কেউ বলেন তিনি নবী, কেউ মনে করেন ওলি। তাঁর উপস্থিতি ঘিরে রহস্যের জাল আজও ছিন্ন হয়নি। খোয়াজ খিজির (আ.)—ইসলামি ইতিহাসের এক চিরজীবিত কিংবদন্তি, যাঁর গল্পে মিশে আছে অলৌকিকতা, জ্ঞান আর আধ্যাত্মিকতার অন্তহীন ছোঁয়া।
ধর্মীয় ইতিহাসে এমন কিছু চরিত্র আছে চিরকাল রহস্যময় হয়ে থেকে যায়। তাঁদের সম্পর্কে প্রচলিত কাহিনি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও লোককথা একত্রে মিশে এক অলৌকিক ভাবমূর্তি তৈরি করে।
খোয়াজ খিজির (আ.) তেমনই এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব, যাঁর সম্পর্কে ইসলামি গ্রন্থ, সুফি দর্শন এবং লোকজ বিশ্বাসে নানা বর্ণনা পাওয়া যায়। অনেকের ধারণা, তিনি এখনো জীবিত এবং নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছে মাঝে মাঝে প্রকাশিত হন।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে খিজির (আ.) এর পরিচয়
সুরা আল কাহফে একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু কোন নাম বলা হয়নি। সেখানে লেখা,
“এরপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমাদের বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাকে আমরা আমাদের কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান (সুরা আল কাহফ, আয়াত ৬৫)।
তার মানে নামবিহীন একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির উল্লেখ আছে এই সূরায়, তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে কেন তাঁকে খিজির বা খাদির (আ.) নামে অভিহিত করা হচ্ছে?
এখানে চলে আসে হাদীসের প্রসঙ্গ। বুখারীর হাদীসে তার নাম “খাদির” উল্লেখ করা হয়েছে। খাদির অর্থ “সবুজ শ্যামল”।
নবীজি তার নামকরণের কারণ প্রসঙ্গে বলেন যে, তিনি যেখানে বসতেন, সেখানেই ঘাস উৎপন্ন হয়ে যেত, মাটি যেরূপই হোক না কেন। [বুখারীঃ ৩৪০২]।
এদিকে, সুরা আল কাহফের ৬৫-৮২ আয়াত পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে মুসা (আ.) এর সাথে এই জ্ঞানী ব্যাক্তির (খিজির আ.) এর কিছু কর্মকান্ড বর্ননা আছে। চলুন তা জেনে নেই-
মুসা (আ.) ও খিজির (আ.) এর কাহিনী
একদিন হযরত মুসা (আ.) বনী ইসরাইলীদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় বক্তব্য দিচ্ছিলেন, এমন সময় একজন তাকে জিজ্ঞেস করেন “এ জামানায় সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম কে?”
জবাবে মুসা (আ.) বলেন “আল্লাহপাক আমাকেই সর্বাপেক্ষা অধিক ইলম (জ্ঞান) দান করছেন।”
আল্লাহ পাক এই জবাব পছন্দ করলেন না, সাথে সাথে আল্লাহ বললেন, “তোমার তো উচিত ছিল উক্ত প্রশ্নের উত্তর আল্লাহর জ্ঞানের ওপর সোপর্দ করে দিয়ে বলতে, আল্লাহ পাকই অধিক অবগত আছে।”
অতঃপর তার ওপর ওহী নাযিল করলেন, দু’ সাগরের সংযোগ স্থলে আমার এক বান্দা আছে, সে কোন কোন বিষয়ে তোমার থেকে অধিক জ্ঞানী। হযরত মুসা (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, “হে পরওয়ারদিগার, আপনার সে বান্দার নিকট কোন পথে যাওয়া যাবে?”
আল্লাহপাক বললেন তোমার থলের ভেতর একটা ভাজা মাছ রাখ, যে স্থানে ওই মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই আমার ওই বান্দাকে পাবে।
নবীজি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সে রাস্তা অনুসরন দুই সমুদ্রের মিলন স্থালে পৌছালেন এবং সেখানে একজন মানুষ কে বসে থাকতে দেখলেন। ইনিই ছিলেন খিযির (আ.)।
হযরত মুসা (আ.) তাকে সালাম দিয়ে বললেন, তিনি তার কাছে ইলম শিখতে এসেছেন, যা আল্লাহ পাক শুধু তাকেই দিয়েছেন। উত্তরে খিযির (আ.) বললেন, “আপনি আমার সাথে থেকে ধৈর্য্য রাখতে পারবেন না। উত্তরে মুসা (আ.) বললেন, “আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন”।
জবাবে খিযির (আ.) বললেন “আসল তথ্য যখন আপনার জানা নেই, তখন ধৈর্য্য ধরবেনই বা কেমন করে? উদ্দেশ্য এই যে, আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি, তা আপনার জ্ঞান থেকে ভিন্ন ধরণের। তাই আমার কাজকর্ম আপনার কাছে আপত্তিকর ঠেকবে। আসল তথ্য আপনাকে না বলা পর্যন্ত আপনি নিজের কর্তব্যের খাতিরে আপত্তি করবেন।”
জবাবে নবী বললেন তিনি অবশ্যই ধৈর্য্যধারণ করবেন। খিযির (আ.) তাকে শর্ত দিলেন তার কাজ নবীর কাছে যতই আজব লাগুক না কেন তিনি কোন প্রশ্ন করতে পারবেন না, পরে তিনি ঐ কাজের ব্যাখ্যা নিজেই নবীকে দিবেন।
মুসা (আ.) ওই শর্ত মেনে খিযির (আ.) এর সাথে চললেন। কিছু দূর যাবার পর তাদের সামনে একটি বড় নদী পড়ল, খেয়া মাঝি খিযির (আ.) কে চিনতেন তাই তার কাছ থেকে কোন ভাড়া নিল না। কিন্তু খিযির (আ.) নৌকা দিয়ে অপর পারে নেমেই নৌকার একটা তক্তা খুলে নৌকাটি ফুটো করে দিল। নবী সাথে সাথে এর প্রতিবাদ করলেন, “বললেন নৌকার মাঝি তার সাথে এত ভালো ব্যাবহার করল আর সে কিনা নৌকাটি ফুটো করে দিলেন?” খিযির (আ.) বললেন, “আমিতো পূর্বেই আপনাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম যে আপনি আমার কার্যকলাপের ওপর ধৈর্য্য রাখতে পারবেন না।” মুসা (আ.) সাথে সাথে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে খিযির (আ.) এর সাথে চলতে থাকলেন।
কিছু দূর চলার পর তারা দেখতে পেলেন কয়েকটি শিশু খেলা করছে, খিযির (আ.) সেই শিশুর দল থেকে থেকে একটি শিশুকে হত্যা করলেন। নবী তা দেখে ধৈর্য্যহারা হয়ে বললেন, “এ আপনি কি করলেন?…একটি নিস্পাপ শিশুকে হত্যা করলেন?” খিযির (আ.), মুসা (আ.) কে তার প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলে মুসা (আ.) ক্ষমা চেয়ে তার সাথে আবার পথ চলতে শুরু করলেন।
কিছু দূর চলার পর তারা একটি লোকালয়ে পৌছালে সেখানকার অধিবাসীদের কাছে মুসাফির হিসাবে সাহায্যের আবেদন জানালেন। কিন্তু সেখানকার লোকজন যথেষ্ট স্বচ্ছল হবার পরও তাদেরকে কোনরূপ সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না। এমতাবস্থায় ওই লোকালয়ের একটি বাড়ির দেয়াল ভেঙ্গে পরার উপক্রম দেখে খিজির (আ.) স্বপ্রনোদিত হয়ে কোনরূপ পারিশ্রমিক ছাড়াই তা ঠিক করে দিলেন।
মুসা (আ.) আর সহ্য করতে পারলেন না, তিনি খিযির (আ.) কে বললেন, “যে লোকালয় আমাদের ক্ষুৎপিপাসায় কাতর দেখেও সামান্য সহায়তা দিল না, আপনি কিনা সেই লোকালয়েরই একটি বাড়ির দেয়াল বিনা পারিশ্রমিকে ঠিক করে দিলেন?” খিযির (আ.) বললেন, “আপনার আর আমার মাঝে আলাদা হবার সময় হয়ে এসেছে, কারণ আমি যে কাজগুলো করছি বা সামনে করব তা বোঝার জ্ঞান আল্লাহ পাক আপনাকে দেয় নি, তবে বিচ্ছেদের আগে আপনি আপনাকে বুঝিয়ে দেব কেন আমি এই কাজ গুলো করছি।”
এরপর খিজির (আ.) একে একে ব্যাখ্যা করা শুরু করলেন—
প্রথমতঃ নৌকাটির ব্যাপারে কথা এই যে, ওটা ছিল কতিপয় দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে কাজ করত; আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছিলাম, কারণ আমাদের পেছন পেছন আসছিল এক অত্যাচারী রাজা, যে বল প্রয়োগে সকল নিখুঁত নৌকা ছিনিয়ে নিত। আমি যদি এটা না করতাম তবে পেছনের ওই রাজা নৌকাটি দখল করে এই দরিদ্র জেলেদের জীবিকার পথ বন্ধ করে দিত।
দ্বিতীয়ত, শিশুটির ব্যাপার এই যে, এর পিতা মাতা অতিশয় মুমিন বান্দা, বড় হয়ে শিশুটি জালিম এবং কুফরী করে তার মুমিন বাবা মা-কে কষ্ট দেবে, তাই এই শিশুকে হত্যা করে আমি আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করলাম তাদের যেন এর পরিবর্তে সেই পিতা-মাতাকে তিনি আর একটি উত্তম শিশু দান করেন।
তৃতীয়তঃ ঐ প্রাচীরটি ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের, তাদের পিতা মাতা তাদের জন্য কিছু সম্পদ ওই প্রাচীরের নিচে রেখে যায়, আল্লাহ’তায়ালার ইচ্ছা কিশোর দুজন বড় হয়ে ওই সম্পদের অধিকারী হোক, তাই আমি ভঙ্গুর প্রায় প্রাচীরটি আবার ঠিক করে দেই।
নবী মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর এই ঘটনাটি শুধু একটি গল্প নয়, বরং, তা গভীর জীবনদর্শনের শিক্ষা দেয়। এটি আমাদের শেখায় যে, দৃশ্যমান বাস্তবতা সবসময় সত্য নয়; এমন অনেক কিছুই রয়েছে যা আমরা বুঝতে পারি না, কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তা শেষ পর্যায়ে আমাদের জন্য কল্যাণকর হয়।
খিজির (আ.) কি নবী নাকি ওলি?
খিজির (আ) এর পরিচয় নিয়েও রয়েছে নানা মতবাদ ও রহস্য। অনেক আলেম-ওলামার মতে, তিনি একজন নবী ছিলেন।
তাঁদের মতে, কোরআনে যেহেতু বলা হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ জ্ঞান পেয়েছিলেন এবং নবী মুসা (আ.) তাঁকে অনুসরণ করেছিলেন, তাই এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি নবী ছিলেন।
অন্যদিকে আরেকটি দল মনে করছেন, খিজির (আ.) নবী ছিলেন না, তিনি একজন ওলি বা আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন। তাঁরা মনে করেন, তিনি নবী না হলেও আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ছিলেন যার ছিল অলৌকিক ক্ষমতা।
সুফি তরিকায় খিজির (আ.)-কে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে দেখা হয় এবং বিশ্বাস করা হয়, সত্যিকারের সাধকেরা তাঁকে স্বপ্ন বা বাস্তবে দেখতে পান।
খিজির (আ) কি জীবিত আছেন?
খিজির (আ) কে নিয়ে সবচেয়ে বড় যে বিতর্ক প্রচলিত আছে তা হলো, তিনি কি এখনো জীবিত আছেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে তাফসিরবিদ, হাদিসবিদ ও ইতিহাসবিদরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন।
সুফি ভাবধারায় বিশ্বাসী সবাই মনে করেন, খিজির (আ.) এখনো জীবিত এবং তিনি কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন।
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, ‘সবাই এ বিষয়ে একমত যে খিজির (আ.) এখনো জীবিত আছেন।’ [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৪৫ (আরবি, দারু আলামিল কুতুব, ২০০৩)]
ইমাম নববী (রহ.) লিখেছেন, ‘সব আলেম এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে খিজির (আ.) জীবিত এবং তিনি আমাদের সামনে বিদ্যমান। আর সুফিদের সবাই এ মতবাদে বিশ্বাসী।
খিজির (আ.) সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করার কারণ কী?
এই প্রশ্নের জবাবে ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ‘ইতিহাসবিদরা এর দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
এক. কথিত আছে যে আদম (আ.) তুফান থেকে বের হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করলে খিজির (আ.) তাঁকে দাফন করেন। তখন তিনি খিজির (আ.)-এর জন্য এ মর্মে দোয়া করেছেন, যেন খিজির (আ.) আদম (আ.)-এর মতো হায়াত লাভ করেন। এ দোয়ার বরকতে তিনি দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন। তবে এ ঘটনার সপক্ষে অকাট্য বা বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
দুই. খিজির (আ.) সম্পর্কে আরো কথিত আছে যে তিনি জুলকারনাইন বাদশাহর সঙ্গে ‘আবে হায়াত’-এর সন্ধান পেয়েছেন এবং সৌভাগ্যবশত তিনি সেই আবে হায়াত তথা অমরত্বের অমীয় সুধা পান করে ধন্য হয়েছেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ‘আয যাহরুন নাদ্বার ফি হালির খাদ্বার’, পৃষ্ঠা ২৬)
তবে, খিজির (আ) জীবিত আছেন, নাকি মৃত্যুবরণ করেছেন এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ করা হয়নি। যাদের মতে তিনি জীবিত আছেন, তাদের প্রমাণ হচ্ছে নবীজির একটি ঘটনা যাতে বলা হয়েছে—‘যখন নবীজী মৃত্যুবরণ করেন, তখন এক সাদা-কালো দাড়িওয়ালা জনৈক ব্যক্তি আগমন করে এবং ভীড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে কান্নাকাটি করতে থাকে। এই আগন্তুক সাহাবায়ে কেরামের দিকে মুখ করে বলতে থাকে- আল্লাহর দরবারেই প্রত্যেক বিপদ থেকে সবর আছে, প্রত্যেক বিলুপ্ত বিষয়ের প্রতিদান আছে এবং তিনি প্রত্যেক ধ্বংসশীল বস্তুর স্থলাভিষিক্ত। তাই তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন কর এবং তাঁর কাছেই আগ্রহ প্রকাশ কর। কেননা, যে ব্যক্তি বিপদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়, সে-ই প্রকৃত বঞ্চিত।
আগন্তুক উপরোক্ত বাক্য বলে বিদায় হয়ে গেলে, আবু বকর (র.) ও আলী (র.) বলেন, ইনি খিযির (আ.)। [মুস্তাদরাকঃ ৩/৫৯, ৬০]
তবে বর্ণনাটিকে নাকোচ করে দিয়েছেন অনেক ইতিহাসবিদ।
কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “আমরা আপনার আগেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি”। [সূরা আল-আম্বিয়া ৩৪]
তাই খিযির (আ)-ও অনন্ত জীবন লাভ করতে পারেন না। তিনিও অন্যান্য মানুষের মত মারা গেছেন।
এছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (র.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে তিনি বলেন- নবীজি জীবনের শেষ দিকে এক রাতে আমাদেরকে নিয়ে এশার সালাত আদায় করেন। সালাত শেষে তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং নিম্নোক্ত কথাগুলো বলেন- “তোমরা কি আজকের রাতটি লক্ষ্য করছ? এই রাত থেকে একশ’ বছর পর আজ যারা পৃথিবীতে আছে, তাদের কেউ জীবিত থাকবে না।’ [মুসলিমঃ ২৫৩৭]
খোয়াজ খিজির (আ.) কোথায় থাকেন?
যারা বিশ্বাস করেন, খিজির (আ.) এখনো জীবিত আছেন, তাদের জন্য এই অলৌকিক মানুষটির অবস্থানও একটি রহস্য।
তাদের বিশ্বাস, তিনি জগতের কোথাও না কোথাও অবস্থান করছেন, তবে তাঁর অবস্থান সাধারণ মানুষের কাছে অজানা।
জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি নির্দিষ্ট কিছু স্থানে বেশি দেখা দেন এবং কখনো কখনো তিনি আল্লাহর নির্দেশে বিশেষ ব্যক্তিদের সামনে আত্মপ্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে খোয়াজ খিজির (আ.)-এর উপস্থিতি নিয়ে যেসব কাহিনী প্রচলিত
বাংলাদেশের লোককাহিনি ও সংস্কৃতিতে খোয়াজ খিজির (আ.)-কে নিয়ে প্রচুর গল্প প্রচলিত রয়েছে। তিনি মূলত নদী, সাগর ও জলাশয়ের সঙ্গে সংযুক্ত বলে বিশ্বাস করা হয়।
বহু গল্পে বলা হয়েছে, নদীতে বিপদে পড়া মানুষদের তিনি উদ্ধার করেন এবং পানির আশীর্বাদ আনয়ন করেন।
বাংলাদেশে বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা বিশ্বাস করেন, সমুদ্রযাত্রায় বিপদে পড়লে খিজির (আ.) তাঁদের সাহায্যে আসেন। অতীতে অনেক নৌকা যাত্রার সময় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হতো, যাতে খিজির (আ.)-এর বরকত পাওয়া যায়। কিছু অঞ্চলে এখনও মনে করা হয়, তিনি পানির ধারক এবং তাঁর দোয়ায় নদী বরকতময় হয়।
এছাড়াও, বাংলাদেশের কিছু সুফি দরগাহ বা আধ্যাত্মিক স্থানে বিশ্বাস করা হয় যে, খিজির (আ.) সেখানে এসেছিলেন বা তাঁর অলৌকিক ছোঁয়া ছিল।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খিজির (আ.)-এর যেসব অলৌকিক ঘটনার গল্প প্রচলিত—
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে খিজির (আ.)
কিছু প্রবীণ জেলে বলেন, একবার এক ভয়ংকর ঝড়ে তাঁরা পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। হঠাৎ এক অচেনা বৃদ্ধ এসে তাঁদের দিকনির্দেশনা দেন এবং পরক্ষণেই অদৃশ্য হয়ে যান। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, তিনি খিজির (আ.) ছিলেন।
পদ্মা নদীর রহস্য
পদ্মার কিছু অঞ্চলে গল্প প্রচলিত যে, এক রাতে এক ব্যক্তি নদীর তীরে একজন বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলেন, যিনি তাঁকে সতর্ক করেন যে নদীর তলদেশে এক বিপদ আসছে। পরে দেখা যায়, সেখানে ভয়ংকর ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছিল।
একজন দরবেশের অভিজ্ঞতা
এক সুফি সাধক তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন, তিনি এক নির্জন রাতে একজন রহস্যময় ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন, যিনি তাঁকে আধ্যাত্মিক দীক্ষা দেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন, তিনি খিজির (আ.) ছিলেন।
খিজির (আ.)-এর অবস্থান, তিনি জীবিত নাকি মৃত এবং ইসলামে তাঁর গুরুত্ব নিয়ে বহু মতবাদ ও বিতর্ক রয়েছে। তবে একথা নিশ্চিত যে, তিনি মুসলিম আধ্যাত্মিকতার অন্যতম রহস্যময় ও প্রভাবশালী চরিত্র। তাঁর জীবন ও শিক্ষা থেকে ধৈর্য, জ্ঞান ও আল্লাহর উপর নির্ভর করার শিক্ষা পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র
- https://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2018/11/19/705193
- https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/shovan13/30304492
- https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=15&chapter=4433
- https://sobbanglay.com/sob/khwaza-khizr/
- https://www.prothomalo.com/religion/islam/6cqn1przge
- https://dhakamail.com/religion/39744
চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান- সার্জারি থেকে মৃতদেহ সংরক্ষণ