Image default
জীবনী

ডা. তাসনিম জারার গল্প: চিকিৎসা থেকে রাজনীতি, কেমন এই রূপান্তর?

ডা. তাসনিম জারা, সাম্প্রতিক সময়ের একজন আলোচিত ব্যক্তিত্ব। যিনি একইসাথে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক, সমাজসেবক এবং রাজনীতিবিদ। সশরীরে উপস্থিত না থেকেও জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় অবদান রেখেছেন তিনি। তবে এত উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার পরও সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না এই প্রতিভাবান মেধাবী নারীর। 

ইউটিউবে ডা. তাসনিম জারার স্বাস্থ্য ও সচেতনতামূলক ভিডিও সামনে আসেনি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। আমাদের সমাজে ট্যাবু মানা হয় এরকম বিষয়েও সচেতনতা তৈরি করতে ভিডিও তৈরি করেছেন তিনি। ট্যাবু ভেঙ্গে সচেতন ও সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়াই তার লক্ষ্য। 

ডা. তাসনিম জারা বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক ও সমাজসেবিকা। তার পথচলা শুধুমাত্র চিকিৎসাশাস্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তিনি দেশের স্বাস্থ্যসচেতনতা ও বর্তমানে রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর, তিনি স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং ‘সহায় হেলথ’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। তার চিকিৎসা ক্যারিয়ারে তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেছেন, যেখানে তার মানবিক মূল্যবোধ ও দক্ষতা প্রশংসিত হয়েছে। 

ডা. জারা ২০২৪ সালে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগদান করে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। তার লক্ষ্য হলো জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া এবং ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা করা। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে তিনি চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন, যা তার মানবিকতা ও নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়। ডা. তাসনিম জারা, একজন অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব, সমাজের উন্নয়ন ও মানুষের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

ডা. তাসনিম জারার জন্ম ১৯৯৫ সালে ঢাকায়। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ান এবং গাইনোকোলজিস্ট থেকে ডিআরসিওজি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যা নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রদান করা হয়।

পরবর্তীতে ডা. তাসনিম জারা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ইন্টারনাল মেডিসিনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে কাজ করেছেন এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র ক্লিনিক্যাল সুপারভাইজার হিসেবে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের পড়ান।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাসনিম জারা

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও তৈরির মাধ্যমে মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার ভিডিওগুলো এতটাই জনপ্রিয় যে, সেগুলো এক বিলিয়ন মিনিটেরও বেশি সময় ধরে দেখা হয়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এক কোটিরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে ডা. তাসনিম জারার।

ডা. তাসনিম জারা “সহায় হেলথ” নামক একটি প্ল্যাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা সহজ বাংলায় নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করে।

স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা

সহায় হেলথ

স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহর সাথে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘সহায় হেলথ’ প্ল্যাটফর্মের, যার মূল লক্ষ্য হলো খুব সহজে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যতথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রজনন স্বাস্থ্য, শিশুদের যত্ন, মানসিক স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস ও প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা তথ্য সরবরাহ করা হয়।

সহায় হেলথ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা

ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে ডা. জারার ভিডিওর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। তিনি স্বাস্থ্য নিয়ে এমনভাবে কথা বলেন, যেন পাশে বসে থাকা এক আপন মানুষ হালকা করে বোঝাচ্ছেন কীভাবে সুস্থ থাকতে হয়। তার ভিডিওগুলোতে ‘মেডিকেল জার্গন’ নেই, আছে গল্পের মতো উপস্থাপন। ফলে সাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে পারে এবং তা অনুসরণ করতেও আগ্রহী হয়।

বিশ্বব্যাপী প্রভাব

তার ভিডিওগুলো এক বিলিয়নেরও বেশি মিনিট দেখা হয়েছে। এক কোটিরও বেশি মানুষ তাকে ফলো করেন বিভিন্ন মাধ্যমে। তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ‘ভ্যাকসিন লুমিনারি’ স্বীকৃতি পেয়েছেন করোনাকালে ভ্যাকসিন নিয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে ২০২৪ সালে তাকে ‘FIDE’ (Female Influencer for Digital Empowerment) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তার এই সচেতনতামূলক উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তার এই কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং তার পুরষ্কার স্বরুপ তিনি ফিচারড হয়েছেন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কার্যক্রমে।

ডা. তাসনিম জারা স্বাস্থ্যশিক্ষার এক আলো ছড়ানো মুখ, যিনি নিজের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রেখে চলেছেন।

জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে ডা. তাসনিম জারা ছিলেন এক সাহসী ও মানবিক নেতৃত্বের প্রতীক। এই আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও, আহতদের চিকিৎসা ও সেবার কাজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

মেডিকেল টিমের নেতৃত্ব

জুলাই আন্দোলনের সময়, যখন রাস্তায় একের পর এক তরুণ আহত হচ্ছিলেন, তখন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর মতো একটি নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা কাঠামোর প্রয়োজন ছিল। আর সেই প্রেক্ষাপটে গঠিত হয় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর মেডিকেল টিম। এর নেতৃত্বে ছিলেন ডা. তাসনিম জারা। তিনি দেশে-বিদেশে থাকা চিকিৎসকদের একত্র করে একটি সংগঠিত চিকিৎসা সহায়তা টিম গঠন করেন, যারা মাঠপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে আহতদের চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেয়।

চিকিৎসাসেবা প্রদান

ডা. তাসনিম জারার উদ্যোগেই একটি জরুরি হটলাইন নম্বর চালু করা হয়, যাতে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী আহত বা ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিক সাহায্য পেতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন আহতদের পাশে দাঁড়াতে, রক্তদান করতে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহে সহযোগিতা করতে।

অনেক চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে জারার পরিচালনায় ২৪ ঘণ্টার টেলিমেডিসিন সেবা, স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ এবং হাসপাতালের সঙ্গে সমন্বয় কার্যক্রম ছিল অত্যন্ত কার্যকর।

‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর মেডিকেল টিম এর সাথে

এই আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল একেবারে হৃদয়ছোঁয়া, যেখানে তিনি চিকিৎসক হিসেবে শুধু পেশাগত দায়িত্ব পালন করেননি, বরং মানবিক নেতৃত্ব দিয়ে একটি প্রজন্মের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের তরুণদের কাছে তাকে শুধু স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা একজন মুখ হিসেবে নয়, বরং একজন আন্দোলনের সাথি এবং মানবিক নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

রাজনৈতিক জীবন

ডা. তাসনিম জারা শুধু চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সচেতনতায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেই থেমে থাকেননি, বরং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে আরেকটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেন।

রাজনীতিতে যোগদান

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–তে সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। এই নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মটির উদ্দেশ্য ছিল একটি কার্যকর, মানবিক ও তরুণ নেতৃত্বভিত্তিক রাজনীতি গড়ে তোলা। তার মতো একজন ডাক্তার, যিনি দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবা, স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা ও মানবিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন, তার এনসিপিতে যোগদান দেশের রাজনীতিতে একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন বলে বিবেচিত হয়।

এনসিপির প্রোগ্রামে ডা. তাসনিম জারা

রাজনৈতিক দর্শন

রাজনীতিতে তাঁর পথচলার পেছনে যে আদর্শ ও চিন্তাধারা কাজ করেছে, তা খুবই স্পষ্ট। দলীয় সভা ও গণমাধ্যমে তিনি বলেন, “আমরা ক্ষমতা দখলের জন্য রাজনীতি করতে আসিনি। জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে এসেছি।”

এই বক্তব্যেই ফুটে ওঠে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন। স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা। তিনি বিশ্বাস করেন, রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতা নয়; রাজনীতি হতে পারে সেবার ক্ষেত্র, সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। বিশেষ করে, জুলাই আন্দোলনের সময় মানুষের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এবং সংগঠিত সহায়তা কার্যক্রম, অনেক তরুণ ও নতুন প্রজন্মকে তার রাজনীতিতে আগমনে আশাবাদী করে তোলে।

রাজনৈতিক অবস্থান ও বক্তব্য

রাজনীতিতে আসার শুরু থেকেই ডা. তাসনিম জারা নিজের অবস্থান ও মতামত স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি কেবল বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং সাহসিকতার সঙ্গে দলীয় ভেতরের প্রশ্ন কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতাধর দলের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান

ডা. জারা বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গুম, খুন এবং বিচারহীনতার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন,“গত ১৬ বছরের গুম-খুন আর ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেসবের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে ফিরতে পারবে না।”

এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, তিনি কেবল বিকল্প রাজনীতি নয়, বরং জবাবদিহিতামূলক ও ন্যায়বিচারভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। তার এই বক্তব্য অনেকের কাছে সাহসী এবং রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

দলের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা

ডা. জারা শুধুমাত্র প্রতিপক্ষ দলগুলোর বিরুদ্ধে নয়, নিজের দলের অভ্যন্তরেও স্বচ্ছতা বজায় রাখার পক্ষে সোচ্চার। এনসিপির এক নেতার গাড়িবহর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য ছিল, “সম্প্রতি তোমার নিজ জেলায় শতাধিক গাড়ির একটি বড় বহর নিয়ে প্রবেশ করায় জনগণের মনে যৌক্তিকভাবেই কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।”

এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, তিনি জনপ্রিয়তা নয়, বরং নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার পক্ষে। একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে তিনি কেবল জনগণের সমস্যা নিয়েই কথা বলেন না, বরং রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভেতরের অসঙ্গতিগুলোতেও প্রশ্ন তোলার সাহস রাখেন।

বিতর্ক ও সমালোচনা

রাজনৈতিক জীবনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ডা. তাসনিম জারা কিছু বিতর্কেরও মুখোমুখি হয়েছেন, যা তার জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের প্রতি কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। তবে তিনি এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা ও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, যা তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশলকে তুলে ধরে।

অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগ

সম্প্রতি, ডা. তাসনিম জারা এবং ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। ২৪ এপ্রিল একটি মানবাধিকার সংগঠন ও সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীর পক্ষ থেকে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, লাইকিসহ সব অনলাইন মাধ্যমে অশ্লীল ও পর্নোগ্রাফিক ভিডিও, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা বন্ধ করতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

এ নোটিশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগ এনে ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডাক্তার তাসনিম জারাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

তবে সে নোটিশ প্রত্যাহার করে একটি সংশোধনী নোটিশ পরবর্তীতে ডাকযোগে বিবাদীদের বরাবর পাঠানো হয়। সংশোধিত নোটিশে বলা হয়, নোটিশের বিষয়টি বিভিন্ন অনলাইন, প্রিন্ট মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ডাক্তার তাসনিম জারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হাইলাইট করে চটকদার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। 

অনেক খবরে বলা হয়েছে ডাক্তার তাসনিম জারাকে সরাসরি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যম সূত্রের তথ্যমতে, ডা. তাসনিম জারার নামটি ঘটনাচক্রে রেফারেন্স হিসেবে ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে এসেছে। বিষয়টিকে অনেকেই অতিরঞ্জিত করে অনলাইনে বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে। যা অনাকাঙ্ক্ষিত।

যদিও ডা. তাসনিম জারা ও ডা. জাহাঙ্গীর কবির এই অভিযোগে সোজাসাপ্টা কোনও মন্তব্য করেননি। এই ধরনের বিতর্ক থেকে বুঝা যায়, রাজনীতিতে যেমন সম্মান অর্জন কঠিন, তেমনি বিভিন্ন মতবিরোধ ও সমালোচনার সম্মুখীন হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। 

সমাকমিতা ছড়ানোর অভিযোগ 

রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমকামিতার অভিযোগ এনে চলছে সমালোচনা, যা পুরোটাই বানানো গল্প বলে দাবি করেছেন ডা. তাসনিম জারা। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ দাবি করেন তিনি। 

ফেসবুক পোস্টে ডা. তাসনিম জারা বলেন, রাজনীতিতে আসার পর আমাকে গে অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে কিছু মানুষ। তাদের দাবি হচ্ছে, আমি ব্র্যাকের সঙ্গে এই কাজ করি। আমি এ বিষয়ে সত্যটা তুলে ধরব। যাতে কোনটা সত্য আর কোনটা তাদের বানানো গল্প সেটা আপনি নিজেই ধরতে পারেন। তিনি বলেন, ব্র্যাকের সঙ্গে SRHR নিয়ে সচেতনতামূলক তিনটি ভিডিও আমি তৈরি করেছি। অনিয়মিত মাসিক, স্বপ্নদোষ ও কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে। এই তিনটি ভিডিওই আমার ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া আছে এক বছরেরও বেশি সময় যাবৎ। লাখ লাখ মানুষ ভিডিওগুলো দেখেছে। 

হাজার হাজার মানুষ কমেন্ট করে জানিয়েছে ভিডিও থেকে তারা উপকার পেয়েছে। প্রতিটা ভিডিওতে ব্র্যাকের নাম ও লোগো খুব স্পষ্টভাবে দেওয়া আছে কোনো লুকোছাপা নেই। অনিয়মিত মাসিক, স্বপ্নদোষ, কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজকে যারা গে অ্যাক্টিভিজম হিসেবে তুলে ধরছেন তাদের উদ্দেশ্য কী সেটা তাদের নাম-পরিচয় ও আগের পোস্টগুলো দেখে আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন।

ব্যক্তিগত জীবন

পারিবারিক জীবন

ডা. তাসনিম জারা ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তার স্বামীর নাম খালেদ সাইফুল্লাহ। খালেদ সাইফুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরবর্তীতে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল হিউমেন রাইটস ল এ মাস্টার্স করেন এবং এক যুগেরও বেশি সময় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে কাজ করেছেন। ডা. তাসনিম জারা এবং খালেদ সাইফুল্লাহ একত্রে সহায় হেলথ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেটির সিইও খালেদ সাইফুল্লাহ।  নবগঠিত দল এনসিপিতে খালেদ যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে আছেন। 

ডা. তাসনিম জারা তার জীবনে অসংখ্য বাধা ও চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে যেভাবে চিকিৎসা, সমাজসেবা ও রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তার অবদান শুধু স্বাস্থ্য খাতে সীমাবদ্ধ নয় বরং তিনি তার দক্ষতা ও নেতৃত্ব দিয়ে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।  মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনীতি ও চিকিৎসাশাস্ত্রের মাঝে তিনি যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন, তা সমাজে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে। 

তথ্যসূত্র – 

Related posts

যোগেন মন্ডল- রাজনীতির হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র

জাইমা রহমান- বিএনপির নেতৃত্ব সংকট ও জাইমা রহমানের সুযোগ

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের জীবন ও অর্জন

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More