কখনও ভেবে দেখেছেন, যদি আপনাকে কালো রঙের পোশাক না পরার নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে কী হবে? কিন্তু জানলে অবাক হবেন যে এমনই নির্দেশ পেয়েছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা।
কালো রঙ আজকের প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয়। হলিউড কিংবা বলিউডেও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কালো রঙে বেশ চমৎকার দেখায়। কিন্তু জানা আছে কি বলিউডে কালো রঙ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা কার ওপর ছিল?
কালো পোশাক পরতে নাকি মানা করা হয়েছিল পঞ্চাশ-ষাটের দশকের হার্টথ্রব, তথা কিংবদন্তি অভিনেতা দেব আনন্দকে। “কালো পোশাক পরা যাবে না”, রীতিমতো আইনি নির্দেশ দিয়ে বারণ করা হয়েছিল তাঁকে।
দেব আনন্দের পরিচিতি
সিনেমায় আসার আগে তার নাম ছিল ধরমদেব পিশোরিমল আনন্দ। সে নাম সব সময়ই ছিল। কিন্তু দেব আনন্দের বিশাল ছায়ায় তা ঢেকে গেছে।
এ নায়কের বাবা ও বড় ভাই ছিলেন জাঁদরেল আইনজীবী। কলেজে পড়া অবস্থায় অশোক কুমারের একটি সিনেমা দেখে তাঁর মাথায় অভিনয়ের ভূত চাপে। গুরদাসপুর ছেড়ে মুম্বাই তথা তৎকালীন বম্বেতে পা রাখেন দেব। শুরু হয় লড়াই। পরিচালকের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়া। ছবিতে কাজের সুযোগ চাওয়া।
মুম্বাইয়ে টিকে থাকতে উপার্জনের জন্য মিলিটারি পোস্টাল সার্ভিসে মাসে ৪৫ টাকা বেতনের চাকরি নেন। পাশাপাশি একটি থিয়েটারের দলেও নাম লেখান। আর ওই থিয়েটারই তার ভাগ্য খুলে দেয়। সেখানে দেবের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন পরিচালক বাবু রাও পাই। যদিও দেব আনন্দের অভিনয়ের থেকে বেশি তার হাসি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন বাবু রাও।
তিনি বলেছিলেন, ওই হাসি দেখতেই দর্শক হলে আসবে। মাসে ৪০০ টাকার চুক্তিতে তাকে তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেন বাবু রাও। প্রথম ছবির কাজও শুরু করেন— ‘হাম এক হ্যায়’। এরপর সিনেপ্রেমীদের উপহার দিতে থাকেন একের পর এক হিট ছবি। অভিনেত্রী সুরাইয়ার সঙ্গে জুটি বেঁধে করেন ‘বিদ্যা’, ‘আফসর’, ‘জিৎ’ ও ‘নীলি’ ছবি। সবই সুপারহিট হয়।
১৯৭০-এ দেব আনন্দের বয়স যখন প্রায় ৫০ তখনও তার ছবি ‘জনি মেরা নাম’ সুপারহিট। তার আগের কয়েক বছরে ‘জুয়েল থিফ’, ‘গাইড’-এর মতো ছবিও হিট করেছ। পরের বছর ১৯৭১-এ সুপারহিট হয় ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ ছবিটি।
ভারতীয় সিনেমায় রোম্যান্টিক নায়কের ক্ষেত্রে দেব আনন্দ নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। সবমিলিয়ে ১১৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন দেব আনন্দ। চিরসবুজ দেব আনন্দ ৮৮ বছর বয়সে ২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
দেব আনন্দ কেন কালো পোশাক পরতে পারতেন না?
কখনও ভেবে দেখেছেন, যদি আপনাকে কালো রঙের পোশাক না পরার নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে কী হবে? কিন্তু অবাক হবেন জানলে যে এমনই নির্দেশ পেয়েছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা।
দেব আনন্দের জনপ্রিয়তা আলাদা করে কিছু বলে দিতে হয় না সিনেমাপ্রেমীদের। কয়েক প্রজন্ম বড় পর্দার এই নায়কের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে থেকেছে। তাঁর স্টাইলিং ও ফ্যাশন সেন্সেরও বিশেষ প্রভাব রয়েছে সেই প্রজন্মের উপর। অনেকেই বলেন, কেউ কখনও দেব আনন্দকে বড় পর্দায় ফুল স্লিভ ছাড়া আর কোনও কিছু পরতে দেখেননি। আবার দেব আনন্দের টুপি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, এখনও ‘দেব আনন্দ টুপি’ বললেই এক ডাকে সেই বিশেষ ধরনের টুপি চেনেন সবাই।
পোশাকে সঠিক কালার কম্বিনেশন করার জন্য যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা করা প্রয়োজন। একবার দেব আনন্দ একটি হালকা কমলা রঙের শার্ট পরেছিলেন, তার সঙ্গে খয়েরি রঙের জ্যাকেট স্টাইল করেছিলেন। শেষে একটি চেকার্ড স্কার্ফে রাউন্ড আপ করেছিলেন। আর এই স্টাইলিংটি ছিল প্রশংসনীয়।
প্রায় ১০০টা ছবিতে কাজ করেছেন এই বিখ্যাত অভিনেতা। তবে শুধুই বড় পর্দায় নয়, বাস্তবেও দেব আনন্দ এক চুটকিতেই মন জিতে নিতেন নারীদের! কিন্তু এই কথা কি আপনি জানেন, জনসম্মুখে কালো কোট পরার অনুমতি ছিল না দেব আনন্দের! এরকম নিয়ম তাঁর জন্য কেন করা হয়েছিল জানেন?
দেব আনন্দের জনপ্রিয়তা তখন শীর্ষে। বাস্তবে তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য, ভিড় জমে যেত নারী অনুরাগীদের। শুধুই বড় পর্দার অভিনেতা হিসেবে নয়, তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, স্টাইলিং যে কোনও নারীর হৃদয়ে ঝড় তোলার জন্যই যথেষ্ট ছিল। বেশ সুপুরুষ ছিলেন যে তিনি!
দেব আনন্দের সৌন্দর্য এমনই ছিল যে, তাঁকে কালো কোটে দেখতে আরও বেশি সুন্দর লাগত। কালো রঙের কোটে এই বিখ্যাত অভিনেতাকে এতটাই সুন্দর দেখাত যে, নারীরা তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য পাগল হয়ে উঠতেন। আর এটাই ডেকে এনেছিল এক বড় অঘটন!
দেব আনন্দ এবং কালো কোট নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনের গল্প
ভারতের রূপালি পর্দার চিরসবুজ নায়ক বলা তাঁকে। তাঁর ছবি ‘কালাপানি’ রিলিজের সময় অদ্ভুত এক সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি।
কালো রঙের পোশাক পরতে তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন আদালত। এর কারণে কালো পোশাকে নাকি অসম্ভব সুদর্শন লাগত এই বলিউড হিরোকে। বিষয়টি মোহিত করে তুলত তার নারীভক্তদের।
সে সময়ের বম্বের আদালত দেব আনন্দকে কড়া নির্দেশ দেন, আর যা-ই পরুন তিনি যেন কালো পোশাক পরে রাস্তায় না নামেন। আর সেই ঘটনার পর থেকে এ ফিল্মস্টারকে ‘গ্রেগরি পেক অব ইন্ডিয়া’ বলা হয়।
বিষয়টিকে খ্যাতির বিড়ম্বনা বলেন অনেকে। দেব আনন্দের ছবি ‘কালাপানি’ মুক্তির পর অভিনেতার জনপ্রিয়তা এমনই তুঙ্গে পৌঁছেছিল যে, নায়কের ব্যক্তিগত জীবন যাপনেও হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিলেন আইনের রক্ষকরা। এমন ঘটনা বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে নজিরবিহীন।
তখন দেব আনন্দের প্রতি মেয়েদের আকর্ষণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, যখন-তখন ঘটে যেতে পারত অঘটন। ভয়ানক পরিস্থিতি আটকাতেই দেব আনন্দকে এই অনুরোধ করা হয়েছিল। নারী ভক্তরা রীতিমত ঝাঁপ দিতেন উঁচু তলার বিল্ডিং থেকে। যার ফলে নারীদের প্রাণ বাঁচাতেই, রাস্তায় বিপুল জনসমুদ্র আটকাতেই এমন আর্তি করা হয়েছিল দেব আনন্দকে।
দেব আনন্দের পোশাক বিতর্কের সত্য ঘটনা
অনেকেই মনে করেন, দেব আনন্দের জনসম্মুখে কালো কোট না পরার পিছনে কোনও কুসংস্কার রয়েছে। কিন্তু আসল কারণটি অনেকেই জানেন না। আসল কারণ ছিল —
দেব আনন্দ একবার রাস্তায় কালো কোট ও প্যান্ট পরে বেরিয়েছিলেন অন্যান্য দিনের মতোই। মাথা থেকে পা পর্যন্ত কালো মনোটোনে দেব আনন্দকে এতটাই সুন্দর দেখাচ্ছিল যে, অনুরাগীদের হৃদয়ে ঝড় উঠেছিল! তাঁকে এক ঝলক দেখতে ছুটে এসেছিলেন নারী ভক্তরা।
অভিযোগ, এক নারী অনুরাগী দেব আনন্দকে এক ঝলক দেখতে উঁচু বাড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে দেন! সেই সময়ের দৈনিক পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, দেব আনন্দকে কালো কোটে ভীষণ হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছিল যে, একটি মেয়ে তাঁর এই রূপে মুগ্ধ হয়ে আত্মহত্যা করেন। এবং এরপরেই জনসম্মুখে দেব আনন্দের কালো কোট পরা নিষিদ্ধ করা হয়। তিনি আর কালো কোট পরে বেরোতে পারতেন না।
যদিও এরকম ঘটনা আর দেখা যায় না। কারণ, তাঁর মতো ফ্যানবেস নাকি খুব অভিনেতারই হয়।
কিন্তু দেব আনন্দ তার আত্মজীবনী ‘রোমান্সিং উইথ লাইফ’-এ এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে লিখেছেন যে, এমন কিছুই ঘটেনি। অর্থাৎ, এসব শুধুই গুজব, এবং আদালত এমন কিছু বলেনি।
তথ্যসূত্রঃ
- https://bengali.news18.com/photogallery/entertainment/dev-anand-why-superstar-banned-wearing-black-colour-suit-in-public-the-reason-will-surprise-you-sanj-1201607-page-2.html
- https://eisamay.com/lifestyle/know-more/reason-why-dev-anand-was-banned-to-wear-black-coat-in-public/95734966.cms
- https://www.jugantor.com/entertainment/494181
- https://tv9bangla.com/entertainment/dev-anand-this-black-court-makes-news-for-this-reason-1152707.html