Image default
ঘটমান বর্তমান

ইলন মাস্ক গড়ছেন নতুন রাজনৈতিক দল! কী আছে তার মাস্টারপ্ল্যানে?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে মার্কিন রাজনীতির একক দলীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এগিয়ে এলেন প্রযুক্তিপ্রেমী বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক।

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক গঠন করেছেন নতুন রাজনৈতিক দল। 

দীর্ঘদিনের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বলয় কি তাহলে এইবার ভাঙতে চলেছে? আমেরিকার রাজনৈতিক মানচিত্রে কি হবে আমূল পরিবর্তন? 

ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা

ইলন মাস্কের নবগঠিত দলের নাম ‘আমেরিকা পার্টি’। তবে এই নতুন দলটির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইলেকটোরাল কমিশন (FEC)-এর নথিতে আমেরিকা পার্টির আনুষ্ঠানিক নিবন্ধনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মাস্কও দলটির নেতৃত্ব, নীতিমালা বা সংগঠন কাঠামো নিয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক সময়কার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্ক বেশ কয়েকদিন যাবত নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন। যদিও, এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের সম্পর্ক চরম বৈরিতায় পরিণত হয়েছে। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র মাস্ক ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের অন্যতম বড় আর্থিক অনুদানদাতা ছিলেন। 

এমনকি তিনি ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (DOGE)’-র প্রধান হয়ে সরকারি খরচ ও কর্মসংখ্যা কমাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব পালনের পর গত মে মাসে হঠাৎ করেই মাস্ক পদত্যাগ করেন।এরপরই দুজনের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। 

গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুল আলোচিত ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ বা করছাড় ও ব্যয় বৃদ্ধির বিলকে আইনে পরিণত করেন। এই বিলের কড়া সমালোচনা করেছেন মাস্ক। তিনি বলেছেন, ‘বিলটি যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দেবে।’ এর প্রতিক্রিয়ায় নতুন এ দল গঠনের ঘোষণা দিলেন মাস্ক।

ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়ানোর সময়ই মাস্ক প্রথম এই দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং তার সাবেক মিত্র ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র বাকযুদ্ধে লিপ্ত হন।

সেই বিরোধের সময় মাস্ক তার মালিকানাধীন এক্স-এ একটি মতামত জরিপ চালান, যেখানে তিনি অনুসারীদের জিজ্ঞেস করেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি রাজনৈতিক দল প্রয়োজন কি না।

শনিবার (৫ জুলাই) সেই জরিপের প্রসঙ্গ টেনে মাস্ক লেখেন, ‘জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দুই-তৃতীয়াংশ নতুন দল চেয়েছেন এবং সেটাই আপনারা পেতে চলেছেন!’

এক্সে তিনি আরও লিখেছেন, ‘দেশকে অপচয় ও দুর্নীতিতে দেউলিয়া করে ফেলার ক্ষেত্রে আমরা একদলীয় শাসনে বাস করি, কোনও প্রকৃত গণতন্ত্রে নয়। আজ ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠিত হলো আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে।’

মাস্কের এই ঘোষণার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। 

ইলন মাস্কের এক্স পোস্ট

ইলন মাস্ক রাজনীতিতে কেন আসছেন?

জন্মসূত্রে আফ্রিকায় জন্ম নেওয়ায় মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা রাখেন না মাস্ক। 

মাস্ক জানান, তাঁর ‘আমেরিকা পার্টি’র লক্ষ্য হলো জনগণকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া এবং তথাকথিত ‘একদলীয় আধিপত্যের’ বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা। তিনি বলেন, ‘এই দল গঠন করা হয়েছে আপনাদের স্বাধীনতা ফেরত দিতে।’

তবে প্রশ্ন উঠেছে, মাস্ক কি ২০২৮ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন? এক এক্স ব্যবহারকারী মাস্ককে জিজ্ঞাসা করেন, ‘মিডটার্ম, না কি ২০২৮?’ মাস্ক জবাব দেন, ‘আগামী নির্বাচন।’ যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ধারা অনুযায়ী (Article II, Section 1), কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া নাগরিকরাই প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মাস্কের প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব নয়।

এছাড়াও মাস্ক এক্স-এ একটি ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট করেন, যেখানে দুই মাথাওয়ালা একটি সাপকে দেখানো হয়েছে ‘ইউনিপার্টি শেষ করো’ ক্যাপশনসহ—এতে স্পষ্ট তাঁর বার্তা: ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দলের আধিপত্য ভাঙতে চান তিনি।

তবে কি তিনি শুধুমাত্র ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে নতুন রাজনৈতিক দলটি গঠন করেছেন?

ইলন মাস্কের ব্যঙ্গচিত্র

রাজনীতি বনাম টেকনোলজি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে মার্কিন রাজনীতির একক দলীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এগিয়ে এলেন প্রযুক্তিপ্রেমী বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক।

ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার ঘোষণার পর বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান অ্যাজোরিয়া পার্টনার্স তাদের ‘অ্যাজোরিয়া টেসলা কনভেক্সিটি ইটিএফ’ তহবিলের শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা স্থগিত করছে।

মার্কিন বিনিয়োগ কোম্পানিটি এ বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছে শনিবার। মাস্কের রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণার পরপরই ‘অ্যাজোরিয়া পার্টনার্স’ এমন সিদ্ধান্ত নিল।

টেসলা ইটিএফ এমন এক বিনিয়োগ তহবিল, যেখানে সাধারণ মানুষ বিনিয়োগ করতে পারে এবং ওই তহবিল ব্যবহৃত হয় টেসলার শেয়ার কেনাবেচায়। এ তহবিলটিই আগামী সপ্তাহে শেয়ার বাজারে আনার কথা ছিল অ্যাজোরিয়ার।

মাস্কের রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে একাধিক পোস্টে এ নিয়ে সমালোচনা করেছেন অ্যাজোরিয়া’র সিইও জেমস ফিশব্যাক। ওই পোস্টে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি নিজের সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

ইলন মাস্ক

এরপর শেষ পোস্টে ফিশব্যাক ঘোষণা করেন, টেসলা ইটিএফকে পাবলিক কোম্পানি করার পরিকল্পনা আপাতত পিছিয়ে দিচ্ছেন তারা।

বোর্ডকে মাস্কের নতুন রাজনৈতিক পরিকল্পনা দ্রুত মূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে, কারণ এটি টেসলায় তাঁর দায়িত্ব পালনে প্রভাব ফেলতে পারে কি না, তা দেখা জরুরি। ফিশব্যাক জানান, মে মাসে মাস্ক ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফেশিয়েন্সি’ থেকে সরে দাঁড়ালেও তখন বিনিয়োগকারীরা টেসলার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু এখন তাঁর রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণায় সেই আস্থায় চিড় ধরেছে।

রাজনীতি মানুষের বিশ্বাস, ক্ষমতা ও নীতির পরিচালনায় কাজ করে, আর টেকনোলজি এগিয়ে চলে উদ্ভাবন ও কার্যকারিতার পথে। রাজনীতিক সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলে প্রযুক্তি ব্যবহারে, আবার প্রযুক্তিও বদলে দেয় রাজনৈতিক কৌশল ও যোগাযোগের ধরন। তবে যখন একজন প্রযুক্তি নেতার সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ শুরু হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে—দুই জগতের ভারসাম্য কতটা সম্ভব?

তথ্যসূত্রঃ

Related posts

পারমানবিক বোমা – মারণাস্ত্রের অতীত ও বর্তমান

মহাকাশ থেকে ভোট: কল্পনা নাকি বাস্তবতা?

আবু সালেহ পিয়ার

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর ‘থ্রি জিরো’র পৃথিবী: সকল সমস্যাকে করবে জিরো

ইসরাত জাহান ইরা

Leave a Comment

Table of Contents

    This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More