রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা কারো অজানা নয়। দুই দেশের অসম এই লড়াইয়ে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল আজ রাশিয়ার দখলে। একসময় ইউক্রেনের অধীনে থাকা এই অঞ্চলের মানুষগুলো আজ কাগজে-কলমে রাশিয়ার অধিবাসী। কেমন আছে জাতিগত পরিচয় হারানো সেই মানুষগুলো?
একবিংশ শতাব্দীর ইউরোপের মানচিত্রে এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে, যা একই সাথে দুটি দেশের অংশ। ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চারটি প্রদেশ, ডোনেটস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া আজ এমনই এক করুণ বাস্তবতার নাম। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এই চারটি অঞ্চল ইউক্রেনের অংশ, কিন্তু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে রাশিয়া এই অঞ্চলগুলোকে নিজেদের ফেডারেশনের অংশ বলে দাবি করে আসছে এবং সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
রাশিয়া দখল নেওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলগুলোর সাধারণ মানুষের জীবন এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। একদিকে অবিরাম যুদ্ধ আর ধ্বংসযজ্ঞ, অন্যদিকে পরিচয় সংকট আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ভয়াবহ বাস্তবতা।
কিন্তু রাশিয়া এই ভূখণ্ডগুলো দখলে কেন এত মরিয়া? এখানকার মানুষেরাই বা কিভাবে এই নতুন বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে? আজকের লেখায় আমরা রাশিয়ার দখলে থাকা এই চারটি অঞ্চলের ইতিহাস, ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং সেখানকার সাধারণ মানুষের দু:খ-দূর্দশার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করব।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ২০১৪ থেকে ২০২২-এর দীর্ঘ যাত্রা
রাশিয়া-ইউক্রেনের এই গভীর সংকট বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ২০১৪ সালে। ওই বছর ইউক্রেনে রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের পতনের পর, রাশিয়া প্রথমে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয়। এরপরই, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত দোনবাস অঞ্চলের দুটি প্রদেশ ডোনেটস্ক এবং লুহানস্কে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বিদ্রোহ শুরু করে। রাশিয়া গোপনে তাদের অস্ত্র, অর্থ এবং সামরিক সহায়তা দিয়ে এই বিদ্রোহকে এক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে পরিণত করে, যা আট বছর ধরে চলেছিল। এই সময়ে, এই দুটি অঞ্চল কার্যত কিয়েভের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় । যার ফলশ্রুতিতে, এই দুটি অঞ্চল নিজেদেরকে ‘ডোনেটস্ক পিপলস রিপাবলিক’ (DPR) এবং ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’ (LPR) হিসেবে ঘোষণা করে।
২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল, এই দোনবাস অঞ্চলকে পুরোপুরি দখল করা এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে ক্রিমিয়ার সাথে একটি স্থল-সেতু (Land Bridge) তৈরি করা। এই অভিযানের অংশ হিসেবেই, রুশ বাহিনী খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া প্রদেশের একটি বড় অংশ দখল করে নেয়।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে, রাশিয়া এই চারটি অঞ্চলে খুব তড়িঘড়ি করে একটি গণভোটের আয়োজন করে। ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে এই প্রদেশগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেয় পুতিনের দেশ রাশিয়া। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘ এই দখলকে অবৈধ বলে নিন্দা জানালেও আসলে সামগ্রিক বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ একসময় ইউক্রেনের মানচিত্রে থাকা এই অঞ্চলগুলো আজও রাশিয়ার সামরিক নিয়ন্ত্রণে।
কেমন আছে সেই অঞ্চলের মানুষগুলো?
দখলের রাজনীতি যে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না, তার সবচেয়ে বড় উদহারণ হয়ে আজও পৃথিবীর বুকে কলংকিত ইতিহাসে রচনা করে চলেছে গাজায় ইসরায়েলের অমানবিক আগ্রাসন। যুগে যুগে এক দেশ আরেক দেশের বুকে দখল বসিয়েছে, এটি কোন নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু দখলদারত্বের এই রাজনীতির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হিসেবে জীবন কাটায় দখল হওয়া অঞ্চলের সাধারণ মানুষ, যাদের এই সংঘাতের সাথে বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক নেই।
রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা এই চারটি অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাও এককথায় বিভীষিকাময়। প্রতিটি অঞ্চলের অভিজ্ঞতা কিছুটা ভিন্ন হলেও, কয়েকটি সাধারণ চিত্র প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়।
যেমন- ডোনেটস্ক ও লুহানস্ক, এই দুটি অঞ্চল ২০১৪ সাল থেকেই যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। তাই এখানকার মানুষেরা যুদ্ধকে তাদের সাধারণ জীবনযাপনের অংশ করে নিয়েছে। কিন্তু ২০২২ সালের পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। কারণ রাশিয়া এই অঞ্চলের পুরুষদের জোর করে তাদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করছে এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠাচ্ছে। যা্রা এই কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, তাদের উপর নেমে আসছে নির্যাতন।
সেই অঞ্চলের স্কুলগুলোতে ইউক্রেনীয় ভাষার পরিবর্তে রুশ ভাষায় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করে রাশিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতি শেখানো হচ্ছে। এই অঞ্চলের শিশুদের মধ্য থেকে ইউক্রেনীয় পরিচয় মুছে ফেলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া।
এছাড়া, ভিন্নমতকে দমন করা হচ্ছে কঠিন হাতে। সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যারা ইউক্রেনের পক্ষে কথা বলছেন, তাদের গুম করে ফেলা বা ‘ফিলট্রেশন ক্যাম্পে’ পাঠিয়ে দেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে দেশটির বিরুদ্ধে।
এদিকে, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের মানুষের জীবন আরও করুণ। ২০২২ সালে অঞ্চলগুলো নতুন করে রাশিয়ার দখলে আসে। এখানকার মানুষেরা যুদ্ধের আগে একটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করত। ফলে ২০২২ সাল থেকে তারা হঠাৎ করে নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়।
এছাড়া, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখানে বিদ্যুৎ, পানি এবং খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সীমিত, ফলে এখানকার সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
রাশিয়া খেরসনের বন্দর এবং জাপোরিঝিয়ার কৃষিজমি ও শিল্প কারখানাগুলোর নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নিয়েছে। এখানকার উৎপাদিত শস্য এবং অন্যান্য সম্পদ রাশিয়ায় পাচার করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইউরোপের বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র, পরিবর্তিত বাস্তবতায় সেটিও আজ রাশিয়ার দখলে। ফলে ইউক্রেন এক বিশাল পারমাণবিক ঝুঁকি্র মধ্যে রয়েছে।
শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলগুলোতে আজও রাশিয়ার বিরুদ্ধে গেরিলা প্রতিরোধ সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে, দখলদার কর্তৃপক্ষ প্রায়শই সাধারণ মানুষের উপর দমন-পীড়ন চালায়।
ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব: কেন এই চারটি অঞ্চল এত গুরুত্বপূর্ণ?
রাশিয়া এই চারটি অঞ্চল দখলের জন্য রাশিয়ার এত মরিয়া হওয়ার পেছনে রয়েছে গভীর ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণ। এগুলো হলো-
ক্রিমিয়ার সাথে স্থল-সেতু: খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া প্রদেশ দুটি রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সাথে ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মধ্যে একটি স্থল-সেতু তৈরি করে। এটি ক্রিমিয়ার নিরাপত্তা ও সামরিক সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়ার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমুদ্রের উপর নিয়ন্ত্রণ: এই অঞ্চলগুলো দখলের মাধ্যমে রাশিয়া আজভ সাগরের (Sea of Azov) উপর প্রায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং কৃষ্ণ সাগরে (Black Sea) ইউক্রেনের প্রবেশাধিকারকে মারাত্মকভাবে সীমিত করে দিয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পদ: দোনবাস (ডোনেটস্ক ও লুহানস্ক) অঞ্চলটি ইউক্রেনের শিল্প ও খনিজ সম্পদের কেন্দ্রস্থল ছিল। এখানকার কয়লা এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদ রাশিয়ার অর্থনীতির জন্য লাভজনক। অন্যদিকে, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন ইউক্রেনের প্রধান কৃষি অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য: এই অঞ্চলগুলো দখল করে রাশিয়া ইউক্রেনকে একটি দুর্বল ও অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করে ন্যাটোতে তার অন্তর্ভুক্তির পথ চিরতরে বন্ধ করে দিতে চায়।
আন্তর্জাতিক আইন এবং ইউক্রেনের কৌশল
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এক রাষ্ট্রের দ্বারা অন্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ড সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে দখল করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু বাস্তবতা সে কথা বলে না। এ কারণে আজও গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চলমান। রাশিয়া ইউক্রেনে ইসরায়েলের মত পাশবিকতা না চালালেও ইউক্রেনকে কোণঠাসা করেছে বেশ ভালোভাবেই। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিপুল ভোট পেয়েছে কিন্তু তাতে বাস্তবসম্মত কোন পরিবর্তন আসেনি ইউক্রেনে। প্রস্তাব পাস হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ইউক্রেন তার দখলকৃত অঞ্চলগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য একটি দ্বিমুখী কৌশল অনুসরণ করছে-
সামরিক প্রতিরোধ: ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী পশ্চিমা মিত্রদের সহায়তায় এই অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য প্রতিনিয়ত সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। খেরসন শহরের একাংশ পুনরুদ্ধার করা ছিল তাদের একটি বড় সাফল্য।
কূটনৈতিক চাপ: ইউক্রেন আন্তর্জাতিক ফোরামে রাশিয়ার উপর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ অব্যাহত রেখেছে। তাদের লক্ষ্য হলো, রাশিয়াকে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যকে দুর্বল করে দেওয়া।
তবে, এই অঞ্চলগুলো সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা ইউক্রেনের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। অনেকের মতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের পক্ষে রাশিয়াকে পরাজিত করে দখলকৃত অঞ্চলগুলো ফিরিয়ে আনা তাদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব।
যদিও ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি অত্যন্ত পরিবর্তনশীল অবস্থায় আছে। ডোনেটস্ক এবং লুহানস্ক প্রদেশের বেশিরভাগ অংশই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে, যদিও ইউক্রেনীয় বাহিনী কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্রতিরোধ ধরে রেখেছে। জাপোরিঝিয়া প্রদেশের দক্ষিণাংশ, বিশেষ করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ, রাশিয়ার দখলে, কিন্তু প্রদেশের রাজধানী জাপোরিঝিয়া শহর ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে। খেরসন প্রদেশের দ্নিপ্রো নদীর পূর্ব তীর রাশিয়ার দখলে থাকলেও, পশ্চিম তীরের খেরসন শহরসহ একটি বড় অংশ ইউক্রেন পুনরুদ্ধার করেছে। দুই দেশের ফ্রন্টলাইন প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং উভয় পক্ষই ইঞ্চি ইঞ্চি জমির জন্য লড়াই করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ডোনেটস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া, এই চারটি অঞ্চলের সার্বিক অবস্থা আজ শুধু যুদ্ধ এবং ভূ-রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন লক্ষ লক্ষ মানুষের পরিচয় সংকট, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আখ্যানে পরিণত হয়েছে। এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। এই সংকটের নিষ্পত্তি যাই হোক না কেন, রাশিয়ার দখলে নেওয়া এই চার অঞ্চলের মানুষের ক্ষত শুকোতে হয়তো কয়েক প্রজন্ম লেগে যাবে। তাদের এই সংগ্রাম শুধু ভূমি পুনরুদ্ধারের নয়, এটি ইউক্রেনের মানুষদের জাতিগত পরিচয় ও সংস্কৃতি রক্ষার সংগ্রাম এবং একই সাথে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে শান্তিতে বেঁচে থাকার অধিকার আদায়ের লড়াই।
তথ্যসূত্র –
https://bonikbarta.com/international/tiAZtV5AlPJYiyBt
https://www.prothomalo.com/world/europe/dwhl1a2yv9
https://www.banglanews24.com/international/news/bd/1524101.details
https://www.jugantor.com/europe/993631
https://www.bbc.com/bengali/news-63146509