথেড্রালটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল দ্বাদশ শতকে এবং এটি সম্পূর্ণ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ১৫০ বছর। 

এর উঁচু টাওয়ার, সূক্ষ্ম কারুকাজ করা জানালা এবং বিশাল রোজ উইন্ডো দর্শনার্থীদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এছাড়াও রয়েছে অগণিত ভাস্কর্য, যা একে রহস্যময় আবহ প্রদান করে। নটর ডেম শুধু স্থাপত্যের জন্য নয়, সাহিত্যেও এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বিখ্যাত লেখক ভিক্টর হুগোর “নটর ডেম দে প্যারিস” উপন্যাসটির মাধ্যমে এই স্থাপনাটি বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ করে।

নটর ডেম দে প্যারিস

গার্নিয়ার অপেরা হাউস

এই ক্যাথেড্রেলের পরেই সবার চোখে পড়ে ফ্রান্সের প্যালেস গার্নিয়ার অপেরা হাউস। এটি ১৮৭৫ সালে নির্মিত এবং তার বিশাল গ্র্যান্ড লবি, সোনালি ঝাড়বাতি, সূক্ষ্ম ভাস্কর্য ও অপেরা কক্ষের সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের মন জয় করে। বর্তমানে প্যালেস গার্নিয়ার প্যারিস অপেরার একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফ্যান্টম অফ দ্য অপেরা’ এই অপেরা হাউসকেই কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিল।

প্যালেস অফ ভার্সাইল

শহরের চকচকে স্থাপত্য আর আধুনিকতার ছোঁয়া শেষে যদি আপনি ইতিহাস আর প্রকৃতির মেলবন্ধন খুঁজতে চান, তবে চলে যেতে পারেন ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ভার্সাই গ্রাম। এখানেই দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের অন্যতম ঐশ্বর্যমণ্ডিত প্রাসাদ প্যালেস অফ ভার্সাইল। দর্শনার্থীরা মূলত এখানে যায় প্রাসাদটির বিখ্যাত হল অফ মিরর দেখতে। যেখানে অসংখ্য আয়না, ঝাড়বাতি আর রাজকীয় শিল্পকর্ম সাজানো আছে। এছাড়া রয়েছে বিশাল ভার্সাই গার্ডেনস। এখানকার সুন্দরভাবে সাজানো ফুলের বাগান, ফোয়ারা ও ভাস্কর্যগুলো আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দিবে।

ভার্ডন গর্জ

এরপর চলে যেতে পারেন ভার্ডন গর্জে। ভার্ডন গর্জ হলো ফ্রান্সের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ক্যানিয়ন। এখানে দিয়ে বয়ে গেছে টারকোয়াজ নীল রঙের নদী, যা ক্যানিয়নের খাড়া প্রাচীরের সাথে মিলিত হয়ে এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য ভার্ডন গর্জ হতে পারে একটি আদর্শ জায়গা। কারণ এখানে কায়াকিং, রক ক্লাইম্বিং, হাইকিংসহ নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটি করা যায়।

রেনবো অফ টিউলিপস 

রঙিন ফ্রান্সের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে চলে যেতে হবে রেনবো অফ টিউলিপসে। ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত প্রোভেন্সে বসন্তকালে বিশাল রঙিন সমুদ্র হয়ে যায়। নামের মতোই, এই সময় প্রদেশটি যেন পরিণত হয় টিউলিপের রংধনুতে। লাল, হলুদ, গোলাপি, সাদা ও বেগুনি—প্রায় সব রঙের টিউলিপ একসাথে ঝলমল করে। পর্যটকরা এখানে পিকনিক করতে পারেন বা ফুলের সারি ধরে সাইকেল চালাতে পারেন। ফটোগ্রাফির জন্যও এটি এক অসাধারণ স্থান।

রেনবো অফ টিউলিপস

সেন্ট চ্যাপেল 

আর আপনার ফ্রান্স ভ্রমণ শেষ করতে পারেন সেন্ট চ্যাপেল দিয়ে। এটি রাজা লুই নবমের জন্য নির্মিত গথিক চ্যাপেল। এর স্টেইন-গ্লাস উইন্ডোগুলোতে বাইবেলের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, আর সূর্যের আলো পড়লে পুরো চ্যাপেল রঙিন আলোয় ঝলমল করে উঠে। দেখলে মনে হয় যেন মধ্যযুগীয় শিল্পকলা জীবন্ত হয়ে উঠেছে। 

ফ্রান্সে কিছু অদ্ভুত নিয়ম

ফ্রান্সের ইতিহাস, শিল্প ও স্থাপত্যের  পাশাপাশি ফ্রান্সের কিছু অদ্ভুত ও মজার সামাজিক রীতিও আপনাকে অবাক করবে। 

মৃত ব্যক্তিকে বিয়ে

ফ্রান্সে কিছু অদ্ভুত নিয়ম আছে। এ রীতি অনুসারে আপনি চাইলে মৃত ব্যক্তিকে বিয়ে করতে পারবেন। মৃত ব্যক্তিকে বিয়ে করার জন্য আবেদন করতে হলে প্রার্থীকে বিচারালয়ে একটি কারণ পত্র জমা দিতে হয়, যেখানে মৃত্যুবরণের পটভূমি, সম্পর্ক এবং সামাজিক উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে হয়। আদালত যদি এটি যুক্তিসঙ্গত বলে বিবেচনা করে, তবে বিবাহের অনুমতি দেয়া হয়। 

বিবাহের কার্যক্রম বাস্তব জীবনের মতোই আইনগতভাবে স্বীকৃত হয়। এই প্রথাটি প্রায়শই ঘটে থাকে যখন কেউ জীবদশায় অপ্রত্যাশিত কারণে বিয়ে করতে পারেনি, অথবা প্রেমিক/প্রেমিকার মৃত্যুর পর তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে। এই রীতি ফ্রান্সের সামাজিক ইতিহাসের একটি অনন্য অংশ। 

মৃত ব্যক্তিকে বিয়ে

খাবার ফেলা সম্পূর্ণ অবৈধ

শুনে অবাক হবেন যে, খাবারের প্রতি ফরাসিদের ভালোবাসা এতটাই গভীর যে খাওয়ার যোগ্য খাবার ফেলা বা পোড়ানো সম্পূর্ণ অবৈধ। ২০১৬ সালে এই আইন চালু করা হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল খাদ্য অপচয় রোধ করা। ফরাসিদের জন্য খাবারের অপচয় করা যেমন অনৈতিক, তেমনি আইনত দণ্ডনীয়ও। যদি কেউ এই নিয়ম ভাঙে, তাহলে আদালতে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এটি শুধু আইন নয়, ফরাসি সংস্কৃতিরই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

রেলওয়ে স্টেশনে চুম্বন নিষিদ্ধ

আবার আরেকটি অদ্ভুত নিয়ম হচ্ছে, ফ্রান্সের রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে চুম্বন নিষিদ্ধ। মূলত স্টেশনগুলোতে ভিড় ও ট্রেনের দেরি এড়াতে ১৯১০ সালে এই আইন চালু হয়েছিল। যদিও আজ আর এমন কোনও আইন নেই, তবুও ফ্রান্সের রেলওয়ে স্টেশনগুলো এখনো ভিড়ের জন্য পরিচিত। শুনে অবাক হবেন প্যারিসের গার দ্য নর্দ স্টেশনে প্রতি বছর ২১৪ মিলিয়নের বেশি মানুষ ভ্রমণ করে। ফ্রান্সের রেলওয়ে ইউরোপের মধ্যে দ্বিতীয় বড়। এর মোট দৈর্ঘ্য ২৯,০০০ কিমি। বিশ্বের মধ্যে এটি নবম বৃহত্তম।

ফ্রান্সের রেলওয়ে স্টেশনে চুমু খাচ্ছে

ফ্রান্সের উদ্ভাবনী মনোভাব শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষ করে অন্ধদের শিক্ষার জন্য ব্রেইল পদ্ধতি উদ্ভাবন। এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছিলেন লুইস ব্রেইল। এই সিস্টেম এখন পুরো বিশ্বের অন্ধ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পথ খুলে দিয়েছে। 

ফরাসিরা সামাজিকভাবে খুবই বন্ধু সুলভ। তারা নতুন মানুষের সঙ্গে সহজে আড্ডা দিতে পারে। কফি শপ বা বাসায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা চালানো তাদের জন্য সাধারণ ব্যাপার। এই আড্ডার সময় খাবারের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, আর এটি ফরাসি সাংস্কৃতিক জীবনের একটি অংশ। 

শিল্পকলার বিস্ময়, স্থাপত্যের মহিমা, চমৎকার খাবার ও ওয়াইনের স্বাদ, ইতিহাসের পৃষ্ঠপোষকতা, এবং সামাজিক রীতির অদ্ভুত বৈচিত্র- সবকিছু মিলিয়ে ফ্রান্সকে বিশ্বের এক অনন্য গন্তব্য বানিয়েছে। ফ্রান্স তার অনন্য বৈশিষ্ট্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি নিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক।

তথ্যসূত্র- 

Related posts

ইনকা সভ্যতার রহস্যময় দেশ পেরু

শেখ আহাদ আহসান

তুরষ্ক – ইউরোপ নাকি এশিয়ার দেশ?

ফাবিহা বিনতে হক

আটলান্টিকের মুক্তো: বাহামা দ্বীপপুঞ্জ

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More