এমন কেউ কি আছে, যে সুন্দর ত্বক পেতে হতে চায় না??অনেকেই হয়তো হাজারো ক্রিম, প্যাক মেখেও সমাধান পাচ্ছেন না। তার কারণ ,আমাদের ত্বকের জন্য মানতে হবে কিছু বেসিক রুটিন। সাতদিন এই রুটিন মেনে চললেই আপনি পাবেন নিখুঁত, মসৃণ, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক। কিন্তু কীভাবে মেনে চলবেন এই রুটিন?
সুন্দর ত্বক কার না চাওয়া? আর সেই ত্বক পাওয়ার গোড়ার কথাটাও খুবই সাধারণ—সঠিক যত্ন। প্রতিদিন একটু সময় নিয়ে যদি ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়, বা একটি নির্দিষ্ট স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলা যায়, তাহলে ত্বকের কোনও বড় সমস্যাই হয় না। বরং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়তে শুরু করবে।
তবে গ্রীষ্মকালের ত্বকের যত্ন নেওয়া একটু চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। রোদ, ঘাম, ধুলোবালি আর দূষণের ধাক্কায় ত্বক তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। দেখা দেয় কালচেভাব, ব্রণ, রুক্ষতা আর ক্লান্ত-মলিন চেহারা। এই সময়টায় অনেকেই তার ত্বক নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন যে কিভাবে তাদের ত্বক আবার সতেজ ও উজ্জ্বল হবে!!
আসলে আমাদের ত্বকের নিচে থাকে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ—মেলানিন। গরমে অতিরিক্ত সূর্যরশ্মি ত্বকে পড়লে এই মেলানিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। এর ফলেই ত্বকে দেখা দেয় কালচেভাব, দাগ বা পিগমেন্টেশন। কিন্তু শুধু রোদ নয়, যথেষ্ট পানি না খাওয়া, ঘুম কম হওয়া, মানসিক চাপ, দূষণ, ভুল প্রসাধনী ব্যবহার কিংবা অপরিষ্কার ত্বকও ত্বকের ঔজ্জ্বল্য কেড়ে নিতে পারে।
তবে একটু নিয়ম মেনে চললে, মাত্র ৭ দিনেই আপনি আপনার ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে পারবেন। দরকার শুধু সঠিক যত্ন আর ধৈর্য নিয়ে একটি কার্যকর স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করা।
বিশেষজ্ঞরা কিন্তু স্পষ্টভাবেই বলেন—স্কিনকেয়ার নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কিছুই নেই। খুব বেশি জটিল রুটিন মানতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতাও নেই। একইসঙ্গে অতিরিক্ত স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করতেও নিষেধ করেন তাঁরা।
প্রথমেই বুঝে নিন, আপনার ত্বকের ধরন কী? তৈলাক্ত, শুষ্ক নাকি সাধারণ? আর সেই অনুযায়ী আপনার স্কিনকেয়ার রুটিন ঠিক করুন।
কী ভাবে বুঝবেন আপনার ত্বকের প্রকৃতি?
নিজের ত্বকের ধরন জানার একটি সহজ উপায় হলো “ওয়েটিং টেস্ট”। প্রথমে মুখ মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এরপর কোনো ময়েশ্চারাইজার বা স্কিন প্রোডাক্ট না লাগিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এক ঘণ্টা পর একটি টিস্যু বা ব্লটিং পেপার নিয়ে মুখের কপাল, নাক, গাল ও থুতনি আলাদা করে মুছুন।
১. তেলতেলে ত্বক (Oily Skin)
যদি টিস্যুতে তেল লেগে থাকে, বিশেষ করে কপাল ও নাকের অংশে। এ তার মানেআপনার ত্বক তৈলাক্ত। এই ধরনের ত্বক সাধারণত চকচকে দেখায় এবং দিনের শেষে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব থাকে। আর তেল বেশি থাকার কারণে ব্রণ বা পিম্পল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে বেশি।
২. শুষ্ক ত্বক (Dry Skin)
যদি টিস্যুতে একদম তেল না দেখা যায় এবং মুখে টান টান অনুভূতি থাকে, তাহলে আপনার ত্বক শুষ্ক। এ ধরনের ত্বকে চামড়া ফাটা, রুক্ষতা বা খসখসে ভাব আসতে পারে। শীতকালে বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় শুষ্ক ত্বক আরও খারাপ হতে পারে।
৩. সাধারণ ত্বক (Normal Skin)
আবার যদি টিস্যুতে সামান্য মাত্রায় তেল থাকে বা প্রায় না-থাকে এবং ত্বক মসৃণ ও স্বাভাবিক থাকে, তাহলে আপনার ত্বক সাধারণ। এই ধরনের ত্বকে খুব কম সমস্যা দেখা দেয়, ত্বক বেশিরভাগ সময় থাকে সুস্থ ও সুন্দর।
৪. মিশ্র ত্বক (Combination Skin)
মিশ্র ত্বকের ক্ষেত্রে, টি-জোন (নাক, কপাল ও থুতনি) অংশে তেল বেশি থাকে, আর গাল ও অন্যান্য অংশ শুকনো বা স্বাভাবিক হয়। অর্থাৎ মুখের বিভিন্ন অংশে ত্বকের ধরন আলাদা আলাদা হয়।
সংবেদনশীল ত্বকের ছবি
৫. সংবেদনশীল ত্বক (Sensitive Skin)
যদি ত্বকে সহজেই লালচে ভাব, জ্বালাপোড়া, চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়, বিশেষ করে নতুন কোনো পণ্য ব্যবহার করলে, তাহলে আপনার ত্বক সংবেদনশীল। এ ধরনের ত্বকের যত্ন নেওয়ার সময় খুব সতর্ক থাকতে হয় এবং হালকা, কোমল পণ্য ব্যবহার করতে হবে।
রোজকার নিজের ত্বক অনুযায়ী সঠিক যত্ন নিলে করলে সাতদিনের মধ্যেই ফলাফল দেখা যাবে। অবাক হচ্ছেন? কিন্তু এটাই সত্যি৷ ত্বক পরিচর্যার কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে মাত্র একসপ্তাহেই তফাৎ বুঝতে পারবেন। চলুন জেনে নেই কিভাবে সাত দিনে ত্বকের কালো দাগ দূর করে মসৃণ ও উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া সম্ভব–
প্রথম দিনের টিপস
ত্বক পরিচর্যার প্রাথমিক তিনটে ধাপ হলো ক্লেনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং। কিন্তু আশ্চর্যভাবে আমাদের অনেকেই এই নিয়ম মেনে চলতে পারি না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধুলোময়লা আর দূষণের কারণে ত্বকের যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তাতে ভালোভাবে নিজেদের ত্বক পরিষ্কার করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।
- প্রথমে আপনার ত্বকের প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই কোমল ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন৷
- এরপর গোলাপজল, গ্রিন টি, হোয়াইট ভিনিগারের মতো প্রাকৃতিক টোনার ব্যবহার করতে পারলে ভালো ফল পাবেন৷
- তারপর ভালো কোনও ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন৷ তাছাড়া ,ত্বক পরিষ্কার করার পর একটা প্রাকৃতিক ফেস প্যাক লাগাতে পারলে খুব ভালো হয়৷
- তবে বাইরে বেরোনোর আগে অবশ্যই কিন্তু সানস্ক্রিন লাগাবেন৷
দ্বিতীয় দিনের টিপস
কেবল বাইরে থেকে যত্ন নিলেই হবে না, ভিতর থেকেও ত্বকের যত্ন নিতে হবে ৷ তাই প্রচুর পরিমাণে ফল আর সবজি হওয়ার চেষ্টা করুন ।অন্তত প্রতিদিন একটি করে ফল খান।
- আপনি চাইলে ত্বকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ফলের মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন৷
- গরমে ত্বক যদি বেশি তেলতেলে হয়ে যায় তাহলে ত্বকে স্ট্রবেরি মাস্ক ও শুষ্ক ত্বকে কলার মাস্ক ভালো৷ এগুলো বাড়িতেই তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে।
- সারাদিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার পানি পান করুন
- আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রথমদিনের মতো ত্বক পরিষ্কারের রুটিন মেনে চলুন৷
তৃতীয় দিনের টিপস
তৃতীয় দিনের স্কিন কেয়ারে আপনি ত্বকের মৃত কোষ উঠাতে কাজ করতে পারেন। যেমন–
- এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব দিয়ে হালকা মাসাজ করলে আপনার মৃত কোষ উঠে যাবে৷ এরপর একটি ভালো ফেস প্যাক লাগিয়ে নিন৷
- এরপর মত প্রতিদিনের মতো টোনার আর ময়েশ্চারাইজার দিয়ে তৃতীয় দিনের পরিচর্যা শেষ করুন৷
চতুর্থ দিনের টিপস
- ৪ দিনের দিন একটা স্টিম নিন। মিনিট দশেক মুখে স্টিম নেওয়ার পর মধু আর ওটমিল দিয়ে বানানো একটা প্যাক লাগিয়ে নিন।
- ত্বক ভিতর থেকে একেবারে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এর পর গোলাপজল দিয়ে টোনিং করে ময়েশ্চারাইজার মেখে নিন।
- রাতে শুতে যাওয়ার আগে প্রথমদিনের মতো ত্বক পরিষ্কার করুন।
পঞ্চম দিনের টিপস
- পঞ্চম দিনের দিন সকালে প্রথম দিনের মত ক্লেনজিং করুন। এর পর অ্যালোভেরা জেল দিয়ে মুখে মাসাজ করুন। এতে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়বে।
- এই দিন থেকে আপনি চাইলে, চোখের নিচে ডার্ক সার্কল থাকলে আন্ডার আই সেরাম লাগাতে শুরু করুন। মাসাজের পর ময়েশ্চারাইজার বা ডে ক্রিম লাগিয়ে নিন।
- সন্ধেবেলা ত্বক পরিষ্কার করার পর একটি চন্দনের প্যাক লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
ষষ্ঠ দিনের টিপস
এই দিনটায়ও আপনি তৃতীয় দিনের মতোই ত্বক এক্সফোলিয়েট করবেন। কারণ সপ্তাহে দুইবার এক্সফোলিয়েশন করলে ত্বক আরও উজ্জ্বল এবং তাজা মনে হবে।
পাশাপাশি সারা সপ্তাহ জুড়ে প্রচুর জল, স্যুপ ও ফলের রস খেতে ভুলবেন না। শরীরে পানি ঠিকঠাক থাকলেই ত্বকও থাকে সুন্দর এবং সতেজ।
সপ্তম দিনের টিপস
সপ্তাহের শেষে, সাত দিনের মাথায় একটা ফেশিয়াল করতে পারেন। যা আপনার ত্বককে সম্পূর্ণ পরিষ্কার এবং সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। আর অবশ্যই ক্লেনজিং, টোনিং আর ময়েশ্চারাইজিং-এর রুটিন নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে।
প্রথম দিন থেকেই এই রুটিন নিয়ম মেনে চলুন। দেখবেন ত্বক থেকে যাবতীয় সমস্যা দূরে থাকবে। সতেজ, উজ্জ্বল ও ঝকঝকে ত্বকের সঙ্গে আপনি থাকবেন ঝলমলে!