Image default
প্রযুক্তি

স্যাটেলাইটের আদ্যপ্রান্ত- ২০২৫ সালে মহাকাশে কত স্যাটেলাইট?

মহাকাশে প্রদক্ষিণরত স্যাটেলাইটগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন। বর্তমানে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো প্রায় তিন হাজার স্যাটেলাইট।

উপগ্রহের কথা আমরা সবাই জানি এবং চিনি। এগুলো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। এই উপগ্রহ হয় দুই রকম; প্রাকৃতিক আর কৃত্রিম। আর এই স্যাটেলাইট হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত কৃত্রিম উপগ্রহ।

মনুষ্যবিহীন অত্যাধুনিক এ ইলেকট্রনিক যন্ত্র ভূপৃষ্ঠ থেকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় (১৬০ কিলোমিটার হতে ৩৬০০০ কিলোমিটার) অবস্থান করে পৃথিবীতে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে পরিভ্রমণ করে। আবার অনেক স্যাটেলাইট পৃথিবীর গতির সাথে আবদ্ধ থেকে নিজ অবস্থানে স্থির অবস্থায় থাকে। স্যাটেলাইট পুরোপুরিভাবে পৃথিবীস্থ একটি স্টেশন হতে কম্পিউটারের হাত ধরে মানুষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। 

বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট এর অবস্থান

স্যাটেলাইটের কাজের ধরনের ওপর ভিত্তি করে এর কক্ষপথের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর কক্ষপথে উপবৃত্তাকার পথে ঘোরে। বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত ৮০ থেকে ১,২০০ মাইল উচ্চতাবিশিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। 

যেমন— উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে গবেষণা, বন্যপ্রাণীর চলাচল পর্যবেক্ষণ, জ্যোতির্বিদ্যা এবং পদার্থবিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার জন্য সায়েন্স স্যাটেলাইটগুলো ৩০,০০০ থেকে ৬,০০০ মাইল উচ্চতায় স্থাপন করা হয়। অন্যদিকে, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) স্যাটেলাইটগুলো ৬,০০০ থেকে ১২,০০০ মাইল উচ্চতায় স্থাপিত হয়। 

প্রতিটি স্যাটেলাইটের গঠন ও বৈশিষ্ট্য তার কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে আলাদা হয়। তবে সব স্যাটেলাইটেই কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। 

বিভিন্ন স্যাটেলাইটের প্রযুক্তিগত ইনফোগ্রাফ

বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট

বিশ্বের দেশগুলো বিভিন্ন স্যাটেলাইট বিভিন্ন উদ্দেশে মহাকাশে পাঠায়। কেউ আবহাওয়ার গতিবিধি বাতলায়, তো কেউ আবার করে স্রেফ নজরদারি। অনেক স্যাটেলাইট যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রযুক্তি সরবরাহ করে। এমনকি, ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর খুঁজতেও মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে একাধিক স্যাটেলাইট। 

অর্থাৎ, কৃত্রিম উপগ্রহ অনেক ধরনের হয়ে থাকে। যার মধ্যে জ্যোতির্বিদ্যা, বায়োস্যাটেলাইট, যোগাযোগ, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ, নেভিগেশন, সামরিক, বাণিজ্যিক, আবহাওয়া, পুনরুদ্ধার, অনুসন্ধানীসহ আরও বেশ কিছু ধরন আছে। 

অধিকাংশ স্যাটেলাইট যাত্রীহীন হয়ে থাকে। তবে কিছু স্যাটেলাইট যাত্রী বহন করে, যেগুলোর মূল কাজ হলো পৃথিবী থেকে মহাকাশচারীদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) নিয়ে যাওয়া এবং সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা। 

২০ শতকের শেষ নাগাদ প্রায় ২,২০০ কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আর স্যাটেলাইটগুলো এমন সব বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ছবি সরবরাহ করছে, যেগুলো আগে কখনো কল্পনাও করা যায়নি। 

যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট- মহাকাশে প্রদক্ষিণরত স্যাটেলাইটগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন। বর্তমানে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো প্রায় তিন হাজার স্যাটেলাইট। 

সামরিক, বাণিজ্যিক এবং বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে গত কয়েক দশকে মার্কিন সংস্থা নাসা মহাকাশে অসংখ্য স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। এছাড়াও, বেসরকারি সংস্থা যেমন ‘স্পেস-এক্স’-এর পাঠানো স্যাটেলাইটও এই তালিকায় রয়েছে।

চীনের স্যাটেলাইট- যুক্তরাষ্ট্রের পর মহাকাশে সবচেয়ে বেশি স্যাটেলাইট পাঠানো দেশের নাম চীন। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন এখন পর্যন্ত মহাকাশে প্রায় ৫০০টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে।

রাশিয়ার স্যাটেলাইট- তালিকায় এর পরেই রয়েছে রাশিয়ার নাম। রাশিয়ার ১৬৯টি স্যাটেলাইট বর্তমানে মহাকাশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়ার স্যাটেলাইটগুলিও মূলত সামরিক, যোগাযোগ এবং বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

ব্রিটেনের স্যাটেলাইট- চীন ও রাশিয়ার পর তালিকায় রয়েছে ব্রিটেন। ব্রিটেনের পাঠানো ১৩৫টি স্যাটেলাইট বর্তমানে মহাকাশে সক্রিয় রয়েছে। ব্রিটেনের স্যাটেলাইটগুলো টেলিযোগাযোগ, পর্যবেক্ষণ এবং নেভিগেশনের মতো ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ। ব্রিটেন বর্তমানে মহাকাশ প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে।

জাপানের স্যাটেলাইট- মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো দেশগুলোর তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে জাপান। জাপানের পাঠানো ৭৮টি স্যাটেলাইট বর্তমানে মহাকাশে রয়েছে। প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য সুপরিচিত জাপানের স্যাটেলাইটগুলোও উচ্চ প্রযুক্তির কারণে সবার নজর কেড়েছে।

ভারতের স্যাটেলাইট- ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ভারত। ভারতের ৬৬টি স্যাটেলাইট বর্তমানে মহাকাশে সক্রিয় রয়েছে। কম খরচে উন্নত মানের স্যাটেলাইট তৈরি এবং সফলভাবে মহাকাশে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’ বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে।

কানাডার স্যাটেলাইট- তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে কানাডা। কানাডার তৈরি ৫৬টি কৃত্রিম স্যাটেলাইট বর্তমানে মহাকাশে সক্রিয়  অবস্থায় রয়েছে।

একাধিক দেশের যৌথ স্যাটেলাইট- মহাকাশে একাধিক দেশের যৌথ উদ্যোগে তৈরি স্যাটেলাইটের সংখ্যাও নগন্য নয়। বর্তমানে মহাকাশে প্রায় ১৮০টি আন্তর্জাতিক বা ‘মাল্টিন্যাশনাল’ স্যাটেলাইট সক্রিয় রয়েছে। এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফ থেকে বেশ কিছু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়েছে, যা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক, যোগাযোগ এবং পর্যবেক্ষণমূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইটসমূহের ইনফোগ্রাফ

বিভিন্ন ধরণের স্যাটেলাইটের কাজ 

টেলিকমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কীভাবে কাজ করে

আমরা অনেকেই ইংল্যান্ড, আমেরিকা বা অন্যান্য দেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনের সাথে টেলিফোনে কথা বলি। যখন আমরা টেলিফোনে অন্য দেশের কারো সাথে কথা বলি তখন আমাদের দেশের একটি ডিশ অ্যানটেনা থেকে একটি বেতার সংকেত কৃত্রিম উপগ্রহে পাঠানো হয়। উপগ্রহটি সেই সংকেতকে অন্য দেশের একটি ডিশ অ্যানটেনায় প্রেরণ করে। তারপর সেখান থেকে সিগন্যালটি যার সাথে আমরা কথা বলছি তার টেলিফোনে পৌঁছায়।

এছাড়াও আমরা বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বা অলিম্পিক গেমস টেলিভিশনে দেখে থাকি। অন্য দেশ থেকে ঠিক একইভাবে বেতার সংকেত কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে আমাদের টেলিভিশনে পৌঁছায়। যে দেশে খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানকার একটি ডিশ অ্যানটেনা থেকে সংকেত উপগ্রহে পাঠানো হয়। 

উপগ্রহটি সেই সংকেতকে আবার আমাদের দেশের একটি ডিশ অ্যানটেনায় প্রেরণ করে, এবং সেখান থেকে তা আমাদের টেলিভিশনে পৌঁছায়। কৃত্রিম উপগ্রহ এখানে রিলে স্টেশনের মতো কাজ করে। এই উপগ্রহ টেলিভিশন প্রোগ্রাম এবং টেলিফোন সংবাদ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে দেয়। 

মানুষজন ডিস এন্টেনা যুক্ত টেলিভিশনে খেলা দেখছে

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হল এক ধরনের সংযোগ ব্যবস্থা যেটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এই পদ্ধতিতে ইন্টারনেট সিগন্যাল গ্রাহকের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) থেকে প্রেরিত হয় এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়। 

এই ইন্টারনেট সিগন্যালটি গ্রাহকের স্যাটেলাইট ডিশ ক্যাপচার করে বা ধারণ করে। আর স্যাটেলাইট ডিশের সাথে সংযুক্ত থাকে গ্রাহকের ইন্টারনেট মডেম। প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রাহকেরা মূলত মডেমের মাধ্যমেই ইন্টারনেট সেবা পেয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবার লাইসেন্স প্রদান করে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন(আইটিইউ)।

আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য ব্যবহৃত স্যাটেলাইট কীভাবে কাজ করে

আবহাওয়াবিদদের জন্য উপগ্রহ কেবল একটি প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। আবহাওয়াবিদরা বিস্তৃত পরিসরে বায়ুমণ্ডলীয় তথ্য সংগ্রহ করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য উপগ্রহ ব্যবহার করে থাকেন। আবহাওয়া স্যাটেলাইট সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। 

ভূ-স্থির উপগ্রহ: এই উপগ্রহগুলি গ্রহের মতো একই ঘূর্ণন গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। যার ফলে তারা একই অঞ্চলের উপর ক্রমাগত নজর রাখতে পারে। এই উপগ্রহগুলি মেঘের আচ্ছাদন, ঝড়ের উদ্ভব এবং তাপমাত্রার উপর রিয়েল-টাইম চিত্র এবং তথ্য সরবরাহ করে।
(ভূস্থির উপগ্রহের ছবি)

মেরু-প্রদক্ষিণকারী উপগ্রহ: এগুলি উত্তর-দক্ষিণ কক্ষপথে চলাচল করে এবং সমগ্র পৃথিবীর উপর দিয়ে অতিক্রম করে।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এগুলি বিশ্বব্যাপী পর্যবেক্ষণ এবং তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং পৃষ্ঠের অবস্থার তথ্য সংগ্রহের জন্য দুর্দান্তভাবে কাজ করে। (মেরু-প্রদক্ষিণকারী উপগ্রহের ছবি)

উপগ্রহগুলি ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, বজ্রঝড়ের মতো তীব্র আবহাওয়া সনাক্তকরণ ও পর্যবেক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি আবহাওয়া ব্যবস্থার বিকাশ ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিক সতর্কতা প্রদান করে। 

সামরিক ও গুপ্তচর স্যাটেলাইটের কার্যকারিতা 

সামরিক উপগ্রহগুলি গবেষণা, পরিমাপবিদ্যা, ভূ-তত্ত্ব, পুনর্বিবেচনা এবং আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে সামরিক উপগ্রহের বাজার মূল্য প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করা হয়। বিশ্বজুড়ে গোয়েন্দা তথ্যের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামী বছরগুলিতে এই বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সামরিক উপগ্রহগুলি মূলত নজরদারি এবং গোয়েন্দাগিরির জন্য তৈরি। এগুলিকে ‘স্পাই স্যাটেলাইট’ নামেও অভিহিত করা হয়। পৃথিবীর দেশগুলো পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি মেনে চলছে কিনা সেটি পর্যবেক্ষণ, সামরিক বাহিনীর নজরদারি, অস্ত্রের উপর নজর রাখা, বোমা হামলার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন এবং শত্রুর সামরিক ক্ষমতা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে সামরিক স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হয়। 

সামরিক উপগ্রহের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ‘নাভস্টার জিপিএস’। এটি মার্কিন বিমানবাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয়। নাভস্টার জিপিএস-এ একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও সঠিক উপগ্রহ নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে। যেটি স্থল, আকাশ বা সমুদ্রে অবস্থানরত সামরিক বাহিনীর সঠিক অবস্থান নির্ধারণে সাহায্য করে। এই সিস্টেমের ২০টিরও বেশি মহাকাশযান উত্তর ও দক্ষিণ মেরু সহ বিশ্বব্যাপী কভারেজ প্রদান করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সামরিক উদ্দেশ্যে কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য সামরিক উপগ্রহগুলির মধ্যে রয়েছে করোনা, ডিসকভারার-১, ডিসকভারার-৪, ডিসকভারার-১৪, ওয়েপনস সিস্টেম ১১৭এল, ক্যানিয়ন, অ্যাকোয়াকেড, ওরিয়ন, ম্যাগনাম, ট্রাম্পেট, এবং ওয়াইডব্যান্ড গ্লোবাল। 

রাশিয়ার সামরিক উপগ্রহগুলির মধ্যে কসমস ১, কসমস ২৫২৪, এবং আলমাজ প্রোগ্রামের অধীনে উৎক্ষেপিত স্যালিউট ২, স্যালিউট ৩ এবং স্যালিউট ৫ মহাকাশ স্টেশনগুলি উল্লেখযোগ্য। 

চীনের সামরিক উপগ্রহগুলির মধ্যে ইয়াওগান সিরিজের ইয়াওগান ৩০ডি, ইয়াওগান ৩০ই, এবং ইয়াওগান ৩০এফ । 

ভারতের সামরিক উপগ্রহগুলির মধ্যে রয়েছে EMISAT, MICROSAT R, GSAT-7, GSAT-7A, কার্টোস্যাট-২এ, কার্টোস্যাট-২বি এবং RISAT-2A। 

এই উপগ্রহগুলি যোগাযোগ, নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, এবং ক্ষেপণাস্ত্র সনাক্তকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্যাটেলাইট

GPS স্যাটেলাইট কীভাবে কাজ করে ও এর ব্যবহার

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) বর্তমান বিশ্বের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। এটি একটি উপগ্রহ-ভিত্তিক নেভিগেশন সিস্টেম যার সাহায্যে আমরা আমাদের অবস্থান, গতি এবং সময় সম্পর্কে সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারি। আধুনিক জীবনে জিপিএসের ব্যবহার এতটাই ব্যাপক যে এটি এখন মোবাইল ফোন, যানবাহন এবং সামরিক কার্যক্রমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ সর্বপ্রথম এই প্রযুক্তি চালু করে। শুরুতে এটি শুধুমাত্র সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে এটি সাধারণ মানুষের জন্যও উন্মুক্ত। এই সিস্টেমটি উপগ্রহ এবং ভূমি-ভিত্তিক স্টেশনের সমন্বয়ে গঠিত। জিপিএস প্রযুক্তি যেকোনো স্থানের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ, উচ্চতা এবং সঠিক সময় নির্ধারণে সহায়তা করে। 

Gps স্যাটেলাইট

স্টারলিংক স্যাটেলাইট

স্টারলিংক মূলত জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট (ভূ-স্থির উপগ্রহ) ব্যবহার করে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের একটি প্রকল্প। বর্তমানে এটি ৬০টি দেশে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে চলেছে। ইলন মাস্কের রকেট পরিষেবা সংস্থা ‘স্পেসএক্স’ ২০১৯ সাল থেকে স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ শুরু করেছে। এ পর্যন্ত তারা ৪,৫১৯টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করেছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২,০০০ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীতে স্পেসএক্স ৪২,০০০ স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীতে অবস্থিত অ্যানটেনার মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করবে।

স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট

বর্তমানে বাণিজ্যিক মহাকাশশিল্পের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল খাত বলে বিবেচিত হচ্ছে পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট বাজার, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩৩ সালের মধ্যে এ খাতের মূল্য ৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্টারলিংকের মতো প্রকল্পগুলো বিশ্বজুড়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে। বিশেষ করে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এমনকি ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে করছে গতিশীল । এছাড়াও, বৈজ্ঞানিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার নতুন দ্বার খুলে দিচ্ছে। 

তথ্যসূত্র

Related posts

২০২৫ সালে যেসব এআই স্মার্টফোন আসছে

শেখ আহাদ আহসান

বাইন্যান্স: ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতের বিপ্লব

শেখ আহাদ আহসান

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More