গাঁজাকে ‘মজুরের বন্ধু’, ‘সাধুর সাথী’ হিসেবেই দেখা হতো তৎকালীন সময়ে
একটি কুয়াশাভেজা সকাল অথবা গ্রীষ্মের কাঠফাঁটা রোদের সকাল। নওগাঁ শহরের একপাশে পিচঢালা রাস্তায় চলতে চলতে আপনি হয়তো খেয়াল করবেন না—শাল-পিয়াল আর তাল-তেঁতুলের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিস্মৃত গৌরবময় অধ্যায়। আসলে এই আধুনিক সময়ে এসে এমন একটি বিষয় খেয়াল করারও কথা না। একটি নিষিদ্ধ সোসাইটি, নাম নওগাঁ গাঁজা সোসাইটি। আজ যা কেবল ইতিহাসের পাতার একটি পৃষ্ঠা। অথচ এককালে সেটাই ছিল অর্থনীতির এক প্রাণকেন্দ্র। একেকটি ইট যেন কথা বলত কৃষকের ভাগ্য, সরকারের রাজস্ব আর সমাজের পরিবর্তনের গল্প।
যখন বাংলাদেশে গাঁজা শব্দটি উচ্চারিত হয়, তখন এর সাথে জড়িয়ে থাকে মাদক, অপরাধ বা নৈতিক অবক্ষয়ের মতো ধোঁয়াটে একটি ভাবমূর্তি। কিন্তু ইতিহাসের পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, এক সময় এই গাঁজাই ছিল ব্রিটিশ ভারতীয় উপমহাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। শুধু তাই নয়, নওগাঁ শহরে গাঁজা হয়ে উঠেছিল কৃষকদের আশ্রয়, প্রশাসনের আয়ের উৎস এবং একটি সমবায় আন্দোলনের সফল উদাহরণ। আজ সেই গাঁজা সোসাইটির ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে শহরের বুকে, ইতিহাসের স্তব্ধ সাক্ষী হয়ে।
গাঁজার ধোঁয়া ও উপনিবেশিক কৃষি অর্থনীতি
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়। তখন নওগাঁ অঞ্চলে কৃষি ফসল মূলত ধান, আখ এবং পাটনির্ভর। কিন্তু ১৮৫৭ সালের আগে থেকেই ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে এক নতুন ফসল, গাঁজা। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকেরা গাঁজার ওষুধি ও নেশাত্মক গুণাবলীর মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের সুযোগ খুঁজে পান। এই সুযোগকে তারা হাত ছাড়া করতে চান না। তাই তারা উদ্যোগ নিয়ে গাঁজা চাষকে বৈধতা দেন এবং এর উপর ট্যাক্স আরোপ করেন।
যশোর জেলা থেকে আনা বীজে নওগাঁয় গাঁজার ফলন ভালো হওয়ায় এ অঞ্চলকে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য উপযোগী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। ১৯০৬ সালে ব্রিটিশ সরকার নওগাঁয় সরকারি গাঁজা চাষ কেন্দ্র স্থাপন করে, যা এই অঞ্চলের কৃষিকে আমূল বদলে দেয়।
এই সময় গাঁজা চাষকে কেন্দ্র করে নওগাঁ শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের কিছু ব্যক্তি মিলে একটি “গাঁজা সোসাইটি” গঠন করে, যা মূলত গাঁজার বণ্টন, ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতো। এই সোসাইটির কাজ ছিল মূলত, গাঁজার বীজ সংগ্রহ ও চাষে সহযোগিতা, নির্দিষ্ট স্থানে গাঁজা সেবনের আড্ডা সংগঠিত করা, নতুন সেবনকারীদের জন্য ‘শিক্ষণ পর্ব চালু করা স্থানীয় রাজস্ব অফিসের সাথে সহযোগিতা করে গাঁজা চাষকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। সেই সময়ে গাঁজা সোসাইটির সদস্যরা স্থানীয়ভাবে সম্মানিত ছিল এবং সমাজে তাদের অভিভাবকসুলভ ভূমিকা ছিল গাঁজা ব্যবহারকারীদের জন্য।
সেসময়ের গাঁজা চাষ পদ্ধতি
নওগাঁ গাঁজা সোসাইটি ছিল ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে একটি সরকারি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান, যার অধীনে গাঁজা উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হতো। গাঁজাকে সেই সময় “নিয়ন্ত্রিত কৃষিপণ্য” হিসেবে দেখা হতো, এবং এই পণ্য থেকে সরকার রাজস্ব আয় করত।
প্রথমেই চাষের জন্য নির্বাচন করা হতো দোআঁশ মাটি ও ভাল নিষ্কাশনযুক্ত জমি। শীতের শুরুতে জমি প্রস্তুত করে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বীজ ছিটানো হতো। চাষিরা সাধারণত স্থানীয় জাতের ‘ইন্ডিকা’ জাতের গাঁজা ব্যবহার করত, যেটি ছিল রজনসমৃদ্ধ। চারা গজানোর পর পুরুষ গাছ তুলে ফেলা হতো, কারণ নারী গাছে রজন বেশি থাকে।
ফেব্রুয়ারি-মার্চে গাছ পরিপক্ব হতো। গাছের শীর্ষে জমা হতো গাঁজার ফুল বা “টপ”, যেটিই মূলত বাজারজাত করার জন্য সংগ্রহ করা হতো। কাঁচা গাঁজা শুকানোর পর গাঁজা সোসাইটির গুদামে জমা দেওয়া হতো, যেখানে তা গ্রেড অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করা হতো—যেমন ‘সাদা টপ’, ‘কালো টপ’, ইত্যাদি।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি সরকার ও সোসাইটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো। চাষিদের ছিল নির্দিষ্ট লাইসেন্স, এবং পুরো উৎপাদন ছিল নথিভুক্ত ও কর-নির্ধারিত। গাঁজা ছিল সরকারি আয় ও স্থানীয় কৃষির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
গাঁজা সোসাইটির উত্থান: সমবায়ের বিপ্লব
নওগাঁ অঞ্চলের প্রায় ৭০০০ গাঁজা চাষি দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণের শিকার হচ্ছিলেন। তাদের পক্ষে গাঁজা বিক্রি করা ছিল কঠিন এবং কমদামে ফসল তুলে দিতে বাধ্য হতেন তারা। এই পরিস্থিতি বদলাতে ১৯১৭ সালে গড়ে ওঠে নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড।
এই সমিতি ছিল একেবারে চাষি-নিয়ন্ত্রিত। সদস্য হতে হলে ১০ টাকা দিয়ে একটি শেয়ার কিনতে হতো। এই অর্থে গড়ে উঠেছিল একটি শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো। যেখানে প্রতিনিধি নির্বাচন, অর্থব্যবস্থাপনা, বিপণন প্রক্রিয়া ইত্যাদি সবই পরিচালিত হতো সমবায় নীতিতে।
গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির মূল উদ্দেশ্য ছিল চাষিদের জন্য গাঁজার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে সরাসরি সরকারি বিক্রি নিশ্চিত করা, গাঁজার উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং গাঁজা চাষিদের সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণ ও চাষি কল্যাণে কাজ করা।
গাঁজা সোসাইটিতে নিষেধাজ্ঞার কালোছাঁয়া
পূর্ববাংলার অনেক অঞ্চলে গাঁজা সোসাইটি ছিল অপ্রাতিষ্ঠানিক কিন্তু প্রভাবশালী। তবে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, ও নদীয়ায় এটি একসময় কৃষি ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিল। পাকিস্তান আমলে, বিশেষ করে ১৯৫৫ সালের “Opium Act” অনুসরণ করে গাঁজা চাষ নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দশকেও বৈধভাবে গাঁজা চাষ হয়ে আসছিল। কিন্তু ১৯৭৪ সালে, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক জেনেভা কনভেনশন-এ স্বাক্ষর করে এবং গাঁজা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করে।
পর্যায়ক্রমে গাঁজা উৎপাদন কমে আসে এবং ১৯৮৭ সালে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে যায় গাঁজা চাষ। আর এই এক ঘোষণার মাধ্যমে প্রায় ৭০ বছরের এক সমবায়ী সাফল্যের অবসান ঘটে।
সোসাইটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, চাষিরা অন্য পেশায় চলে যান, গুদামগুলো হয়ে পড়ে তালাবদ্ধ। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই সমবায় সমিতির ৭ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে চরম বিপাকে পড়েন। পরে তারা ধান, সরিষা, সবজি চাষাবাদ শুরু করেন।
গাঁজা বিক্রি করে যে রাজস্ব আসত, তাও থেমে যায়। একই সাথে থেমে যায় একটি বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো।
রাজনৈতিক ছায়া, দখল আর দুর্নীতির যুগে গাঁজা সোসাইটি
নিষিদ্ধ ঘোষণার পর সোসাইটির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দখলে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। চাষিরা তখন চাইছিলেন সমিতির আইনগত কার্যক্রম চালু রেখে অন্য কৃষিপণ্যের মাধ্যমে এই সমবায়কে টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু ঘটে বিপরীত।
২০০৬ সালে, একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠিত হয়, যাদের কাজ ছিল নির্বাচন আয়োজন করে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ। কিন্তু অভিযোগ ওঠে এই কমিটির সদস্যরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সম্পত্তি বিক্রি করে দেন এবং কিছু সম্পদ দখলদারদের হাতে চলে যায়।
নওগাঁর স্থানীয় পত্রিকাগুলিতে মাঝে মাঝে ছাপা হয়—“গাঁজা সোসাইটির জমিতে এখন মার্কেট গড়ে উঠছে”, “গুদাম ভাড়া দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিমালিকানায়”, “চাষিদের অধিকার বিলুপ্ত”। একসময় যারা গাঁজা চাষ করতেন, তারা এখন দিনমজুরি করেন।
সংস্কৃতি, স্মৃতি ও গাঁজা সোসাইটি
গাঁজা এখন নৈতিকভাবে ‘অসুন্দর’ হিসেবে বিবেচিত হলেও, নওগাঁ গাঁজা সোসাইটির ইতিহাস দেখায়—কীভাবে এক বিতর্কিত ফসল একটি অঞ্চলের অর্থনীতি, সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে পারে। আজ সেই সব গল্প হারিয়ে যাচ্ছে।
পুরোনো ভবনগুলোতে ধুলোর স্তর জমেছে। অনেক গুদাম পরিত্যক্ত, কিছু ভাঙা। স্থানীয় তরুণরা জানেই না তাদের শহরের ইতিহাসে ছিল এমন এক কেন্দ্র যেখানে কৃষকের ভাগ্য গড়ে উঠত ‘গাঁজা’ নামক এক গাছের মাধ্যমে। ইতিহাসের স্মৃতির পাতায় গাঁজা সোসাইটি জায়গা করে নিলেও স্মরণ করার যেনো কেউ অবশিষ্ট নেই!
ও গাঁজা সংস্কৃতি
বর্তমান সময়ে গাঁজা একটি নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্যের নাম। অথচ একটা সময়ে এই গাঁজাও বাংলার সংস্কৃতির অংশ ছিলো। বাংলাদেশের নওগাঁর গাঁজা সংস্কৃতি ছিল আধ্যাত্মিকতা, চাষাবাদ, এবং সমাজে পারস্পরিক সম্পর্কের এক অনন্য উদাহরণ। বিভিন্ন হাটবাজারে বিশেষ দিনে গাঁজা বিক্রি হতো, আর পূর্ণিমার রাতে বা মহরম, রাসপূর্ণিমার মতো অনুষ্ঠানে গাঁজার আড্ডা জমতো। অনেক সাধু-সন্ন্যাসী ও বাউল এই এলাকায় এসে গাঁজা সেবনের মাধ্যমে আত্মসাধনা সাধনা করতেন। এই সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ছিল গাঁজাকে দৈহিক শক্তি নয়, বরং মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখা, গাঁজার সাথে যুক্ত ছিল সঙ্গীত, কবিতা, বাউল গান। একধরনের ‘লোকশিক্ষা’ চলতো এই গাঁজা আড্ডার মাধ্যমে।
গাঁজা সোসাইটি নওগাঁ – আসলেই কি অপরাধমূলক ছিল?
এখানে প্রশ্ন আসে, গাঁজা সোসাইটি কি অপরাধমূলক ছিল? এর উত্তর হ্যাঁ বা না যেকোনোটিই হতে পারে। তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষিতে উত্তর দিলে অবশ্যই উত্তর হতো না। কারণ তখন এটা বৈধ ছিলো। কিন্তু কালের বিবর্তনে তো কত কিছুই পাল্টে যায়। তাই বর্তমান সময়ে এসে এটার উত্তরও পাল্টে গেছে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী এখন তা অপরাধ, কিন্তু ইতিহাস ও সামাজিক বাস্তবতায় তা সম্পূর্ণভাবে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত ছিল না। ব্রিটিশ আমলে সরকার নিয়ন্ত্রিত চাষ ও বিক্রয় চলতো, আর সমাজে একে অবৈধ বলা হতো না। বরং গাঁজা ছিল আধ্যাত্মিকতা, শ্রমিক শ্রেণির প্রশান্তি, এবং গ্রামীণ সহাবস্থানের প্রতীক। অথচ সেই সোসাইটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
নওগাঁয় গাঁজা সোসাইটি যেভাবে পরিচালিত হতো নওগাঁর গাঁজা সোসাইটিগুলো ছিল এক প্রকার স্বনির্ভর, স্থানীয়ভাবে সংগঠিত প্রতিষ্ঠান। এর নেতৃত্বে থাকতো প্রবীণ ও অভিজ্ঞ গাঁজা ব্যবহারকারী, যাকে সবাই গুরু বা সর্দার বলে ডাকতো। গাঁজা সংগ্রহ, চাষ, প্রস্তুতকরণ, এবং নতুন সদস্য নিয়োগ সবকিছুতেই ছিল নিয়মকানুন।
সাধারণত মাসিক চাঁদা নেওয়া হতো গাঁজা সংগ্রহের জন্য। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে আড্ডা বসতো। আড্ডার আসরে থাকতো নির্ধারিত গুরু। সেই গুরু নিয়মিত ‘আচরণবিধি’ স্মরণ করিয়ে দিতেন। কেউ বেশি মাত্রায় বা ভুলভাবে গাাঁজার ব্যবহার করলে সেই সময় শাস্তিও দেওয়া হতো সামাজিকভাবে।
ব্রিটিশ আমলে গাঁজা ও আফিমের ব্যবহার
ব্রিটিশ শাসনে গাঁজা ও আফিম ছিল সরকার অনুমোদিত। ১৮৯৪ সালের ইন্ডিয়ান হেম্প ড্রাগ কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলায় গাঁজার ব্যবহার ব্যাপক ছিল এবং একে তেমন ক্ষতিকর হিসেবে ধরা হতো না। নওগাঁতেও আফিমের সীমিত ব্যবহার থাকলেও, গাঁজার চাহিদা ছিল অনেক বেশি।
গাঁজাকে ‘মজুরের বন্ধু’, ‘সাধুর সাথী’ হিসেবেই দেখা হতো। অনেক কৃষক কাজ শেষে গাঁজা সেবন করতেন, আবার বাউল ও তান্ত্রিকরা আধ্যাত্মিক সাধনার অংশ হিসেবে এটি গ্রহণ করতেন।
তৎকালীন সমাজে গাঁজা সোসাইটির অবদান
এই গাঁজা সোসাইটির আয় এতটাই বেশি ছিল যে, তারা কেবল ব্যবসায়িক নয়, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার অনন্য উদাহরণ স্থাপন করে। তাদের অধীনে ছিল ৪০ একর জমি, ২৮টি স্থায়ী ভবন, ৪টি গুদাম, ৩টি দাতব্য চিকিৎসালয়, ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি মসজিদ ও ১টি মন্দির, ৭টি পুকুর ও একটি বৃহৎ লেক।
এই অবকাঠামোগুলো কেবল প্রতীকী ছিল না, তা ছিল সামাজিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি। স্থানীয় গরিব কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা, ছাত্রদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হতো এই সোসাইটি থেকে।
১৯২১ সালে, তৎকালীন নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এই সমিতির নতুন গুদামের উদ্বোধন করেন। তখনকার সময় এই গুদামে একত্রে কয়েক টন গাঁজা সংরক্ষিত থাকত।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে—গাঁজা কি আবার বৈধ হবে? কিন্তু প্রশ্নটা কেবল গাঁজাকে ঘিরে নয়। প্রশ্নটা হচ্ছে, এই সমবায়ের কাঠামো, এই কৃষি-কেন্দ্রিক অর্থনীতি, এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানটিকে আমরা কীভাবে সংরক্ষণ করব?
নওগাঁ গাঁজা সোসাইটিকে যদি আমরা একটি ইতিহাস-সংগ্রহশালা বা সমবায়ী কৃষি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে—কৃষক কেবল মাটিতে ফসল ফলায় না, সে ইতিহাসও তৈরি করে।
তথ্যসূত্র-
https://bangladeshbulletin.com/?p=67851
https://www.youtube.com/watch?v=CjmwvaNu85k
https://www.youtube.com/watch?v=ZMcRbnRXOVc
https://www.tbsnews.net/bangla/%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0/news-details-78058
https://www.rupalibangladesh.com/feature-news/vacation/23835