Image default
যাপন

Time Management ভুলে যাও, আজ থেকে Energy নিয়ন্ত্রণ করো!

কখনো কি অনুভব করেছেন, টাইম ম্যানেজমেন্টের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা সত্ত্বেও সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে? অথবা হয়তো আপনার কাছে যথেষ্ট সময় আছে, কিন্তু কাজ করার সময় আপনার শরীর ও মন ক্লান্ত বোধ করে? এটি আমাদের এই প্রশ্নের দিকে নিয়ে যায় যে,  কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? টাইম ম্যানেজমেন্ট নাকি এনার্জি ম্যানেজমেন্ট?

আমাদের দ্রুতগতির জীবনে সময়কে প্রায়ই একটি দুষ্প্রাপ্য সম্পদ হিসেবে দেখা হয়। আমরা প্রতিদিন যতটা সম্ভব কাজ গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু প্রায়ই ক্লান্ত এবং বিরক্ত বোধ করি। কারণ শুধু  টাইম ম্যানেজমেন্ট যথেষ্ট নয়। আমাদের এনার্জি নিয়ন্ত্রণের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের মানসিক, শারীরিক এবং আবেগীয় শক্তি কাজগুলো মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট রয়েছে।

এনার্জি লেভেল অপ্টিমাইজ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনোযোগ, প্রেরণা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারি। এর মানে হলো কঠোর পরিশ্রম নয়, বরং স্মার্ট কাজ করা। আপনি উদ্যোক্তা, ছাত্র বা ব্যস্ত পেশাদার যাই হোন না কেন, এই নিবন্ধটি আপনাকে শক্তি ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহারিক টিপস এবং কৌশল দেবে। 

তাই, যদি আপনি আপনার  প্রোডাক্টিভিটি কে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন, তবে টাইম ম্যানেজমেন্ট থেকে এনার্জি ম্যানেজমেন্ট এর দিকে মনোযোগ স্থানান্তর করার সময় এসেছে। আপনার শক্তির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে আপনার পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচন করতে প্রস্তুত হোন।

টাইম ম্যানেজমেন্ট বনাম এনার্জি ম্যানেজমেন্ট

টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং এনার্জি ম্যানেজমেন্ট প্রায়ই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এগুলো দুটি ভিন্ন ধারণা। টাইম ম্যানেজমেন্ট হলো আপনার কাজগুলো সংগঠিত করা এবং অগ্রাধিকার দেওয়া যাতে সময়ের সবচেয়ে কার্যকর ব্যবহার করা যায়। এটি মূলত সময়সূচি তৈরি, সময়সীমা নির্ধারণ এবং সময় নষ্টকারী কাজগুলো দূর করার উপায় খুঁজে বের করার একটি কৌশল।

অন্যদিকে, এনার্জি ম্যানেজমেন্ট মানে হলো আপনার শক্তির মাত্রা বোঝা এবং তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা। এর মাধ্যমে আপনার মন, শরীর এবং আবেগের জন্য যথেষ্ট শক্তি থাকে, যা দিয়ে আপনি কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারেন। পাশাপাশি, এর মাধ্যমে শরীরের শক্তি ফিরে পাওয়া যায় এবং এটি নতুন কাজের জন্য শরীরকে চাঙ্গা করে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট আর এনার্জি ম্যানেজমেন্টের মূল তফাত হলো, টাইম ম্যানেজমেন্ট বাইরের বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়, যেমন আপনার সময়সূচি আর কাজের তালিকা। অন্যদিকে, এনার্জি ম্যানেজমেন্ট ভেতরের বিষয়গুলোর উপর ফোকাস করে, যেমন আপনার শক্তির মাত্রা আর ব্যক্তিগত ছন্দ। এই দুটো একসঙ্গে করলে আপনি কাজের ফলাফল বাড়াতে পারেন এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটা পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি তৈরি করতে পারেন।

টাইম ম্যানেজমেন্ট বনাম এনার্জি ম্যানেজমেন্ট

এনার্জি বাড়ানোর সহজ কৌশল

এখানে এনার্জি বাড়ানোর কিছু মূল কৌশল বিবেচনা করা যাক:

আপনার সর্বোচ্চ শক্তির সময় চিহ্নিত করুন এবং অপ্টিমাইজ করুন

এনার্জি ম্যানেজমেন্ট এর প্রথম পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হলো আপনার সর্বোচ্চ শক্তির সময় চিহ্নিত করা। এটি হলো দিনের সেই সময় যখন আপনি সবচেয়ে শক্তিমান, মনোযোগী এবং উৎপাদনশীল বোধ করেন। কিছু মানুষের জন্য এটি হতে পারে সকালে, আবার কারো জন্য বিকেলে বা সন্ধ্যায়।

একবার আপনি আপনার সর্বোচ্চ শক্তির সময় চিহ্নিত করলে, আপনি সেই অনুযায়ী আপনার কাজ সাজাতে পারেন। আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বা চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো এই সময়ে নির্ধারণ করার চেষ্টা করুন। 

আপনার পুষ্টি এবং ব্যায়াম রুটিন অপ্টিমাইজ করুন

আপনার শারীরিক শক্তির মাত্রা আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম অভ্যাসের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। সঠিক পুষ্টি এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনার শক্তির মাত্রা বাড়াতে, আপনার মনোযোগ উন্নত করতে এবং আপনার সামগ্রিক সুস্থতাকে সমর্থন করতে সাহায্য করতে পারে।

পুষ্টির ক্ষেত্রে, ফল, সবজি, পূর্ণাঙ্গ শস্য এবং হালকা প্রোটিনের মতো পুষ্টিকর,অর্থাৎ একটি সুষম খাদ্যের উপর মনোযোগ দিন। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত নাস্তা এবং ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন। এ ধরনের খাবারগুলো সাময়িক শক্তি বৃদ্ধি দিতে পারে বটে কিন্তু শেষ পর্যন্ত শক্তির মাত্রার পতন ঘটায়।

আবার, নিয়মিত ব্যায়াম করা আমাদের শরীরের শক্তি ধরে রাখার জন্য খুবই জরুরি। ব্যায়াম শুধু শরীরই ভালো রাখে না, বরং মনকেও সতেজ রাখে। তাই প্রতিদিনের রুটিনে কিছু সহজ ব্যায়াম যোগ করা উচিত। যেমন, হালকা দৌড়ানো (এ্যারোবিক ব্যায়াম), শরীরের শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম (শক্তি প্রশিক্ষণ), আর শরীর নরম ও নমনীয় রাখার ব্যায়াম (নমনীয়তা বৃদ্ধি) — এই তিন ধরনের ব্যায়াম একসাথে করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।

স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়ামের দৃশ্য

বিরতি নেওয়া

আপনার সর্বোচ্চ শক্তির সময় এবং পুষ্টি ও ব্যায়াম রুটিন অপ্টিমাইজ করার পাশাপাশি, আপনার শক্তির মাত্রা পুনরুদ্ধারের জন্য বিরতি নিন। এর মধ্যে থাকতে পারে:

  • প্রতি ৬০-৯০ মিনিট পর পর একটু বিরতি নিন। এই সময়ে হালকা স্ট্রেচিং, ধ্যান বা আরামদায়ক কিছু করুন। যেগুলো আপনার শরীর ও মনকে বিশ্রাম দেবে। 
  • স্ট্রেস কমাতে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন বা মনোযোগ ধরে রাখার জন্য সহজ ধ্যান ব্যায়াম করুন। 
  • প্রতিদিন ভালোভাবে ঘুমানো খুবই দরকার। ঘুম না হলে শরীর ও মন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। তাই ঘুম ও বিশ্রামকে গুরুত্ব দিন। 
  • যেসব শখ বা অবসর কাজ আপনার ভালো লাগে- যেমন বই পড়া, গান শোনা, আঁকাআঁকি বা বাগান করা, সেগুলো নিয়মিত করুন। এগুলো মনকে শান্ত করে এবং নতুন করে কাজ শুরু করার শক্তি দেয়।
একজন মেয়ে বই পড়ছে

আপনার দৈনন্দিন রুটিনে এনার্জি ম্যানেজমেন্ট যুক্ত করা

এখন যেহেতু আপনি শক্তি ব্যবস্থাপনার নীতিগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়েছেন, পরবর্তী পদক্ষেপ হলো এই কৌশলগুলো আপনার দৈনন্দিন রুটিনে একীভূত করা। এটি করার জন্য কিছু টিপস এখানে দেওয়া হলো:

শক্তি-বর্ধক রুটিন দিয়ে দিন শুরু করুন

আপনি যেভাবে দিন শুরু করেন তা আপনার দিনভর শক্তির মাত্রার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। একটি শক্তি-বর্ধক রুটিন দিয়ে আপনার দিন শুরু করুন যার মধ্যে থাকতে পারে:

  • প্রথমেই, শরীরকে হাইড্রেট রাখতে এক গ্লাস পানি পান করুন, অথবা চাইলে স্বাস্থ্যকর কোনো ফলের স্মুদি খেতে পারেন। এতে শরীর সতেজ থাকে এবং শক্তি বাড়ে। 
  • এরপর, রক্ত চলাচল বাড়াতে কিছু হালকা ব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করুন। এতে শরীর চাঙ্গা হয় এবং ঘুম ঘুম ভাব কেটে যায়। 
  • মন শান্ত ও স্থির রাখতে মননশীলতা (mindfulness) বা ধ্যানের কিছু সহজ অনুশীলন করতে পারেন। এতে স্ট্রেস কমে এবং মনোযোগ বাড়ে। 
  • সবশেষে, দিনের কাজগুলো ভালোভাবে সামলাতে হলে দিনের শুরুতেই কোন কাজগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা ঠিক করে নিন। এতে আপনি গুছিয়ে কাজ করতে পারবেন এবং সময় নষ্ট হবে না।

আপনার শক্তির মাত্রা ঠিক রাখতে চাইলে প্রতিদিনের জন্য একটি সহজ, সামঞ্জস্যপূর্ণ সকালের রুটিন তৈরি করা খুবই জরুরি। এতে আপনি শুধু শারীরিকভাবে না, মানসিকভাবেও দিন শুরু করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।

যখন আপনি সকালে নিয়মিতভাবে পানি পান, হালকা ব্যায়াম করেন, ধ্যান বা মনোযোগ ধরে রাখার অনুশীলন করেন, আর দিনের পরিকল্পনা ঠিক করে নেন , তখন আপনি আরও বেশি উৎপাদনশীল এবং সফল একটা দিন কাটাতে পারেন। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো সকালে এনার্জি বাড়ানোর সেরা পদ্ধতি।

যোগব্যায়াম করছে একজন মেয়ে

এনার্জি ড্রেইন কেন হয় এবং কীভাবে রোধ করবেন

কেন হয়?

  • আধুনিক জীবনযাত্রা: দ্রুতগতির জীবন, কাজের চাপ, এবং সবসময় সংযুক্ত থাকার প্রয়োজন আমাদের শক্তি কমিয়ে দেয়। 
  • অনেক কাজ একসঙ্গে করা: একাধিক কাজ একসঙ্গে করতে গিয়ে মন ও শরীর ক্লান্ত হয়।  
  • ডিজিটাল বিভ্রান্তি: ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া, এবং নোটিফিকেশন আমাদের মনোযোগ ও শক্তি চুরি করে।  
  • কাজ ও জীবনের ভারসাম্যহীনতা: কাজের জন্য ব্যক্তিগত সময় কমে যাওয়া এবং নিজের যত্ন না নেওয়া ক্লান্তির কারণ।  

কীভাবে রোধ করবেন?  

নিজের যত্ন নিন:  

   – পর্যাপ্ত ঘুমান, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, এবং পানি পান করুন।  

   – দিনে ছোট বিরতি নিয়ে হাঁটুন, গান শুনুন বা বই পড়ুন।  

একবারে একটি কাজ করুন:  

   – কাজের তালিকা তৈরি করুন, ছোট ছোট ভাগে ভাগ করুন, এবং একটি একটি করে শেষ করুন।  

সীমানা তৈরি করুন:  

   – অতিরিক্ত কাজে “না” বলুন।  

   – প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিন।  

ডিজিটাল বিভ্রান্তি কমান:  

   – সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবর্তে বাইরে হাঁটুন বা গভীর শ্বাস নিন।  

   – শরীর ও মনকে সতেজ করুন।  

স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ুন:  

   – প্রতিদিন হাঁটুন, ব্যায়াম করুন বা ধ্যান করুন।  

   – ক্যাফেইন বা চিনিযুক্ত খাবারের উপর নির্ভর করবেন না।  

সাহায্য নিন:  

   – বন্ধু, পরিবার বা অনলাইন গ্রুপের সঙ্গে কথা বলুন।  

   – অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন।  

উপসংহারে বলা যায়, এনার্জি ম্যানেজমেন্ট কাজের ফল বাড়ানো এবং আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। যখন আপনি আপনার এনার্জির গুরুত্ব বুঝবেন এবং তা নিয়ন্ত্রণ ও অপ্টিমাইজ করার জন্য ব্যবহারিক কৌশল প্রয়োগ করবেন, তখন আপনি শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রমের উপর নির্ভর না করে স্মার্টলি কাজ করতে পারবেন। এর ফলে আপনার পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে এবং আপনি আরও কার্যকরী হতে পারবেন।

অবশ্যই, টাইম ম্যানেজমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটি শুধুমাত্র একটি অংশ। টাইম ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি এনার্জি ম্যানেজমেন্টকে একত্রিত করলে আপনি কেবল বাহ্যিক সময় নয়, বরং আপনার অভ্যন্তরীণ শক্তিও সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন। সুতরাং, সফলতা পাওয়ার জন্য শুধু সময় নয়, নিজের শক্তির সঠিক ব্যবহারই মূল চাবিকাঠি। টাইম এবং এনার্জি দুটি বিষয়েই মনোযোগ দিয়ে আপনি নিজের কাজ ও জীবনের মান উন্নত করতে পারেন।

তথ্যসূত্রঃ

https://www.linkedin.com/pulse/energy-management-vs-time-boosting-productivity-2ay1c

https://seapi.co.id/en/latest-update/detail/time-vs-energy-management-which-is-more-important

https://www.linkedin.com/pulse/time-management-vs-energy-mastery-payal-khanwani-izavc

https://markuphero.com/blog/productivity-hacks-save-time-and-reduce-stress/

https://habit10x.com/how-to-combat-energy-drain-recharge-yourself/

 

Related posts

যে বিষয়গুলো একজন পুরুষকে অনাকর্ষণীয় করে তোলে: আচরণ, অভ্যাস ও ডেটিং ভুল

ইনডোর প্ল্যান্ট নাকি জাদুর কাঠি?

admin

বিদেশে পড়তে চান? এই স্কলারশিপগুলোই আপনাকে পৌঁছে দেবে স্বপ্নের দেশে!

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More