Image default
যাপন

“Help না Harm? ডিপ্রেশনে থাকা প্রিয়জনকে সাপোর্ট দেওয়ার স্মার্ট গাইড

ডিপ্রেশনে থাকা প্রিয়জনকে সাহায্য করতে গিয়ে না জেনে এমন কিছু বলছেন বা করছেন না তো, যা উল্টো তার  ক্ষতি ডেকে আনছে?জেনে নিন সেই গোপন ভুলগুলো, যা এড়িয়ে চললেই আপনার যত্ন হবে  তার জন্য সত্যিকারের সান্ত্বনা।

ডিপ্রেশন হলো নিঃশব্দ এক ঝড়। বাইরে থেকে একজন মানুষ হাসছে, কাজ করছে কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে একেবারে ভেঙে যাচ্ছে। ডিপ্রেশন কেবল মুডের ওঠানামা নয় বরং এটি একটি প্রমাণিত মেডিক্যাল কন্ডিশন। যা ব্যক্তির চিন্তা, আচরণ ও শারীরিক সুস্থতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করে।

সময়মতো সঠিক সমর্থন, বোঝাপড়া ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমেই একজন ব্যক্তিকে ডিপ্রেশনের অন্ধকার থেকে বের করে আনা সম্ভব।

এই আর্টিকেলটি সেই পথনির্দেশনাই দিব কিভাবে একজন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সহানুভূতি, সঠিক যোগাযোগ ও ব্যবহারিক সহায়তার মাধ্যমে সান্ত্বনা দেওয়া যায় এবং ধীরে ধীরে তাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়।

ডিপ্রেশন কি 

ডিপ্রেশনকে শুধু “মন খারাপ” বললে সেটি যেমন ভুল হবে, ঠিক তেমনি এটিকে একেবারে “পাগলামি” ভাবাটাও অজ্ঞতা। 

এটা এক ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। যা মানুষের অনুভূতি, চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং দৈনন্দিন কাজের প্রতি আগ্রহকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আধুনিক জীবনযাত্রার চাপ, সামাজিক প্রতিযোগিতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, ট্রমা, এমনকি জেনেটিক প্রবণতা সব মিলেই এই অদৃশ্য রোগটি ধীরে ধীরে একজন মানুষকে ভেতর থেকে ক্লান্ত করে তোলে।

হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়ার কৌশল 

ডিপ্রেশনে থাকা ব্যক্তি প্রায়ই নিজেকে একাকী এবং অপ্রয়োজনীয় মনে করে। এমতাবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির প্রয়োজন এক্সট্রা কেয়ারের।

চলুন জেনে নিই কিভাবে একজন হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে হ্যান্ডেল করতে হবে ।

আগে শুনুন, পরে বলুন— “লিসেনিং হ্যাক”

ডিপ্রেশনে থাকা মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় উপহার পরামর্শ নয় বরং শ্রবণশক্তি।তারা যখন কোন কথা বলবে তখন আপনার কাজ হবে শুধু উপস্থিত না থেকে মাথা নেড়ে, চোখে চোখ রেখে মনযোগ সহকারে তার কথা শোনা।

মজার ব্যাপার কী জানেন? এভাবে মনোযোগ সহকারে শুনলে সে ভাববে অন্তত একজন মানুষ আমাকে সত্যিই মনোযোগ সহকারে শুনছে। এই সাধারণ “শোনা”টাই তার কাছে হয়ে ওঠে এক ধরণের হিলিং। তাই স্মার্ট সাপোর্ট দিতে চাইলে প্রথমেই চাই অ্যাক্টিভ লিসেনিং পাওয়ার।

উপস্থিত থাকুন

আপনার উপস্থিতি অনেক সময় আপনার কাছের মানুষটিকে সাহস জোগাতে করতে পারে। “আমি আছি, তুমি একা নও।” চোখে চোখ রেখে তাকে বুঝিয়ে দিন আপনি সত্যিই তার পাশে আছেন, এবং তাকে খুব মনোযোগ সহকারে শুনছেন।

এই নীরব সহমর্মিতাই তার জন্য হতে পারে সবচেয়ে বড় শক্তি ও আশ্বাস। শুধু উপদেশ নয় বরং  উপস্থিতিই হতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য  আসল সাপোর্ট।

ছোট ছোট ইতিবাচক জিনিস করতে উৎসাহ দিন

একসাথে  হাঁটাহাঁটি, প্রিয় গান শোনা, এমনকি চা খেতে যাওয়া এ ধরনের ছোট কাজগুলো অনেক সময় মনের ভার কমাতে বেশ কার্যকরী। তবে, অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এতে যেন তার অনুভূতি ছোট না হয়।

ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে গান শোনা

ধৈর্য ধরে সমর্থন দিন

ডিপ্রেশন কোনো সুইচ নয় যে আজ বন্ধ, কাল চালু। তাই প্রতিবার জিজ্ঞেস না করে ধীরে ধীরে পাশে থাকুন, সাপোর্ট দিন।

জরুরি হলে সাহায্যের পরামর্শ দিন

যদি বুঝতে পারেন অবস্থা বেশ গুরুতর (যেমন আত্মহানির ইঙ্গিত), তখন শান্তভাবে প্রফেশনাল হেল্পের পরামর্শ দিন। প্রয়োজনে একসাথে ডাক্তার/কাউন্সেলরের কাছে যাওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন।

ইতিবাচক এনার্জি ভাগ করে নিন

হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে মিষ্টি কথা, সুন্দর স্মৃতি মনে করিয়ে দিন।এবং ছোট্ট কোনো হাসির মুহূর্ত তৈরি করতে পারেন এমন কিছু করুন এতে করে মনের ভেতরের চাপা ভারী কষ্ট গুলো একটু হলেও লাঘব হবে।

ডিপ্রেশনে থাকা কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার মূলমন্ত্র হলো – শোনা, বোঝা, উপস্থিত থাকা আর ধীরে ধীরে উৎসাহ দেওয়া। তবে ডিপ্রেশন মানে হতাশার চূড়ান্ত গন্তব্য নয় বরং এটি চিকিৎসাযোগ্য। 

সহায়ক আচরণ ও দৈনন্দিন জীবনে সহায়তা

আপনার উপস্থিতি, স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ, নীরব সমর্থন এবং আস্থা এগুলোই হতে পারে ডিপ্রেশনে থাকা মানুষের জন্য সত্যিকারের শক্তি। নীরব সমর্থন অনেক সময় পরামর্শের থেকে বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। যদিও বা ডিপ্রেশন থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীর। তবে আপনার ছোট ছোট উদ্যোগই  বড় প্রভাব ফেলতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।

আক্রান্ত ব্যক্তিকে দৈনন্দিন জীবনে সহায়তা যেমন- তাকে ঘুম, খাওয়া, হালকা ব্যায়াম, বই পড়া এমনকি প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো ইত্যাদি কাজে উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে তাকে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও, বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে ছোট আড্ডায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে ও একাকিত্ব অনেকাংশে কমে যায়।

ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠতে পরিবার ও সমাজের গেম-চেঞ্জার ভূমিকা

ডিপ্রেশন কেবল ব্যক্তির মানসিক সংকট নয় বরং এটি একটি সামাজিক চ্যালেঞ্জ। হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার লড়াইয়ে পরিবার ও সমাজ— এই দুই শক্তি মিলে তৈরি করতে পারে সবচেয়ে কার্যকর সেফটি-নেট।

পরিবার হলো প্রথম সাপোর্ট লাইন। যা মানসিক শক্তি জোগায় এবং ছোট সাফল্যে উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনে। অপর দিকে সমাজ হলো দ্বিতীয় সাপোর্ট লাইন। বন্ধু ও সহকর্মীর নিয়মিত খোঁজ, হাঁটতে ডাকা কিংবা অনলাইন-অফলাইন মিটআপে যুক্ত রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে খুব সহজেই রোগীকে একাকিত্ব বের করে আনে। 

তাছাড়াও স্থানীয় সাপোর্ট গ্রুপ, কাউন্সেলিং সেন্টার ও হেল্পলাইনের সহজ এক্সেস, স্কুল-অফিস-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সচেতনতা ক্যাম্পেইন ডিপ্রেশনকে ঘিরে তৈরি হওয়া ট্যাবু ভেঙে সহায়তা জোরদার করে।

ডিপ্রেশনে থাকা কাউকে সাহায্য করতে গিয়ে যে ভুলগুলো করলে উল্টো ক্ষতি হয়

ডিপ্রেশনে থাকা মানুষের হতাশা কাটানোর জন্য অনেকেই নিজের অজান্তেই এমন কিছু ভুল করে যা উল্টো তার মনের উপর চাপ ও হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এই ভুলগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাতে আপনি ডিপ্রেশনে থাকা ব্যক্তির কাছে সত্যিকারের সহায়ক হতে পারেন।

অতিরিক্ত উপদেশ দেওয়া

“সব ঠিক হয়ে যাবে” বা “এইটা করলেই ভালো লাগবে”–এ ধরনের বাক্য ব্যক্তির হতাশাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। ডিপ্রেশনে থাকা মানুষ ইতিমধ্যেই নিজের আবেগ নিয়ে দ্বন্দ্বে থাকে, তাই এমন উপদেশ তার মনে আরও বিচ্ছিন্ন অনুভূতি তৈরি করতে পারে।

কষ্টকে হালকা করে দেখা

আমি তো এর চেয়ে বড় কষ্ট পার করেছি”—এই ধরনের তুলনা তার আত্মমর্যাদা ভেঙে দিতে পারে। এই ধরনের কথা তার অনুভূতির গুরুত্ব কমিয়ে দিতে পারে। ফলে সে মনে করে কেউ তার ভেতরের কষ্টকে কেউ সত্যি ভাবে ধরছেনা।

খুশি বা হাসি চাপানো

ডিপ্রেশনে থাকা মানুষের মনের অবস্থা অনেক নাজুক হয়। এই অবস্থায় হঠাৎ তাকে হাসতে বা খুশি হতে বললে অনেক সময়  উল্টো প্রভাব পড়ে ব্যক্তির ওপর। “কেন এত দুঃখ করছো, একটু মজা করো”,  এই ধরনের কথা গুলো তার আবেগকে অবমূল্যায়ন করতে পারে।

হাসি বা আনন্দকে জোর করে চাপ দেওয়া মানে, তার মনে ভেতরে একটি বাধ্যবাধকতা তৈরি করা। এতে তার আত্মসম্মান ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।

অবহেলা বা এড়িয়ে যাওয়া

নিঃসঙ্গতার কারণে চুপ থাকা ব্যক্তিকে অবহেলা করলে কিংবা তাকে এড়িয়ে গেলে তার একাকিত্ব আরও বেড়ে যাবে। এতে করে সে  ভাববে তাকে হয়তবা সবাই ছেড়ে দিয়েছে। এবং তার হতাশা আর ও বেড়ে যাবে।

অতিরিক্ত চাপ বা জোর করা

যেকোন কাজ, সিদ্ধান্ত অথবা আচরণের ক্ষেত্রে জোর পূর্বক চাপ দিলে সে নিজেকে অসহায় মনে করবে এবং ভাববে যে  কেউ তার পরিস্থিতি বোঝে না। যা তার মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

ডিপ্রেশনে থাকা আপনার প্রিয় জনের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভেবে চিন্তে কথা বলবেন। কারণ আপনার ছোট্ট ভুল গুলো নিজের অজান্তেই তার জীবনে গভীর ক্ষত তৈরি করতে পারে।

প্রিয়জনের সহানুভূতি, ধৈর্যপূর্ণ উপস্থিতি, আর সমাজের সহমর্মিতা ও সচেতনতা মিলেই গড়ে তোলে একটি শক্তিশালী সাপোর্ট নেটওয়ার্ক। আর এই নেটওয়ার্কই হতে পারে হতাশার অন্ধকারকে আলোর পথে পরিবর্তন করার গেম-চেঞ্জার।

ছোট্ট একটি ফোনকল, ধৈর্য ধরে শোনা, কোমল উৎসাহ—এসবই হতে পারে সেই আলোকচিন্তা যা জীবনের দিশা দেখায়। সত্যিকারের সহানুভূতি এবং সমন্বিত সহায়তা একজনকে কেবল মানসিক স্থিতি ফিরিয়ে দেয় না, বরং তাকে সুস্থ, শক্তিশালী এবং আত্মবিশ্বাসী জীবন ফিরে পেতে সাহায্য করে।

তথ্যসুত্র

Related posts

২০২৫ বসন্তে ফ্যাশনে নতুন ট্রেন্ড

মাত্র ৫ মিনিটে স্ট্রেস কমাবেন কীভাবে? বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সহজ উপায়

রিজওয়ানা রহমান

বিদেশে পড়তে চান? এই স্কলারশিপগুলোই আপনাকে পৌঁছে দেবে স্বপ্নের দেশে!

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More