রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, ‘পুরাতনের হৃদয় টুটে, আপনি নূতন উঠবে ফুটে’ – বিপ্লব শুধু শাসককে উৎখাত করার লড়াই নয়, এটি নতুন সূর্যের উদয়ের প্রতিশ্রুতি। নানা যুগে, বিভিন্ন আন্দোলন নিজেদের উদ্দেশ্য ও আদর্শের প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছে বিশেষ রঙ, যা শুধু প্রতিবাদের বার্তা দেয় না, বরং হয়ে উঠেছে মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রামের ভাষা।
বিশ্বের ইতিহাসে প্রতিটি বিপ্লব, প্রতিটি প্রতিবাদ যেন এক একটি গল্প, একটি সংগ্রামের কাহিনি। আর সেই গল্পের রং কখনো কালো, কখনো কমলা, আবার কখনো সবুজ। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এই রংগুলো কি শুধুই রং? মাত্রই ক্যানভাসের ছোপ? না, এগুলোর পেছনে লুকিয়ে থাকে সেই আন্দোলনের আত্মা, তার সংকল্প, তার আশা । যখন রাস্তায় লাখ লাখ মানুষ একত্রিত হয়, তখন তাদের হাতে তোলা এই রং শুধু বাহ্যিক প্রকাশই থাকে না, বরং বরং হয়ে ওঠে এক নীরব, কিন্তু শক্তিশালী বার্তা, যা পৃথিবী জুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়।
রঙিন বিপ্লব কী
রঙিন বিপ্লব হলো মূলত একটি অহিংস প্রতিবাদের সিরিজ। যা প্রধানত তৎকালীন সোভিয়েত-পরবর্তী রাষ্ট্রগুলোতে; বিশেষ করে জর্জিয়া, ইউক্রেন, কিরগিজস্তান এবং যুগোস্লাভিয়ার প্রাক্তন ফেডারেশনে সংঘটিত হয়েছে। এই বিপ্লবগুলোতে বিক্ষোভকারীরা সাধারণত সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছিল। এবং পরবর্তীতে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন লাভ করেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, এসব বিক্ষোভের ফলে সরকারের পতন ঘটেছে এবং পশ্চিমাপন্থী নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই আন্দোলনগুলোর নাম ‘রঙিন বিপ্লব’ দেওয়া হয়েছে, কারণ এসব আন্দোলনে বিশেষ কিছু রং যেমন ইউক্রেনের কমলা, জর্জিয়ার রোজ, বা কিরগিজস্তানের লাল রং বিক্ষোভকারীদের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। রঙিন বিপ্লবগুলি সাধারণত একটি পরিবর্তনের লক্ষ্যে অহিংস পথে পরিচালিত হতো। যে সংগ্রামে জনগণের শক্তি, গণতন্ত্রের প্রতি আকাঙ্ক্ষা এবং অধিকারের জন্য সংগ্রামই ছিল মুখ্য।
বিপ্লবের রঙের বৈশ্বিক ইতিহাস
রঙিন বিপ্লব বলতে বোঝানো হয় এমন গণআন্দোলন, যেখানে রঙ বা প্রতীক একটি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিচয় হিসেবে কাজ করে। ১৯৮০-এর দশকের শেষ থেকে ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংঘটিত এসব আন্দোলন আধুনিক গণতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও রঙিন বিপ্লবের প্রেক্ষাপট
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এই পতনের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৫টি অংশ স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রে পরিণত হয়। এসব দেশে সাংবিধানিক গণতন্ত্রের সূচনা হলেও, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি। দূর্বল নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতা, এবং সিভিল সোসাইটির সীমিত ভূমিকা গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়।
রাষ্ট্রপ্রধানেরা প্রায়ই অসীম ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজেদের শাসন দীর্ঘায়িত করতেন। সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র, স্বার্থগোষ্ঠী এবং ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা অন্যরা রাষ্ট্রপ্রধানদের পক্ষে কাজ করত। ফলে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরও এসব দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে নানা বাধা তৈরি হয়।
রঙিন বিপ্লবের উত্থান
নব্বই দশক এবং ২০০০-এর দশকের শুরুতে তরুণ প্রজন্ম এবং সমাজের পরিবর্তনকামী অংশগুলো রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার জন্য আন্দোলনে নামে। এসব আন্দোলন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সংঘটিত হয়, যেখানে প্রতীকী রঙ একটি বিশেষ গুরুত্ব পায়। কিছু আন্দোলন সফলভাবে সরকারের পরিবর্তন ঘটায়, আবার কিছু আন্দোলন আংশিক সফলতা পায়।
বিপ্লবের প্রতীক লাল কেন জনপ্রিয়
লাল রঙের সাথে বিপ্লবের সম্পর্ক দীর্ঘকাল ধরে ইতিহাসে রয়েছে। বিভিন্ন সংস্কৃতি, সমাজ এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে লাল রঙকে বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। মানসিকভাবে, লাল রঙকে শক্তি, উত্তেজনা এবং বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লাল রঙ মানসিক উত্তেজনা এবং কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে, যা বিপ্লবী পরিস্থিতিতে মানুষের মনোবল বাড়িয়ে তোলে।
প্রাচীন যুগ থেকে লাল রঙকে শক্তি, সাহস এবং বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রোমান সাম্রাজ্যে লাল রঙ সামরিক বিজয়ের প্রতীক ছিল।যুদ্ধের ময়দানে রোমান সৈন্যরা লাল ক্যাপ এবং লাল ব্যানার ব্যবহার করত, যা তাদের বিজয় এবং সাহসের প্রতীক ছিল। এছাড়া, চীনের প্রাচীন সংস্কৃতিতে লাল রঙকে সৌভাগ্য এবং শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হত।
‘ফরাসি বিপ্লব’ হলো প্রথম সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিপ্লব, যেখানে, লাল রঙ বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ফরাসি বিপ্লবের সময়, বিপ্লবীরা লাল টুপি এবং লাল ব্যানার ব্যবহার করত। এই লাল টুপিগুলো ‘ফ্রিজিয়ান ক্যাপ’ নামে পরিচিত ছিল, যা ছিলো মূলত প্রাচীন রোমান যুগে মুক্ত দাসদের প্রতীক। ফরাসি বিপ্লবের সময়ে এই লাল টুপির ব্যবহার সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
বিপ্লবের বিভিন্ন রং এবং তাদের প্রতীকী অর্থ
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিপ্লব ও আন্দোলন প্রায়ই কোনো নির্দিষ্ট রঙের মাধ্যমে নিজেদের পরিচিতি তৈরি করেছে। প্রতিটি রঙের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ এবং বার্তা, যা সেই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও মনোভাবকে প্রকাশ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
হংকংয়ের কালো রঙের প্রতিবাদ
হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ কালো পোশাক পরে প্রতিবাদে অংশ নেন। কালো রঙ সাধারণত শোক ও দুঃখের প্রতীক। কিন্তু, আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটি বিরোধিতা এবং ক্ষোভের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই আন্দোলনে কালো পোশাক পরা আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ, দৃঢ় সংকল্প এবং পরিবর্তনের দাবিকে শক্তভাবে প্রকাশ করেছিলো কালো রঙ।
পাল্টা আন্দোলনের সাদা রঙ
অন্যদিকে, যারা হংকংয়ের প্রো-বেইজিং বা চীনপন্থী মেয়রের সমর্থনে আন্দোলনে অংশ নেন, তারা সাদা রঙের পোশাক পরিধান করেন। সাদা রঙ নিরপেক্ষতা, শান্তি এবং প্রথাগত অবস্থানকে প্রকাশ করে।
রঙের এই প্রতীকী ব্যবহার শুধু পোশাকেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্দোলনগুলোর মানসিকতা, বার্তা এবং লক্ষ্য বুঝতে আমাদের সাহায্য করে।
হংকংয়ের হলুদ ছাতা বিপ্লব (২০১৪)
২০১৪ সালে হংকংয়ে গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচনের দাবিতে একটি বড় আন্দোলন হয়, যা “হলুদ ছাতা বিপ্লব” নামে পরিচিত। এই ঘটনায় আন্দোলনকারীরা হলুদ ছাতা ব্যবহার করে, যা পুলিশ ছোঁড়া টিয়ার গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে কাজে লাগতো। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি হংকংয়ের স্বাধীনতার দাবি তুলে ধরার মাধ্যমে, চীনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে একটি বড় বিরোধে রূপ নেয়।
ইউক্রেনের কমলা বিপ্লব (২০০৪)
২০০৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতির প্রতিবাদে একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে ওঠে, যা “কমলা বিপ্লব” নামে পরিচিত। এসময় বিরোধী প্রার্থী ভিক্টর ইউশচেঙ্কোর সমর্থকেরা কমলা রঙকে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে বেছে নেয়। হিমশীতল আবহাওয়া উপেক্ষা করে, ১৭ দিন ধরে হাজারো মানুষ কিয়েভের স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হয় এবং নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবি জানায়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন বাতিল করে এবং নতুন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।
মিয়ানমারের জাফরান বিপ্লব (২০০৭)
২০০৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হয়, যা “জাফরান বিপ্লব” নামে পরিচিত। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রথমে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন, যা পরে গণতন্ত্রের দাবিতে রূপ নেয়।
পরবর্তীতে এ আন্দোলনে ভিক্ষুদের সঙ্গে একে একে শিক্ষার্থী, কর্মী এবং নারীরাও যোগ দিতে শুরু করে। যদিও সরকার চরম নির্মমতার সাথে আন্দোলন দমন করে। তবে, এটি ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং মিয়ানমারে কিছু গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথ তৈরি হয়।
ফিলিপাইনের হলুদ বিপ্লব (১৯৮৩-১৯৮৬)
১৯৮৩ সালে বিরোধী দলীয় নেতা বেনিগনো অ্যাকুইনোর হত্যার পর ফিলিপাইনে একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে “হলুদ বিপ্লব” শুরু হয়। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা হলুদ ফিতা ধারণ করত, যা ছিলো তাদের ঐক্যের প্রতীক। তিন বছর ধরে চলা এই আন্দোলন ১৯৮৬ সালের পিপল পাওয়ার বিপ্লবে রুপ নেওয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস ক্ষমতাচ্যুত হন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
ইরানের সবুজ আন্দোলন (২০০৯-২০১০)
২০০৯ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে “সবুজ আন্দোলন” শুরু হয়। সবুজ রঙ, যা ইসলাম ধর্মের প্রতীক, এই আন্দোলনের প্রধান চিহ্ন হয়ে ওঠে। বিরোধী প্রার্থী মীর-হোসেন মুসাভির সমর্থকেরা ব্যাপক প্রতিবাদে অংশ নেয়। সরকার প্রতিবাদকারীদের দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। অনেক আন্দোলনকারী গ্রেফতার এবং আহত হয়। তবে, আন্দোলনকারীরা সরকারের চাপের পরও প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে। ইরানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংগ্রাম পরবর্তীতে ইতিহাসে “সবুজ আন্দোলন” নামে পরিচিত হয়, যা ইরানী জনগণের অধিকারের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়।
ম্যাসিডোনিয়ার রঙিন বিপ্লব (২০১৬)
২০১৬ সালে, ম্যাসিডোনিয়ায় একটি ওয়্যারট্যাপিং কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। এর প্রতিবাদে শুরু হয় “রঙিন বিপ্লব”। প্রতিবাদকারীরা রাজধানী স্কপিয়েতে জড়ো হয়ে সরকারি ভবনগুলোর দিকে রঙিন বেলুন ছুঁড়ে দেয়, যা সরকারের দুর্নীতি এবং জনগণের অসন্তোষকে প্রকাশ করেছিল। এই সৃজনশীল প্রতিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের একটি প্রতীক হয়ে ওঠে। প্রতিবাদকারীরা তাদের ক্ষোভ ও দাবি তুলে ধরে রঙের মাধ্যমে সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে।
গোলাপ বিপ্লব (জর্জিয়া, ২০০৩)
২০০৩ সালে জর্জিয়ায় সংঘটিত গোলাপ বিপ্লব ছিল একটি শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন, যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এদুয়ার্ড শেভার্দনাদজের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিলো। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন বিরোধী দলীয় নেতা মিখাইল সাকাশভিলি। সেসময় তিনি জনগণের কাছে গণতন্ত্র এবং স্বচ্ছ প্রশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়ার মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
গোলাপ ফুল ছিল এই বিপ্লবের প্রতীক, যা শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের বার্তা হিসেবে প্রচারিত হয়েছিলো। হাজার হাজার প্রতিবাদকারী রাজধানী টিবিলিসির পার্লামেন্ট ভবনে সমবেত হয়ে শেভার্দনাদজের পদত্যাগ দাবি করেন। আন্দোলনটি নতুন মোড় নেয়, যখন প্রতিবাদকারীরা হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন। এটি ছিলো শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রতীক।
আন্তর্জাতিক চাপ এবং জনসাধারণের তীব্র প্রতিরোধের মুখে শেভার্দনাদজ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের অধীনে দেশটিতে গণতন্ত্রের একটি নতুন যুগের সূচনা হয়। গোলাপ বিপ্লবের প্রভাব শুধুমাত্র জর্জিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি অন্যান্য পোস্ট-সোভিয়েত দেশগুলোর গণতান্ত্রিক আন্দোলনকেও ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।
টিউলিপ বিপ্লব (কিরগিজস্তান, ২০০৫)
কিরগিজস্তানের টিউলিপ বিপ্লব ২০০৫ সালে সংঘটিত হয়। এ আন্দোলন নির্বাচন জালিয়াতি, প্রশাসনিক দুর্নীতি, এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি গণজাগরণ হিসেবে আবির্ভূত হয়। প্রেসিডেন্ট আসকার আকায়েভের শাসন ব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিলো এই বিপ্লবের মূল কারণ।
বিতর্কিত সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে জনমনে ক্ষোভ ফেটে পড়ে। স্থানীয় শহরগুলো থেকে শুরু করে রাজধানী বিশকেক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেয়। আন্দোলনকারীরা টিউলিপ ফুলকে প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে।
উপসংহার
রঙিন বিপ্লব আধুনিক গণতন্ত্রের লড়াইয়ে প্রতীকী আন্দোলন হিসেবে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। প্রতিটি রঙ কোনো না কোনো বার্তা বহন করে, যেমন- শান্তি, পরিবর্তন, প্রতিরোধ বা ঐক্য। রাজনৈতিক আন্দোলনে রঙের ব্যবহার শুধু সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি নয়, এটি জনমানুষের অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা, এবং রাজনৈতিক দাবির প্রতিফলন।
রেফারেন্স লিঙ্ক
- https://www.dw.com/en/orange-green-or-black-the-colors-of-revolutions/a-50050659
- https://www.eurasiareview.com/06012024-color-revolutions-the-most-sophisticated-means-of-warfare-analysis/
- https://archive.roar.media/bangla/main/politics/color-revolution-twelfth-wave-of-modern-democracy
- https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/07/30/1410174
- https://en.wikipedia.org/wiki/Colour_revolution#:~:text=The%20colour%20revolutions%20(sometimes%20coloured,of%20Yugoslavia%20during%20the%20early