‘অনেকেই ভাবে মেয়েদের চাওয়া আকাশের চাঁদ আনার মতো। না, তারা শুধু চায় তাদের জীবনে একজন গোয়ানশিক। কিন্তু কেন?’
এখন হাই স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে কমপ্লেইন না করে সময় এসেছে, নিজে সেই হাই-স্ট্যান্ডার্ড হওয়ার। হ্যাঁ, আপনি জেনে খুশি হবেন বর্তমানের জনপ্রিয় কোরিয়ান ড্রামার মেল লিড হতে আপনাকে কোনো অসম্ভবকে জয় করতে হবে না! শুধু একটু জানতে হবে কোন আচরন গুলো আপনার মধ্যে একজন ভালো মানুষ হিসেবে ধারন করতে হবে। কোন আচরণগুলো আপনার প্রিয় মানুষকে কষ্ট দিবে না এবং খুশি রাখবে। চলেন কীভাবে শুধু গ্রিন ফ্ল্যাগ না, একটা আস্ত ঘন সুন্দর সবুজ জঙ্গলে পরিণত হয় তা দেখে আসি।
তার আগে জেনে নিই, গোয়ানশিক কে? ইনি হলেন সাম্প্রতিক বিখ্যাত কোরিয়ান ড্রামা ‘হোয়েন লাইফ গিভস ইউ ট্যাঞ্জেরিন’ এর নায়ক। যিনি শুধু কে ড্রামা লাভারদের মাঝে নয়, বরং, সব ধরনের দর্শকদের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে; বিশেষভাবে মেয়েদের কাছে। অনেকেই ভাবে মেয়েদের চাওয়া আকাশের চাঁদ আনার মতো। না, তারা শুধু চায় তাদের জীবনে একজন গোয়ানশিক।
কিন্তু কেন?
কেন গোয়ানশিক কে সব মেয়েরা চায়?
পার্ক বো-গম এর অভিনীত চরিত্র ‘গোয়ানশিক’ ছিল এমন একটা মানুষ যে কখনো এ-সুন (ফিমেল লিড) এর সাথ ছাড়েনি। তার নিঃশব্দ স্থির ভালোবাসা, আত্মত্যাগ এবং শ্রদ্ধাশীল আচরণ তাকে নারীদের চোখে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সে বাহ্যিক চাকচিক্যে নয়, বরং নিজের স্থিরতা, শিক্ষা ও আত্মসম্মানের মধ্য দিয়ে এই আকর্ষণ তৈরি করেছে। তার আচরণে না ছিল অহমিকা, না ছিল অযথা শো-অফ। আজকের যুগে যেখানে অনেকেই টক্সিক “ম্যাচো” ভাবনায় পুরুষত্ব খুঁজে ফেরে, সেখানে গোয়ানশিক যেন এক সফট চরিত্র কিন্তু সমাজের কাছে একটি শক্তিশালী জবাব।
আজকের যুগে এমন পুরুষ পাওয়া ডিলিওশনাল চিন্তায় পরিণত হয়েছে। এই ড্রামা দেখার পরও অনেকে তাইই দাবি করেছে। অথচ, এটি একটা আসল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত। আমাদের সমাজেও আমাদের চোখের সামনেই এমন উদাহরণ খুজলে পাওয়া যাবে।
অর্থাৎ, একটা পুরুষ চাইলেই বাস্তবে এমন আচরণগুলো তার মধ্যে ধারণ করতে পারে যেগুলো তাকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবে। এর জন্য শুধু প্রয়োজন কোন আচরণগুলো তাদেরকে নারীদের চোখে অনাকর্ষণীয় করে তুলে তা বুঝা।
সম্মান
সম্মান জিনিসটা খুব সহজ মনে হলেও এটি একটি সুক্ষ গুণ। আমাদের সমাজে কিছু আচরণ আছে যেগুলোকে এত নরমালাইজ করা হয়েছে যে, তার মাধ্যমে একজনকে অসম্মান করা হচ্ছে, তা তারা বুঝে না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কথায় বা ঠাট্টায় একজন মেয়ের জীবনের স্ট্রাগালকে মক করা, সেক্সিস্ট জোক করা খুব প্রচলিত। একটা মেয়েকে মেয়ে ভাবার আগে মানুষ হিসেবে চিন্তা করার প্র্যাক্টিস আমাদের সমাজে নেই। এই আচরণ গুলো একটা নারীর চোখে পুরুষকে অনেক নামিয়ে দেয়।
সম্মান খুব ছোট ছোট বডি ল্যাংগুয়েজ এবং সাধারন ব্যবহারেই ফুটে উঠে। তাদের এফোর্টকে একনোলেজ করা, কথা বলার সময় তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করা এবং তাদের অনুভুতির সাথে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মাধ্যমেই একজন পুরুষ একজন নারীকে মানুষ হিসেবে সত্যিকার সম্মান দিতে পারবে। বাকি সব ভালো গুণও এই সম্মান থেকেই জন্ম নেয়।
নারীদের উপহাস করা বা ম্যান্সপ্লেইনিং
এটি নারীদের প্রতি অসম্মান থেকেই আসে। আমাদের আশেপাশে এমন অনেক পুরুষ আছে যারা কথায় কথায় নারীদের উপহাস করে। তারা এমনে মেয়েদের সাথে কথা বলে যেন মেয়েরা বেকুব, তারা কিছু বোঝেনা। যেমন, কোনো মেয়ে যদি বলে সে ফুটবল খেলা পছন্দ করে তখন তারা অনেক সময় বিদ্রুপ করে এই প্রশ্ন করে যে “তাই? তাহলে কয়েকটা খেলোয়াড়ের নাম বলোতো!” অর্থাৎ একজন নারীকে এমনভাবে কোনো বিষয় বোঝানোর চেষ্টা করে যেন তিনি বিষয়টি বোঝেন না বা বুঝতে পারবেন না, যদিও নারীটি সেই বিষয়ে সমান বা অধিক জ্ঞান রাখেন। এটি শব্দটির মূল উৎস হচ্ছে “man” + “explaining”।
এর মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে এক ধরনের সুপিরিয়র প্লেসে রাখার চেষ্টা করে। যেমন দেখা গিয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ ব্রিটিশ নারী বলেছেন যে, আর্থিক বিষয়ে তারা পুরুষদের সাথে কথা বললে মেন্স ম্যান্সপ্লেইনিং এর শিকার হন। পুরুষরা এমন ভাবে অপ্রাসঙ্গিক এবং অযথা পরামর্শ দেয় যে, তারা পুরুষদের সাথে অর্থ নিয়ে কথা বলা এড়িয়ে চলেন যাতে এমন ঘটনা কম ঘটে। এমন আচরণ একজন নারীর কাছে খুবই অনাকর্ষণীয়।
আত্মকেন্দ্রিকতা ও অতিরিক্ত ইগো
নারীরা কোন ধরনের ছেলেকে এড়িয়ে চলে জানেন? যারা সবকিছু নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে, কথা বলতে গিয়ে শুধু নিজের গল্প বলে। যার মধ্যে একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার গুণাবলী নাই। এ ধরনের ছেলেদের আচরণ নারীদের কাছে বিরক্তিকর লাগে। পুরুষের কোন আচরণ মেয়েদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বাজে তার অন্যতম উদাহরণ হলো ‘আমি ঠিক, তুমিই ভুল’ এই ধরনের মনোভাব। কথায় কথায় গ্যাসলাইট করা, অর্থাৎ তাদের কাছে মনে হয় সব সময় তারাই ঠিক অথবা পুরুষরাই বেশি জানে।
এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে হোক বা জ্ঞানের অভাবে হোক, এটি একটা মানুষ হিসেবেই সবার কাছে চরম অনার্কষণীয় একটা আচরণ। এখানে সে নারীকে বা অপরকে মন থেকে সম্মান করতে পারলে এমন আচরণ করতো না।
দায়িত্বজ্ঞানহীনতা
দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে নারীরা এমন কাউকে খোঁজেন, যিনি দায়িত্ব নিতে জানেন। কিন্তু যে পুরুষ জীবনের প্রতি দায়িত্বহীন, সময়মতো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না, কাজের প্রতি আগ্রহহীন, তাঁর প্রতি নারীরা আকর্ষণ হারায়। পুরুষদের যেসব ভুল নারীদের দূরে ঠেলে দেয়, এটি তার বড় উদাহরণ।
অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ও সন্দেহপ্রবণতা
বিশ্বাসের জায়গায় যদি বারবার প্রশ্ন উঠে, তাহলে সম্পর্ক টিকতে পারে না। মেয়েরা চায় পারস্পরিক আস্থা, কিন্তু যখন একজন পুরুষ প্রতিনিয়ত তাদের ফোন চেক করেন, কোথায় যাচ্ছেন তা জিজ্ঞেস করে থাকেন, তখন সেই সম্পর্কের মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে।
এখানে দুইপক্ষেরই বিশ্বাসের জায়গায় এক হওয়া প্রয়োজন। এক না হয়ে উল্টো সব সময় সন্দেহ করা এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়া অত্যন্ত অসহনীয় আর লাইফলেস ব্যবহার।
এপিয়ারেন্স ও হাইজিন
নারীদের অপছন্দের তালিকায় একটি খুবই কমন ব্যাপার হলো ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতায় গাফিলতিপূর্ণ পুরুষ। এলোমেলো পোশাক-আশাক, নিজস্ব পরিছন্নতা যেমন মুখের দুর্গন্ধ, ঘামের গন্ধ, অপরিচ্ছন্ন নখ বা এলোমেলো চুল এগুলোর খেয়াল না রাখা, একজন পুরুষকে সে মানুষ হিসেবে যেমনই হোক বাহ্যিক দিক দিয়ে তাকে অনাকর্ষণীয় করে তুলে।
একজনের প্রথম ইম্প্রেশনই হয়ে মানুষের উপর তার এপিয়ারেন্স, পরিচ্ছন্নতা দেখে। তাই এটা খেয়াল না রাখলে আপনি প্রথমেই পিছিয়ে গেলেন।
আবেগপ্রকাশে অক্ষমতা
যদিও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ পুরুষদের মাথায় এটাই ঢুকিয়েছে যে ছেলেদের আবেগ প্রকাশ করা উচিত নয়। আবেগ প্রকাশ দুর্বলতার লক্ষণ। কিন্তু এখনকার নারীরা চায় একজন পুরুষ আবেগ প্রকাশে স্বচ্ছ হোক। কেননা আবেগ প্রকাশে কোনো লিঙ্গ নাই।
হ্যাঁ, কিন্তু মানুষ ভেদে আবেগপ্রকাশ ভিন্ন হতে পারে। আবার ছেলেমেয়েদের সাধারণ পার্থক্য থাকতে পারে, তাই বলে আবেগই প্রকাশ না করলে শেষ পর্যন্ত তারই ক্ষতি। কারন আবেগ প্রকাশ মানুষের একটা সুন্দর বৈশিষ্ট্য আর আবেগ প্রকাশ না করতে পারা একটা অক্ষমতা।।
অনেক পুরুষই নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে গিয়ে সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যান। এমনকি প্রিয়জন কষ্ট পাচ্ছেন, সেটাও বুঝতে পারেন না। ফলে, নারী মনে করে এমন পুরুষ অনাকর্ষণীয় এবং অসংবেদনশীল।
অহংকার ও শো-অফ
অনেকে মনে করে মেয়েরা মনে হয় ধন-সম্পদ,গাড়ি বাড়ির বড়াই পছন্দ করে। সম্পর্কে আকর্ষণ শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য বা অর্থসম্পদের উপর নির্ভর করে না। কারোর অর্জন, সম্পদ ভালো থাকতেই পারে এবং এগুলো আকর্ষণীয়ও বটে, কিন্তু তখনই যখন এর সাথে হাম্বালনেস থাকে। একটা মানুষের মধ্যে নম্রতা ও বিনয়ী ব্যবহার তাকে সবসময়ই আকর্ষণীয় করে তোলে।
অসাস্থ্যকর অভ্যাস ও সঙ্গ
পুরুষ সমাজে খুবই সাধারণ বাজে স্বভাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ধূমপান, মদ্যপান। তারা খারাপ সঙ্গেই হোক, অভ্যাসবসত হোক বা সমাজে এর গ্রহণযোগ্যতা থেকেই হোক তারা এগুলো করে থাকে। নারীদের কাছে কখনোই এমন ব্যক্তি পছন্দ হয় না যারা নিজেদের যত্ন নেয় না।
আত্ম-উন্নয়নে উদাসীনতা
সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপগ্রেড করতে থাকা নারীদের কাছে অনেক আকর্ষণীয়। যারা নিজেদের জীবন নিয়ে উদাসীন, নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে উদাসীন তারা যেমন নিজেরা পিছিয়ে থাকে তাদের সাথে যারা থাকে তাদেরও ক্ষতি করে। যেখানে একসাথে গ্রো করার কথা সেখানে যদি একজন এমন উদাসীন হয়ে তখন দুইপক্ষেরই ক্ষতি ছাড়া কিছু হয় না।
একজন পুরুষ কতটা সংবেদনশীল, আত্মসচেতন ও সম্মানজনক আচরণ করে তাঁর এই সাধারণ আচরনগুলোই নির্ধারণ করে তিনি নারীদের চোখে কতটা আকর্ষণীয়।
পুরুষদের ভুলগুলো সবসময় ইচ্ছাকৃত হয় না। তবে সচেতনতা না থাকলে এগুলো গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। নারীরা যখন দেখে যে একজন পুরুষ কেবল তার বাহ্যিকতা নিয়েই ব্যস্ত, কিন্তু অন্তরের জগতে ফাঁপা—তখন সেই পুরুষই তাদের চোখে অনাকর্ষণীয় পুরুষ হয়ে ওঠেন।
রেফারেন্স:
https://www.ft.com/content/01d89bb0-bf71-4ab3-90b8-838878cd7752